কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে হিম বাতাস
দেশের
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ গতকাল রোববারও অব্যাহত
ছিল। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বয়ে যাওয়া হিম বাতাসে গতকালও জবুথবু ছিলেন
উত্তরাঞ্চলের মানুষ। গতকাল রাজধানীতেও দেখা দিয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। শীতজনিত রোগে
আক্রান্ত হয়ে গত তিন দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে
১৩৭টি শিশু। এর মধ্যে গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ
ছাড়া গত শুক্রবার পর্যন্ত কুড়িগ্রামে দুটি শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর
জানিয়েছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চার দিন পরও শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায়
কমছে না শীতের কষ্ট। গত দুই দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছিল। তবে গতকাল তা
আবার কমেছে। চলতি শীতের মৌসুমে রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রথমবারের
মতো ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। রাজধানীতে তিন দিন ধরে তাপমাত্রা ১১ থেকে
১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। প্রচণ্ড শীতের কারণে বিশেষত রাস্তার পাশে
ও খোলা জায়গায় যাঁরা ঘুমান এবং বস্তিতে থাকেন, তাঁদের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে
যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে দিনাজপুর, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের তাপমাত্রা ৬
ডিগ্রির নিচে নেমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের বেশির
ভাগ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ আজ সোমবারও চলবে। আগামীকালও থাকতে পারে। রাজশাহী,
পাবনা, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে তীব্র এবং চট্টগ্রাম ছাড়া অন্যান্য
স্থানের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ
এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকবে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল
দিনাজপুরে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
গতকাল দেশে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে, ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি
সেলসিয়াস। জেলায় আগের দিন ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির
সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীতেও দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। রাজশাহী মেডিকেল
কলেজ হাসপাতাল সূত্র বলেছে, ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় শুক্রবার এই হাসপাতালে
৫০টি শিশু ভর্তি হয়। শনিবার ভর্তি হয় ৫২টি শিশু ও গতকাল ৩৫টি শিশু। এদের
মধ্যে গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত তিন দিনে ১৭ শিশু মারা গেছে। এ হাসপাতালে
আসা বিভিন্ন রোগীর স্বজন বলেছেন, তীব্র শীতের কারণে শিশুরাই এই রোগে বেশি
আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট ও সর্দিজ্বর হচ্ছে।
বিকেলে হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় নওগাঁ থেকে আসা এক শিশুর
স্বজন বিলকিস বানুর সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর শিশুর ঠান্ডা, সঙ্গে জ্বর।
শুক্রবার বাচ্চাকে হাসপাতালে এনেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শরীফা খাতুনও একই
দিন বাচ্চাকে নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, ঠান্ডায় তাঁর বাচ্চার
শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মেহেরপুর থেকে একই দিন বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে আসা বজলুর
রহমান বলেন, ঠান্ডার কারণে তাঁর বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। হাসপাতালের এই
ওয়ার্ডে বাল্ব জ্বালিয়ে কয়েকটি নবজাতককে তাপের মধ্য রাখতে দেখা যায়। ২৪
নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে জায়গা না হওয়ায় বারান্দায় ১২টি বিছানা
পাতা হয়েছে। পাঁচটি বাচ্চার জায়গা হয়েছে এসব বিছানায়। হাসপাতালের পরিচালক
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, শীত বাড়ায় হাসপাতালের ‘ওয়ার্মার’
ব্যবস্থা ঠিক করেছেন তাঁরা। পুরোনো রুম হিটারগুলো চালু করেছেন। শীতে শিশু
ওয়ার্ডগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সব ব্যবস্থা নিয়েছেন। রাজশাহী আবহাওয়া
দপ্তর বলেছে, তিন দিন ধরে রাজশাহীর তাপমাত্রা নিচে নামছে। শুক্রবার
রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি
সেলসিয়াস। শনিবার ছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি। গতকাল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
No comments