উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিবর্তন ভারতকে কোথায় নিয়ে যাবে?

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি ও বিজেপি শরিকদের বিজয় কি ভারতের রাজনীতির জন্য কোনো নতুন বার্তা বয়ে আনল? ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো বিজেপির সরকার গঠন, মেঘালয়ে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হলেও সরকার গঠন করতে না পারা, নাগাল্যান্ডে বিজেপি মিত্রদের সরকার গঠন সর্বভারতব্যাপী রাজনীতির জন্য নতুন একটি বার্তা। আর এ বার্তাটি হচ্ছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লির মসনদে বসে যে ‘গেরুয়া বিপ্লবের’ সূচনা করেছিলেন, তা এখন প্রায় পূর্ণ করার পথে নরেন্দ্র মোদি। সেই সঙ্গে আরও একটি বার্তা মোদির সমর্থকরা দিলেন। বিজেপির উত্থান এ অঞ্চলে, বিশেষ করে ত্রিপুরায় একটি সাম্প্রদায়িক ও ‘বামবিরোধী’ রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। বুলডোজার দিয়ে লেনিনের স্ট্যাচু ভেঙে ফেলা, বামপন্থী সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ যে ‘রাজনীতির’ জন্ম দিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ এ দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি। উগ্রপন্থীরা ত্রিপুরায় বাম রাজনীতির এতটুকু চিহ্নও রাখতে চায় না। বিজেপি পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাম ও কংগ্রেসশূন্য করতে চায়। ভারতের ২৯ রাজ্যের মধ্যে ২১টিতে বিজেপি ও তার সমর্থকরা ক্ষমতায়। পুরো ২৯ রাজ্যেই বিজেপি তার গেরুয়া ঝান্ডা ছড়িয়ে দিতে চায়। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের জুটির এখন দরকার আরও আটটি রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, কেরালা, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু ও মিজোরাম। দিল্লি ও পন্ডিচেরির দিকেও হাত বাড়িয়েছে বিজেপি। তাদের টার্গেট এসব রাজ্যে বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠা এবং ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় কেন্দ্রে সরকার গঠন করা। এ লক্ষ্যেই বিজেপি কাজ করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপির কোনো অস্তিত্ব ছিল না কয়েক বছর আগেও। উত্তর-পূর্ব ভারতে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব বেশি। ত্রিপুরায় বামপন্থীদের প্রভাবও বেশি ছিল। এদের প্রভাব কমাতে বিজেপি গঠন করেছিল নর্থ-ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বিজেপির অন্যতম কৌশলবিদ হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে। সেই সঙ্গে বিজেপির সিনিয়র নেতারা নির্বাচনপূর্ব সময়কালে ব্যাপকভাবে এ অঞ্চল সফর করেন। স্থায়ী বন্ধুকে বাদ দিয়ে নতুন বন্ধু খোঁজা ও হর্স ট্রেডিংয়ের কৌশল অবলম্বন করে বিজেপি এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব সম্প্রসারিত করল। এজন্যই দেখা যায়, মেঘালয়ে (মোট আসন ৬০) কংগ্রেস সর্বোচ্চ আসনে (২১ আসন) বিজয়ী হয়েও মাত্র ২ আসন পেয়ে বিজেপি ১৯ আসন নেয়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছে। নাগাল্যান্ডেও বিজেপি ও এনডিপিপির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। ত্রিপুরায়ও বিজেপি ও আদিবাসীদের সংগঠন পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (পিএফটি) সমন্বয়ে সরকার গঠিত হয়েছে। পিএফটিকে মন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর পদও দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে অরুণাচল, আসাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও ত্রিপুরায় এখন বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হল। তবে বলতে দ্বিধা নেই, সবচেয়ে অবাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ত্রিপুরায়।
