ট্রাম্পের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট স্ট্র্যাটেজি’ by জি. মুনীর
১৮
ডিসেম্বর ২০১৭। এই দিনটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ করেন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্র্যাটেজি’। আগেকার নিরাপত্তা
নীতিকৌশলের মতো এই নিরাপত্তা দলিলেও প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্র
কংগ্রেসে ১৯৮৬ সালের ‘গোল্ডওয়াটার-নিকোলাস অ্যাক্ট’ পাস হওয়ার পর থেকে
যেক’টি এই নিরাপত্তা কৌশল দলিল প্রণীত হয়েছে, এর প্রতিটির থিমই ছিল, এই
বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখা। এই আইনের মাধ্যমে ম্যান্ডেট দেয়া হয় যে,
প্রেসিডেন্টকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার রূপকল্প বা ভিশন
প্রণয়ন করতে হবে। ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রজেক্টের সাথে খাপ খাইয়ে তিনি এই
নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছেন ‘মেইক অ্যামেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ধারণাকে
সামনে রেখে ৫৫-পৃষ্ঠার এই নিরাপত্তা দলিলে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে
‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট স্ট্র্যাটেজি’। এই দলিলের মতো আমেরিকার আর কোনো দলিলে
‘অ্যামেরিকান’ বিশেষণটি এতটা আবিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এখানে বিধৃত
স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে : ‘to protect the American people, the American way
of life or American interests’ or ‘A strong America is in the vital
interest of the American people.’। এটি যেন এমন কথারই অব্যাহত উচ্চারণ যে,
আমেরিকানরাই কোনো না কোনো উপায়ে আমেরিকাকে আবারো ‘গ্রেট’ করে তুলবে। এই
নিরাপত্তা কৌশলের ধাঁচটি হচ্ছে এমন যে, আমেরিকাকে ক্ষমতাধর করে তোলা যাবে
না, যদি দেশটির অর্থনীতি দুর্বল থেকে যায়। অর্থনীতিতে নতুন করে
প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, কম করারোপ
ও কম বিধিনিষেধ আরোপ করে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে
হবে। আরো জোরদার অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে সুযোগ করে দেবে আরো বড় মাপের
সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার। আর এটাই হবে বিশ্বে সুপার পাওয়ার হিসেবে টিকে
থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রর বড় অবলম্বন। বিশ্বে আমেরিকার বিরোধিতা রোধ করতে
আমেরিকার চাই একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির
অর্থ হচ্ছে, যেকোনো পরিকল্পনায় আমেরিকানদের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় আনা। আর
বৈষম্যের এই বিশ্বে আমেরিকাকেই সবার আগে রাখা, অন্যদের পেছনে ঠেলে দেয়া।
‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট স্ট্র্যাটেজি’র ক্ষেত্রে আমেরিকার ‘অর্থনৈতিক
নিরাপত্তা’ বলতে কী বুঝব? ট্রাম্পের পুরো অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা একটা বাজি
বৈ কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল দলিল স্বীকার করে,
যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেশনগুলো সে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এরা
ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার ধরে রাখছে; কিন্তু বিনিয়োগ করছে না উৎপাদনশীল খাতে।
এই কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কট সময়ের পর থেকে
রিস্ক অ্যাভারসন (ঝুঁকি এড়ানো) ও রেগুলেশনের (বিধিনিষেধ আরোপের) স্থান
প্রতিস্থাপিত হয়েছে ইনভেস্টমেন্ট ও এন্টারপ্রিনিউয়ারশিপের মাধ্যমে।
