রোবটের আগ্রাসন থামাতে মানুষে বিনিয়োগ প্রয়োজন by স্টিফেন গ্রফ
বাংলাদেশের
একটি সেলাই কারখানায় একইসঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের দেখা পাওয়া যায়।
কারখানার এক তলায় কর্মীরা হাতে সেলাই করেন। অন্য এক-তলায় মানুষ ও যন্ত্র
একইসঙ্গে কাজ করে। আবার, অপর একটি তলা পুরোটা সামলায় রোবট। প্রচলিত ধারণা
অনুসারে, অদূর ভবিষ্যতে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পে মানুষের স্থান দখল করে
নেবে রোবটরা। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে মনে হয়, উক্ত কারখানাটি কালবৈষম্যতায়
ভুগছে।
কিন্তু, ভিন্নভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এশিয়ায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কিভাবে ঘটতে পারে তার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এই সেলাই কারখানা। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায়ও একই রকম ঘটনা ঘটছে- প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাবে শিল্প ও অর্থনীতি ব্যাপক দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে- শারীরিক, ডিজিটাল ও জৈবিক বিশ্বের মধ্যকার ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছে।
উন্নত বিশ্ব আচানক এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলেও এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলই এখনো রোবটের জন্য প্রস্তুত নয়। এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে- রোবট এলে, এশিয়ায় সৃষ্টি হবে গণ-বেকারত্ব। ২০১৪ সালে চীনের নন-অটোমোটিভ (অ-স্বয়ংচালিত) শিল্পে, প্রতি ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে গড়ে রোবট ছিল ১১টি। আর স্বয়ংচালিত শিল্পে প্রতি ১০ হাজারে গড়ে রোবটের সংখ্যা ছিল ২১৩টি। জাপান, জার্মানি বা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কয়েকশ’ কম।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চীনও রোবটে বিনিয়োগ শুরু করেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো তাদের জন্য কঠিন। উপরন্তু, এশিয়ার কম মজুরির সুবিধা অঞ্চলটির সংস্থাগুলোকে কর্মী হিসেবে মানুষ ধরে রাখতে উৎসাহ জোগায়। বাংলাদেশের ওই কারখানায় হঠাৎ করে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, যন্ত্রপাতিতে সমস্যা দেখা দিলে বা যন্ত্রগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিলে মানুষ সে অভাব পূরণ করতে পারবে। অপরদিকে, একটা স্বয়ংচালিত বিভাগ থাকার সুবিধা হচ্ছে, কর্মীরা বিক্ষোভ করলেও উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।
প্রচলিত জ্ঞানের মাত্রায়, এই ‘ডুয়েল-ট্র্যাক’ পদ্ধতি স্থিতিশীল নয়। এছাড়া কোনো এক সময় মধ্য-দক্ষ কর্মীরা রোবট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেনই। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কার্ল ফ্রে ও মাইক্যাল অসবোর্নের ২০১৩ সালে করা এক গবেষণা অনুসারে, আসন্ন দশকগুলোতে যুক্তরাজ্যের ৪৭ শতাংশ কর্মসংস্থান স্বয়ংচালিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। একইভাবে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সতর্ক করে বলেছে যে, আগামী এক বা দুই দশকের মধ্যে ক্যাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ৫৬ শতাংশ কর্মসংস্থান প্রযুক্তিগত কারণে হারিয়ে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে- প্রায় প্রত্যেক কাজই কিছু ছোট ছোট কাজের সমষ্টি, যার কিছু অংশ কোনোভাবেই স্বয়ংক্রিয় হয়ে সমপন্ন হবে না। ২০১৬ সালে প্রকাশিত অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক গবেষণায় বলা হয়, ওইসিডি’র ২১টি সদস্য দেশের মধ্যে গড়ে মাত্র ৯ শতাংশ কাজ সত্যিকারের ঝুঁকিতে আছে। এশিয়ার ক্ষেত্রেও, একই যুক্তি প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে দেশটির বৃহৎ ইনফর্মাল ইকোনমি (হিসাব-বহির্ভূত অর্থনীতি) নিয়ে হিসাব করলে আইএলও’র ভবিষ্যদ্বাণী করা ৭০ শতাংশ ঝুঁকিতে থাকা কাজের পরিমাণ ১৫ শতাংশে নেমে আসে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাস্তা