রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তার মেঘ by মিজানুর রহমান
জাতিসংঘ,
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলোর
উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যেই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরানোর আয়োজন
চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। আগামী ১৫ই জানুয়ারি নেপি’ডতে
প্রত্যাবাসনের ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট বা মাঠ পর্যায়ের কাজের চুক্তি সই
হওয়ার কথা। ওই দিনই হবে প্রত্যাবাসন বিষয়ক বাংলাদেশ-মিয়ানমার জয়েন্ট
ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক। মিয়ানমার সরকার আগেই জানিয়েছে, আসন্ন ২২শে
জানুয়ারি বাস্তুচ্যুত ৪৫০ হিন্দু শরণার্থীকে গ্রহণের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতে চায় তারা। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসন বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বাধ্যবাধকতা মানতে চায়। কর্মকর্তারা
বলছে, গত ২৩শে নভেম্বর সই হওয়া ওই চুক্তি মতে, দুই মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২২শে
জানুয়ারির মধ্যেই বাস্তুচ্যুতদের রাখাইনে ফেরানোর কাজ শুরুর প্রস্তুতি
রয়েছে ঢাকার।
তবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে বাস্তুচ্যুত হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে গ্রহণে মিয়ানমারের আগাম ঘোষণা নতুন জটিলতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যেসব বৈঠকাদি হয়েছে তার কোথাও আলাদাভাবে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে ফিরিয়ে নেয়ার আলোচনা হয়নি। বরং ২০১৬ সালের পর বাস্তুচ্যুত রাখাইনের হিন্দু-মুসলিম সব নারী-পুরুষ ও শিশুদের ফেরানোর আলোচনাই হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা সমপ্রতি মানবজমিনকে বলেন, ২০১৬ সালের পর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে তাদের সবাইকে একসঙ্গে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। মিয়ানমারও এক সঙ্গে সবাইকে গ্রহণে প্রস্তুত নয়। সেখানে ফেলে আসা রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সামপ্রতিক সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৮শ’ গ্রামের অর্ধেকের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৮ গ্রাম একেবারে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, রাখাইন পরিস্থিতি মিয়ানমার কখনো স্বীকার করেনি। তারা এ নিয়ে বরাবরই ব্লেমগেম করেছে। ২৫শে আগস্টের পর রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী ‘উগ্রপন্থিদের দমন’ করতে অভিযান চালাচ্ছে বলে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছে। অথচ সেখানে যা ঘটেছে তা বিশ্ব সমপ্রদায়ের নজর এড়ায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, দুনিয়া দেখেছে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল চেষ্টায় বর্মী বাহিনী কিভাবে সেখানে বর্বরতা চালিয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিয়েছে। এ ঘটনায় নোবেল জয়ী অং সান সুচি এবং তার সরকার বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে আর শেখ হাসিনা সরকার প্রশংসা ও সম্মান কুড়িয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের নিজ ভূমে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরানোর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক চাপ হালকার জন্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তড়িঘড়ি বা হিন্দুদের আগে ফেরানোর কৌশল নিয়েছে কি-না? সেটি নিশ্চিত হতে চায় ঢাকা। দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জোর দিয়েই বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনটি টেকসই করতেই তাদের সব প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সুপারিশগুলো বিবেচনায় রেখেই দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। জাতিসংঘ স্পষ্ট করেই বলেছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগুলেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। সেখানে বাস্তুচ্যুতরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা দিয়েই তাদের ফেরাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জোর বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যাবে না। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি হতে হবে স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে। পুরো প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।