ট্রাম্পের ইকোনমিক টিম ধরে নিয়েছে, কর ও বিধিনিয়ন্ত্রণ আরোপ কমিয়ে আনার ফলে
ব্যবসাায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হবে আমেরিকায় বিনিযোগের ব্যাপারে। আর এর
ফলে আমেরিকার সাধারণ নাগরিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। কর্মসংস্থানের আয়তন
বাড়বে। এ ধরনের ‘ট্রিকল-ডাউন’ পলিসির প্রমাণ খুবই দুর্বল। বিগত এক দশকে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ প্রশ্নে যত প্রণোদনা দেয়া হয়েছে,
এর সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কম সুদহারে করপোরেশনগুলো সরকারি ঋণ
পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এই অর্থ এরা উৎপাদনশীল খাতে কিংবা সাধারণ
মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির খাতে বিনিয়োগ করেনি। বরং এর পরিবর্তে এরা এই
অর্থ এমন খাতে বিনিয়োগ করছে, যেখানে উচ্চ উৎপাদনশীলতা হার ও অটোমেশন কার্যত
কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধিকেই নিরুৎসাহিত করেছে। অপর দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের
কিছু কিছু জনগোষ্ঠীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে।
অবাক হওয়ার বিষয় নয়- জাতিসঙ্ঘের চরম দারিদ্র্য তথা এক্সট্রিম পোভার্টি ও
হিউম্যান রাইটসবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ফিলিফ অ্যালস্টন যুক্তরাষ্ট্রের
দারিদ্র্য সম্পর্কে বিব্রতকর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের
নিরাপত্তা কৌশলপত্র ও এই প্রতিবেদন একই সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। অ্যালস্টনের
এই প্রতিবেদন যেন এ সময়ের যুক্তরাষ্ট্র সমাজের কিছু কিছু অংশে অবতীর্ণ হলো
এক কাব্যিক সূচক হিসেবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা মানবেতর
জীবনযাপন করছে সেখানকানকার স্কিড রো-তে। লস অ্যাঞ্জেলেসের স্কিড রো হচ্ছে
একটি ৫৪-ব্লক এরিয়া, যেখানে বসবাস করছে দেশটির হোমলেস পিপলের সবচেয়ে বড়
কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। নিউ ইয়র্ক সিটিতেও রয়েছে এমন গৃহহীন মানুষের বসবাস।
তবে লস অ্যাঞ্জেলেসের এসব ক্যাম্পের মানুষ বসবাস করে রাস্তার পাশে তাঁবুর
নিচে। সেখানে নেই তেমন কোনো সেনিটেশনের ব্যবস্থা। গত সপ্তাহেও লস
অ্যাঞ্জেলেসে এসব হোমলেস পিপলের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে, গুলিতে মারাও
গেছে একজন। সম্প্রতি সানফ্রান্সিসকোতে পুলিশ একদল গৃহহীন মনুষকে একটি স্থান
থেকে সরে যেতে বলে; কিন্তু তারা কোথায় যাবে, সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি
পুলিশ। পোয়ের্টেরিকোর দক্ষিণে একটি পাহাড়ের পেছনে কিছু দরিদ্র লোক বসবাস
করছে। এদের ওপর অবাধে পড়ছে কয়লার ছাই ও কয়লাবৃষ্টি। সম্পূর্ণ অরক্ষিত এরা।
লেকাসগণনা পরিসংখ্যান মতে, চার কোটি আমেরিকান, অর্থাৎ প্রতি আটজনে একজন
আমেরিকান দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত।
এদের অর্ধেক চিহ্নিত ‘ডিপ পোভার্টি’
শ্রেণীভুক্ত। অ্যালস্টন রিপোর্ট মতো, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে পাস হওয়া
ট্যাক্স বিল দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈষম্যমূলক সমাজে পরিণত করবে।
প্রটেস্ট্যান্ট মিনিস্টার ও নর্থ ক্যারোলিনার রাজনৈতিক নেতা রেভারেন্ড
উইলিয়াম বার্বার এখন নতুন আন্দোলন গড়ে তুলছেন ‘পুওর পিপলস ক্যাম্পেইন’
নামে। এর মাধ্যমে আমেরিকার দারিদ্র্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি
রাষ্ট্র ও মার্কিন সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের কথা তুলে ধরা হচ্ছে। রেভারেন্ড
বার্বার মনে করেন, সে দেশে এমন কোনো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হতে পারে না,
