মামলা করে সাক্ষ্য দিতে আসছে না পুলিশ by আসাদুজ্জামান
মামলার
বাদী, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ অধিকাংশ পুলিশ সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে
আসছেন না। এ কারণে ঢাকার ২৩টি আদালতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন ১৫৬
মামলার বিচারকাজ কার্যত আটকে আছে। এ ছাড়া সরকারি অনুমোদন না আসায়
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা ১৩৮টি মামলার বিচার শুরুই করতে পারছেন না আদালত।
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় আরও আটটি মামলার বিচারকাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাক্ষী পর্যায়ে থাকা বিচারাধীন ১৫৬টির মধ্যে অধিকাংশ মামলায় সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। তারপরও পুলিশসহ অধিকাংশ সাক্ষী হাজির হচ্ছেন না।
এ রকম ৬২টি মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, এসব মামলায় আদালতে দিনের পর দিন সাক্ষ্য দিতে না আসায় ৩৩৩ জন পুলিশ সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এ তথ্য জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নথিপত্রে দেখা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৩৫ জন সদস্যেরবিরুদ্ধে পাঁচটিমামলা করেছে গুলশান, খিলক্ষেত, সূত্রাপুর ও পল্টন থানার পুলিশ। এর মধ্যে দুটি ২০০৫ সালে এবং একটি ২০০৯ সালে দায়ের করা। পরে পুলিশ অভিযোগপত্র দিলে মামলাগুলোর বিচারকাজ শুরু করেন আদালত। এর কোনোটিতেই বাদী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
এর মধ্যে পল্টন থানার মামলায় {নম্বর-৩১(৮)২০০৫, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১১১৯/২০০৫} প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালত ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট সাত জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামিদের মধ্যে চারজন কারাগারে, একজন জামিনে ও দুজন পলাতক আছেন।
গত ছয় বছরে কারাগারে থাকা চার আসামিকে ৬৭ বার আদালতে তোলা হয়েছে, কিন্তু মামলার বাদী পল্টন থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক মজনু মিয়া ও তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ দুজনসহ ২৫ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
২০০৫ সালে গুলশান থানায় জেএমবির পাঁচ জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা {নম্বর-৩২ (৮) ২০০৫ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৩১৫/২০০৭} করেন ওই থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মীর জাহেদুল হক। ২০০৯ সালের ১৪ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গত ছয় বছরে এই মামলায় আসামিদের ৩৭ বার আদালতে তোলা হয়েছে। কিন্তু মামলার বাদী, চারজন তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩৭ জন সাক্ষীর কেউ আদালতে হাজির হননি। এঁদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা মহানগর ও জেলার ২৩টি আদালতে বিচারাধীন ১৫৬টি জঙ্গি মামলার বেশির ভাগের একই দশা। এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষী আদালতে হাজির করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু জঙ্গিদের অধিকাংশ মামলায় পুলিশ সাক্ষীই সাক্ষ্য দিতে আসছে না। এমনকি সাধারণ সাক্ষীদেরও হাজির করানো হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর এসব মামলা ঝুলে আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার এ এইচ এম কামারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের যেসব সমন বা পরোয়ানা আমাদের কাছে পাঠানো হয়, তা সংশ্লিষ্ট অফিসে পাঠানো হয়।’ তিনি দাবি করেন, আদালতের সব সমন তামিল (বাস্তবায়ন) করা হয়।
অনুমোদনের অভাবে আটকে আছে ১৩৮টির: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় অপরাধ আমলে নেওয়ার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ আইনে নিষিদ্ধঘোষিত বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা ১৩৮টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আসেনি। ফলে এসব মামলার অপরাধ আমলে নিতে পারছেন না ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার অনুমোদন আমরা দিচ্ছি। মামলার ফাইলপত্র আসার পর যাচাই-বাছাই করে যত দ্রুত সম্ভব অনুমোদন দেওয়া হয়।’
