‘স্টার জলসার’ জাদু by ইমরান আহম্মেদ
প্রতিদিন এভাবেই ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসায় সিরিয়াল দেখেন সালমা বেগম (ছদ্মনাম)। ছোট ছেলে শিহাবও (ছদ্মনাম) সিরিয়ালের ভক্ত। ছবি: ইমরান আহম্মেদ |
‘আমার স্টার জলসা দে, “জল নূপুর” শুরু হইয়া গেছে।’
রাজীবকে (ছদ্মনাম) এভাবে আদেশ করেন তার মা সালমা বেগম (ছদ্মনাম)।
রাজীব আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘আমি খবর দেখছি, মা।’
‘পরে দেখিস, পড়তে যা।’
বলেই টেলিভিশনের দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র হাতে নেন সালমা বেগম। বোতাম টিপে চালু করেন স্টার জলসা চ্যানেল।
সালমা বেগম প্রতিদিন ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসায় গোটা দশেক সিরিয়াল দেখেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই চ্যানেলে তাঁর চোখ দুটো ঘোরাফেরা করে। গড়ে একটানা পাঁচ ঘণ্টা সিরিয়াল দেখেন। রাত সাড়ে ১১টায়ও তাঁর পছন্দের একটি সিরিয়াল আছে, কিন্তু সকালে উঠতে হয় বলে এটি বাদ দেন। সুযোগ থাকলে অবশ্য দেখা হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন সিরিয়ালের চক্রে চক্কর দিচ্ছেন তিনি।
সালমা বেগমের তিন সন্তান। সজীব (ছদ্মনাম), রাজীব আর শিহাব (ছদ্মনাম)। একটি বড় কক্ষে ছেলেদের পড়ার টেবিল আর টেলিভিশন। সেখানে বসে পাঁচ ধরে একটার পর একটা সিরিয়াল দেখে চলেছেন সালমা বেগম।
সালমা বেগমের সিরিয়াল দেখার বিষয়ে তাঁর বড় ছেলে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীবের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি টিভি সিরিয়াল দেখা শুরু করেন। রাত সাড়ে ১১টায় শেষ করেন। প্রতিটি সিরিয়ালই পাঁচ মিনিট দেখানোর পর বিরতি দেয়। এই ফাঁকে বাসার কাজ সেরে নেন। ব্যাপারটা এমন—সিরিয়াল দেখার ফাঁকে ফাঁকে কাজ।
স্টার জলসায় সিরিয়াল চলাকালে অন্য কোনো চ্যানেল বা অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ নেই বলে জানান সজীব। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি একটি চ্যানেলে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখি। তা দেখতে অন্তত তিন দিন আগে মাকে বিষয়টি জানাতে হয়। তখন ওই সময় অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ মেলে। অবশ্য সে সময় তিনি পাশের বাসায় গিয়ে আন্টির সঙ্গে সিরিয়ালের ওই পর্বটা দেখে আসেন।’
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব বলেন, ‘আমাদের একটা রুম হওয়ায় পরীক্ষার সময় তিনি পাশের বাসায় গিয়ে সিরিয়াল দেখেন। সিরিয়ালের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে বকাঝকা শুরু করেন। সরকার থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন—কেউ বাদ যান না।’
রাজীবের ভাষ্য, মা সিরিয়াল দেখেন বলে টিভির অন্য কোনো অনুষ্ঠান তাঁদের দেখা হয় না। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ খেলাও দেখা হয় না। তিনি বলেন, ‘আগে “ইত্যাদি” দেখতাম, ঈদের সময় নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখতাম। বিভিন্ন সময় ক্রিকেট-ফুটবল খেলা হয়। এখন এসবের কিছুই দেখার সুযোগ হয় না। সারা বছরই শুধু স্টার জলসা।’
বাড়ির ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শিহাব। তৃতীয় শ্রেণি থেকে মায়ের সঙ্গে সিরিয়াল দেখার অভ্যাস করে ফেলেছে। স্টার জলসায় কী কী সিরিয়াল দেখায়, তা শিহাবের মুখস্থ।
