গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে যুক্ত হচ্ছে নেপাল-চীন! অস্বস্তিতে ভারত
নেপালের
নতুন বাম-জোট সরকার বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এই উদ্যোগের মূল অংশ হিসেবে নেপালের সড়ক বিভাগ চীনের সঙ্গে কাঠমাণ্ডুকে
সংযুক্ত করতে চাইছে। আর তাই একটি সুড়ঙ্গ সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব তৈরি করেছে
নেপাল। প্রস্তাবিত সড়কটি সীমান্ত শহর রাসুওয়াগাধি হয়ে রাজধানী কাঠমাণ্ডুর
কাছাকাছি পৌঁছাবে। ভারতের কয়েকটি পত্রিকা এ খবর প্রকাশ করেছে। পরিকল্পনা
অনুযায়ী কাঠমান্ডুর টোখা থেকে নুয়াকোট জেলার চাহারি পর্যন্ত সুড়ঙ্গ সড়কটি
নির্মাণ করা হলে, কাঠমাণ্ডু থেকে সীমান্ত শহর রাসুওয়াগাধিতে পৌঁছাতে মাত্র
আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। এই সুড়ঙ্গ সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৪.২ কিলোমিটার।
অন্যদিকে রাসুওয়াগাধিমুখি পাসাং লামু হাইওয়েতে পৌঁছানোর জন্য আলাদা ৩৫ কিমি
দীর্ঘ অ্যাকসেস রোড তৈরি করা হবে। নেপালের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রে
জানা গেছে, সরকার ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে সাহায্যের জন্য এশিয়ান
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। বেইজিংয়ে
ব্যাঙ্কের সদর দপ্তর থেকে প্রস্তাবটির ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে। এ
ব্যাপারে আরো সমীক্ষা চালিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব পেশ করার জন্য ব্যাংকের
পক্ষ থেকে নেপাল সরকারকে বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্ণালয়ের বৈদেশিক সাহায্য
সমন্বয় বিভাগের প্রধান সঞ্জয় কুমার সেরেস্তা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গ সড়ক ও
অ্যাকসেস রোড নির্মাণের জন্য নেপালি মুদ্রায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি খরচ হবে।
এছাড়াও নেপালের সিমেন্ট শিল্পে ১ হাজার ৪০০ লাখ ডলার বিনিয়োগের ব্যাপারে
চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে নেপালের বিনিয়োগ
বোর্ড। চীনের হুয়াজিন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে
একই কোম্পানির সঙ্গে নেপালের খনিজ ও জিওলজি বিভাগ আরো একটি চুক্তি করে। ওই
চুক্তির আওতায় হুয়াজিনকে ধাধিং জেলার পানিখারকা থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল
ক্লিংকার আহরণের অনুমতি দেয়া হয়। চীনা কোম্পানিটি গত কয়েক মাস ধরে এই
চুক্তির জন্য কাজ করছিল। বোর্ডের মুখপাত্র উত্তম ভক্ত ওয়াগেলে জানান, যত
দ্রুত সম্ভব চুক্তি সইয়ের জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে। চীনের হুয়াজিন কোম্পানির
সূত্রে জানা গেছে, তারা নারায়ণি জোনে সিমেন্ট কারখানা স্থাপন করবে।
প্রতিদিন ৩,০০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে এই কোম্পানির। এই
প্রকল্পে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করবে ৩৫০ শ্রমিক। এছাড়া আরো ১ হাজার মানুষ
পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুবিধা পাবে। দু’বছর আগে এই কোম্পানির বিনিয়োগ
প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে, ক্লিংকার আহরণের স্থান ঠিক করতে না পারায়
বিষয়টি এতদিন ঝুলে ছিল। এখন সরকার শুধু সিদ্ধান্তই নেয়নি, কোম্পানিকে জমি
কেনারও অনুমতি দিয়েছে। কারখানা স্থাপনের জন্য ৩২ হেক্টর জমির প্রয়োজন।
বর্তমানে নেপালের সিমেন্ট কারখানাগুলো ভারত থেকে ক্লিংকার আমদানি করে।
এদিকে চীনের আরো একটি কোম্পানি হংশি শিভাম সিমেন্ট শীঘ্রই উৎপাদন শুরু করতে
চলেছে। এই কোম্পানিও নিজেরাই ক্লিংকার তৈরি করবে বলে জানা গেছে। বিপুল
বিজয়ের পর নেপালে বামপন্থীদের নতুন সরকার গঠন করার প্রয়াসকে ভারতের
বিরুদ্ধে চীনের দুর্দান্ত জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাঠমাণ্ডুতে প্রভাব
বিস্তার প্রশ্নে ভারতকে চীন টেক্কা দেয়া শুরু করেছে। কমিউনিস্ট চীনের প্রতি
এই জোটের আদর্শগত সম্পর্ক রয়েছে। এর শীর্ষ দুই নেতা ওলি ও পুষ্প কমল দহাল
প্রচণ্ডের সঙ্গে শীর্ষ চীন ও পার্টি নেতাদের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
নির্বাচনের পর ওলি তিব্বতের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে একটি
ট্রান্স-হিমালয় রেলওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটিও চীনের সঙ্গে
সহযোগিতা বাড়ানোর ইঙ্গিত বলেই মনে হচ্ছে। এই ওলি ছিলেন একসময় নয়াদিল্লির
ঘনিষ্ঠ। আর এখন তিনি ভারতবিরোধী হয়ে পড়েছেন। তার সরকার ভোটে ক্ষমতায় আসতেই
নেপালের বৃহত্তম বিনিয়োগকারী হিসেবে ভারতকে টপকে গেছে চীন। এর ফলে ভারতের
অস্বস্তি বেড়েছে। সমস্যা হল, নেপালকে এখনো ভারত তার আঙিনা হিসেবে দেখে।
টেক্সাসের ভূরাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটফোরের বিশ্লেষকরা
লিখেছেন, নির্বাচনে বামেদের উত্থানে নেপালের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের বিকল্প
হিসেবে চীনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। একটি বিষয় নিশ্চিত, নেপালে প্রভাব
বিস্তারের জন্য চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে গেছে
ইতিমধ্যে।
No comments