ট্রাম্পের টুইটই প্রমাণ তিনি প্রতিভাবান নন
গত
শনিবার ভোর। অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। এরই মধ্যে
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে ফেলেন। বিষয়বস্তু—তিনি কতটুকু
প্রতিভাবান ও বুদ্ধিমান। তাঁর ভাষ্য, ‘পুরো জীবনে আমার দুটি প্রধান
বৈশিষ্ট্য হলো মানসিক স্থিতিশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা।...আমি দারুণ সফল
ব্যবসায়ী, টেলিভিশন তারকা ছিলাম। এখন প্রেসিডেন্ট। আমি নিজেকে কেবল
বুদ্ধিমানই নয়, স্থিতিশীল ও প্রতিভাবান বলে মনে করি।’ সাংবাদিক মাইকেল
উলফের বই ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্পস হোয়াইট হাউস প্রকাশিত
হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের মানসিক ভারসাম্যের প্রশ্নটি আবার আলোচনায়। এরই
পরিপ্রেক্ষিতে টুইট করে নিজের গুণকীর্তন করেন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের
হোয়াইট হাউসের যে ছবিটি উলফ এঁকেছেন, তা বিশৃঙ্খল প্রশাসনের ছবি। আর
ট্রাম্পের আচরণ রীতিমতো শিশুসুলভ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। উলফ লিখছেন,
ট্রাম্পের আশপাশের লোকজনই মনে করেন তাঁর মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। এর
জবাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করছেন, তিনি ‘ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট সুপার
জিনিয়াস’ অর্থাৎ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা। আসলেই কি তা-ই? অন্তত তাঁর
করা টুইটগুলো দেখে সেটা মনে হয় না। কারণ, তিনি প্রায়ই যে ধরনের টুইট করেন,
তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনার সৃষ্টি হয়। মানসিক সুস্থতা নিয়ে যে বিতর্ক শুরু
হয়েছে, তা অন্তত ট্রাম্পের জন্য ইতিবাচক নয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর উচিত
অর্থনীতি, শেয়ারবাজার ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। তা
না করে তিনি এমন বিষয়ের অবতারণা করছেন টুইটে, যা তাঁকে আরও বিতর্ক ও
নেতিবাচক খবরের মধ্যে ফেলে দেয়। যেকোনো কৌশলী রাজনীতিবিদ এমন বিষয় নিয়ে
কথার যুদ্ধে নামেন, যা তাঁর পক্ষে যাবে।
অথবা কথার লড়াইকে নিজের অনুকূলে
নিয়ে আসেন। কিন্তু ট্রাম্প এমন বিষয় নিয়ে কথার লড়াইয়ে নামছেন, যা তাঁর
প্রতিকূলেই যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি বুদ্ধিমান, নাকি মানসিকভাবে
অস্থিতিশীল? এমন বিতর্কে আর যা-ই হোক ট্রাম্পের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে না।
তারপরও কথার লড়াইয়ে নামছেন কেন ট্রাম্প? কারণ, তাঁর গোপন কৌশল হলো আদতে
কোনো কৌশল না থাকা। তিনি কখনো পরিকল্পনা করে কোনো কাজ করেন না। কিছু মাথায়
এলেই তা করে ফেলেন। নিজের লেখা দ্য আর্ট অব দ্য ডিল বইয়ের প্রথম পাতাতেই
তাঁর স্বীকারোক্তি, ব্যবসায়ী হিসেবে দৈনন্দিনের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে তিনি
কাজ করেননি। এভাবে কাজ করেই তিনি সফল হয়েছেন। ধনকুবের, টেলিভিশন তারকা এবং
সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে আচরণের পরিবর্তন আনতে যাবেন কেন তিনি?
বিশ্বই বরং ট্রাম্পকে বুঝতে দেরি করেছে। প্রেসিডেন্ট পদকে খুব ধীরস্থির ও
চিন্তাশীল জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি যা করেন তা বৃহত্তর নীতি,
কর্মকৌশল ও অ্যাজেন্ডার অংশ হিসেবে করেন, এমনটাই ধারণা সবার। কিন্তু
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের বেলায় সেই ধারণা মোটেও খাটে না। পুরোই
ব্যতিক্রম। তিনি কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন এবং কোনো ভাবনাচিন্তা ছাড়া
নিজের মর্জিমতো তা করবেন, এটাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈশিষ্ট্য।
No comments