এদিকে রেডিও ফ্রি এশিয়া মিয়ানমার ডেটলাইনে গতকাল যে রিপোর্ট করেছে তাতেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ না কাটার ইঙ্গিত করেছে। রিপোর্টে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে- মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়া জানিয়েছেন, ২২শে জানুয়ারি বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের গ্রহণে প্রস্তুত মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে তারা বাংলাদেশের কাছে অনেক আগেই যাছাই-বাছাই’র ফরম পাঠিয়েছেন। কাগজপত্রহীন লোকজন ওই ফরম পূরণ করবে, যা মিয়ানমার সরকার তার নিজস্ব ভেরিফিকেশন সিস্টেমে যাচাই-বাছাই করবে। কিন্তু এখনো পূরণ হওয়া কোনো ফরম তারা ফেরত পায়নি। বাস্তুচ্যুতদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে ওই রিপোর্টে বলা হয়- মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বা এর পরিকল্পনায় কোনো সমস্যা নেই। মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণপত্র দেখালেই তাদের গ্রহণ করা হবে। যাদের কাগজপত্র নেই তারা মিয়ানমার সরকার নির্ধারিত ফরম পূরণ করবে, সেখানে তাদের ছবি, নাম, জন্ম-তারিখ এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিতে হবে। ওই তথ্যগুলো দিয়ে পূর্ণ করা ফরম ধরেই তাদের যাচাই-বাছাই হবে। বাংলাদেশ সরকার সেই ফরমগুলো ফেরত পাঠালেই যাচাই-বাছাই শুরু করবে মিয়ানমার। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে রাখাইনের রোহিঙ্গা খোয়াড়ে (স্থানীয়ভাবে ক্যাম্পকে খোয়াড় বলে বর্মীরা) ফেরাতে চায় মিয়ানমার। তবে ঢাকা দরকষাকষি করছে সেই খোয়াড়ে যেন রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ সময় রাখা না হয়। বাস্তুচ্যুতদের বাংলাদেশ ক্যাম্প থেকে রাখাইন ক্যাম্পে (খোয়াড়ে) ফেরানোর বিষয়টি উল্লেখ করেই ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত হয়েছে। সেখানে প্রত্যাবাসন সময়কাল, যানবাহন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা, আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া, যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর বিস্তারিত থাকছে বলে জানা গেছে। ১৯৯২ সালে সম্পাদিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির আলোকে এবারের দ্বিপক্ষীয় অ্যারেঞ্জমেন্ট, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের টার্মস অব রেফারেন্স এবং সর্বশেষ ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত হলেও এর কোনো কিছুতেই কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে তার কোনো সুস্পষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই। এমনকি ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে আইনগত মর্যাদা কী হবে তা নিয়েই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফিরে যাওয়ার পর তারা আবারো সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফেরত এলে কি হবে, বাংলাদেশ কি এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারবে সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি ক্লজ) নেই প্রত্যাবাসন বিষয়ক অ্যারেঞ্জমেন্টে।
তবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে বাস্তুচ্যুত হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে গ্রহণে মিয়ানমারের আগাম ঘোষণা নতুন জটিলতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যেসব বৈঠকাদি হয়েছে তার কোথাও আলাদাভাবে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে ফিরিয়ে নেয়ার আলোচনা হয়নি। বরং ২০১৬ সালের পর বাস্তুচ্যুত রাখাইনের হিন্দু-মুসলিম সব নারী-পুরুষ ও শিশুদের ফেরানোর আলোচনাই হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা সমপ্রতি মানবজমিনকে বলেন, ২০১৬ সালের পর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে তাদের সবাইকে একসঙ্গে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। মিয়ানমারও এক সঙ্গে সবাইকে গ্রহণে প্রস্তুত নয়। সেখানে ফেলে আসা রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সামপ্রতিক সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৮শ’ গ্রামের অর্ধেকের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৮ গ্রাম একেবারে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, রাখাইন পরিস্থিতি মিয়ানমার কখনো স্বীকার করেনি। তারা এ নিয়ে বরাবরই ব্লেমগেম করেছে। ২৫শে আগস্টের পর রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী ‘উগ্রপন্থিদের দমন’ করতে অভিযান চালাচ্ছে বলে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছে। অথচ সেখানে যা ঘটেছে তা বিশ্ব সমপ্রদায়ের নজর এড়ায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, দুনিয়া দেখেছে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল চেষ্টায় বর্মী বাহিনী কিভাবে সেখানে বর্বরতা চালিয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিয়েছে। এ ঘটনায় নোবেল জয়ী অং সান সুচি এবং তার সরকার বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে আর শেখ হাসিনা সরকার প্রশংসা ও সম্মান কুড়িয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের নিজ ভূমে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরানোর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক চাপ হালকার জন্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তড়িঘড়ি বা হিন্দুদের আগে ফেরানোর কৌশল নিয়েছে কি-না? সেটি নিশ্চিত হতে চায় ঢাকা। দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জোর দিয়েই বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনটি টেকসই করতেই তাদের সব প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সুপারিশগুলো বিবেচনায় রেখেই দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। জাতিসংঘ স্পষ্ট করেই বলেছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগুলেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। সেখানে বাস্তুচ্যুতরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা দিয়েই তাদের ফেরাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জোর বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যাবে না। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি হতে হবে স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে। পুরো প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।
এদিকে রেডিও ফ্রি এশিয়া মিয়ানমার ডেটলাইনে গতকাল যে রিপোর্ট করেছে তাতেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ না কাটার ইঙ্গিত করেছে। রিপোর্টে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে- মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়া জানিয়েছেন, ২২শে জানুয়ারি বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের গ্রহণে প্রস্তুত মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে তারা বাংলাদেশের কাছে অনেক আগেই যাছাই-বাছাই’র ফরম পাঠিয়েছেন। কাগজপত্রহীন লোকজন ওই ফরম পূরণ করবে, যা মিয়ানমার সরকার তার নিজস্ব ভেরিফিকেশন সিস্টেমে যাচাই-বাছাই করবে। কিন্তু এখনো পূরণ হওয়া কোনো ফরম তারা ফেরত পায়নি। বাস্তুচ্যুতদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে ওই রিপোর্টে বলা হয়- মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বা এর পরিকল্পনায় কোনো সমস্যা নেই। মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণপত্র দেখালেই তাদের গ্রহণ করা হবে। যাদের কাগজপত্র নেই তারা মিয়ানমার সরকার নির্ধারিত ফরম পূরণ করবে, সেখানে তাদের ছবি, নাম, জন্ম-তারিখ এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিতে হবে। ওই তথ্যগুলো দিয়ে পূর্ণ করা ফরম ধরেই তাদের যাচাই-বাছাই হবে। বাংলাদেশ সরকার সেই ফরমগুলো ফেরত পাঠালেই যাচাই-বাছাই শুরু করবে মিয়ানমার। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে রাখাইনের রোহিঙ্গা খোয়াড়ে (স্থানীয়ভাবে ক্যাম্পকে খোয়াড় বলে বর্মীরা) ফেরাতে চায় মিয়ানমার। তবে ঢাকা দরকষাকষি করছে সেই খোয়াড়ে যেন রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ সময় রাখা না হয়। বাস্তুচ্যুতদের বাংলাদেশ ক্যাম্প থেকে রাখাইন ক্যাম্পে (খোয়াড়ে) ফেরানোর বিষয়টি উল্লেখ করেই ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত হয়েছে। সেখানে প্রত্যাবাসন সময়কাল, যানবাহন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা, আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া, যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর বিস্তারিত থাকছে বলে জানা গেছে। ১৯৯২ সালে সম্পাদিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির আলোকে এবারের দ্বিপক্ষীয় অ্যারেঞ্জমেন্ট, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের টার্মস অব রেফারেন্স এবং সর্বশেষ ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত হলেও এর কোনো কিছুতেই কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে তার কোনো সুস্পষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই। এমনকি ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে আইনগত মর্যাদা কী হবে তা নিয়েই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফিরে যাওয়ার পর তারা আবারো সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফেরত এলে কি হবে, বাংলাদেশ কি এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারবে সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি ক্লজ) নেই প্রত্যাবাসন বিষয়ক অ্যারেঞ্জমেন্টে।
No comments