বিএনপিতে প্রার্থী হাফডজন আ’লীগের সাদেক চূড়ান্ত!
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কারা হবেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। ভোটযুদ্ধের প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ তো এরই মধ্যে তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। আর কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় কেন্দ্র করে দলটির প্রায় হাফডজন নেতা তোড়জোড় শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে মৃদুভাবে হলেও বইতে শুরু করেছে বরিশাল সিটি নির্বাচনের হাওয়া। বরিশালে সর্বশেষ সিটি নির্বাচন হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। তখন এখানে ভোটার ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। প্রায় চার বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬০৭ জনে। সর্বশেষ নির্বাচনে সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে নগর পিতা নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। গত ৪ বছরে দেশে বিএনপির নির্বাচিত মেয়র থেকে শুরু করে প্রায় সব পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক জনপ্রতিনিধি কারাবরণ, বরখাস্ত কিংবা পদচ্যুত হলেও ব্যতিক্রম কামাল। যে উপায়েই হোক বড় ধরনের কোনো বিপদে না পড়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কামালের সমালোচনা যেমন রয়েছে তেমনি প্রশংসাও কম নয়।
দলের ভেতরে কামালবিরোধীদের মতে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে টিকে আছেন তিনি। যে কারণে মাঠের আন্দোলনসহ কোনো কিছুতেই দেখা যায় না তাকে। এর বিপরীতে কামাল সমর্থকদের বক্তব্য, মেয়রের পাশাপাশি মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকাবস্থায় সবক্ষেত্রেই মাঠে ছিলেন কামাল। সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দলের একজন সাধারণ সদস্য করার পর নীতিনির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত দেয়ার প্রশ্নে তার আর কিইবা করার থাকে। তা ছাড়া দল প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় নেই, এই একজন কামাল যদি না থাকত তাহলে বরিশালে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকেই বিপদে পড়তে হতো। বরখাস্ত হয়ে জেলে যাওয়ার চেয়ে দলকে বাঁচিয়ে রাখার এই যে চেষ্টা, সেটা কি জরুরি নয়? অবশ্য দু’পক্ষের এসব বক্তব্য মানতে নারাজ কামাল। তার মতে, আইনকানুন মেনে কর্পোরেশন পরিচালনার কারণেই তাকে বিপদে ফেলতে পারেনি কেউ। সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ ধরলে আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। তফসিল ঘোষণা হবে মার্চ কিংবা এপ্রিলে। এ হিসেবে নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। আর সে কারণেই মাঠে নেমেছেন মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে অনেকটাই নির্ভাবনায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছে তারা। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহর নাম। একক প্রার্থী হিসেবে আমরা তার নামই পাঠাব ঢাকায়।’ অবশ্য সাদেক যে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার আভাস মিলেছে আরও প্রায় বছর খানেক আগে। মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডে কর্মী সভা করছেন তিনি। দলকে চাঙ্গা রাখতে প্রায় প্রতিদিনই চলছে তার প্রতিনিধি সভাসহ নানা প্রস্তুতি। এ সবকিছুকেই সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন সবাই। সাদেকের পাশাপাশি এখানে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। সাবেক মেয়র হিরনের অনুসারী আফজাল নিজেকে হিরনপন্থীদের প্রার্থী বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবিক পক্ষে এখানে সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরন অনুসারীদের তেমন কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি বলেন, ‘কে কী চাইল সেটা বড় কথা নয়। কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই নামতে হবে সবাইকে। তা ছাড়া কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের আগে মনোনয়ন প্রশ্নে আমার মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই।’ দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ যখন অনেকটাই নির্ভার ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপির ভেতরে চলছে নানা জটিলতা। বর্তমান মেয়র কামাল আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে দলটির যুগ্ম মহাসচিব বরিশাল মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা সভাপতি এবায়েদুল হক চান ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুকসহ হাফডজন নেতার নাম। বর্তমান মেয়র কামাল প্রশ্নে অনেকেই বলছেন, দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণেই ক্ষমতাসীনদের কোপানল থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন। পাশাপাশি দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে কাজকর্ম আর সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন। অন্য কেউ হলে হয়তো এটা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে গিয়ে নানা ঘটনার জন্ম দেয়া চান শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ছেড়ে বিনিময়ে জেলা সভাপতির পদ নেন। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের স্বপ্ন দেখা শিরিনও নানাভাবে চালাচ্ছেন চেষ্টা।
মনোনয়ন প্রশ্নে সমর্থন পাওয়ার আশায় সংস্কারপন্থী থেকে শুরু করে দক্ষিণের আলোচিত-সমালোচিত ও আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা না রাখা চিহ্নিত প্রায় সব সাবেক মন্ত্রী-এমপির সঙ্গেই গড়ে তুলেছেন সুসম্পর্ক। এমনকি নেতৃত্ব প্রশ্নে চির বৈরী বিএনপি নেতা সাবেক এমপি সরোয়ারের সঙ্গে পর্যন্ত তার বৈঠকের খবর শোনা গেছে। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা প্রসঙ্গে বিলকিস জাহান শিরিন যুগান্তরকে বলেন, ‘দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। বাকি সিদ্ধান্ত দল নেবে। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’ নিজের মুখে কিছু না বললেও শেষ পর্যন্ত যে মনোনয়নের জন্য মাঠে নামবেন সরোয়ার সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। বিএনপির অনেক নেতার মতে, বিগত সময়ের মতো এবারও হয়তো নির্বাচন প্রশ্নে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দুই-তিন মাস আগে অনুষ্ঠিতব্য এসব সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করবে সরকার। এরকম পরিস্থিতিতে সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সে সুযোগ ছাড়তে চাইবেন না সরোয়ার। আর সব সময়ের মতো এবারও প্রকাশ্যে নিজ মুখে বলবেন না কিছুই। অনুসারীদের দিয়ে বলাবেন তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কথা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, ‘মনোনয়ন প্রশ্নে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমার সিদ্ধান্ত। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে কিন্তু একটা বিষয় ভাবলেই তাদের সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। সেটা হল আমি বিএনপিতে ছিলাম আছি এবং থাকব।’ বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারী বিএনপি নেতা জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘বরিশালে বিএনপির রাজনীতিতে মজিবর রহমান সরোয়ারের কোনো বিকল্প নেই। এটা যেমন আমরা জানি তেমনি কেন্দ্রও জানে। মনোনয়ন যেই পাক না কেন এখানে বিজয় ঘরে তুলতে হলে লাগবে মজিবর রহমান সরোয়ারকে। আর দল যদি তাকেই মনোনয়ন দেয় তাহলে যে কোনো পরিস্থিতিতে এখানে বিএনপি জিতবে ইনশাআল্লাহ।’
No comments