পরিষ্কারকারীরা উন্নত দেশের রাস্তা পরিষ্কারকারীদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্বয়ংক্রিয়তার শিকার হওয়ার কম ঝুঁকিতে আছেন। কেননা, তাদের কাজে যান্ত্রিকতার প্রভাব কম আর তাদের মজুরিও কম। এসব সত্ত্বেও এশিয়ায় রোবট প্রভাব বিস্তার করছে- বিশেষ করে, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। ২০১৫ সালের দিকে, এশিয়ায় রোবট বিক্রির হার ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তৎকালীন সময়ে চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি ছিল সেটি। তাই বলা যায়, এশিয়ার অনুন্নত দেশগুলো যখন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়বে তখন চাকরি ছাঁটাই ফেরানোর উপায় থাকবে না।
কর্মসংস্থান বিহীন হওয়ার ঘাটতি কমাতে সরকারদের জরুরি ভিত্তিতে শ্রম-বাজারে সংস্কার আনা উচিত, শিক্ষা ব্যবস্থার উপর জোর দেয়া উচিত। কারিগরি ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের (টিভিইটি) মাধ্যমে এসবের শুরু হতে পারে। যদিও এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিভিইটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এর মান খুবই নিম্ন। সরকারদের উচিত মানসম্মত, প্রাসঙ্গিক টিভিইটি প্রশিক্ষণ দেয়া যাতে করে শিক্ষার্থীরা আয় ত্যাগ না করেই শিখতে পারে। একটি অপশন হচ্ছে, স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করা- যেগুলোতে সময় কম লাগবে ও যেগুলোতে পুরো কাজের বদলে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় শেখানো হবে। এগুলোর উদ্দেশ্য থাকবে অর্থ আয় করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা। এশিয়ার বিশাল হিসাব-বহির্ভূত কর্মক্ষেত্রের কথা বিবেচনা করে, অপর একটি অপশন হতে পারে, প্রতিযোগিতা-ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি। বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষ কর্মীদের তাদের কাজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সনদপত্র দেয়া হবে। এটা ফর্মাল-ইকোনমি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। যেমন, সনদবিহীন ইলেকট্রিশিয়ানদের রোবটিকসে প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি খুঁজতে সহায়ক হবে। বেসরকারি খাতও চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
এসবের পাশাপাশি সরকারদের উচিত হবে মেশিনের চেয়ে মানব-দক্ষতায় বেশি বিনিয়োগ করে এমন কোমপানিগুলোকে ভর্তুকি দেয়া বা কর দেয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া- যেমন, যোগাযোগ ও মধ্যস্থতা-ভিত্তিক কোমপানিগুলো। সরকারদের শ্রমনীতি আরো নমনীয় করে তুলতে হবে। কারণ, কোনো সংস্থাই এমন দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেবে না যাদের জন্য সংস্থাকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। মোদ্দাকথা, এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন নীতিমালা তৈরি করতে হবে- যে নীতিমালা চাকরির চেয়ে শ্রমিকদের জন্য বেশি সহায়ক হবে। নমনীয় চুক্তি, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও নতুন শেখা দক্ষতাদের মাধ্যমে সব পক্ষই লাভবান হবে।
নতুন কাজের জন্য দক্ষতা অর্জন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্বয়ংক্রিয়তা পুরোপুরি নতুন একটি শিল্প ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। দ্য ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের অনুমান অনুসারে, স্বয়ংক্রিয়তা বৈশ্বিক উৎপাদন বার্ষিক হারে ০.০৮ থেকে ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে। প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ বৃদ্ধি ও সনদপত্র দান দেশগুলোকে এসব অগ্রগতি পুঁজি করে আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। কর্মীদের দক্ষ বানালে তারা নতুন কাজ সুষ্ঠুভাবে সামলাতে পারবে। আর এ থেকে যে ফল আসবে তা কর্মী ও পুরো এশীয় অর্থনীতির জন্যই লাভজনক হবে। এর মানে হবে- বাংলাদেশের ওই কারখানা শুধুমাত্র রোবট দিয়েই কাজ চালাতে পারবে। আর অন্যদিকে কারখানার মানব-কর্মীরা অন্যান্য নতুন ক্ষেত্রে কাজ করে লাভবান হতে পারবে- আর সে কাজগুলো এমন হবে যার এখন কোনো অস্তিত্বই নেই। একই পদ্ধতি পুরো অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।
