উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরবে সরকার
তিন
বছর পর আবারও সব দাতাকে নিয়ে সভা করবে বাংলাদেশ। ঠিক জাতীয় নির্বাচনের
বছরেই ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) এই সভা অনুষ্ঠিত
হবে। অবশ্য গতবার বিডিএফ সভার আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু হোলি
আর্টিজান ট্র্যাজেডিসহ বিভিন্ন কারণে তা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবারের সভার আয়োজন করছে। অন্যদিকে
বাংলাদেশে কার্যরত দাতাদের ফোরাম স্থানীয় পরামর্শক গোষ্ঠী (এলসিজি) এ সভায়
দাতাদের পক্ষে সমন্বয় করছে। বিডিএফ সভা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, এবারের সভায় দাতাদের কাছে বাংলাদেশের
উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই
উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি কী, তা তুলে ধরা হবে। এ
ছাড়া এ বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার
যোগ্যতা অর্জন করবে। মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও মানব উন্নয়নে দেশের
অগ্রগতিগুলো প্রাধান্য পাবে। মূলত এই তিনটি বিষয়ই এবারের বিডিএফের মূল
আলোচনার বিষয়বস্তু বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে। দুই দিনের বিডিএফ বৈঠকে মোট
আটটি বিষয়ে আটটি কর্ম অধিবেশন হবে। বিষয়গুলো হলো কৃষি খাতে জলবায়ু
পরিবর্তনের ঝুঁকি কমানো; বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে পরিবেশ সৃষ্টি;
বৈষম্য দূর ও সবার জন্য স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করা; দক্ষ মানবসম্পদ
উন্নয়নে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি; নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নারীর
প্রতি সহিংসতা বন্ধ; স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ;
টেকসই উন্নয়নে নগর সুবিধা উন্নয়ন এবং এসডিজির অর্থায়ন। প্রতিটি কর্ম
অধিবেশনে খাতওয়ারি উপস্থাপনা তুলে ধরবে ইআরডি। এর পাশাপাশি প্রতিটি কর্ম
অধিবেশনেই খাতওয়ারি সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে জানান
ইআরডির কর্মকর্তারা। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা
সরকারের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। এসব অধিবেশনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা
বক্তব্য দেবেন। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, দাতারা বাংলাদেশের উন্নয়নে কীভাবে
অংশ নিতে পারে, এবারের সভা থেকে সেই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চায় বাংলাদেশ।
দুই দিনের সভা শেষে বাংলাদেশ সরকার ও দাতারা একটি যৌথ ঘোষণা দেবে। কীভাবে
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) সঙ্গে সমন্বয় করে
দাতারা সহযোগিতা করবে, তা যৌথ ঘোষণায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বিডিএফে
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের পরিকল্পনা জানানো হবে। মূলত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক
পরিকল্পনা ও এসডিজির অগ্রগতিই বেশি প্রাধান্য পাবে। এলডিসির তালিকা থেকে
বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি
কেমন তা নিয়েও আলোচনা হবে। অতিথি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনব্যাপী
বিডিএফ সভা হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার উচ্চপদস্থ
কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সভায় অংশ নিতে ঢাকায় আসবেন
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেত্তি ডিক্সন,
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়ান চাই জাং। দুই দিনব্যাপী এ বৈঠকে জাপান,
নেদারল্যান্ডসসহ ৩৬টি দাতা সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এবারের
বিশেষ আকর্ষণ হলো, ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আসতে পারেন। সরকারের পক্ষ
থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে তাঁর বিডিএফ
সভায় অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সম্মতি জানা যাবে। ভারত এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড়
উন্নয়ন-সহযোগী। তিনটি লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) মোট ৮০০ কোটি ডলার দিচ্ছে
ভারত। এ জন্য ভারতের অর্থমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ২০১৫ সালের
নভেম্বর মাসে সর্বশেষ বিডিএফ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভায় পদ্মা সেতু নিয়ে
টানাপোড়েনের কারণে বিশ্বব্যাংকের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নিতে
আসেননি। এর আগে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত
হয়েছিল। পরে পদ্মা সেতু ইস্যু, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে দাতাদের
সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন তৈরি হয়। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও পরের ছয়
বছর কোনো বিডিএফ সভা হয়নি।
No comments