সরব ভোট কূটনীতির পরও সংশয় বাড়ছে
সরব
ভোট কূটনীতি। তারপরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংশয় আর অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
রাজনীতি দিনকে দিন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিরোধীদের জন্য। তারা কোথাও জমিন
পাচ্ছেন না। পশ্চিমা কূটনীতিকরা প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সব আলোচনাতেই বলছেন,
আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক। ইউরোপীয়
ইউনিয়নভুক্ত একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে
আলোচনায় তাদের চাওয়ার কথা জানান দিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও বৃটিশ
হাইকমিশনার খোলাখুলিভাবেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন। একই
অবস্থান জাতিসংঘের। তবে প্রভাবশালী দুটি প্রধান দেশ এখনো প্রকাশ্যে কিছু
বলেনি। এ দুটি দেশের কূটনীতিকরা যথারীতি নীরব রয়েছেন। নির্বাচন, গণতন্ত্র
প্রশ্নে চীন অবশ্য কখনো তেমন কিছু বলে না। এসব তাদের ইস্যুও নয়। ভারতও তার
অবস্থান এখনো খোলাসা করেনি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর ডিসেম্বরে সংসদ
নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। তবে আগামী নির্বাচন কোন মডেলে হবে তা নিয়েই
এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা। বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায়
দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংশয় আরো
বেড়েছে। তার গ্রেপ্তারের পর থেকে অহিংস কৌশল বেছে নিয়েছে বিএনপি। দলটি
একেবারেই নরম কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরও বাধার
মুখে পড়ছে বিএনপি। গত দেড় মাসে দলটির পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মী
গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। অবস্থান/মানববন্ধনের মতো মামুলি কর্মসূচিতেও
দেয়া হচ্ছে বাধা। আওয়ামী লীগ একাধিক বড় সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী
প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সব জায়গায় বিএনপির সমাবেশ পড়ছে বাধার মুখে।
অনুমতি চেয়েও মিলছে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠ পুরো দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল।
অন্যদিকে, যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে বিএনপির ভেতরে একটি অংশের অবস্থান রয়েছে। কিন্তু দলটি সে সুযোগ পায় কি-না সে প্রশ্ন বড় হচ্ছে। সরকারি দলের একাধিক নেতা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে খালেদা জিয়ার আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ কম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের সময় তিনি কোথায় থাকবেন? কারাগারে থাকলে দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাতেও অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন না তিনি। এক্ষেত্রে প্রচারণার ক্ষেত্রেই বিএনপি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কারণ দলটির অন্য কোনো নেতারই খালেদা জিয়ার মতো ক্যারিশমা নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানেরও নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নেই। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান পরিস্থিতির উদ্ভব হলে রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন- এমন একটি আভাস তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তবে তিনি দেশে আসার সুযোগ পান কি-না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, খালেদা জিয়াসহ বিএনপিকে সরকার নির্বাচনে চায় না। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে চায় কি-না সে বার্তাও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর হবে না। এবার নতুন কিছু হবে। তবে সেটা কী তা এখনই হলফ করে বলা যায় না। গত নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলো। কিন্তু ভারতের অবস্থান ছিল বিপরীত। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর অন্য বিদেশি শক্তিগুলোও আর হার্ডলাইনে থাকেনি। তারা ক্রমশ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে সমর্থন দিয়ে গেছে। অংশগ্রহণও করেছে। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের আন্দোলন অভিযুক্ত হয়েছে সহিংসতার দায়ে।
এবার কী হবে? গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদারে পরিণত হয়েছে চীন। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ এখন অনেকটাই স্পষ্ট। যদিও চীনের মূল নজর অর্থনীতির দিকে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে দেশটির ভূমিকার দিকে নজর রাখছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এখন সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি নিশ্চিতভাবেই ভারতের দিকে। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ভূমিকার ব্যাপারে ভারতের মিডিয়ায় প্রশ্ন রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় দেশটির সমর্থন সরাসরি সরকারের প্রতিই রয়েছে। এ অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে একটি বার্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়, ভারত এ দেশের জনগণের সঙ্গেই সম্পর্কে জোর দেয়। এখন আগামী নির্বাচন প্রশ্নে তাদের অবস্থান কী হয় তাই হবে দেখার। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বরাবরই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে সরব রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লিসা কার্টিস সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি তোলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করেন। জবাবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কয়েক দিন আগেই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট এবং বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেন। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তবে এটি যে সরকারের অবস্থান নয় দুই/এক দিন পরই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। যখন লিসা কার্টিসের সফরের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মার্কিন ভূমিকার সমালোচনা করেন। সরকারকে উপদেশ না দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। সরকারের আরেক জন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণ করতে পারেনি। তাতে কী হয়েছে। তারপরও সরকার আছে।
যথারীতি হার্ডলাইনে সরকার। নির্বাচনী মাঠে যেকোনো মূল্যে টিকে থাকার লড়াইয়ে বিরোধী দল। অনিশ্চিত এক পথে রাজনীতি।
অন্যদিকে, যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে বিএনপির ভেতরে একটি অংশের অবস্থান রয়েছে। কিন্তু দলটি সে সুযোগ পায় কি-না সে প্রশ্ন বড় হচ্ছে। সরকারি দলের একাধিক নেতা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে খালেদা জিয়ার আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ কম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের সময় তিনি কোথায় থাকবেন? কারাগারে থাকলে দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাতেও অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন না তিনি। এক্ষেত্রে প্রচারণার ক্ষেত্রেই বিএনপি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কারণ দলটির অন্য কোনো নেতারই খালেদা জিয়ার মতো ক্যারিশমা নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানেরও নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নেই। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান পরিস্থিতির উদ্ভব হলে রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন- এমন একটি আভাস তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তবে তিনি দেশে আসার সুযোগ পান কি-না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, খালেদা জিয়াসহ বিএনপিকে সরকার নির্বাচনে চায় না। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে চায় কি-না সে বার্তাও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর হবে না। এবার নতুন কিছু হবে। তবে সেটা কী তা এখনই হলফ করে বলা যায় না। গত নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলো। কিন্তু ভারতের অবস্থান ছিল বিপরীত। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর অন্য বিদেশি শক্তিগুলোও আর হার্ডলাইনে থাকেনি। তারা ক্রমশ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে সমর্থন দিয়ে গেছে। অংশগ্রহণও করেছে। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের আন্দোলন অভিযুক্ত হয়েছে সহিংসতার দায়ে।
এবার কী হবে? গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদারে পরিণত হয়েছে চীন। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ এখন অনেকটাই স্পষ্ট। যদিও চীনের মূল নজর অর্থনীতির দিকে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে দেশটির ভূমিকার দিকে নজর রাখছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এখন সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি নিশ্চিতভাবেই ভারতের দিকে। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ভূমিকার ব্যাপারে ভারতের মিডিয়ায় প্রশ্ন রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় দেশটির সমর্থন সরাসরি সরকারের প্রতিই রয়েছে। এ অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে একটি বার্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়, ভারত এ দেশের জনগণের সঙ্গেই সম্পর্কে জোর দেয়। এখন আগামী নির্বাচন প্রশ্নে তাদের অবস্থান কী হয় তাই হবে দেখার। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বরাবরই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে সরব রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লিসা কার্টিস সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি তোলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করেন। জবাবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কয়েক দিন আগেই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট এবং বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেন। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তবে এটি যে সরকারের অবস্থান নয় দুই/এক দিন পরই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। যখন লিসা কার্টিসের সফরের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মার্কিন ভূমিকার সমালোচনা করেন। সরকারকে উপদেশ না দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। সরকারের আরেক জন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণ করতে পারেনি। তাতে কী হয়েছে। তারপরও সরকার আছে।
যথারীতি হার্ডলাইনে সরকার। নির্বাচনী মাঠে যেকোনো মূল্যে টিকে থাকার লড়াইয়ে বিরোধী দল। অনিশ্চিত এক পথে রাজনীতি।
No comments