এই প্রথমবারের মতো বামদের হটিয়ে বিজেপি সেখানে সরকার গঠন করেছে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বামফ্রন্ট সেখানে ক্ষমতায় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সেখানে রাজ্য সরকার পরিচালনা করে আসছিলেন ১৯৯৮ সাল থেকে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৮, সময়টা একেবারে কম নয়। তার নেতৃত্বে বামফ্রন্ট ত্রিপুরায় পরপর চারবার বিধানসভার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল; কিন্তু পঞ্চমবার তিনি ব্যর্থ হলেন বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় নিতে। অত্যন্ত সাদাসিধে ও ‘গরিব’ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মানিক সরকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী, যিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন। বলা হয় অরুণাচল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (কংগ্রেস দলীয়) গেগং আপাং ছিলেন দীর্ঘ সময়ের মুখ্যমন্ত্রী। দু’দফায় (১৯৮০-১৯৯৯, ২০০৩-২০০৭) তিনি ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। একজন সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে মানিক সরকারের পরিচিতি রয়েছে। বোধকরি তিনি একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যার কোনো নিজস্ব বাড়ি নেই। তিনি নিজে মোবাইল ফোনও ব্যবহার করেন না। তার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্সও নেই। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি বেতন পেতেন মাসে ২৬ হাজার ৩১৫ রুপি। কিন্তু পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরো টাকাটা তিনি পার্টি ফান্ডে দান করতেন। তবে পার্টি থেকে তিনি মাসে ৫ হাজার রুপি ভাতা পেতেন, যা দিয়ে তার সংসার চলত (ডেকান হেরাল্ড)। এ ধরনের একজন ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তার নেতৃত্বে বামফ্রন্ট হেরে গেল কেন? এ প্রশ্ন এখন অনেকের। তাহলে কি ত্রিপুরার মতো রাজ্যে, যেখানে বামফ্রন্ট অন্যতম শক্তি হিসেবে সমাজে বিদ্যমান ছিল, নতুন প্রজন্ম সেই শক্তির ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলল? এ প্রশ্ন বারবার উচ্চারিত হবে এবং নিশ্চয়ই সিপিএম নেতারা এসব বিষয় নিয়ে ভাববেন। সেই সঙ্গে আরও একটা কথা। একসময় বাম রাজনীতিকে কংগ্রেসের বিকল্প ভাবা হতো। সিপিএম দীর্ঘ ৩৪ বছর কলকাতায় ক্ষমতায় থেকে একটি বিকল্প রাজনীতি উপহার দিয়েছিল ভারতে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা আর কেরালায় বাম রাজনীতির শক্ত ঘাঁটি ছিল। জনগণের ভোটে তারা বারবার ক্ষমতাসীন হয়েছেন। কিন্তু ২০১১ সালে ছন্দপতন শুরু হয়। প্রথমে গেল পশ্চিমবঙ্গ। এককভাবে মমতা ব্যানার্জি সিপিএম তথা বামফ্রন্টবিরোধী অবস্থান নিয়ে সেখানে বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটান। সাত বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ত্রিপুরায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধারাবাহিকতায় কেরালাতেও কি বাম সরকারের পতন ঘটবে? কেরালায় নির্বাচন হবে তিন বছর পর।
সেখানে সিপিএম নানা অন্তর্™^ন্দ্বে জড়িয়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়েই ভিজয়ান অসুস্থ। ২৫ মে, ২০১৬ সালে সেখানে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে বামফ্রন্ট ১৪০ আসনের বিধানসভায় ৯২টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। যারা ভারতীয় রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন কেরালার রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রণ করে সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট আর ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস। বারবার এদের মধ্যে ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনেও (২০১৬) বিজেপি এখানে সুবিধা করতে পারেনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১১ সালের ১৮ মে সেখানে যে নির্বাচন হয়েছিল, তাতে কংগ্রেস বিজয়ী হলে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন অউমেন চাণ্ডি। আবার এর আগের নির্বাচনে (২০০৬) বিজয়ী হয়েছিল বামফ্রন্ট। এর অর্থ পরিষ্কার- ক্ষমতার পালাবদল ঘটে বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসের মাঝে। বিজেপি এখানে আদৌ ফ্যাক্টর নয়। বিজেপি ত্রিপুরাতেও ফ্যাক্টর ছিল না। ১৯৮৩ সালের পরিসংখ্যান বলে, ত্রিপুরায় বিজেপি ভোট পেয়েছিল ০.