বাংলাদেশ
বিমানের জন্মদিন আজ। হয়ে গেল ৪৬ বছর। চার দশকের বেশি সময়ে রাষ্ট্রীয় এই
উড়োজাহাজ সংস্থা ৫ কোটি ২৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। বিমানের বহরে বর্তমানে
মাত্র ১৩টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি আবার ভাড়ায় আনা হয়েছে। তীব্র
প্রতিযোগিতার বাজারে এই অল্প কয়েকটি উড়োজাহাজ দিয়েই তিন বছর ধরে লাভের মুখ
দেখছে দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিমান সংস্থাটি। এর ধারাবাহিকতা
ধরে রেখে নতুন গন্তব্যে যাত্রা শুরু করতে চাইছে বিমান। দেশ স্বাধীন হওয়ার
এক মাসও তখন পেরিয়ে যায়নি। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে
জন্ম হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। এভাবেই জন্ম বাংলাদেশ বিমানের।
জন্মের পর বিমানের সম্বল ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনী থেকে আনা একটি ডিসি-৩
উড়োজাহাজ। সে বছর ১০ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে।
এরপর ভারত ও হল্যান্ড সরকারের উপহারে বিমানবহরে আসে চারটি ফকার-২৭। ৪ মার্চ
ব্রিটিশ সরকার থেকে পাওয়া একটি বোয়িং ৭০৭ চার্টার্ড উড়োজাহাজ ১৭৯ যাত্রী
নিয়ে লন্ডন থেকে ঢাকায় বিমানের প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করে। তিন
দিন পর ৭ মার্চ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
পরিচালনা করে বিমান। ১৯৭৩ সালের মধ্যে বিমানবহরে আটটি ফকার, দুটি বোয়িংসহ
মোট উড়োজাহাজ সংখ্যা হয় ১০। ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয় বিমান বাংলাদেশ। এরপর বিমানের
ইতিহাস দীর্ঘ হতে থাকে। কখনো ডিসি-১০, কখনো এয়ারবাস যোগ দেয়। একসময় বিশ্বের
তিনটি মহাদেশের ২৬টি শহরে আকাশপথে ফ্লাইট পরিচালনা করত। একাধিকবার
উড়োজাহাজ বদলানো হলেও বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা প্রায় একই রকম ছিল। বরং
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব উড়োজাহাজ কমে যায়। ভাড়ায় উড়োজাহাজ এনে দেশ-বিদেশে
ফ্লাইট পরিচালনার প্রবণতা বাড়তে। গত তিন বছরে ১৩টি উড়োজাহাজ নিয়ে ৬০৬ কোটি
টাকা মুনাফা করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এর
মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩২৪ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৩৫ কোটি ও ২০১৬-১৬
অর্থবছরে ৪৭ কোটি টাকা মুনাফা করে। সবশেষ অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ কমে
যাওয়ার কারণ হিসেবে বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে
জেট ফুয়েলের তুলনামূলক বেশি মূল্য, কার্গো পরিবহনে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা
এবং এশীয় অ্যাভিয়েশন মার্কেটে এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে ভাড়া নিয়ে তীব্র
প্রতিযোগিতাকে উল্লেখ করেছে। বিগত তিন বছরে বিমানের যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে ৩
লাখ ৩১ হাজার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান ২০ লাখ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন
করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ২৩ লাখ ১৮ হাজার। সবশেষ ২০১৬-১৭
অর্থবছরে বিমানের যাত্রী ছিল ২৩ লাখ ৫১ হাজার। কার্গো পরিবহন খাতে বিমানের
আয় কমেছে ৭১ কোটি টাকা। বিমানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমান ৩৩
হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ৪০
হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম কার্গো পরিবহন
করেছে। বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ প্রথম আলোকে বলেন,
২০১৬-১৭ অর্থবছরে কার্গো খাতে বিমানের আয় হয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬
অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল ৩১৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্য
সরকার কর্তৃক আকাশপথে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কারণে এ খাতে বিমানের আয়
কম হয়েছে।
No comments