গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
স্বল্পোন্নত
বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের
জন্য বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এছাড়া প্রবৃদ্ধির
সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়া থেকে বেরিয়ে আসার
ওপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজন সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ- এফডিআই বাড়ানোও। এলডিসি
থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশসংক্রান্ত এলডিসি উত্তরণ শীর্ষক
সিপিডির এক সেমিনারে বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। তাদের সঙ্গে একমত হয়ে
বলা যায়, স্থিতিশীল রাজনীতি ও গণতন্ত্র উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। আমাদের
কাছাকাছি বা একই সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেও কিছু দেশ উন্নয়নের প্রতিটি খাতে
অনেক এগিয়ে গেছে কেবল টেকসই রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সুফলের কারণে। গণতন্ত্র
একটি সংস্কৃতি হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এর মূল শিক্ষা- পরমতসহিষ্ণুতার
চর্চা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতকে শ্রদ্ধা করার পরিবর্তে ‘বিচার মানি
তালগাছ আমার’ মানসিকতা লালন করছি এখনও। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে যে
কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থেকে যাওয়া এবং ক্ষমতার বাইরে থাকলে কীভাবে তা দখল করা
যায়, সে ভাবনা-চেষ্টায় বিভোর থাকা। এ কারণে নিজেদের পছন্দের লোকের বাইরে
অন্যকে সুযোগ দেয়া দূরের কথা, তাকে প্রাপ্য অধিকারবঞ্চিত করার মানসিকতা
লক্ষণীয়। ফলে ধনী-দরিদ্র বৈষম্যের পাশাপাশি নারী-পুরুষ বৈষম্যের মতো আর্থিক
খাতবহির্ভূত অনেক বৈষম্যও রয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বাড়ছেও। এ অবস্থায়
এলডিসি উত্তরণের কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করা না গেলে তা সবার জন্য সুফল বয়ে
আনবে না। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন,
‘এলডিসি উত্তরণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার।
দেশে যতটুকু উন্নতি হয়েছে
সেটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই হয়েছে’। আমরা মনে
করি, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব রাজনৈতিক দল এবং প্রত্যেক
নাগরিকের সচেতন হওয়া দরকার। তবে এক্ষেত্রে সরকার এবং শাসক দলকেই অগ্রণী
ভূমিকা পালন করতে হয়। দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক- সব অধিকার যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে
সরকার ও শাসক দলকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেবল
উন্নতি হলেই চলবে না, টেকসই উন্নয়ন লাগবে। এজন্য বেসরকারি খাতের ওপর জোর
দিতে হবে। এ খাতের বিনিয়োগ বর্তমানে ২২ শতাংশ। বস্তুত, ব্যবসা সূচকে উন্নতি
না হলে এটি বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ এলডিসি উত্তরণের পর অনেক পরিবর্তন
আসবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার বিষয় না থাকার ঝুঁকি তৈরি হবে।
ফলে বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখে যেন আমাদের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য
বাণিজ্য চুক্তি ঢেলে সাজানো এবং সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের
সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, বিদ্যমান সমস্যা সমাধান ও রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের
ওপর জোর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য
আর্থ-সামাজিক সব খাতেরই উন্নয়ন দরকার। এজন্য গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। এতে জোর দিয়ে সরকারের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রয়োজনীয়
নীতিগ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে এলডিসি উত্তরণ ও তার সুফল ভোগ সহজ
হবে বলে আশা করা যায়।
No comments