যে ছবি বদলে দিল জীবন
তিনি
কোনো খ্যাতনামা চিত্রগ্রাহক নন। অথচ তাঁর তোলা এক ছবি যে এতটা সাড়া
ফেলবে, তা কল্পনাই করেননি। ওই ছবি পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। কারণ, ছবির
বিষয়বস্তু যেনতেন কিছু নয়। ছবির চারজনের তিনজনই ব্রিটিশ রাজপরিবারের। আর
একজন শিগগিরই রাজপরিবারের সদস্য হতে যাচ্ছেন। গত ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে
যুক্তরাজ্যের নরফোকের সানড্রিংহামে এসেছিলেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
বংশপরম্পরায় এই সানড্রিংহামেই রয়েছে রানির ব্যক্তিগত বাড়ি। সেই সময় প্রিন্স
উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেট মিডলটন, প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর বাগদত্তা
মেগান মার্কেলকে একসঙ্গে ক্যামেরাবন্দী করেন কারেন এনভিল। আলোচনায় আসা এই
ছবিটি নিয়ে আজ রোববার বিবিসি অনলাইনে খবর প্রকাশ করা হয়। কারেন এনভিল
নরফোকের ওয়েলিংটনের এক হাসপাতালে কাজ করেন। আর এই রাজকীয় ছবি তোলার পর
থেকেই বদলে যেতে শুরু করেছে কারেন এনভিল ও তাঁর মেয়ে র্যাচেলের জীবন। বড়
বড় গণমাধ্যম ও প্রকাশকেরা তাঁর কাছ থেকে ছবিটি কিনে নিচ্ছে। ছবি চেয়ে দিনভর
তাঁর কাছে ফোন আসে এখন। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও তাঁকে এখন অনেক ফোন ধরতে হয়।
কারেনের ভাষায়, কর্মক্ষেত্রে ফোন ধরে তাঁকে সহকর্মীদের বলতে হয় যে তাঁর
এজেন্ট ফোন করেছে। সহকর্মীরা তা শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও তিনি বেশ লজ্জা
পান। তিনি জানান, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছবিটি
পেতে ফোন আসে তাঁর কাছে। এখন পর্যন্ত কানাডা, স্পেন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র,
জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টি প্রকাশনা ছবিটি কিনে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের
‘হ্যালো’ ম্যাগাজিন এই জানুয়ারিতে তাঁর তোলা ছবিটি দিয়ে প্রচ্ছদ করেছে।
কারেন এনভিল জানান, ‘হ্যালো’ ম্যাগাজিনে তাঁদের মা-মেয়ের ছবিও ছাপা হয়েছে। এ
জন্য তিনি বেশ খুশি।
তাঁর মতে, ‘এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।’ তিনি
বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমার কিছু কাজের প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু সত্যি বলতে,
আমি নিজেকে ততটা উঁচু দরের ভাবতে পারছি না। বেশ কয়েকজন বন্ধু গুগলবক্সে
(ব্রিটিশ রিয়্যালিটি শো) অংশ নিতে বলছে। কিন্তু এটা আমার জন্য না আসলে।’
তিনি জানান, দুটি চাকরি থেকে আসা অর্থ দিয়ে তাঁর সংসার চলে। তিনি একাকী মা
হওয়ায় ছবি থেকে উপার্জন হওয়ায় আনন্দিত। তিনি বলেন, এই ছবি ইতিহাসের অংশ
হবে। যেকোনো অভিভাবক তাঁর সন্তানের কথা ভেবে এ ধরনের সুযোগ নিতে পারেন।
‘রাজকীয়’ ছবিটি বিক্রি করে কী পরিমাণ অর্থ উপার্জন হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো
তথ্য দেননি তিনি। শুধু বললেন, ‘অর্থের দিক দিয়ে এটা অর্ধেক মিলিয়নও নয়। তবে
এটা অনেক উপকারে এসেছে আমাদের।’ মেয়ে নার্সিংয়ে পড়তে চায় জানিয়ে তিনি
বলেন, ছবি বিক্রির অর্থ দিয়ে তিনি মেয়ের সব বই কিনে দিতে পারবেন, খরচ
চালাতে পারবেন এবং এটাই তিনি করতে চেয়েছিলেন। মেয়ের জন্য নানান পরিকল্পনা
করছেন এখন কারেন এনভিল। জানালেন, মেয়েকে গাড়ি চালনা শেখাবেন এবং গাড়ি কিনতে
সহায়তা করবেন। নার্স হিসেবে কাজ শুরু করলে মেয়ের গাড়ির প্রয়োজন হবে। তা
ছাড়া মেয়ের ১৮তম জন্মদিন পালন করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
বললেন, অর্থ তাঁকে এসব করতে সহায়তা করছে। যাতে তাঁর মেয়ে অনেক সুখস্মৃতি
জমা করে রাখতে পারে। ছবি তোলা থেকে এক্ষুনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইছেন না
কারেন এনভিল। বললেন, ‘আমি অবশ্যই পরের বড় দিনে সানড্রিংহামে যাচ্ছি, আমি
রাজপরিবারের শিশুদের দেখতে চাই এবার!’ যাঁদের নিয়ে এই ছবি, রাজপরিবারের সেই
চারজন ছবিটি নিয়ে কী ভাবছেন, তা খুব জানতে ইচ্ছা করে তাঁর। তবে এর জন্য যে
তাঁকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে তা তিনি বুঝে গেছেন।
No comments