পাউবোর শতকোটি টাকার জমি বেদখল by অরূপ রায়
সাভার ব্যাংক কলোনি এলাকায় পাউবোর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা কয়েকটি বহুতল ভবন l ছবি: প্রথম আলো |
ঢাকার
সাভারে ব্যাংক কলোনির আই ব্লকের ২৯/১ হোল্ডিং নম্বর ভবনটির মালিক রফিকুল
ইসলাম। কিন্তু যে জমির ওপর তিনি ভবনটি নির্মাণ করেছেন, সেটির মালিক পানি
উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জমির মালিক না হয়েও তিনি পেয়েছেন পৌরসভার অনুমোদন
ও হোল্ডিং নম্বর। নিয়েছেন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ।
রফিকুলের মতো আরও ৩৮ জন ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৯ দশমিক ৬ বিঘা সরকারি জমি দখল করে সেখানে পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন। আবার কিছু লোক স্থাপনা না বানালেও জমি দখলে রেখেছেন। পাউবো ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও দখলদার উচ্ছেদে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাউবোর মামলায় রেকর্ড সংশোধনের প্রার্থনা করা হয়।
ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, সরকারি কোনো সংস্থার জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হলে আগে তাদের নোটিশ দিতে হবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য উঁচু প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে সাভার পৌর এলাকার ছোট বলিমেহের মৌজার ব্যাংক কলোনি এলাকায় তৎকালীন জল ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নামে ৫ দশমিক ৮৮ একর (১৯ দশমিক ৬ বিঘা) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে ওই জমি পাউবোর নামে রেকর্ড হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র না করায় দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সুযোগে স্থানীয় লোকজন বছর বছর ওই জমি দখল করে নেন। কিন্তু পাউবো তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গত বছর দুজন অবৈধ দখলদারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এক পক্ষ প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের শরণাপন্ন হন। তাঁর নথিপত্র ঘেঁটে ওই জমিতে পাউবোর মালিকানার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পরে ওই জমিসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে কয়েক দফায় পাউবোর মহাপরিচালকের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাউবো সব তথ্য সরবরাহ করে।
পাউবোর সরবরাহ করা তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ১৯ দশমিক ৬ বিঘা জমির পুরোটা ৩৮ জন ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। কেউ কেউ একতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত পাকা ভবন তৈরি করে বসবাস করছেন। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দখলদারের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে। তাঁরা জমি কিনেছেন দাবি করলেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
সরকারি হিসাবমতে, ছোট বলিমেহের মৌজায় প্রতি শতাংশ জমির দাম ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, ওই মৌজার ব্যাংক কলোনির প্রতি শতাংশ জমির বর্তমান বাজারদর আছে ২০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ১৯ দশমিক ৬ বিঘা জমির দাম ১১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
গত ২০ মে সরেজমিনে গেলে ৫/৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলার একটি বাড়ি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িটির মালিক কবির উদ্দিন শিকদার। তিনি গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী বলে জানা গেছে। কবির উদ্দিন শিকদার দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে জনৈক আফসার আলীর কাছ থেকে তিনি জমিটি কিনেছেন। রেকর্ড অনুযায়ী ওই জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন।
ছয়তলা ভিত্তি (ফাউন্ডেশন) দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন সৌদিপ্রবাসী নজরুল ইসলাম। বাড়িটির দোতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাড়ি নির্মাণের জন্য পৌরসভা বা রাজউকের কোনো অনুমোদন নেননি তিনি। অথচ বাড়িটিতে বিদ্যুতের সাতটি মিটার ও গ্যাসের সংযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, জনৈক আনসার আলী ও তাঁর স্ত্রী খালেদা খানমের কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে তিনি ৬ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করছেন। পাউবোর জমি কীভাবে অন্যের মাধ্যমে হাতবদল বা দলিল হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমাদের পক্ষে রায়ও পেয়েছি।’ কিন্তু নজরুল ইসলাম মামলা ও রায়-সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে সাভার ব্যাংক কলোনির আই ব্লকের ২৯/১ হোল্ডিং নম্বর ভবনের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাউবোর কোনো জমিতে আমরা বসবাস করি না। আদালতের মাধ্যমেই তা প্রমাণ হয়ে গেছে।’
কিন্তু সাভার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ওই জমির মালিক পাউবো। আরএস ও বিএস রেকর্ডেও পাউবোকেই মালিক দেখানো হয়েছে।
সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ছোট বলিমেহের মৌজায় অন্তত ১৪ বিঘা জমির মালিক পাউবো। ওই জমি অন্যরা দাবি করে থাকলে তা সঠিক নয়।’
পাউবোর পরিচালক (প্রসেসিং সেকশন) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল রশিদ এক পত্রে প্রথম আলোকে বলেন, পাউবোর ওই জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে আইনগত কোনো বাধা নেই। উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৩ মার্চ ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে দখলদারদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, ‘পাউবো উচ্ছেদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আমাদের অবহিত করবে। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদে সহায়তা করা হবে। খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষে অন্য কোনো সংস্থার জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।’
রফিকুলের মতো আরও ৩৮ জন ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৯ দশমিক ৬ বিঘা সরকারি জমি দখল করে সেখানে পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন। আবার কিছু লোক স্থাপনা না বানালেও জমি দখলে রেখেছেন। পাউবো ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও দখলদার উচ্ছেদে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাউবোর মামলায় রেকর্ড সংশোধনের প্রার্থনা করা হয়।
ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, সরকারি কোনো সংস্থার জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হলে আগে তাদের নোটিশ দিতে হবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য উঁচু প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে সাভার পৌর এলাকার ছোট বলিমেহের মৌজার ব্যাংক কলোনি এলাকায় তৎকালীন জল ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নামে ৫ দশমিক ৮৮ একর (১৯ দশমিক ৬ বিঘা) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে ওই জমি পাউবোর নামে রেকর্ড হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র না করায় দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সুযোগে স্থানীয় লোকজন বছর বছর ওই জমি দখল করে নেন। কিন্তু পাউবো তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গত বছর দুজন অবৈধ দখলদারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এক পক্ষ প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের শরণাপন্ন হন। তাঁর নথিপত্র ঘেঁটে ওই জমিতে পাউবোর মালিকানার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পরে ওই জমিসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে কয়েক দফায় পাউবোর মহাপরিচালকের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাউবো সব তথ্য সরবরাহ করে।
পাউবোর সরবরাহ করা তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ১৯ দশমিক ৬ বিঘা জমির পুরোটা ৩৮ জন ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। কেউ কেউ একতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত পাকা ভবন তৈরি করে বসবাস করছেন। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দখলদারের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে। তাঁরা জমি কিনেছেন দাবি করলেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
সরকারি হিসাবমতে, ছোট বলিমেহের মৌজায় প্রতি শতাংশ জমির দাম ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, ওই মৌজার ব্যাংক কলোনির প্রতি শতাংশ জমির বর্তমান বাজারদর আছে ২০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ১৯ দশমিক ৬ বিঘা জমির দাম ১১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
গত ২০ মে সরেজমিনে গেলে ৫/৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলার একটি বাড়ি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িটির মালিক কবির উদ্দিন শিকদার। তিনি গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী বলে জানা গেছে। কবির উদ্দিন শিকদার দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে জনৈক আফসার আলীর কাছ থেকে তিনি জমিটি কিনেছেন। রেকর্ড অনুযায়ী ওই জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন।
ছয়তলা ভিত্তি (ফাউন্ডেশন) দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন সৌদিপ্রবাসী নজরুল ইসলাম। বাড়িটির দোতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাড়ি নির্মাণের জন্য পৌরসভা বা রাজউকের কোনো অনুমোদন নেননি তিনি। অথচ বাড়িটিতে বিদ্যুতের সাতটি মিটার ও গ্যাসের সংযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, জনৈক আনসার আলী ও তাঁর স্ত্রী খালেদা খানমের কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে তিনি ৬ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করছেন। পাউবোর জমি কীভাবে অন্যের মাধ্যমে হাতবদল বা দলিল হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমাদের পক্ষে রায়ও পেয়েছি।’ কিন্তু নজরুল ইসলাম মামলা ও রায়-সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে সাভার ব্যাংক কলোনির আই ব্লকের ২৯/১ হোল্ডিং নম্বর ভবনের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাউবোর কোনো জমিতে আমরা বসবাস করি না। আদালতের মাধ্যমেই তা প্রমাণ হয়ে গেছে।’
কিন্তু সাভার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ওই জমির মালিক পাউবো। আরএস ও বিএস রেকর্ডেও পাউবোকেই মালিক দেখানো হয়েছে।
সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ছোট বলিমেহের মৌজায় অন্তত ১৪ বিঘা জমির মালিক পাউবো। ওই জমি অন্যরা দাবি করে থাকলে তা সঠিক নয়।’
পাউবোর পরিচালক (প্রসেসিং সেকশন) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল রশিদ এক পত্রে প্রথম আলোকে বলেন, পাউবোর ওই জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে আইনগত কোনো বাধা নেই। উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৩ মার্চ ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে দখলদারদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, ‘পাউবো উচ্ছেদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আমাদের অবহিত করবে। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদে সহায়তা করা হবে। খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষে অন্য কোনো সংস্থার জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।’
No comments