যেখানে হতদরিদ্রদের একপাশে ঠেলে দেয়া হয়। আমেরিকান নাগরিকদের জন্য
সত্যিকারের হুমকি কোনটি? এই হুমকি কি উত্তর কোরিয়া, না দেশটির চরম
দারিদ্র্য বা ক্ষুধা? ট্রাম্প আভাস দিয়েছেন, তিনি নাগরিকদের কল্যাণের
ব্যাপারে সচেতন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কৌশলপত্রের পরামর্শ
হচ্ছে- আমেরিকার সাধারণ মানুষকে উত্তর কোরিয়ার হুমকির বিষয়টি আমলে নিতে
হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি হচ্ছে : ‘allow families to live without
fear, and permit markets to thrive’। আলোচ্য নিরাপত্তা কৌশলপত্রে এটিই
হচ্ছে ‘মোস্ট ওনেস্ট লাইন’। আমেরিকাকে সচেতন থাকতে হবে উত্তর কোরিয়া
সম্পর্কে, অপর দিকে, করছাড় থেকে উপকৃত হবে করপোরেশনগুলো। কারা সেই পিশাচ,
যাদের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আঙুল তুলছে। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বকে যেভাবে
দেখছে, তার পূর্ববর্তী ও স্নায়ুযুদ্ধোত্তর সময়ের প্রশাসনগুলোও পৃথিবীটাকে
ঠিক সেভাবেই দেখেছে। প্রকৃতপক্ষে এরা এই হুমকি সংজ্ঞায়িত করতে ব্যবহার করে
একই পদবাচ্য- ‘রিভিশনিস্ট পাওয়ার (রাশিয়া ও চীন) চায় আমেরিকান হেজিমনি রোধ
করতে; ‘রগ স্টেটস’ (উত্তর কোরিয়া ও ইরানে প্রয়োজন সরকারের পরিবর্তন;
‘জিহাদিস্ট টেরোরিস্ট গ্রুপগুলোর ওপর উপর্যুপরি আঘাত হানতে হবে পূর্ণ
মার্কিন সামরিক শক্তি ব্যবহার করে। পূর্ববর্তী মার্কিন সরকারগুলো অন্তত
জর্জ বুশ ও বারাক ওবামার সময় থেকে এটাই বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে
শক্তির একটা অবনতি ঘটেছে। এরা চেষ্টা করেছে তাদের শক্তি ফিরিয়ে আনতে সামরিক
শক্তি ব্যবহার করে- অন্তহীন ‘ওয়ার অন টেরোর’ চালু রেখে এবং বহুপক্ষীয়
ট্রেড এগ্রিমেন্ট ব্যবহার করে। ওবামা চীনের বাণিজ্যিক ভূমিকা খর্ব করার
জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিলেন ট্র্যান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ এবং
ট্র্র্যান্স আটলান্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঐকমত্য হচ্ছে- ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের কড়াকড়ি
আরোপ ও অ্যান্টি-পাইরেসি রুলস ব্যবহার করে চীনকে এমনভাবে বাধাগ্রস্ত করা,
যাতে দেশটি শ্রমঘন ম্যানুফ্যাকচারিং হাব থেকে হাই-টেকনোলজি-ড্রিভেন
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাওয়ার হাউজে পরিণত হতে না পারে। বুশ ও ওবামা উভয়ই সচেষ্ট
ছিলেন চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন শক্তিকে কাজে লাগাতে; কিন্তু তাদের প্রয়াস
একটা জায়গায় এসে থেমে যায়। আর ট্রাম্প বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক সেই
জায়গাটিতেই। আসলে, ট্রাম্পের কৌশল হচ্ছে, চীনের মতো দেশকে সামরিক শক্তি
ব্যবহার করে থামিয়ে দিতে। ট্রাম্পের কৌশলের তাগিদ হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র
সরকারকে বিশ্বজুড়ে আমেরিকার প্রভাব আরো জোরদার করে তুলতে কাজ করতে হবে, আর
জোরদার করতে হবে আমেরিকার সামরিক শক্তি, যাতে আমেরিকার ‘সুপিরিওরিটি’
অব্যাহতভাবে জারি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্য নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশিত
হওয়ার পরপরই আমরা ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পেলাম একটি চরম দুষ্ট সিদ্ধান্ত :
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তেল আবিব থেকে মার্কিন
দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তরে ট্রাম্পের চরম অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য আদেশ।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিশ্বের প্রায় সব দেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের
সমর্থক আরব দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান
করেছে। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব
উত্থাপন করে মিসর। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়। এরপর
তুরস্ক ও ইয়েমেন সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সহায়তায় বিষয়টি নিয়ে যায়
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে। সেখানে প্রস্তাবটি বিপুলভোটাধিক্যে পাস হয়।
আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশই আমেরিকার বিরুদ্ধে ভোট
দেয়। যদিও আমেরিকা হুমকি দিয়েছিল, যেসব দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেবে,
তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে।
এ ঘটনা প্রমাণ করে ট্রাম্প
প্রশাসনের নীতি বিশ্বে আমেরিকার প্রভাব তো বাড়েইনি, বরং কমছে। আসলে
যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস আবহাওয়া চুক্তি থেকে ও ইউনেস্কো থেকে প্রত্যাহার
করে নেয়ার বিষয়গুলো আমেরিকান প্রভাবের অধিকতর দুর্বলতারই প্রমাণবহ। এদিকে
ডিপ্লোম্যাসি খাতে খরচ কমিয়ে আনার ফলে, বিশ্বের ওপর আমেরিকার প্রভাব আরো
কমবে বলেই মনে হয়। এরপর অবশেষ থাকে যুদ্ধ। আলোচ্য নিরাপত্তা কৌশলপত্রে
প্রতিফলন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের। যুক্তরাষ্ট্রে
সামরিক বাহিনীকে দেখা হয় মার্কিন পরাশক্তির স্যালভেশন টুল হিসেবে। ট্রাম্প
আগ্রাসীভাবে বাড়িয়েছেন মার্কিন সামরিক ব্যয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে
ওয়েল-ফান্ডেড মিলিটারি ফোর্স। ট্রাম্প তার দেশের সামরিক ব্যয়ের তহবিল
যতটুকু বাড়িয়েছেন, সে পরিমাণ অর্থ রাশিয়া সামরিক বাহিনীর পেছনে সারা বছরে
খরচ করে না। মার্র্কিন নিরাপত্তা কৌশলপত্রের একটি লাইন এমন : ‘We must
convince adversaries that we can and will defeat hem- not just punish
them if they attack the United States.’। আমেরিকার সামরিক বাহিনী জোরদার
করে তোলার পেছনে মূল মন্ত্রটা এটাই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র চীন বা রাশিয়ার
সাথে যুদ্ধে লড়েও জয়ের মুখ দেখবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা করে। বিগত দুই দশক
ধরে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করে যাচ্ছে সেসব দেশের সাথে মিত্রতা গড়ে তুলতে,
যেগুলো রাশিয়া ও চীনের বৈরী। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত তেমনি একটি দেশ।
ট্রাম্পের নিরাপত্তা কৌশলপত্রে বলা আছে : ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের
কৌশলগত সম্পর্ক আরো গভীরতর করতে হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়তা করতে হবে। কারণ, এ অঞ্চলে এর প্রভাব প্রতিপত্তি
বাড়িয়ে তুলছে চীন। আমেরিকার উদ্বেগ হচ্ছে চীনের প্রভাব নিয়ে, সে
প্রেক্ষাপটেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। একইভাবে রাশিয়াকে
দমাবার জন্য আমেরিকা চায় পূর্ব-ইউরোপের দেশগুলোর সাথে মিত্রতা গড়ে তুলতে।
পশ্চিম গোলার্ধে ও আফ্রিকায় হুমকি হচ্ছে চীন ও রাশিয়া। এসব দিকে ট্রাম্পের
অতিমাত্রিক নজর থাকায় যেমনি আমেরিকার দরিদ্র্যজনগোষ্ঠী বঞ্চনার শিকার
হচ্ছে, দেশটিতে বাড়ছে মানুষে-মানুষে বৈষম্য, তেমনি গোটা বিশ্ব এখন রূপ
নিচ্ছে সুপরিসর এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে। মানবজাতি এসে দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ এক
নিরাপত্তা হুমকিতে। যুক্তরাষ্ট্র এ পথ ছেড়ে কখন মানবিকতার সড়কপথে হাঁটবে,
সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
No comments