জনগণের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ
প্রথম আলো: নতুন মূসক আইন নিয়ে ব্যবসায়ী ও এনবিআর মুখোমুখি অবস্থানে। ব্যবসায়ীরা চান মূসক হার কমাতে; এনবিআর অনড়। মূসক হার বেশি?
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: নতুন আইনে অভিন্ন হারে ১৫ শতাংশ মূসক বসবে। যা আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় একটু বেশি। ১৫ শতাংশ হার বেশি মনে হচ্ছে। কারণ, এ দেশে মূসকের ভিত্তিটা ছোট। মূসক নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে যা হবে সেটা হলো, ব্যবসায়ীরা পণ্য ও সেবার বর্তমান দামের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক বসিয়ে বিক্রি করবেন। এটাই ব্যবসায়ীদের সংস্কৃতি। অথচ এখন যে দামে পণ্য বিক্রি হয়, এর মধ্যেই মূসক আছে। এর ফলে ভোক্তার ওপর মূসক আপতন হবে গড়ে ১৮ শতাংশের মতো। আবার এনবিআর ও ব্যবসায়ীরা কীভাবে হিসাব করবেন, সেই পদ্ধতি খোলাসা করছেন না। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, পণ্যের দাম বাড়বে। ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে।
এই অবস্থার নিরসনে সহজ উপায় হচ্ছে মূসক হার কমিয়ে দেওয়া। মূসক কমানোর ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে, মূসক আপতন যাতে ভোক্তার ওপর আগের মতোই থাকে এবং বিক্রেতারা যাতে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখাতে না পারেন। আমি মনে করি, এসব বিষয় বিবেচনা করে মূসক হার ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে রাখা যেতে পারে।
প্রথম আলো: হিসাবনির্ভর মূসক দেওয়ার জন্য এ দেশের ব্যবসায়ীরা কতটা প্রস্তুত? হিসাব না রাখতে পারলে রেয়াতও নিতে পারবে না। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে।
আবদুল মজিদ: এ ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে এই যুক্তি খাটে। কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়া খুব বেশি কঠিন নয়। ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারে (ইসিআর) কত টাকায় পণ্য বিক্রি করেছে, সেই সংখ্যা ইসিআরে লিখে রাখলেই হবে। কত মূসক হলো, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। এটা কঠিন কোনো কাজ নয়। এ জন্য মানসিক প্রস্তুতি দরকার। একজন দোকানদার মোবাইল ফোন চালাতে পারলে ইসিআর কেন চালাতে পারবেন না?
তবে এনবিআরকে এই বিষয়ে জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ, জনগণই মূসক দেয়। ব্যবসায়ীরা এই প্রক্রিয়ায় মধ্যবর্তী লোক। ভোক্তা যদি মূসক রসিদ চাইতে শুরু করে; তবে ব্যবসায়ীরা রসিদ না দিয়ে পারবেন না। যেহেতু ভোক্তা মূসক দিচ্ছেন; তাঁর অধিকার আছে রসিদ চাওয়ার। এখনো ভোক্তা মূসকের টাকা দিচ্ছেন, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মেরে দিচ্ছেন। এখন মূসক বিষয়ে যত আলোচনা হচ্ছে তা ব্যবসায়ী তথা মধ্যবর্তী লোকদের নিয়ে। ভোক্তার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে না।
প্রথম আলো: আন্দোলনের হুমকি দমনে পাল্টা হুমকি—এই চলছে। পুরো বিষয়টি কি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়?
আবদুল মজিদ: শুধু মূসক কেন; যেকোনো বিষয় অংশীজনদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা, সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের যেমন যুক্তি দিয়ে যেকোনো বিষয়ে দাবি করতে হবে, আবার এনবিআর তা না মানলে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে হুমকি-পাল্টা হুমকি দিলে কোনো কাজ হবে না। সম্প্রতি পরামর্শক সভায় যে হুমকি-পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটেছে, তাতে নতুন আইনটি বাস্তবায়নে একধরনের নিশ্চয়তা তৈরি হলো।
প্রথম আলো: নতুন মূসক আইনটি বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি বিবেচনা করা উচিত?
আবদুল মজিদ: যেকোনো আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জনগণের ওপর এর প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা দেখতে হয়। কেননা জনগণই ভোটার। সাধারণত যেকোনো সরকারের মেয়াদের প্রারম্ভিক বছরে আইন বাস্তবায়ন করলে সুবিধা হয়। আর কর সব সময়ই অজনপ্রিয় বিষয়। তাই নতুন মূসক আইন বাস্তবায়নে জনগণের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো: করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। আপনি কি মনে করেন, এটা বৃদ্ধি করা উচিত?
আবদুল মজিদ: অবশ্যই করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা উচিত। মূল্যস্ফীতি ও বাজার পরিস্থিতি, আয় বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা করলে আড়াই লাখ টাকা খুব বেশি নয়। আড়াই লাখ টাকায় দীর্ঘদিন স্থির রাখলে বহু লোক করজালে ঢুকে যাবেন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক করদাতাকে করবিষয়ক সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। কর প্রশাসনের সেই দক্ষতা এখনো আসেনি।
প্রথম আলো: করপোরেট কর কি কমানো উচিত?
