ভারত বিদ্বেষ নয়, আত্মমর্যাদাবোধের লেখা by গোলাম মোর্তোজা
পশু
চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিএসএফ নজরদারি বাড়ানোয় সম্প্রতি বাংলাদেশে গরুর
মাংসের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আপনারা এই নজরদারি আরও বাড়ান, যাতে পশু
চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং বাংলাদেশে মাংসের দাম ৭০ থেকে ৮০
শতাংশ বেড়ে যায়। এতে বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেবে।
রাজনাথ সিং, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী
১. চোরাচালান মানে কিন্তু এই নয় যে, ভারত থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গরু চুরি করে আনে। ভারতে গরু উৎপাদন হয় প্রচুর, সেই তুলনায় চাহিদা খুবই কম। ভারতের খামাড়িরা বাংলাদেশের বাজারের কারণেই গরু পালন করেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা সেই গরু খামাড়ি মালিকদের থেকে কেনে। সীমান্ত অঞ্চলে হাট বসে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারতের ব্যবসায়ীদের থেকে গরু কেনে। যেহেতু বৈধ উপায়ে গরু আসার নিয়ম নেই, তাই বিএসএফ -বিজেপিকে ঘুষ দিয়ে ব্যবসায়ীরা গরু সীমান্ত অতিক্রম করায়। নাম -চোরাচালান হলেও কেনা -বেচা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গরু বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খেতে পারে, ভারতের খামাড়ি ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। ভারতের ব্যবসায়ী বা আবাদকারী কৃষক বা খামাড়িরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
২. ভারত সরকার যদি মনে করে এভাবে নয়, বৈধ আইনি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে গরু যাবে -তাতে দোষের কিছু নেই। দূ দেশ আলোচনা করে তা ঠিক করতে পারে। তা না করে, বাংলাদেশের মানুষ যাতে গরুর মাংস খেতে না পারে -এটা কোন ধরণের বন্ধুসুলভ কথা বা আচরণ? বাংলাদেশের মানুষ কী খাবে, কী খাবে না -একান্তভাবেই সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বাংলাদেশের মানুষ মাংস -পেঁয়াজ থেকে শুরু করে যা কিছু খায়, অর্থ দিয়ে কিনে খায়, ভারতের করুণায় কিছু খায় না, পায় না, চায়ও না। তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত বড় জেহাদ কেন? ছোট দেশ তাই?
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ছোট দেশ, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ কিন্তু গরীব দেশ নয়।
৩. আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রী কী আশুগঞ্জ বন্দর -সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে বলবেন, মানবিক বা অন্য কোনো কারণে নদী বা সড়ক পথে, খাদ্য বা অন্য কোনো সামগ্রী ত্রিপুরায় ঠুকবে না? বলবেন, ত্রিপুরা তথা সেভেন সিস্টার্সের ভারতীয়রা খাদ্য কষ্টে ভূগুক, বিদ্যুৎ কষ্টে পড়ুক? বলা উচিত নয়, এমনটা করাও ঠিক নয়। বিনা শুল্কে নয়, শুল্কের বিনিময়ে ভারতকে এই সুবিধা দেয়াই উচিত।
কিন্তু ভারত সরকারের অনায্য দাদাগিরির জবাব দেয়ার জন্যে হলেও, বাংলাদেশকে একবার সাহস দেখানো দরকার।
৪. যারা মনে করেন বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল, তাদের মনে রাখা দরকার সব দেশই কম -বেশি অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের প্রধান খাদ্য চাল দরকার না হলেও কিছু পরিমান ভারত থেকে আসে। পেঁয়াজ -ডাল -পোষাক-বাস, গাড়ি আসে। এর কোনোটিই কিন্তু অপরিহার্য নয় যে ভারত থেকেই আমদানি করতে হবে। বিকল্প অনেক পথ এখন আছে। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের কাছে অর্থ আছে। সুতরাং ভারতের দাদাগিরিকে বাংলাদেশ চাইলে খুব সহজেই না করতে পারে। ভারতের মানুষ বাংলাদেশে কাজ করে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতে কাজ করে না। ভারত যেসব দেশ থেকে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম। ভারতের সঙ্গে দর কষাকষির অনেক উপাদান বাংলাদেশের হাতে আছে।
৫. ভারতের সঙ্গে বৈরিতার পক্ষে আমি নই, সব সময় সব রকম সুসম্পর্কের পক্ষে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া, বাংলাদেশে অবস্থানের সুযোগ না দেয়ার নীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করি। তবে আত্মমর্যাদাবোধ প্রশ্নে মাঝেমধ্যে সাহস দেখানোর পক্ষে। সাহস দেখাতে না পারলে, ভারতের এমন কথা আচরণ আরও তীব্র হবে। সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা চলতেই থাকবে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