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ: এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপরাধ আমলে নেওয়ার কারণে আটটি মামলার আসামিরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলার বিচারকাজের ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এসব স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের কোনো উদ্যোগও নেই বলে আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থগিতাদেশের কারণে জঙ্গিদের মামলার বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে, তা ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়নি। আমার অফিসে এ-সংক্রান্ত মামলার কাগজপত্র পাঠানো হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জঙ্গিদের মামলার বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাক্ষী পর্যায়ে থাকা বিচারাধীন ১৫৬টির মধ্যে অধিকাংশ মামলায় সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। তারপরও পুলিশসহ অধিকাংশ সাক্ষী হাজির হচ্ছেন না।
এ রকম ৬২টি মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, এসব মামলায় আদালতে দিনের পর দিন সাক্ষ্য দিতে না আসায় ৩৩৩ জন পুলিশ সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এ তথ্য জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নথিপত্রে দেখা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৩৫ জন সদস্যেরবিরুদ্ধে পাঁচটিমামলা করেছে গুলশান, খিলক্ষেত, সূত্রাপুর ও পল্টন থানার পুলিশ। এর মধ্যে দুটি ২০০৫ সালে এবং একটি ২০০৯ সালে দায়ের করা। পরে পুলিশ অভিযোগপত্র দিলে মামলাগুলোর বিচারকাজ শুরু করেন আদালত। এর কোনোটিতেই বাদী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
এর মধ্যে পল্টন থানার মামলায় {নম্বর-৩১(৮)২০০৫, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১১১৯/২০০৫} প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালত ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট সাত জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামিদের মধ্যে চারজন কারাগারে, একজন জামিনে ও দুজন পলাতক আছেন।
গত ছয় বছরে কারাগারে থাকা চার আসামিকে ৬৭ বার আদালতে তোলা হয়েছে, কিন্তু মামলার বাদী পল্টন থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক মজনু মিয়া ও তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ দুজনসহ ২৫ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
২০০৫ সালে গুলশান থানায় জেএমবির পাঁচ জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা {নম্বর-৩২ (৮) ২০০৫ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৩১৫/২০০৭} করেন ওই থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মীর জাহেদুল হক। ২০০৯ সালের ১৪ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গত ছয় বছরে এই মামলায় আসামিদের ৩৭ বার আদালতে তোলা হয়েছে। কিন্তু মামলার বাদী, চারজন তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩৭ জন সাক্ষীর কেউ আদালতে হাজির হননি। এঁদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা মহানগর ও জেলার ২৩টি আদালতে বিচারাধীন ১৫৬টি জঙ্গি মামলার বেশির ভাগের একই দশা। এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষী আদালতে হাজির করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু জঙ্গিদের অধিকাংশ মামলায় পুলিশ সাক্ষীই সাক্ষ্য দিতে আসছে না। এমনকি সাধারণ সাক্ষীদেরও হাজির করানো হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর এসব মামলা ঝুলে আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার এ এইচ এম কামারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের যেসব সমন বা পরোয়ানা আমাদের কাছে পাঠানো হয়, তা সংশ্লিষ্ট অফিসে পাঠানো হয়।’ তিনি দাবি করেন, আদালতের সব সমন তামিল (বাস্তবায়ন) করা হয়।
অনুমোদনের অভাবে আটকে আছে ১৩৮টির: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় অপরাধ আমলে নেওয়ার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ আইনে নিষিদ্ধঘোষিত বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা ১৩৮টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আসেনি। ফলে এসব মামলার অপরাধ আমলে নিতে পারছেন না ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার অনুমোদন আমরা দিচ্ছি। মামলার ফাইলপত্র আসার পর যাচাই-বাছাই করে যত দ্রুত সম্ভব অনুমোদন দেওয়া হয়।’
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ: এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপরাধ আমলে নেওয়ার কারণে আটটি মামলার আসামিরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলার বিচারকাজের ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এসব স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের কোনো উদ্যোগও নেই বলে আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থগিতাদেশের কারণে জঙ্গিদের মামলার বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে, তা ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়নি। আমার অফিসে এ-সংক্রান্ত মামলার কাগজপত্র পাঠানো হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জঙ্গিদের মামলার বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments