আমি যদি ফিলিস্তিনি হতাম... by গার্শন বাসকিন
আমি
যদি একজন ফিলিস্তিনি হতাম...কিন্তু আমি তা নই। আমি একজন ইহুদি। একজন
ইসরাইলি। আমার কিছু ফিলিস্তিনি বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, আমি যদি একজন
ফিলিস্তিনি হতাম, তাহলে আমি কী করতাম? দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান দৃশ্যত এখন
অসম্ভব। তাহলে এখন কী করার থাকতো আমার? কিন্তু আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেছে
বলেই নিবন্ধটি লিখছি, তা নয়। একজন ইসরাইলি ইহুদি হিসেবে ইসরাইলকে সত্যিকার
অর্থেই গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই বলেই আমি এই নিবন্ধটি
লিখছি।
যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্ব চলবে, ফিলিস্তিনের ভূমি ও জনগণের ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ইসরাইল গণতান্ত্রিক নয়। আমি মনে করি না, ইসরাইলিরা এমনি এমনি এই সমস্যাকে গুরুত্ব সহকারে ভাববে বা দেখবে। তার মানে, যা করার ফিলিস্তিনিদের কিছু একটা করতে হবে। আমি পুরোপুরি সহিংসতার বিরুদ্ধে। তাই আমি লিখতে বসেছি আমি যদি ফিলিস্তিনি হতাম তাহলে আমি কী পদক্ষেপ নিতাম।
আমি যদি ফিলিস্তিনি হতাম, আমি প্রথমেই ইসরাইলের দখলদারিত্ব মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকতাম। ইসরাইলের বেঁধে দেয়া নিয়ম যদি ফিলিস্তিনিরা মেনে চলে, তাহলে ইসরাইল এই দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার শক্তি পায়। তার মানে এই নয় যে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ভেস্তে দিতে হবে। বরং উল্টোটা। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি দাঁড় করাতে অনেক পরিশ্রম হয়েছে। ফলে একে পুরোপুরি ছুড়ে ফেলা সম্ভব নয়।
আমি বোঝাতে চাই, নিজেদের সার্বভৌমত্ব জাহির করতে হবে। নিজের ভবিতব্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। আমি যা প্রস্তাব করছি, তা বাস্তবায়ন করতে ফিলিস্তিনিদের চরম মূল্য দিতে হতে পারে। তাই অনেক আত্মত্যাগের জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি সব পক্ষের মধ্যে সংহতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা থাকতে হবে। স্বাধীনতা ও মুক্তির দাম অনেক চড়া। এই চড়া মূল্য সম্পর্কে ফিলিস্তিনিদের জানা থাকতে হবে। এই দাম চুকাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমার কাছে মনে হয়, বহু বছর ধরে খুব চড়া মূল্য চুকিয়েও প্রত্যাশিত ফলাফল ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যে জুটছে না। তারা হয়তো তাদের শত্রুদের অনেক ভুগিয়েছে। কিন্তু শত্রুর চেয়ে বেশি যন্ত্রণা তাদেরই সহ্য করতে হয়েছে। বহু প্রাণ গেছে। কিন্তু যেই ফল তারা চান তার কাছাকাছিও তার পাননি। আমি প্রস্তাব দিতে চাই, সহিংসতার চিন্তা মাথা থেকে দূরে সরান। শত্রুকে আঘাতের চিন্তা থেকে সরুন। লক্ষ্য হতে হবে যে, আমি শত্রুর সামনে আয়না দাঁড় করাবো। তাদেরকে জোর করে আয়নায় তার নিষ্ঠুর চেহারা দেখাবো। দেখাবো যে, কী নিষ্ঠুর বাস্তবতা তারা সৃষ্টি করেছে। লক্ষ্য হতে হবে যে, শত্রুর চেয়ে নৈতিকতার দিক থেকে উঁচুতে থাকতে হবে।
এজন্য ফিলিস্তিনিদের কষ্ট ভোগ করতে হবে। ফিলিস্তিনের অর্থনীতিকে চরম আঘাত সহ্য করতে হবে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদেরকে অবশ্যই ইসরাইলে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। ১ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি পরিবার ইসরাইলে কাজ করে তাদের অর্থ জোগায়। ফিলিস্তিনিদের প্রস্তুত থাকতে হবে যে, যতদিন তাদের উদ্দেশ্য হাসিল না হয়, ততদিন তারা বিদেশে যাবেন না। কারণ, ইসরাইল তাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের অবশ্যই একে-অপরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে বা অন্য যে কোনো উপায়ে। যতদিন না দখলদারিত্বকে হটানো যায়, ততদিন এই কষ্ট মেনে নিতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণের প্রথম উপাদান হলো জনসংখ্যা নিবন্ধন। ফিলিস্তিনিদের সব ধরনের আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জন্ম ও মৃত্যু সনদ অনুমোদন দেয় ইসরাইল। আমি যদি একজন ফিলিস্তিনি হতাম, তাহলে আমি চাইতাম আমার নেতা, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট জনসম্মুখে দাঁড়াবেন। নিজের আইডি কার্ড পুড়িয়ে ফেলবেন। পাশাপাশি, সকল ফিলিস্তিনিকে নিজ নিজ আইডি কার্ড পুড়িয়ে ফেলতে বলবেন। এরপর ফিলিস্তিনি সরকার সবার জন্য নতুন আইডি কার্ড ইস্যু করবে। এই আইডি কার্ড নম্বর হবে একেবারেই আলাদা। ফলে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকা জনসংখ্যার হিসাবনিকাশ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিত হয়ে পড়বে। আগেই বলেছি চড়া মূল্য চুকানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে কোনো ফিলিস্তিনিই ইসরাইলে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। আবার ফিলিস্তিন ছেড়ে বিদেশেও যেতে পারবে না। এটাই হলো মূল পয়েন্ট।
এরপর আমি পশ্চিম তীরের প্রত্যেক শহরের মেয়র ও সিটি কাউন্সিলর সদস্যদের বলতাম বুলডোজার দিয়ে ইসরাইলের বন্ধ করা সকল রাস্তা খুলে দিতে। এরপর তারা শহরের বাসিন্দাদের সেসব সড়ক ব্যবহার করার আহ্বান জানাবেন। ইসরাইল এসব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে যাতে শুধু এক রাস্তা দিয়েই সবাই চলাচল করে, আর তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিলে ইসরাইল প্রতিশোধ হিসেবে ফিলিস্তিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। ফিলিস্তিনের উচিত হবে এজন্যও প্রস্তুত থাকা। আগে থেকে কিছুটা জ্বালানি জমিয়ে রাখতে হবে। আর ওই পরিস্থিতিতে শুধু যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে বা গাধায় চড়ে চলাচল করতে হবে।
আমি জনগণকে বলতাম নিজেদের ভূখণ্ডে জয়সূচক বাগান তৈরি করতে। সামান্য প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে হলেও। এরিয়া-সি জুড়ে সকল ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন ভূমিতে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করুন। ইসরাইলের অনুমতি ছাড়াই। প্রতিবছর পুরো পরিবার সমেত যেমন জলপাই পাড়তে যান, তেমনি নিজের ভূখণ্ডে সবাই মিলে গিয়ে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করুন। জমি চিহ্নিত করুন। কিছু একটা লাগিয়ে আসুন। কিন্তু দখলদারদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেবেন না। কমপক্ষে এক বছরের জন্য জিনিসপত্র মজুত করুন। কারণ, ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হবে। প্রস্তুত থাকুন।
এ সমস্ত কিছুর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল মানুষকে গ্রেপ্তার করতে শুরু করবে। আমি আসলে ঠিক এটাই চাই। প্রত্যেক ফিলিস্তিনি যারা নিজেদেরকে কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতা তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হতে হবে গ্রেপ্তার হওয়া। ইসরাইলি বন্দিশালা পূর্ণ হয়ে যাক, যাতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রাখতে ইসরাইলকে তাঁবুর বন্দিশালা বানাতে হয়। ১ লাখ ফিলিস্তিনি হবে ইসরাইলের বন্দি, এটাই আমার উদ্দেশ্য। নারী, শিশু, বৃদ্ধ- সকলকেই সহিংসতা ছাড়া প্রতিরোধে নামতে হবে। উদ্দেশ্য থাকবে গ্রেপ্তার হওয়া।
