যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের অর্থ চুরি
জাতীয়
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম ও অর্থ চুরির যে খবর গণমাধ্যমে
বেরিয়েছে, তা আমাদের হতাশই করেছে। এ ধরনের ঘটনা যেমন অনভিপ্রেত, তেমনি
আমাদের দেশের জন্য লজ্জারও বটে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের
জেনেভাভিত্তিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল ফান্ডের এক অনুসন্ধানে এই অর্থ চুরির
বিষয়টি ধরা পড়ে। গ্লোবাল ফান্ড ২০০৩ সাল থেকে যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস ও
ম্যালেরিয়া—এই তিনটি রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ২২ পৃষ্ঠার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি রয়েছে, যেখানে
বাংলাদেশে দেওয়া আর্থিক সহায়তা চুরির বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। বেকায়দায় পড়ে
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চুরি হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার কথা
বলেছে। ফলে এটা পরিষ্কার যে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে এবং অর্থ ফেরত দেওয়ার
কথা বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চুরির বিষয়টি স্বীকার করে
নিয়েছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের জন্য বরাদ্দ করা টাকা চুরির বিষয়টি শুধু
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক দাতা মহলে গোটা দেশের
ভাবমূর্তিকেই সংকটের মুখে ফেলল। গ্লোবাল ফান্ড অর্থ চুরির প্রতিবেদনটি
তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার পর দেশ-বিদেশে এ নিয়ে কথা হচ্ছে। বাংলাদেশের
স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আসলে নতুন কোনো ঘটনা
নয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রায়ই নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই এসব ঘটনা ঘটে। নানা অনিয়মের ঘটনায় বিভিন্ন
সময়ে তদন্ত হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতির কোনো বদল হয়নি। এসব নিয়ে কারও কোনো
মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। চুরি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাই যেন এখন নিয়মে
পরিণত হয়েছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অর্থ চুরির ঘটনা তাই কোনো
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মূল সমস্যাটি জবাবদিহির। বিদেশি সাহায্য সংস্থায়
একধরনের জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে বলেই তারা ঘটনার যথাযথ তদন্ত, চুরির বিষয়টি
নিশ্চিত ও তদন্ত প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পেরেছে। এখন আমাদের
দায়িত্ব হচ্ছে এই চুরির ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির
মুখোমুখি করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ
বলেছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বদলি করা হয়েছে। অর্থ চুরি একটি
ফৌজদারি অপরাধ। ফলে চুরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেই অনুযায়ী
ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থ ফেরত দিয়েও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। দায়ী ব্যক্তিরা
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছেন। তাঁদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা–কর্মচারীরা
যাতে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তা
নিশ্চিত করতে হবে।
No comments