মাঠে গড়াচ্ছে রাজনীতি by লুৎফর রহমান
দ্রুত
বদলাচ্ছে রাজনীতির হাওয়া। অনেকটা চার দেয়ালে বন্দি রাজনীতি ক্রমে মাঠে
গড়াচ্ছে। সরব হচ্ছে ভোট আর জোটের রাজনীতি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে
কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বড় দলগুলো। বড় দলের সহযোগী হতে চায় এমন দলগুলোও
তৎপর নিজেদের অবস্থান জানান দিতে। গত কয়েক বছর ধরে মাঠের রাজনীতিতে চলা
ভাটা কাটছে অক্টোবর থেকেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইতিমধ্যে মাঠের কর্মসূচি
শুরু করেছে। বাম দলগুলোর জোটের কর্মসূচি শুরু হয়েছে আরো আগেই।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ও যুক্তফ্রন্ট বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার কর্মসূচি দিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিন্ন দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিও প্রায় অভিন্ন। এসব দাবি আর ইস্যুতে বৃহত্তর কর্মসূচির চিন্তা করছে দলগুলো। ঐক্য প্রক্রিয়া ঠিকঠাকমতো এগোলে চলতি মাস থেকে এক মঞ্চ থেকে কর্মসূচি আসতে পারে। টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিগত সময়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ছুটছেন নেতারা। লক্ষ্য একটাই, মানুষের মন জয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন সতর্ক থাকতে।
আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকলে পতন অনিবার্য এমন বার্তাও দিয়েছেন নেতাকর্মীদের। জনগণের সামনে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে তিনি নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপর আরো আগে থেকে। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিক গণসংযোগে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে তৃণমূল পর্যন্ত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই গণসংযোগ কর্মসূচির লক্ষ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের সামনে তুলে ধরা। বিরোধী জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচির বিপরীতে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার লক্ষ্যও রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি মাঠের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দল। ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে যেকোনো ষড়যন্ত্র মাঠেই মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। যদিও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বলছেন, ১৪ দলের এমন বক্তব্য গণতন্ত্রের ভাষা নয়। ১৪ দলের পক্ষ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকায় মহাসমাবেশের প্রস্তুতিও রয়েছে ক্ষমতাসীন জোটের।
৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ৫ দফা দাবি মানতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গত ২২শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশ থেকে দেয়া আল্টিমেটামের সময় শেষ হয়েছে রোববার। গতকাল জোটের পক্ষ থেকে একই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ই অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় যুক্ত যুক্তফ্রন্টের তিন দলও আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। দলগুলোর কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সরকার ও বিরোধী জোটের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে কর্মসূচি পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আট দলের এ জোট ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করছে। বিরোধী জোটের সঙ্গে একমঞ্চে না এলেও এ জোটের লক্ষ্য এবং দাবি অভিন্ন। বাম জোটও তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ এবং আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের ফায়সালা চায়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও রয়েছে এ জোটের। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি নিয়ে সম্প্রতি ইসি ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে পুলিশের বাধায়।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায়। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে সরকারের পক্ষে থাকবেন নাকি বিরোধী জোটের দিকে ঝুঁকবেন এই প্রশ্ন দলের নেতাকর্মীদের মুখেই। তারাও জানেন না নির্বাচন নিয়ে জাপার অবস্থান কি। দুটানায় থাকলেও নানা কর্মসূচিতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে তৎপর রয়েছে জাপা। অসুস্থতা নিয়েও জাপা চেয়ারম্যান অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। যাচ্ছেন জেলা সফরে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে দলীয় কর্মসূচি আরো জোরদার করা হবে। আপাতত একক কর্মসূচি নিয়েই মাঠে থাকবে জাপা। তবে জোটগত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। সব মিলিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে অক্টোবর থেকেই সরগরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। উত্তপ্ত হচ্ছে মাঠের রাজনীতি।