সিরিয়ালগুলোর নাম জানতে চাইলে শিহার জানাল, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ‘বধূবরণ’, সাতটায় ‘ইষ্টিকুটুম’, সাড়ে সাতটায় ‘তুমি আসবে বলে’ আর রাত আটটায় ‘চোখের তারা তুই’। রাত সাড়ে আটটায় ‘কিরণমালা’, নয়টায় ‘বোঝে না সে বোঝে না’, সাড়ে নয়টায় ‘ঠিক যেন লাভ স্টোরি’, ১০টায় ‘জল নূপুর’, সাড়ে ১০টায় ‘তোমায় আমায় মিলে’, ১১টায় ‘মন নিয়ে কাছাকাছি’, আর সাড়ে ১১টায় ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’। তাঁর বাংলা পাঠ্যবইয়ের কবিতাগুলোর নাম জানতে চাইলে, মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘এখন মনে নেই।’
সিরিয়ালে তুমি কী দেখো—জানতে চাইলে শিহাব বলল, ‘প্রেম করে পালাইয়া যায়, আবার ফিররা আসে। ঘরের মধ্যে কুটনামি কইরা প্যাঁচ লাগায়, পূজা-অনুষ্ঠান-গান, বউ থাকতে গোপনে আরেকটা বিয়া—এমন অনেক কিছু।’
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিরিয়াল চলে। পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আগের দিন প্রচার করা সিরিয়ালগুলোর পুনঃপ্রচার চলে। এতেও যোগ দেন মা ও ছেলে।
আগে সপ্তাহে ছয় দিন সিরিয়াল দেখাত, রোববার বন্ধ থাকত, এখন সপ্তাহে সাত দিনই প্রচার করা হয় সিরিয়াল। এতে শুধু আমাদের দেশের নারীরাই নন, শিশুরাও মায়েদের সঙ্গে অনুচিত ও অনুপযোগী জিনিস দেখছে ও শিখছে বলে দাবি করেন রাজীব। এতে শৈশবেই কচিমনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব।
সালমা বেগমের ভাষ্য, ‘সন্ধ্যা থেকে সিরিয়াল দেখি বলে আগেই ঘরের কাজকর্ম সেরে রাখি। বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো কারণে কোনো সিরিয়ালের কোনো পর্ব মিস হলে দিনের বেলা দেখে পুষিয়ে নিই।’
সালমা বেগমের দেখা ১০টি সিরিয়ালের প্রতিটির নায়ক-নায়িকার নাম তাঁর মুখস্থ। অথচ নিজের মুঠোফোনের নম্বরটা মনে থাকে না। আর বাংলাদেশের নাটক সর্বশেষ কবে দেখেছেন, তা মনে করতে গলদঘর্ম হতে হলো তাঁকে। বাংলাদেশের টিভি নাটকে অভিনয় করা কুশীলব যে কয়জনের নাম তিনি মনে করতে পারলেন, তাঁদের অনেকে এখন অবসর নিয়েছেন।
একসঙ্গে এত সিরিয়াল দেখার পর বিষয়গুলো মনে থাকে কি না—জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘আমার এগুলো মনে থাকে না। আসলে আগের পর্বে কী হইছে আর পরের পর্বে কী হবে, এটা মিলিয়ে ছয়-সাত মিনিট যায়। দৈনিক প্রত্যেকটার ১০-১২টা করে দেখায়। দেখি, আবার ভুলে যাই।’
সিরিয়াল দেখাটা এখনো সে রকম নেশায় পরিণত হয়নি—এমনটা দাবি করে সালমা বেগম বললেন, ‘না দেখাইলে, না দেইখ্যা থাকতে পারমু, তয় দেখাইলে না দেইখ্যা থাকতে পারমু না।’
সালমা বলেন, পাঁচ বছর ধরে সিরিয়াল দেখার অভ্যাস হয়েছে। এর আগে অবসরে হয়তো হাতের কাজ করতেন বা ছোট ছেলেকে পড়াতেন। এখন চোখের সমস্যা হওয়ায় আর হাতের কাজ করেন না। কবে থেকে চোখে সমস্যা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মিত সিরিয়াল দেখা শুরু করার দু-এক বছর পরই।
এসব সিরিয়াল দেখার প্রভাবের বিষয়ে সালমার ভাষ্য, এটা শুধু নাটক হলেও অনেকে বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। সিরিয়ালের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, গয়না, রান্নাবান্না দেখানো হয়। তাঁর প্রতিবেশীদের অনেকে এসব পোশাক-শাড়ি স্বজনদের কাছে দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক ঝগড়া হয়েছে বলেও তিনি দেখেছেন। এমন করা ঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।
