বগুড়ায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিবারে টেনশন by জিয়া শাহীন
বগুড়ায় প্রায় দুই লক্ষাধিক বিরোধী দলের নেতাকর্মীর পরিবারের ঈদের আনন্দ ম্লান হতে বসেছে। সন্তান তার বাবার সঙ্গে, স্ত্রী স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ঈদ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তি মামলার কারণে ফেরারি জীবন বেছে নেয়ায় অনেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে পারছেন না। যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও ভাবছে স্বামীকে বাদ দিয়ে ঈদের কেনাকাটা করে লাভ কি? শুধু সন্তানদের সান্ত্বনা দিচ্ছে ঈদে বাবা আসবে। কয়েক মাস যাবৎ ফেরারি জীবন বেছে নেয়া বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি সিফার আল বখতিয়ারের স্ত্রী এমনই অনুভূতি জানালেন। জানা যায়, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় গত আড়াই বছরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে প্রায় ২শটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই দায়ের করেছে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত। এসব মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত আসামি প্রায় দুই লাখ। তবে, বিভিন্ন সময়ে পুলিশের গণগ্রেপ্তারের কারণে প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে ফেরারি জীবন কাটছে বিরোধী দলের প্রায় আড়াই লাখ নেতাকর্মীর। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাজোট সরকারের প্রথম দফায় ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় ৪ বছর পর ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর বগুড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজপথে নামে বিরোধী দল। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা হওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩রা মার্চ পর্যন্ত আন্দোলন চলে। ৩রা মার্চ মধ্যরাত থেকে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে মারা যায় কমপক্ষে ৬ জন। পরবর্তীতে মারা যায় আরও ৩ জন। আহত হয় কয়েকশ। এসব ঘটনায় প্রায় একশটি মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি জ্ঞাত-অজ্ঞাত প্রায় দেড় লাখ। এছাড়াও সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত তিন বছরে আরও প্রায় একশটি মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুইশ মামলায় প্রায় আড়াই লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় এক হাজারেরও অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। এখনও কারাগারে আছেন দেড়শরও বেশি নেতাকর্মী। তবে আসামি আড়াই লক্ষ হলেও বেশ কিছু জামিনে আছে এবং কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামি। দেখা গেছে, বিএনপির জেলা শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা জামিনে এসে ঘুরলেও কর্মীদের জামিন বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ঈদের আগে ক্ষোভ জমেছে। বগুড়ায় সর্বাধিক মামলা রয়েছে জেলা যুবদল সভাপতি সিফার আল বখতিয়ার, সদর উপজেলা সভাপতি মাখতুম খান রুবেল ও শহর যুবদল সেক্রেটারি মাসুদ রানার বিরুদ্ধে। নেতাকর্মীদের নামে দশ-বারটিরও বেশি মামলা থাকলেও জেলা বিএনপি সভাপতি ভিপি সাইফুলের বিরুদ্ধে রয়েছে মাত্র একটি মামলা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিরোধী দলের নেতকর্মীদের ওপর জ্ঞাত-অজ্ঞাত মামলার কারণে ঘরছাড়া হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে তারা। আসছে ঈদ। ঈদের আনন্দ স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে না এটাই তাদের বিশ্বাস। শেরপুর উপজেলা বিএনপির কর্মী আতিকুর রহমান জানান, তিন মাস যাবৎ মামলার কারণে বাড়ি ফিরতে পারছি না। ঈদ সামনে রেখে বাড়িতে এলেই চলবে পুলিশি অভিযান। এতে নতুন করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে পরিবারের লোকজন। তাই পরিবারের লোকজনকে এ পরিস্থিতিতে না ফেলে মনের কষ্ট নিয়ে দূরে থাকাই ভাল। এরকম অভিব্যক্তি ব্যক্ত করলেন ধুনট উপজেলার যুবদল নেতা আব্দুল হালিমসহ আরও অনেকে। অন্যদিকে পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের পরিবারে ঈদ আনন্দ যেন একটি স্বপ্নের মতো। তারা ধরেই নিয়েছে, স্বামীকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করা সম্ভব নয়। এ দুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের দিন-রাত।
No comments