০৬ শতাংশ, আর ২০১৩ সালের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ১.৫৪ শতাংশ। সেই বিজেপিই এবার ভোট পেল ৪১.২০ শতাংশ। অর্থাৎ এখানে মোদি ম্যাজিক কাজ করেছে। সুতরাং বিজেপির পরবর্তী টার্গেট যে কেরালা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে পাঠকদের আরও কিছু তথ্য দেই। প্রখ্যাত বাম নেতা নামবুদ্রিপাদ ছিলেন কেরালার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৭ ও ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী)। আবার কংগ্রেস নেতা করুণাকরণ ও একে এন্টনিও ছিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী।
কেরালা বারবার ভারতীয় জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করেছে। তাই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- কেরালায় সিপিএমের বিকল্প কি বিজেপি হতে পারবে? বলতে দ্বিধা নেই, ২০১৪ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ‘মোদি ম্যাজিক’ সারা ভারতে একটা বড় আলোড়ন তুলেছিল। ভারতের মানুষ মোদির কথায় সেদিন আশ্বাস রেখেছিল। বিজেপিকে তিনি বিজয়ী করে দিল্লির মসনদে বসিয়েছেন। এরপর এক কঠোর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি মানুষ প্রত্যক্ষ করে। একসময় মানুষ বিজেপির নাম জানত না। এখন জানে। মোদির সাফল্য এটি, বলতেই হবে। ইতিমধ্যেই বিজেপি ভারতব্যাপী কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। একসময় যে বাম রাজনীতিকে কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হতো, সেই বাম রাজনীতির প্রতি মানুষ ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সাত বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম জনগণের ভোট পায়নি। ২০১৮ সালে পেল না ত্রিপুরায়। তাহলে কি কেরালাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? মোদির টার্গেট তো এখন কেরালা। উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এখন ‘শুভবুদ্ধির’ রাজনীতিকে গ্রাস করছে। একসময় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্য ছিল একটি ‘মডেল’। সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি এখন ভারতে একরকম পরিত্যক্ত! এর বড় প্রমাণ ত্রিপুরার নির্বাচনে সিপিএম এবং একইসঙ্গে কংগ্রেসের ভরাডুবি। মোদি ভারতকে এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? অতি সম্প্রতি আরও একটি উদ্বেগজনক সংবাদ ছাপা হয়েছে অঝওঅ ঞওগঊঝ পত্রিকায় (৭ মার্চ ২০১৮)। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গেল বছর অত্যন্ত গোপনে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন। তাদের কাজ হচ্ছে ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখা এবং স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে তা সংযোজন করা। কমিটির মূল কাজ হচ্ছে এটি প্রমাণ করা যে, ভারতের মাটিতে প্রথম যারা বসবাস করতে শুরু করেছিলেন, তারা মূলত হিন্দু ছিলেন। প্রাচীন যে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাওয়া যায়, তা আসলেই বাস্তব, কোনো ‘মিথ’ বা পৌরাণিক কাহিনী নয়। কেএন দীক্ষিত এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ কমিটি কাজ করছে, যার বাজেট ৪০০ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং বোঝাই যায়, হিন্দুত্ববাদকে পুঁজি করে মোদি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণীও পার হতে চান। তাই নতুন করে ইতিহাস লেখা। উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে মোদি ধারণ করেছেন।