গোলাম মোর্তোজা। সম্পাদক সাপ্তাহিক। লেখাটি তার ফেসুবক আইডি থেকে নেয়া।
১. চোরাচালান মানে কিন্তু এই নয় যে, ভারত থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গরু চুরি করে আনে। ভারতে গরু উৎপাদন হয় প্রচুর, সেই তুলনায় চাহিদা খুবই কম। ভারতের খামাড়িরা বাংলাদেশের বাজারের কারণেই গরু পালন করেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা সেই গরু খামাড়ি মালিকদের থেকে কেনে। সীমান্ত অঞ্চলে হাট বসে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারতের ব্যবসায়ীদের থেকে গরু কেনে। যেহেতু বৈধ উপায়ে গরু আসার নিয়ম নেই, তাই বিএসএফ -বিজেপিকে ঘুষ দিয়ে ব্যবসায়ীরা গরু সীমান্ত অতিক্রম করায়। নাম -চোরাচালান হলেও কেনা -বেচা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গরু বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খেতে পারে, ভারতের খামাড়ি ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। ভারতের ব্যবসায়ী বা আবাদকারী কৃষক বা খামাড়িরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
২. ভারত সরকার যদি মনে করে এভাবে নয়, বৈধ আইনি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে গরু যাবে -তাতে দোষের কিছু নেই। দূ দেশ আলোচনা করে তা ঠিক করতে পারে। তা না করে, বাংলাদেশের মানুষ যাতে গরুর মাংস খেতে না পারে -এটা কোন ধরণের বন্ধুসুলভ কথা বা আচরণ? বাংলাদেশের মানুষ কী খাবে, কী খাবে না -একান্তভাবেই সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বাংলাদেশের মানুষ মাংস -পেঁয়াজ থেকে শুরু করে যা কিছু খায়, অর্থ দিয়ে কিনে খায়, ভারতের করুণায় কিছু খায় না, পায় না, চায়ও না। তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত বড় জেহাদ কেন? ছোট দেশ তাই?
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ছোট দেশ, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ কিন্তু গরীব দেশ নয়।
৩. আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রী কী আশুগঞ্জ বন্দর -সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে বলবেন, মানবিক বা অন্য কোনো কারণে নদী বা সড়ক পথে, খাদ্য বা অন্য কোনো সামগ্রী ত্রিপুরায় ঠুকবে না? বলবেন, ত্রিপুরা তথা সেভেন সিস্টার্সের ভারতীয়রা খাদ্য কষ্টে ভূগুক, বিদ্যুৎ কষ্টে পড়ুক? বলা উচিত নয়, এমনটা করাও ঠিক নয়। বিনা শুল্কে নয়, শুল্কের বিনিময়ে ভারতকে এই সুবিধা দেয়াই উচিত।
কিন্তু ভারত সরকারের অনায্য দাদাগিরির জবাব দেয়ার জন্যে হলেও, বাংলাদেশকে একবার সাহস দেখানো দরকার।
৪. যারা মনে করেন বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল, তাদের মনে রাখা দরকার সব দেশই কম -বেশি অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের প্রধান খাদ্য চাল দরকার না হলেও কিছু পরিমান ভারত থেকে আসে। পেঁয়াজ -ডাল -পোষাক-বাস, গাড়ি আসে। এর কোনোটিই কিন্তু অপরিহার্য নয় যে ভারত থেকেই আমদানি করতে হবে। বিকল্প অনেক পথ এখন আছে। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের কাছে অর্থ আছে। সুতরাং ভারতের দাদাগিরিকে বাংলাদেশ চাইলে খুব সহজেই না করতে পারে। ভারতের মানুষ বাংলাদেশে কাজ করে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতে কাজ করে না। ভারত যেসব দেশ থেকে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম। ভারতের সঙ্গে দর কষাকষির অনেক উপাদান বাংলাদেশের হাতে আছে।
৫. ভারতের সঙ্গে বৈরিতার পক্ষে আমি নই, সব সময় সব রকম সুসম্পর্কের পক্ষে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া, বাংলাদেশে অবস্থানের সুযোগ না দেয়ার নীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করি। তবে আত্মমর্যাদাবোধ প্রশ্নে মাঝেমধ্যে সাহস দেখানোর পক্ষে। সাহস দেখাতে না পারলে, ভারতের এমন কথা আচরণ আরও তীব্র হবে। সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা চলতেই থাকবে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
গোলাম মোর্তোজা। সম্পাদক সাপ্তাহিক। লেখাটি তার ফেসুবক আইডি থেকে নেয়া।
No comments