শ্রেয়া সিঙ্ঘালের লড়াই by শানজিদ অর্ণব
দিল্লি
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রেয়া সিঙ্ঘাল। ২৪
বছর বয়সী এ তরুণী ভারতে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শক্ত ভিত্তি তৈরি
করে দিয়েছেন। শ্রেয়ার করা পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট
সম্প্রতি দেশটির তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বহুল বিতর্কিত ৬৬(এ) ধারাটিকে বাতিল
বলে ঘোষণা করেছে। পিটিশনটির নাম ছিল ‘শ্রেয়া সিঙ্ঘাল বনাম ইউনিয়ন অব
ইন্ডিয়া’। আদালত ৬৬(এ) ধারাটিকে অসাংবিধানিক এবং মতপ্রকাশের
স্বাধীনতাবিরোধী বলে মত দিয়েছেন। এ ধারা অনুযায়ী ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইট
বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত মতামতকে পুলিশ ‘অপমানজনক’ বা
‘বিদ্বেষমূলক’ হিসেবে গণ্য করে মতামতদানকারীকে গ্রেফতার করতে পারে। এ ধারায়
দোষী ব্যক্তির তিন বছরের কারাদন্ড হতে পারে। এ আইনের আওতায় এরই মধ্যে
ভারতে অনেকে গ্রেফতার ও দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন।
২০১২ সালে শ্রেয়া যখন পিটিশনটি দাখিল করেন তখন তার বয়স ২১। ঘটনার শুরু মায়ের সঙ্গে শ্রেয়ার রাতের খাবার খাওয়ার সময় এক আড্ডায়। শ্রেয়ার মা মানালি সিঙ্ঘাল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। সেই আড্ডায় শ্রেয়া মায়ের কাছে জানতে পারেন, শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল থ্যাকারের মৃত্যুর পর মুম্বাই শহর অচল হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়া বা কোনো ‘আক্রমণাত্মক’ পোস্টে লাইক দেয়ার অপরাধে দুই মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্রেয়ার মতে, এটিই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। আইনের আগ্রহী ছাত্রী হিসেবে শ্রেয়া সেই অভিযুক্ত দুই মেয়ের স্ট্যাটাস এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শ্রেয়া বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে কেউই এভাবে গ্রেফতার হতে পারেন। মা বললেন, আমি কেন এ বিষয়ে কিছু করছি না।’ এরপর দুই দিনের মধ্যে শ্রেয়া এবং তার সহযোগীর আইনজীবীরা মিলে পিটিশনের খসড়া তৈরি করে আদালতে দাখিল করেন। পুরো বিষয়টিকে পারিবারিক চেহারা না দেয়ার জন্য তিনি আইনজীবী হিসেবে নিজের মাকে ব্যবহার করেননি। এ কাজে পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছ থেকেই সমর্থন পেয়েছেন তিনি। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শ্রেয়া বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল এ কাজ আমি শুধু গ্রেফতারকৃতদের জন্য নয়, বরং সবার জন্যই করছি। এ বৈচিত্র্যময় দেশে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বেশি করে দরকার।’ নিজের পড়াশোনা শেষ হতে আরও দেড় বছর সময় বাকি আছে। শ্রেয়া এ সময়টাতে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট আইন নিয়ে পড়াশোনা এবং কাজ করতে ইচ্ছুক।
আমি শ্রেয়া সিঙ্ঘাল কেন ৬৬(এ) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছি? তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০১০-এর ৬৬(এ) ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে আমি পিটিশন দায়ের করেছিলাম। সে সময় মহারাষ্ট্রে দুজন তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের গ্রেফতারের কারণ জেনে আমি বেশ ধাক্কা খেয়েছিলাম। তার চেয়েও বড় ধাক্কা খেলাম, যে আইনে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল অর্থাৎ ৬৬(এ) ধারাটি পড়ে। ৬৬(এ) ধারাটির অপব্যবহারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও পন্ডিচেরিতেও অনেকে গ্রেফতার হলেন। আমার মনে হলো আইনের এ অপব্যবহার রোধ করতে কাউকে কিছু করতে হবে।
৬৬(এ) ধারা ইন্টারনেটে মানুষের কণ্ঠরোধ করে রেখেছিল। পাঠক কোনো বিষয়কে ‘বিরক্তিকর’ বা ‘ভীতিকর’ মনে করে বিষয়টি ইন্টারনেটে আপলোড করলে আইন দিয়ে সেটিকে আপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করার আশঙ্কা ছিল। ৬৬(এ) ধারা ছিল আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।
বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট এ মৌলিক অধিকারকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আজকের দিনের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সমাজ বৈচিত্র্যময়। এদেশে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গের মানুষ বাস করেন এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। এ মতভিন্নতা হচ্ছে আমাদের সমাজের যোগসূত্র। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের এটাই মূল বিষয়।
বেশিরভাগ ভারতীয় নাগরিকের স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ আছে। ফলে তারা ইন্টারনেটের সঙ্গেও যুক্ত। ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য এবং বিস্তৃত যোগাযোগ মাধ্যম। বিভিন্ন মত ও চিন্তা প্রকাশে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। একই কথা বা মত ইন্টারনেটে না বলে যদি মিডিয়ায় (সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি) প্রকাশ হতো তাহলে সেটা আইনি সমস্যায় পড়ত না। এ হচ্ছে ৬৬(এ) ধারার কাজ। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ইন্টারনেট খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম। আর এ নিজস্ব মতপ্রকাশ আমাদের অধিকার যা অবশ্যই লালন এবং রক্ষা করতে হবে।
হাফিংটন পোস্ট এবং এনডিটিভি অবলম্বনে
২০১২ সালে শ্রেয়া যখন পিটিশনটি দাখিল করেন তখন তার বয়স ২১। ঘটনার শুরু মায়ের সঙ্গে শ্রেয়ার রাতের খাবার খাওয়ার সময় এক আড্ডায়। শ্রেয়ার মা মানালি সিঙ্ঘাল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। সেই আড্ডায় শ্রেয়া মায়ের কাছে জানতে পারেন, শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল থ্যাকারের মৃত্যুর পর মুম্বাই শহর অচল হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়া বা কোনো ‘আক্রমণাত্মক’ পোস্টে লাইক দেয়ার অপরাধে দুই মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্রেয়ার মতে, এটিই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। আইনের আগ্রহী ছাত্রী হিসেবে শ্রেয়া সেই অভিযুক্ত দুই মেয়ের স্ট্যাটাস এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শ্রেয়া বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে কেউই এভাবে গ্রেফতার হতে পারেন। মা বললেন, আমি কেন এ বিষয়ে কিছু করছি না।’ এরপর দুই দিনের মধ্যে শ্রেয়া এবং তার সহযোগীর আইনজীবীরা মিলে পিটিশনের খসড়া তৈরি করে আদালতে দাখিল করেন। পুরো বিষয়টিকে পারিবারিক চেহারা না দেয়ার জন্য তিনি আইনজীবী হিসেবে নিজের মাকে ব্যবহার করেননি। এ কাজে পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছ থেকেই সমর্থন পেয়েছেন তিনি। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শ্রেয়া বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল এ কাজ আমি শুধু গ্রেফতারকৃতদের জন্য নয়, বরং সবার জন্যই করছি। এ বৈচিত্র্যময় দেশে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বেশি করে দরকার।’ নিজের পড়াশোনা শেষ হতে আরও দেড় বছর সময় বাকি আছে। শ্রেয়া এ সময়টাতে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট আইন নিয়ে পড়াশোনা এবং কাজ করতে ইচ্ছুক।
আমি শ্রেয়া সিঙ্ঘাল কেন ৬৬(এ) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছি? তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০১০-এর ৬৬(এ) ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে আমি পিটিশন দায়ের করেছিলাম। সে সময় মহারাষ্ট্রে দুজন তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের গ্রেফতারের কারণ জেনে আমি বেশ ধাক্কা খেয়েছিলাম। তার চেয়েও বড় ধাক্কা খেলাম, যে আইনে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল অর্থাৎ ৬৬(এ) ধারাটি পড়ে। ৬৬(এ) ধারাটির অপব্যবহারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও পন্ডিচেরিতেও অনেকে গ্রেফতার হলেন। আমার মনে হলো আইনের এ অপব্যবহার রোধ করতে কাউকে কিছু করতে হবে।
৬৬(এ) ধারা ইন্টারনেটে মানুষের কণ্ঠরোধ করে রেখেছিল। পাঠক কোনো বিষয়কে ‘বিরক্তিকর’ বা ‘ভীতিকর’ মনে করে বিষয়টি ইন্টারনেটে আপলোড করলে আইন দিয়ে সেটিকে আপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করার আশঙ্কা ছিল। ৬৬(এ) ধারা ছিল আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।
বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট এ মৌলিক অধিকারকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আজকের দিনের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সমাজ বৈচিত্র্যময়। এদেশে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গের মানুষ বাস করেন এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। এ মতভিন্নতা হচ্ছে আমাদের সমাজের যোগসূত্র। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের এটাই মূল বিষয়।
বেশিরভাগ ভারতীয় নাগরিকের স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ আছে। ফলে তারা ইন্টারনেটের সঙ্গেও যুক্ত। ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য এবং বিস্তৃত যোগাযোগ মাধ্যম। বিভিন্ন মত ও চিন্তা প্রকাশে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। একই কথা বা মত ইন্টারনেটে না বলে যদি মিডিয়ায় (সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি) প্রকাশ হতো তাহলে সেটা আইনি সমস্যায় পড়ত না। এ হচ্ছে ৬৬(এ) ধারার কাজ। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ইন্টারনেট খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম। আর এ নিজস্ব মতপ্রকাশ আমাদের অধিকার যা অবশ্যই লালন এবং রক্ষা করতে হবে।
হাফিংটন পোস্ট এবং এনডিটিভি অবলম্বনে
No comments