এবং তা প্রমোট করছেন। কিন্তু সামাজিক খাতে মোদির জমানায় অগ্রগতি কতটুকু? নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন তো প্রায়ই বলেন, সামাজিক ক্ষেত্রে কোনো কোনো খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতের চেয়ে ওপরে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। মিথ্যা বলেননি অমর্ত্য সেন। বিশ্বব্যাংকের কতগুলো পরিসংখ্যান আমরা উল্লেখ করতে পারি, যাতে ভারতের সামাজিক চিত্রের একটি দিক ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে (২০১৬) দেখা গেছে- ১. ভারতে প্রতি পাঁচজনের একজন দরিদ্র; ২. সাতটি গরিব রাজ্যে শতকরা ৬২ জন ভারতীয় বসবাস করে; ৩. শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষ বাস করে দরিদ্রতম রাজ্যগুলোতে; ৪. শতকরা ৮০ ভাগ দরিদ্র মানুষ বাস করে গ্রামে; ৫. সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে (৬০ মিলিয়ন) উত্তর প্রদেশে। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে বিহার (৩৬ মিলিয়ন), মধ্যপ্রদেশ (২৪ মিলিয়ন), উড়িষ্যা (১৪ মিলিয়ন), ঝাড়খণ্ড (১৩ মিলিয়ন), ছত্তিশগড় ও রাজস্থান (১০ মিলিয়ন); ৬. দারিদ্র্যের হার আদিবাসীদের মধ্যে বেশি, শতকরা ৪৩ ভাগ; ৭. দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে শতকরা ২১ ভাগের আছে টয়লেট সুবিধা, ৬১ ভাগ পায় বিদ্যুৎ সুবিধা, আর মাত্র ৬ ভাগ সুযোগ পায় কলের পানির। এই পরিসংখ্যান কী বলে? এর বাইরে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কৃষকের আত্মহত্যার খবর আমরা জানি। কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার কাহিনী বিশ্বব্যাপীই আলোচিত। এসব জনগোষ্ঠীর কাছে ‘মোদি ম্যাজিক’ পৌঁছে যায়নি। এদের উন্নয়নে মোদির কোনো কর্মসূচি নেই। মোদি বলেছিলেন ‘মানিক’ ছেড়ে হীরার কথা! স্পষ্টতই তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন মানিক সরকারের হটানোর। হীরা বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন Highways (H), I-way (I), Roadway (R), I Airway (A)। অর্থাৎ উন্নয়ন। উন্নয়নের ‘বটিকা’ তিনি খাওয়াচ্ছেন অশিক্ষিত কোটি কোটি মানুষকে। এটা সত্য ‘সাত বোন’ রাজ্যগুলোতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। ত্রিপুরায় এসে তিনি প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন প্রতিটি বাঙালি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি আর স্মার্ট ফোন দেয়ার! মোদির উন্নয়ন পরিকল্পনার এই হচ্ছে ছবি! কিন্তু যেটা খারাপ খবর তা হচ্ছে, ত্রিপুরায় এখন অব্দি সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে, যা এখন ছড়িয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালাতেও। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে কতগুলো বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। এক. আসামে ‘বাঙালি খেদাও’ অভিযান শুরু করেছে সেখানকার বিজেপি সরকার। ত্রিপুরায় এর একটা প্রভাব পড়তে পারে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বাঙালি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ সেখানে থেকে যেতে পারেন। ফলে সেখানেও একটা ‘বাঙালি খেদাও’ অভিযান শুরু হতে পারে। এই ‘বাঙালিরা’ মূলত মুসলমান এবং বিজেপি তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়। দুই. নির্বাচনের আগে বিজেপি ত্রিপুরায় আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক রাজ্যের ধারণাকে সমর্থন করেছিল। এখন নতুন সরকার এ দাবি যদি মেনে নেয়, তাহলে অন্যান্য রাজ্যেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাধারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তিন. উত্তর-পূর্ব ভারত এখন বিজেপির কব্জায় চলে যাওয়ায় ‘বাংলাদেশবিরোধী’ প্রচারণা সেখানে শক্তিশালী হতে পারে। এতে করে মোদি উপ-আঞ্চলিক জোটের (বিবিআইএন) যে ধারণা প্রমোট করেছিলেন, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তন ভারতকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই দেখার বিষয়।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahman09@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.