তারা হয়তো স্কুল বন্ধ করে দেবে। সড়ক বন্ধ করে দেবে। পুরো শহর বন্ধ করে দেবে। কিন্তু কোনোভাবেই পুরো জনসংখ্যাকে দখলদারিত্ব মেনে নিতে বাধ্য করার পথ নেই, যদি মানুষ অবাধ্য হয়। নেতৃত্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ। নেতৃত্ব যখন থাকবে ইসরাইলি বন্দিশালায়, তখন অবশিষ্ট যারা বাইরে থাকবে, অর্থাৎ নতুন নেতা, তরুণ প্রতিরোধকারী সবাই তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরিয়ে দেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকবে সাফল্যের উদাহরণ, অনুপ্রেরণীয় গল্প, ইত্যাদি। এসব শুধু পুরো ফিলিস্তিনই দেখবে না। দেখবে আরব বিশ্ব এবং পশ্চিমা বিশ্ব। পাশাপাশি, ইসরাইলি জনগণকেও বার্তা পাঠাতে হবে। কারণ, তাদেরকেই আমরা লজ্জা দিতে চাইবো, জাগ্রত করতে চাইবো।
ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সমন্বয় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অসহিংস পথে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কেউ যাতে ত্রাসের বা সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন না করে। ফিলিস্তিনিরা যদি সহিংস হয়, এমনকি ইসরাইলের সহিংসতার বিপরীতেও যদি ফিলিস্তিনিরা সহিংস হয়, তাহলে পুরো পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে। মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলের চেয়ে নৈতিকভাবে উঁচু স্থানে থাকা। ইসরাইলি সমাজকে নাড়িয়ে দেয়া যাতে করে তারা নিজেরাই দখলদারিত্ব বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়।
এটা শুধুই শুরু। ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো কৌশল যদি কাজে দেয়, তাহলে তা হতে পারে উপরের কৌশলের ভিত্তিতে। ফিলিস্তিনিদের নিজেদেরই এই কৌশল ও পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। আর আমরা যেসব ইসরাইলিরা বিশ্বাস করি যে, দখলদারিত্বের কারণে আমাদের রাষ্ট্র ধ্বংস হচ্ছে, তারা এই দখলদারিত্ব মুক্ত করার মিশনে আংশীদার হতে পারি। আরেক জাতির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ বন্ধের প্রধান দায়িত্ব আমাদেরই।
(গার্শন বাসকিন হলেন ইসরাইল-প্যালেস্টাইন ক্রিয়েটিভ রিজিয়নাল ইনিশিয়েটিভস নামে একটি থিঙ্কট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও কো-চেয়ারম্যান। জেরুজালেম পোস্টে প্রকাশিত তার লেখাটি অনুবাদ করেছেন মাহমুদ ফেরদৌস।)
যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্ব চলবে, ফিলিস্তিনের ভূমি ও জনগণের ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ইসরাইল গণতান্ত্রিক নয়। আমি মনে করি না, ইসরাইলিরা এমনি এমনি এই সমস্যাকে গুরুত্ব সহকারে ভাববে বা দেখবে। তার মানে, যা করার ফিলিস্তিনিদের কিছু একটা করতে হবে। আমি পুরোপুরি সহিংসতার বিরুদ্ধে। তাই আমি লিখতে বসেছি আমি যদি ফিলিস্তিনি হতাম তাহলে আমি কী পদক্ষেপ নিতাম।
আমি যদি ফিলিস্তিনি হতাম, আমি প্রথমেই ইসরাইলের দখলদারিত্ব মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকতাম। ইসরাইলের বেঁধে দেয়া নিয়ম যদি ফিলিস্তিনিরা মেনে চলে, তাহলে ইসরাইল এই দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার শক্তি পায়। তার মানে এই নয় যে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ভেস্তে দিতে হবে। বরং উল্টোটা। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি দাঁড় করাতে অনেক পরিশ্রম হয়েছে। ফলে একে পুরোপুরি ছুড়ে ফেলা সম্ভব নয়।
আমি বোঝাতে চাই, নিজেদের সার্বভৌমত্ব জাহির করতে হবে। নিজের ভবিতব্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। আমি যা প্রস্তাব করছি, তা বাস্তবায়ন করতে ফিলিস্তিনিদের চরম মূল্য দিতে হতে পারে। তাই অনেক আত্মত্যাগের জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি সব পক্ষের মধ্যে সংহতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা থাকতে হবে। স্বাধীনতা ও মুক্তির দাম অনেক চড়া। এই চড়া মূল্য সম্পর্কে ফিলিস্তিনিদের জানা থাকতে হবে। এই দাম চুকাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমার কাছে মনে হয়, বহু বছর ধরে খুব চড়া মূল্য চুকিয়েও প্রত্যাশিত ফলাফল ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যে জুটছে না। তারা হয়তো তাদের শত্রুদের অনেক ভুগিয়েছে। কিন্তু শত্রুর চেয়ে বেশি যন্ত্রণা তাদেরই সহ্য করতে হয়েছে। বহু প্রাণ গেছে। কিন্তু যেই ফল তারা চান তার কাছাকাছিও তার পাননি। আমি প্রস্তাব দিতে চাই, সহিংসতার চিন্তা মাথা থেকে দূরে সরান। শত্রুকে আঘাতের চিন্তা থেকে সরুন। লক্ষ্য হতে হবে যে, আমি শত্রুর সামনে আয়না দাঁড় করাবো। তাদেরকে জোর করে আয়নায় তার নিষ্ঠুর চেহারা দেখাবো। দেখাবো যে, কী নিষ্ঠুর বাস্তবতা তারা সৃষ্টি করেছে। লক্ষ্য হতে হবে যে, শত্রুর চেয়ে নৈতিকতার দিক থেকে উঁচুতে থাকতে হবে।
এজন্য ফিলিস্তিনিদের কষ্ট ভোগ করতে হবে। ফিলিস্তিনের অর্থনীতিকে চরম আঘাত সহ্য করতে হবে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদেরকে অবশ্যই ইসরাইলে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। ১ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি পরিবার ইসরাইলে কাজ করে তাদের অর্থ জোগায়। ফিলিস্তিনিদের প্রস্তুত থাকতে হবে যে, যতদিন তাদের উদ্দেশ্য হাসিল না হয়, ততদিন তারা বিদেশে যাবেন না। কারণ, ইসরাইল তাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের অবশ্যই একে-অপরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে বা অন্য যে কোনো উপায়ে। যতদিন না দখলদারিত্বকে হটানো যায়, ততদিন এই কষ্ট মেনে নিতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণের প্রথম উপাদান হলো জনসংখ্যা নিবন্ধন। ফিলিস্তিনিদের সব ধরনের আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জন্ম ও মৃত্যু সনদ অনুমোদন দেয় ইসরাইল। আমি যদি একজন ফিলিস্তিনি হতাম, তাহলে আমি চাইতাম আমার নেতা, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট জনসম্মুখে দাঁড়াবেন। নিজের আইডি কার্ড পুড়িয়ে ফেলবেন। পাশাপাশি, সকল ফিলিস্তিনিকে নিজ নিজ আইডি কার্ড পুড়িয়ে ফেলতে বলবেন। এরপর ফিলিস্তিনি সরকার সবার জন্য নতুন আইডি কার্ড ইস্যু করবে। এই আইডি কার্ড নম্বর হবে একেবারেই আলাদা। ফলে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকা জনসংখ্যার হিসাবনিকাশ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিত হয়ে পড়বে। আগেই বলেছি চড়া মূল্য চুকানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে কোনো ফিলিস্তিনিই ইসরাইলে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। আবার ফিলিস্তিন ছেড়ে বিদেশেও যেতে পারবে না। এটাই হলো মূল পয়েন্ট।
এরপর আমি পশ্চিম তীরের প্রত্যেক শহরের মেয়র ও সিটি কাউন্সিলর সদস্যদের বলতাম বুলডোজার দিয়ে ইসরাইলের বন্ধ করা সকল রাস্তা খুলে দিতে। এরপর তারা শহরের বাসিন্দাদের সেসব সড়ক ব্যবহার করার আহ্বান জানাবেন। ইসরাইল এসব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে যাতে শুধু এক রাস্তা দিয়েই সবাই চলাচল করে, আর তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিলে ইসরাইল প্রতিশোধ হিসেবে ফিলিস্তিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। ফিলিস্তিনের উচিত হবে এজন্যও প্রস্তুত থাকা। আগে থেকে কিছুটা জ্বালানি জমিয়ে রাখতে হবে। আর ওই পরিস্থিতিতে শুধু যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে বা গাধায় চড়ে চলাচল করতে হবে।
আমি জনগণকে বলতাম নিজেদের ভূখণ্ডে জয়সূচক বাগান তৈরি করতে। সামান্য প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে হলেও। এরিয়া-সি জুড়ে সকল ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন ভূমিতে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করুন। ইসরাইলের অনুমতি ছাড়াই। প্রতিবছর পুরো পরিবার সমেত যেমন জলপাই পাড়তে যান, তেমনি নিজের ভূখণ্ডে সবাই মিলে গিয়ে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করুন। জমি চিহ্নিত করুন। কিছু একটা লাগিয়ে আসুন। কিন্তু দখলদারদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেবেন না। কমপক্ষে এক বছরের জন্য জিনিসপত্র মজুত করুন। কারণ, ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হবে। প্রস্তুত থাকুন।
এ সমস্ত কিছুর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল মানুষকে গ্রেপ্তার করতে শুরু করবে। আমি আসলে ঠিক এটাই চাই। প্রত্যেক ফিলিস্তিনি যারা নিজেদেরকে কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতা তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হতে হবে গ্রেপ্তার হওয়া। ইসরাইলি বন্দিশালা পূর্ণ হয়ে যাক, যাতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রাখতে ইসরাইলকে তাঁবুর বন্দিশালা বানাতে হয়। ১ লাখ ফিলিস্তিনি হবে ইসরাইলের বন্দি, এটাই আমার উদ্দেশ্য। নারী, শিশু, বৃদ্ধ- সকলকেই সহিংসতা ছাড়া প্রতিরোধে নামতে হবে। উদ্দেশ্য থাকবে গ্রেপ্তার হওয়া।
তারা হয়তো স্কুল বন্ধ করে দেবে। সড়ক বন্ধ করে দেবে। পুরো শহর বন্ধ করে দেবে। কিন্তু কোনোভাবেই পুরো জনসংখ্যাকে দখলদারিত্ব মেনে নিতে বাধ্য করার পথ নেই, যদি মানুষ অবাধ্য হয়। নেতৃত্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ। নেতৃত্ব যখন থাকবে ইসরাইলি বন্দিশালায়, তখন অবশিষ্ট যারা বাইরে থাকবে, অর্থাৎ নতুন নেতা, তরুণ প্রতিরোধকারী সবাই তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরিয়ে দেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকবে সাফল্যের উদাহরণ, অনুপ্রেরণীয় গল্প, ইত্যাদি। এসব শুধু পুরো ফিলিস্তিনই দেখবে না। দেখবে আরব বিশ্ব এবং পশ্চিমা বিশ্ব। পাশাপাশি, ইসরাইলি জনগণকেও বার্তা পাঠাতে হবে। কারণ, তাদেরকেই আমরা লজ্জা দিতে চাইবো, জাগ্রত করতে চাইবো।
ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সমন্বয় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অসহিংস পথে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কেউ যাতে ত্রাসের বা সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন না করে। ফিলিস্তিনিরা যদি সহিংস হয়, এমনকি ইসরাইলের সহিংসতার বিপরীতেও যদি ফিলিস্তিনিরা সহিংস হয়, তাহলে পুরো পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে। মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলের চেয়ে নৈতিকভাবে উঁচু স্থানে থাকা। ইসরাইলি সমাজকে নাড়িয়ে দেয়া যাতে করে তারা নিজেরাই দখলদারিত্ব বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়।
এটা শুধুই শুরু। ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো কৌশল যদি কাজে দেয়, তাহলে তা হতে পারে উপরের কৌশলের ভিত্তিতে। ফিলিস্তিনিদের নিজেদেরই এই কৌশল ও পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। আর আমরা যেসব ইসরাইলিরা বিশ্বাস করি যে, দখলদারিত্বের কারণে আমাদের রাষ্ট্র ধ্বংস হচ্ছে, তারা এই দখলদারিত্ব মুক্ত করার মিশনে আংশীদার হতে পারি। আরেক জাতির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ বন্ধের প্রধান দায়িত্ব আমাদেরই।
(গার্শন বাসকিন হলেন ইসরাইল-প্যালেস্টাইন ক্রিয়েটিভ রিজিয়নাল ইনিশিয়েটিভস নামে একটি থিঙ্কট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও কো-চেয়ারম্যান। জেরুজালেম পোস্টে প্রকাশিত তার লেখাটি অনুবাদ করেছেন মাহমুদ ফেরদৌস।)
No comments