আবদুল মজিদ: নীতিগতভাবে সবাই স্বীকার করছেন, বর্তমান করপোরেট কর হার একটু বেশি। এর কারণ, করপোরেট করের ভিত্তি ছোট। এই ভিত্তি বড় হলে, মাসে বেশি প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা গেলে কর হার কম হলেও সমস্যা হবে না। করপোরেট কমানো হলে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন উদ্যোক্তারা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: নতুন আইনে অভিন্ন হারে ১৫ শতাংশ মূসক বসবে। যা আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় একটু বেশি। ১৫ শতাংশ হার বেশি মনে হচ্ছে। কারণ, এ দেশে মূসকের ভিত্তিটা ছোট। মূসক নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে যা হবে সেটা হলো, ব্যবসায়ীরা পণ্য ও সেবার বর্তমান দামের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক বসিয়ে বিক্রি করবেন। এটাই ব্যবসায়ীদের সংস্কৃতি। অথচ এখন যে দামে পণ্য বিক্রি হয়, এর মধ্যেই মূসক আছে। এর ফলে ভোক্তার ওপর মূসক আপতন হবে গড়ে ১৮ শতাংশের মতো। আবার এনবিআর ও ব্যবসায়ীরা কীভাবে হিসাব করবেন, সেই পদ্ধতি খোলাসা করছেন না। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, পণ্যের দাম বাড়বে। ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে।
এই অবস্থার নিরসনে সহজ উপায় হচ্ছে মূসক হার কমিয়ে দেওয়া। মূসক কমানোর ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে, মূসক আপতন যাতে ভোক্তার ওপর আগের মতোই থাকে এবং বিক্রেতারা যাতে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখাতে না পারেন। আমি মনে করি, এসব বিষয় বিবেচনা করে মূসক হার ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে রাখা যেতে পারে।
প্রথম আলো: হিসাবনির্ভর মূসক দেওয়ার জন্য এ দেশের ব্যবসায়ীরা কতটা প্রস্তুত? হিসাব না রাখতে পারলে রেয়াতও নিতে পারবে না। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে।
আবদুল মজিদ: এ ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে এই যুক্তি খাটে। কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়া খুব বেশি কঠিন নয়। ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারে (ইসিআর) কত টাকায় পণ্য বিক্রি করেছে, সেই সংখ্যা ইসিআরে লিখে রাখলেই হবে। কত মূসক হলো, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। এটা কঠিন কোনো কাজ নয়। এ জন্য মানসিক প্রস্তুতি দরকার। একজন দোকানদার মোবাইল ফোন চালাতে পারলে ইসিআর কেন চালাতে পারবেন না?
তবে এনবিআরকে এই বিষয়ে জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ, জনগণই মূসক দেয়। ব্যবসায়ীরা এই প্রক্রিয়ায় মধ্যবর্তী লোক। ভোক্তা যদি মূসক রসিদ চাইতে শুরু করে; তবে ব্যবসায়ীরা রসিদ না দিয়ে পারবেন না। যেহেতু ভোক্তা মূসক দিচ্ছেন; তাঁর অধিকার আছে রসিদ চাওয়ার। এখনো ভোক্তা মূসকের টাকা দিচ্ছেন, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মেরে দিচ্ছেন। এখন মূসক বিষয়ে যত আলোচনা হচ্ছে তা ব্যবসায়ী তথা মধ্যবর্তী লোকদের নিয়ে। ভোক্তার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে না।
প্রথম আলো: আন্দোলনের হুমকি দমনে পাল্টা হুমকি—এই চলছে। পুরো বিষয়টি কি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়?
আবদুল মজিদ: শুধু মূসক কেন; যেকোনো বিষয় অংশীজনদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা, সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের যেমন যুক্তি দিয়ে যেকোনো বিষয়ে দাবি করতে হবে, আবার এনবিআর তা না মানলে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে হুমকি-পাল্টা হুমকি দিলে কোনো কাজ হবে না। সম্প্রতি পরামর্শক সভায় যে হুমকি-পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটেছে, তাতে নতুন আইনটি বাস্তবায়নে একধরনের নিশ্চয়তা তৈরি হলো।
প্রথম আলো: নতুন মূসক আইনটি বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি বিবেচনা করা উচিত?
আবদুল মজিদ: যেকোনো আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জনগণের ওপর এর প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা দেখতে হয়। কেননা জনগণই ভোটার। সাধারণত যেকোনো সরকারের মেয়াদের প্রারম্ভিক বছরে আইন বাস্তবায়ন করলে সুবিধা হয়। আর কর সব সময়ই অজনপ্রিয় বিষয়। তাই নতুন মূসক আইন বাস্তবায়নে জনগণের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো: করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। আপনি কি মনে করেন, এটা বৃদ্ধি করা উচিত?
আবদুল মজিদ: অবশ্যই করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা উচিত। মূল্যস্ফীতি ও বাজার পরিস্থিতি, আয় বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা করলে আড়াই লাখ টাকা খুব বেশি নয়। আড়াই লাখ টাকায় দীর্ঘদিন স্থির রাখলে বহু লোক করজালে ঢুকে যাবেন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক করদাতাকে করবিষয়ক সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। কর প্রশাসনের সেই দক্ষতা এখনো আসেনি।
প্রথম আলো: করপোরেট কর কি কমানো উচিত?
আবদুল মজিদ: নীতিগতভাবে সবাই স্বীকার করছেন, বর্তমান করপোরেট কর হার একটু বেশি। এর কারণ, করপোরেট করের ভিত্তি ছোট। এই ভিত্তি বড় হলে, মাসে বেশি প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা গেলে কর হার কম হলেও সমস্যা হবে না। করপোরেট কমানো হলে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন উদ্যোক্তারা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ
No comments