কিন্তু, ভিন্নভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এশিয়ায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কিভাবে ঘটতে পারে তার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এই সেলাই কারখানা। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায়ও একই রকম ঘটনা ঘটছে- প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাবে শিল্প ও অর্থনীতি ব্যাপক দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে- শারীরিক, ডিজিটাল ও জৈবিক বিশ্বের মধ্যকার ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছে।
উন্নত বিশ্ব আচানক এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলেও এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলই এখনো রোবটের জন্য প্রস্তুত নয়। এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে- রোবট এলে, এশিয়ায় সৃষ্টি হবে গণ-বেকারত্ব। ২০১৪ সালে চীনের নন-অটোমোটিভ (অ-স্বয়ংচালিত) শিল্পে, প্রতি ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে গড়ে রোবট ছিল ১১টি। আর স্বয়ংচালিত শিল্পে প্রতি ১০ হাজারে গড়ে রোবটের সংখ্যা ছিল ২১৩টি। জাপান, জার্মানি বা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কয়েকশ’ কম।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চীনও রোবটে বিনিয়োগ শুরু করেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো তাদের জন্য কঠিন। উপরন্তু, এশিয়ার কম মজুরির সুবিধা অঞ্চলটির সংস্থাগুলোকে কর্মী হিসেবে মানুষ ধরে রাখতে উৎসাহ জোগায়। বাংলাদেশের ওই কারখানায় হঠাৎ করে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, যন্ত্রপাতিতে সমস্যা দেখা দিলে বা যন্ত্রগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিলে মানুষ সে অভাব পূরণ করতে পারবে। অপরদিকে, একটা স্বয়ংচালিত বিভাগ থাকার সুবিধা হচ্ছে, কর্মীরা বিক্ষোভ করলেও উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।
প্রচলিত জ্ঞানের মাত্রায়, এই ‘ডুয়েল-ট্র্যাক’ পদ্ধতি স্থিতিশীল নয়। এছাড়া কোনো এক সময় মধ্য-দক্ষ কর্মীরা রোবট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেনই। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কার্ল ফ্রে ও মাইক্যাল অসবোর্নের ২০১৩ সালে করা এক গবেষণা অনুসারে, আসন্ন দশকগুলোতে যুক্তরাজ্যের ৪৭ শতাংশ কর্মসংস্থান স্বয়ংচালিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। একইভাবে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সতর্ক করে বলেছে যে, আগামী এক বা দুই দশকের মধ্যে ক্যাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ৫৬ শতাংশ কর্মসংস্থান প্রযুক্তিগত কারণে হারিয়ে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে- প্রায় প্রত্যেক কাজই কিছু ছোট ছোট কাজের সমষ্টি, যার কিছু অংশ কোনোভাবেই স্বয়ংক্রিয় হয়ে সমপন্ন হবে না। ২০১৬ সালে প্রকাশিত অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক গবেষণায় বলা হয়, ওইসিডি’র ২১টি সদস্য দেশের মধ্যে গড়ে মাত্র ৯ শতাংশ কাজ সত্যিকারের ঝুঁকিতে আছে। এশিয়ার ক্ষেত্রেও, একই যুক্তি প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে দেশটির বৃহৎ ইনফর্মাল ইকোনমি (হিসাব-বহির্ভূত অর্থনীতি) নিয়ে হিসাব করলে আইএলও’র ভবিষ্যদ্বাণী করা ৭০ শতাংশ ঝুঁকিতে থাকা কাজের পরিমাণ ১৫ শতাংশে নেমে আসে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাস্তা পরিষ্কারকারীরা উন্নত দেশের রাস্তা পরিষ্কারকারীদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্বয়ংক্রিয়তার শিকার হওয়ার কম ঝুঁকিতে আছেন। কেননা, তাদের কাজে যান্ত্রিকতার প্রভাব কম আর তাদের মজুরিও কম। এসব সত্ত্বেও এশিয়ায় রোবট প্রভাব বিস্তার করছে- বিশেষ করে, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। ২০১৫ সালের দিকে, এশিয়ায় রোবট বিক্রির হার ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তৎকালীন সময়ে চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি ছিল সেটি। তাই বলা যায়, এশিয়ার অনুন্নত দেশগুলো যখন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়বে তখন চাকরি ছাঁটাই ফেরানোর উপায় থাকবে না।