ওই বাসা থেকে ফেরার সময় ডাকলেন সজীব। বললেন, ‘ভাই, একটু ভালো করে লেখেন। সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। স্টার জলসা-জি বাংলার মতো চ্যানেলগুলো এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হবে।’
রাজীবকে (ছদ্মনাম) এভাবে আদেশ করেন তার মা সালমা বেগম (ছদ্মনাম)।
রাজীব আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘আমি খবর দেখছি, মা।’
‘পরে দেখিস, পড়তে যা।’
বলেই টেলিভিশনের দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র হাতে নেন সালমা বেগম। বোতাম টিপে চালু করেন স্টার জলসা চ্যানেল।
সালমা বেগম প্রতিদিন ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসায় গোটা দশেক সিরিয়াল দেখেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই চ্যানেলে তাঁর চোখ দুটো ঘোরাফেরা করে। গড়ে একটানা পাঁচ ঘণ্টা সিরিয়াল দেখেন। রাত সাড়ে ১১টায়ও তাঁর পছন্দের একটি সিরিয়াল আছে, কিন্তু সকালে উঠতে হয় বলে এটি বাদ দেন। সুযোগ থাকলে অবশ্য দেখা হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন সিরিয়ালের চক্রে চক্কর দিচ্ছেন তিনি।
সালমা বেগমের তিন সন্তান। সজীব (ছদ্মনাম), রাজীব আর শিহাব (ছদ্মনাম)। একটি বড় কক্ষে ছেলেদের পড়ার টেবিল আর টেলিভিশন। সেখানে বসে পাঁচ ধরে একটার পর একটা সিরিয়াল দেখে চলেছেন সালমা বেগম।
সালমা বেগমের সিরিয়াল দেখার বিষয়ে তাঁর বড় ছেলে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীবের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি টিভি সিরিয়াল দেখা শুরু করেন। রাত সাড়ে ১১টায় শেষ করেন। প্রতিটি সিরিয়ালই পাঁচ মিনিট দেখানোর পর বিরতি দেয়। এই ফাঁকে বাসার কাজ সেরে নেন। ব্যাপারটা এমন—সিরিয়াল দেখার ফাঁকে ফাঁকে কাজ।
স্টার জলসায় সিরিয়াল চলাকালে অন্য কোনো চ্যানেল বা অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ নেই বলে জানান সজীব। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি একটি চ্যানেলে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখি। তা দেখতে অন্তত তিন দিন আগে মাকে বিষয়টি জানাতে হয়। তখন ওই সময় অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ মেলে। অবশ্য সে সময় তিনি পাশের বাসায় গিয়ে আন্টির সঙ্গে সিরিয়ালের ওই পর্বটা দেখে আসেন।’
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব বলেন, ‘আমাদের একটা রুম হওয়ায় পরীক্ষার সময় তিনি পাশের বাসায় গিয়ে সিরিয়াল দেখেন। সিরিয়ালের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে বকাঝকা শুরু করেন। সরকার থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন—কেউ বাদ যান না।’
রাজীবের ভাষ্য, মা সিরিয়াল দেখেন বলে টিভির অন্য কোনো অনুষ্ঠান তাঁদের দেখা হয় না। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ খেলাও দেখা হয় না। তিনি বলেন, ‘আগে “ইত্যাদি” দেখতাম, ঈদের সময় নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখতাম। বিভিন্ন সময় ক্রিকেট-ফুটবল খেলা হয়। এখন এসবের কিছুই দেখার সুযোগ হয় না। সারা বছরই শুধু স্টার জলসা।’
বাড়ির ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শিহাব। তৃতীয় শ্রেণি থেকে মায়ের সঙ্গে সিরিয়াল দেখার অভ্যাস করে ফেলেছে। স্টার জলসায় কী কী সিরিয়াল দেখায়, তা শিহাবের মুখস্থ।
