জমি দিলে মিলবে চাকরি
শিল্পের জন্য দিলে জমিদাতা পাবেন চাকরি অথবা জমির মান এবং মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জমির সমস্যা দূর করতে রাজ্য সরকার জমিদাতাদের জমির পরিবর্তে চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ৩৪ বছর একটানা শাসন করে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাট থেকে বিদায় নিয়েছিল বাম দলের জোট বামফ্রন্ট। আর এই বিদায় নেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল শিল্পের জমি। বামফ্রন্ট সরকার ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠীকে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে স্থানীয় চাষিদের দাবি উপেক্ষা করে ৯৯৭ একর চাষের জমি অধিগ্রহণ করে। ২০০৬ সালে সেই জমি টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানা নির্মাণের জন্য তুলে দিয়েছিল টাটাদের হাতে। এটাই সেদিন মেনে নিতে পারেনি রাজ্যের বিরোধী নেত্রী ও তৃণমূলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তিনি শুরু করেছিলেন রাজ্যজুড়ে আন্দোলন। সেই আন্দোলনের জেরেই ২০১১ সালে রাজ্য বিধাসভার নির্বাচনে বিপুল জোটে হারে বামফ্রন্ট। ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিপুল ভোটে জয়ী হলেও তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের শিল্পে গতি আনতে পারেনি।
অধিকাংশ স্থানেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেই জমিজট। কারণ, মমতা জয়ী হয়ে ঘোষণা দেন, তার সরকার জোর করে কোনো জমি অধিগ্রহণ করবে না। আর এ ঘোষণার পর শিল্প গড়তে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে মমতার তৃণমূল সরকার। কারণ, যেখানের জমি শিল্পপতিরা চাইছে, সেখানের জমি অধিগ্রহণ করতে বাধা আসছে জমিদাতাদের কাছ থেকে। কারণ, কেউ না কেউ দাবি তুলে বসছেন তাঁরা জমি দেবে না। ফলে গোটা রাজ্যেই শিল্পায়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। তা ছাড়া এই জমিজটের কারণে এই রাজ্যের বহু প্রকল্পই আটকা পড়েছে। জমিদাতারাও নিত্যনতুন দাবি তুলছেন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জমিজট কাটাতে তৃণমূল সরকারের জমির বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ। রাজ্য সচিবালয় নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, যাঁরা জমি দেবেন, তাঁদের জমির ওপর ভিত্তি করে এবং পরিবারের যোগ্য সন্তানদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে তাঁদের চাকরি দেওয়া হবে। তবে কেউ যদি চাকরির সুযোগ গ্রহণ না করেন, তবে সে ক্ষেত্রে তাঁদের জমির বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জমিজটের কারণে পশ্চিমবঙ্গে আটকে থাকা প্রকল্পগুলোতে প্রাণ আনতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এ প্রস্তাবটি এখন রাজ্য সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায়। সরকার অনুমোদন দিলে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নে নতুন করে প্রাণ আসবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে জমিদাতারা এ প্রস্তাব কতটা গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
No comments