গণসংযোগে আওয়ামী লীগ: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল থেকে গণসংযোগ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল চারটি পৃথক টিম রাজধানীর পৃথক এলাকায় গণসংযোগ করে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ কর্মসূচি বিস্তৃত হবে। ঢাকায় কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ ছাড়াও বিরোধী জোটের কর্মসূচি থেকে নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। গণসংযোগ কর্মসূচিতে মূলত সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারও এগিয়ে রাখতে চান নেতারা। দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধী জোট যাতে এককভাবে মাঠ দখলে না রাখতে পারে সেজন্য ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের কর্মিসভা থেকে বিভাগীয় কর্মিসভা করার ঘোষণা দেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৯ই অক্টোবর রাজশাহী, ১০ই অক্টোবর নাটোর ও ১৩ই অক্টোবর খুলনা সমাবেশ করা হবে। এ ছাড়া ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও ঘোষণা দেয়া হয়।
বিএনপির কর্মসূচি: দীর্ঘ দিন পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে উজ্জীবিত বিএনপি। রোববারের এ সমাবেশ থেকে দলের সাত দফা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। এ সাত দফা দাবি আদায়ে দুই দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে অক্টোবরে ধাপে ধাপে কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল সব জেলা শহরে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। পরের দিন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে আপাতত দলগত কর্মসূচি দেয়া হলেও সামনে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হলে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি আসতে পারে। গত ১লা সেপ্টেম্বর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ করে বিএনপি। এ সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হয়। রোববারের জনসভায়ও দলের নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন সভা, সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতারা মাঠের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের বলে আসছেন।
ঐক্য প্রক্রিয়ার নতুন কর্মসূচি: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঐক্য প্রক্রিয়া। এ দাবিতে আগামী রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল চারটায় এ মানববন্ধন হবে। গত ২২শে সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ থেকে সরকারের দাবি মানতে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি না মানলে ১লা অক্টোবর থেকে কর্মসূচি দেয়ার কথা বলা হয় ওই সমাবেশের ঘোষণায়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে যুক্তফ্রন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্না নেত্বাধীন নাগরিক ঐক্য পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। এ দলগুলোর কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন। ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার যে চেষ্টা চলছে চলতি মাসেই এর সফলতা আসতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন। এজন্য বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বৃহত্তর ঐক্যের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে দলগুলোর প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এ কমিটির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জানিয়েছেন, অভিন্ন দাবিতে এক মঞ্চ থেকেই সামনে কর্মসূচি পালন করা হবে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ও যুক্তফ্রন্ট বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার কর্মসূচি দিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিন্ন দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিও প্রায় অভিন্ন। এসব দাবি আর ইস্যুতে বৃহত্তর কর্মসূচির চিন্তা করছে দলগুলো। ঐক্য প্রক্রিয়া ঠিকঠাকমতো এগোলে চলতি মাস থেকে এক মঞ্চ থেকে কর্মসূচি আসতে পারে। টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিগত সময়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ছুটছেন নেতারা। লক্ষ্য একটাই, মানুষের মন জয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন সতর্ক থাকতে।
আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকলে পতন অনিবার্য এমন বার্তাও দিয়েছেন নেতাকর্মীদের। জনগণের সামনে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে তিনি নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপর আরো আগে থেকে। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিক গণসংযোগে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে তৃণমূল পর্যন্ত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই গণসংযোগ কর্মসূচির লক্ষ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের সামনে তুলে ধরা। বিরোধী জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচির বিপরীতে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার লক্ষ্যও রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি মাঠের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দল। ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে যেকোনো ষড়যন্ত্র মাঠেই মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। যদিও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বলছেন, ১৪ দলের এমন বক্তব্য গণতন্ত্রের ভাষা নয়। ১৪ দলের পক্ষ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকায় মহাসমাবেশের প্রস্তুতিও রয়েছে ক্ষমতাসীন জোটের।
৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ৫ দফা দাবি মানতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গত ২২শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশ থেকে দেয়া আল্টিমেটামের সময় শেষ হয়েছে রোববার। গতকাল জোটের পক্ষ থেকে একই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ই অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় যুক্ত যুক্তফ্রন্টের তিন দলও আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। দলগুলোর কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সরকার ও বিরোধী জোটের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে কর্মসূচি পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আট দলের এ জোট ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করছে। বিরোধী জোটের সঙ্গে একমঞ্চে না এলেও এ জোটের লক্ষ্য এবং দাবি অভিন্ন। বাম জোটও তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ এবং আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের ফায়সালা চায়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও রয়েছে এ জোটের। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি নিয়ে সম্প্রতি ইসি ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে পুলিশের বাধায়।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায়। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে সরকারের পক্ষে থাকবেন নাকি বিরোধী জোটের দিকে ঝুঁকবেন এই প্রশ্ন দলের নেতাকর্মীদের মুখেই। তারাও জানেন না নির্বাচন নিয়ে জাপার অবস্থান কি। দুটানায় থাকলেও নানা কর্মসূচিতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে তৎপর রয়েছে জাপা। অসুস্থতা নিয়েও জাপা চেয়ারম্যান অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। যাচ্ছেন জেলা সফরে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে দলীয় কর্মসূচি আরো জোরদার করা হবে। আপাতত একক কর্মসূচি নিয়েই মাঠে থাকবে জাপা। তবে জোটগত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। সব মিলিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে অক্টোবর থেকেই সরগরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। উত্তপ্ত হচ্ছে মাঠের রাজনীতি।
গণসংযোগে আওয়ামী লীগ: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল থেকে গণসংযোগ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল চারটি পৃথক টিম রাজধানীর পৃথক এলাকায় গণসংযোগ করে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ কর্মসূচি বিস্তৃত হবে। ঢাকায় কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ ছাড়াও বিরোধী জোটের কর্মসূচি থেকে নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। গণসংযোগ কর্মসূচিতে মূলত সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারও এগিয়ে রাখতে চান নেতারা। দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধী জোট যাতে এককভাবে মাঠ দখলে না রাখতে পারে সেজন্য ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের কর্মিসভা থেকে বিভাগীয় কর্মিসভা করার ঘোষণা দেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৯ই অক্টোবর রাজশাহী, ১০ই অক্টোবর নাটোর ও ১৩ই অক্টোবর খুলনা সমাবেশ করা হবে। এ ছাড়া ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও ঘোষণা দেয়া হয়।
বিএনপির কর্মসূচি: দীর্ঘ দিন পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে উজ্জীবিত বিএনপি। রোববারের এ সমাবেশ থেকে দলের সাত দফা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। এ সাত দফা দাবি আদায়ে দুই দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে অক্টোবরে ধাপে ধাপে কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল সব জেলা শহরে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। পরের দিন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে আপাতত দলগত কর্মসূচি দেয়া হলেও সামনে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হলে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি আসতে পারে। গত ১লা সেপ্টেম্বর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ করে বিএনপি। এ সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হয়। রোববারের জনসভায়ও দলের নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন সভা, সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতারা মাঠের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের বলে আসছেন।
ঐক্য প্রক্রিয়ার নতুন কর্মসূচি: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঐক্য প্রক্রিয়া। এ দাবিতে আগামী রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল চারটায় এ মানববন্ধন হবে। গত ২২শে সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ থেকে সরকারের দাবি মানতে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি না মানলে ১লা অক্টোবর থেকে কর্মসূচি দেয়ার কথা বলা হয় ওই সমাবেশের ঘোষণায়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে যুক্তফ্রন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্না নেত্বাধীন নাগরিক ঐক্য পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। এ দলগুলোর কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন। ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার যে চেষ্টা চলছে চলতি মাসেই এর সফলতা আসতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন। এজন্য বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বৃহত্তর ঐক্যের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে দলগুলোর প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এ কমিটির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জানিয়েছেন, অভিন্ন দাবিতে এক মঞ্চ থেকেই সামনে কর্মসূচি পালন করা হবে।
No comments