সিরিয়ালগুলোর নাম জানতে চাইলে শিহার জানাল, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ‘বধূবরণ’, সাতটায় ‘ইষ্টিকুটুম’, সাড়ে সাতটায় ‘তুমি আসবে বলে’ আর রাত আটটায় ‘চোখের তারা তুই’। রাত সাড়ে আটটায় ‘কিরণমালা’, নয়টায় ‘বোঝে না সে বোঝে না’, সাড়ে নয়টায় ‘ঠিক যেন লাভ স্টোরি’, ১০টায় ‘জল নূপুর’, সাড়ে ১০টায় ‘তোমায় আমায় মিলে’, ১১টায় ‘মন নিয়ে কাছাকাছি’, আর সাড়ে ১১টায় ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’। তাঁর বাংলা পাঠ্যবইয়ের কবিতাগুলোর নাম জানতে চাইলে, মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘এখন মনে নেই।’
সিরিয়ালে তুমি কী দেখো—জানতে চাইলে শিহাব বলল, ‘প্রেম করে পালাইয়া যায়, আবার ফিররা আসে। ঘরের মধ্যে কুটনামি কইরা প্যাঁচ লাগায়, পূজা-অনুষ্ঠান-গান, বউ থাকতে গোপনে আরেকটা বিয়া—এমন অনেক কিছু।’
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিরিয়াল চলে। পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আগের দিন প্রচার করা সিরিয়ালগুলোর পুনঃপ্রচার চলে। এতেও যোগ দেন মা ও ছেলে।
আগে সপ্তাহে ছয় দিন সিরিয়াল দেখাত, রোববার বন্ধ থাকত, এখন সপ্তাহে সাত দিনই প্রচার করা হয় সিরিয়াল। এতে শুধু আমাদের দেশের নারীরাই নন, শিশুরাও মায়েদের সঙ্গে অনুচিত ও অনুপযোগী জিনিস দেখছে ও শিখছে বলে দাবি করেন রাজীব। এতে শৈশবেই কচিমনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব।
সালমা বেগমের ভাষ্য, ‘সন্ধ্যা থেকে সিরিয়াল দেখি বলে আগেই ঘরের কাজকর্ম সেরে রাখি। বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো কারণে কোনো সিরিয়ালের কোনো পর্ব মিস হলে দিনের বেলা দেখে পুষিয়ে নিই।’
সালমা বেগমের দেখা ১০টি সিরিয়ালের প্রতিটির নায়ক-নায়িকার নাম তাঁর মুখস্থ। অথচ নিজের মুঠোফোনের নম্বরটা মনে থাকে না। আর বাংলাদেশের নাটক সর্বশেষ কবে দেখেছেন, তা মনে করতে গলদঘর্ম হতে হলো তাঁকে। বাংলাদেশের টিভি নাটকে অভিনয় করা কুশীলব যে কয়জনের নাম তিনি মনে করতে পারলেন, তাঁদের অনেকে এখন অবসর নিয়েছেন।
একসঙ্গে এত সিরিয়াল দেখার পর বিষয়গুলো মনে থাকে কি না—জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘আমার এগুলো মনে থাকে না। আসলে আগের পর্বে কী হইছে আর পরের পর্বে কী হবে, এটা মিলিয়ে ছয়-সাত মিনিট যায়। দৈনিক প্রত্যেকটার ১০-১২টা করে দেখায়। দেখি, আবার ভুলে যাই।’
সিরিয়াল দেখাটা এখনো সে রকম নেশায় পরিণত হয়নি—এমনটা দাবি করে সালমা বেগম বললেন, ‘না দেখাইলে, না দেইখ্যা থাকতে পারমু, তয় দেখাইলে না দেইখ্যা থাকতে পারমু না।’
সালমা বলেন, পাঁচ বছর ধরে সিরিয়াল দেখার অভ্যাস হয়েছে। এর আগে অবসরে হয়তো হাতের কাজ করতেন বা ছোট ছেলেকে পড়াতেন। এখন চোখের সমস্যা হওয়ায় আর হাতের কাজ করেন না। কবে থেকে চোখে সমস্যা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মিত সিরিয়াল দেখা শুরু করার দু-এক বছর পরই।
এসব সিরিয়াল দেখার প্রভাবের বিষয়ে সালমার ভাষ্য, এটা শুধু নাটক হলেও অনেকে বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। সিরিয়ালের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, গয়না, রান্নাবান্না দেখানো হয়। তাঁর প্রতিবেশীদের অনেকে এসব পোশাক-শাড়ি স্বজনদের কাছে দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক ঝগড়া হয়েছে বলেও তিনি দেখেছেন। এমন করা ঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।
ওই বাসা থেকে ফেরার সময় ডাকলেন সজীব। বললেন, ‘ভাই, একটু ভালো করে লেখেন। সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। স্টার জলসা-জি বাংলার মতো চ্যানেলগুলো এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হবে।’
No comments