রাণীনগরে ইট ভাটার নির্গত গ্যাসে জমিতে ধানের বদলে চিটা
নওগাঁর রাণীনগরে মোর ইট ভাটার চিমনির নির্গত গ্যাস বিস্ফোরণে প্রায় ৪০ বিঘা জমির ধানসহ ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে কৃষক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ সব কৃষকরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার কারনে বঞ্চিতরা রয়েছেন ব্যাপক হত্যাশায়। একদিকে জমিতে ধানের বদলে চিটা অন্যদিকে পাওয়া হচ্ছে না ক্ষতিপূরণ। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন-চককুতুব নামক আবাসিক এলাকায় রাণীনগর-আত্রাই সড়কের পাশে চকাদিন-চককুতুব এতিমখানা ও মাদ্রাসা এবং জনবসতিসহ ফসলী জমির মধ্যে গত দুই বছর থেকে মোর ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। রাণীনগর-আত্রাই সড়কের পাশে ইট ভাটা অবস্থিত হওয়ায় পাকা রাস্তার উপড় সব সময় মাটি পড়ে থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। আর অবিরত ঘটতে থাকে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা জোর করে এই সব নিষিদ্ধ স্থানে ভাটা তৈরি করে পরিবেশ নষ্ট করছে। এদিকে মোর ব্রিকস ভাটার (ভ্যাকুয়াম/কানেকটিং) গ্যাস হঠাৎ খুব জোরে চিমনি দিয়ে নির্গত হতে থাকে। সরকারি বিধি মোতাবেক ভাটার চিমনির উচ্চতা ১২৫ ফিট হওয়ার কথা হলেও এই ভাটার চিমনির উচ্চতা অর্ধেক। যার কারণে ক্ষতির পরিমাণটা অনেক বেশি বলে স্থানীয়দের ধারনা। নির্গত গ্যসের চাপে ও আগুনে আশপাশেরও প্রায় ৪০ বিঘা জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তবে ভাটা মালিক কিছু কিছু কৃষকদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করলেও বঞ্চিত কৃষকদের এখন মাথায় হাত পড়েছে। পাশাপাশি দুটি ইট ভাটা থাকার কারণে একজন বলছে আমার ভাটা দ্বারা এই ক্ষতি হয়নি আবার অন্যজন বলছেন আমার ভাটা দ্বারা এই ক্ষতি হয়নি। এতে করে ওই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ইটভাটার আশেপার্শ্বে ধানসহ সব ফসলি জমি রয়েছে। কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইটভাটাটি জোরপূর্বকভাবে চালানো হচ্ছে।
এটি বন্ধ করা প্রয়োজন বলে স্থানীয়রা দাবী করেছেন। চকমুনু গ্রামের কৃষক আসমাইল হোসেন জানান, এই মোর ব্রিকস ইট ভাটার ধোয়ার কারণে আমার ২বিঘা জমির ধান সম্পন্ন চিটা হয়েছে। তারা আমাকে কোন প্রকারের ক্ষতিপূরণ দেয়নি। তাহলে আমি এখন কোথায় যাবো। চককুতুব গ্রামের মুহিম হোসেন, নজরুল ইসলাম ও মোহসিন জানান, আমাদেরজমির ধান এই ভাটার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। অথচ ভাটা মালিক বলছেন তাদের ভাটার কারণে আমাদের জমির ধান নষ্ট হয় নাই। আমরা এখন কোথায় যাবো। চকাদিন-চককুতুব মাদ্রাসা ও এতিমখানার মুফতি মো: আব্দুর রউফ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় ভাটা তৈরি না হওয়ার জন্য প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ পর্যন্ত দিয়েছিলাম। তাতে কোন লাভ হয়নি। সারাক্ষণ ধূলাবালি ওড়ার কারণে আমার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বলতে গেলে সব সময় অসুস্থ্যই থাকে। বিভিন্ন ফলদ গাছ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ফল। ভাটার মালিক প্রভাবশালী তাই তাদের বিরুদ্ধে করার কিছু নেই। ভাটার মালিক (পার্টনার) মো: জাহিদ হাসান জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছি। আর যাদের জমির ধান আমার ভাটার কারণে নষ্ট হয়নি তাদেরকে তো আমার ক্ষতি পূরণ দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। পাশে আর একটি ভাটা আছে হয়তো সেই ভাটার কারণে নষ্ট হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, ক্ষতিগ্রস্থ্যদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments