দাবি আদায়ে মুম্বইয়ে সমবেত ৩০ হাজার কৃষক
ঋণ
মওকুফ ও উৎপাদিত ফসলের বেশি দাম পাওয়ার দাবিতে ১৬৭ কিলোমিটার (১০৩ মাইল)
পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে সমবেত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০
হাজার কৃষক। তারা নাশিক থেকে যাত্রা করে পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেছেন সেখানে।
এর মধ্যে রয়েছে শিশু, নারী ও বয়স্করাও। তাদের দাবি, গত বছর সরকার ঋণ মওকুফ
করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় নি। তবে মহরাষ্ট্রের
রাজ্য সরকার বলেছে, তারা কৃষকদের এই বিক্ষোভ শেষে আলোচনায় বসতে চায়।
অন্যদিকে কৃষকদের দাবি, তারা অধিক হারে ফসল ফলান। কিন্তু তাদেরকে একপেশে
করে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, নাশিক থেকে টানা ছয়দিন পায়ে হেঁটে এসব কৃষক
মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে সমবেত হন। তবে তাতে স্কুলগামী ছেলেমেয়ে বা অফিসগামী
কোনো মানুষের কোনো অসুবিধা হয় নি। শিক্ষার্থীদের যাতে স্কুলে যাওয়া আসায়
কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, অফিসগামী মানুষের যাতে কোনো বিপত্তি না ঘটে, এ জন্য
সোমবার দিনের একেবারে প্রথম প্রহরে তারা ওই ময়দানে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে
কৃষকরা দাবি তুলেছে, তারা যে ফসল ফলায় তার উৎপাদন খরচের কমপক্ষে দেড়গুন দাম
দিতে হবে। উপজাতি সম্প্রদায়ের কৃষকদের যাতে নিজস্ব জমি থাকে তা অনুমোদন
দেয়ারও দাবি তোলা হয়েছে। কারণ, তাদের অনেকেই চাষবাস করেন বনের ভিতর। এসব
দাবি যতক্ষণ পর্যন্ত মেনে নেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ওই ময়দানের
ভিতরে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তাদের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন বিজয় জাভানধিয়া নামের একজন কৃষক। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, কৃষি খাতে
আয় দ্রুততার সঙ্গে নি¤œমুখী হয়েছে ভারতে। দিনের পর দিন কটন, শস্য ও ডালের
দান কমে যাচ্ছে। এ জন্যই গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে
অর্থ। নাশিকের ৬৫ বছর বয়সী কৃষক নারী সুখুবাই। তিনি বলেন, আমাদের জমি চাই।
এটাই হলো আমাদের প্রধান দাবি। এই দাবিকে সামনে রেখে এত দীর্ঘ পথ হাঁটতে
হাঁটতে আমার পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে। তবুও দাবি না মেটা পর্যন্ত আমি প্রতিবাদ
জানিয়ে যাবো। এই কৃষি বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ধর্মরাজ শিন্ডে। তিনি বলেন,
আমরা লড়াই করছি আমাদের ভূমির জন্য। আমাদেরকে জমির মালিকানা দিতে হবে। কারণ,
উপজাতি হিসেবে এটা আমাদের অধিকার। কয়েক দশক ধরে কৃষকদের বিভিন্ন আন্দোলন
নিয়ে রিপোর্ট করছেন সাংবাদিক পি সাইনাথ। তিনি বলেছেন, কৃষকদের এই দাবি
অবশ্যই সরকারকে মানতে হবে। একবার চিন্তা করুন এই গরম আবহাওয়ায় নাশিক থেকে
মুম্বই পর্যন্ত পথ কিভাবে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে
যাওয়া নারীরাও তাদের বন ও জমির অধিকারের জন্য পথে নেমেছেন। একবার বিবেচনা
করুন কত কঠিন অবস্থা পাড়ি দিয়ে উপজাতির এসব মানুষ এত পথ পাড়ি দিয়েছে। এসব
মানুষ টানা পাঁচদিন তাদের কাজ থেকে বিরত রয়েছেন।
No comments