কর্মসংস্থান বিহীন হওয়ার ঘাটতি কমাতে সরকারদের জরুরি ভিত্তিতে শ্রম-বাজারে সংস্কার আনা উচিত, শিক্ষা ব্যবস্থার উপর জোর দেয়া উচিত। কারিগরি ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের (টিভিইটি) মাধ্যমে এসবের শুরু হতে পারে। যদিও এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিভিইটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এর মান খুবই নিম্ন। সরকারদের উচিত মানসম্মত, প্রাসঙ্গিক টিভিইটি প্রশিক্ষণ দেয়া যাতে করে শিক্ষার্থীরা আয় ত্যাগ না করেই শিখতে পারে। একটি অপশন হচ্ছে, স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করা- যেগুলোতে সময় কম লাগবে ও যেগুলোতে পুরো কাজের বদলে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় শেখানো হবে। এগুলোর উদ্দেশ্য থাকবে অর্থ আয় করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা। এশিয়ার বিশাল হিসাব-বহির্ভূত কর্মক্ষেত্রের কথা বিবেচনা করে, অপর একটি অপশন হতে পারে, প্রতিযোগিতা-ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি। বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষ কর্মীদের তাদের কাজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সনদপত্র দেয়া হবে। এটা ফর্মাল-ইকোনমি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। যেমন, সনদবিহীন ইলেকট্রিশিয়ানদের রোবটিকসে প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি খুঁজতে সহায়ক হবে। বেসরকারি খাতও চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
এসবের পাশাপাশি সরকারদের উচিত হবে মেশিনের চেয়ে মানব-দক্ষতায় বেশি বিনিয়োগ করে এমন কোমপানিগুলোকে ভর্তুকি দেয়া বা কর দেয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া- যেমন, যোগাযোগ ও মধ্যস্থতা-ভিত্তিক কোমপানিগুলো। সরকারদের শ্রমনীতি আরো নমনীয় করে তুলতে হবে। কারণ, কোনো সংস্থাই এমন দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেবে না যাদের জন্য সংস্থাকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। মোদ্দাকথা, এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন নীতিমালা তৈরি করতে হবে- যে নীতিমালা চাকরির চেয়ে শ্রমিকদের জন্য বেশি সহায়ক হবে। নমনীয় চুক্তি, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও নতুন শেখা দক্ষতাদের মাধ্যমে সব পক্ষই লাভবান হবে।
নতুন কাজের জন্য দক্ষতা অর্জন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্বয়ংক্রিয়তা পুরোপুরি নতুন একটি শিল্প ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। দ্য ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের অনুমান অনুসারে, স্বয়ংক্রিয়তা বৈশ্বিক উৎপাদন বার্ষিক হারে ০.০৮ থেকে ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে। প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ বৃদ্ধি ও সনদপত্র দান দেশগুলোকে এসব অগ্রগতি পুঁজি করে আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। কর্মীদের দক্ষ বানালে তারা নতুন কাজ সুষ্ঠুভাবে সামলাতে পারবে। আর এ থেকে যে ফল আসবে তা কর্মী ও পুরো এশীয় অর্থনীতির জন্যই লাভজনক হবে। এর মানে হবে- বাংলাদেশের ওই কারখানা শুধুমাত্র রোবট দিয়েই কাজ চালাতে পারবে। আর অন্যদিকে কারখানার মানব-কর্মীরা অন্যান্য নতুন ক্ষেত্রে কাজ করে লাভবান হতে পারবে- আর সে কাজগুলো এমন হবে যার এখন কোনো অস্তিত্বই নেই। একই পদ্ধতি পুরো অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।
(স্টিফেন গ্রফ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। তার লেখা মূল নিবন্ধটি
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটির অনুবাদ করেছেন রিফাত আহমাদ)
No comments