গাইড বইয়ে আটকে যাচ্ছে সৃজনশীলতা by মোহসিনা হোসাইন
মুখস্থবিদ্যা
ও গাইড বইনির্ভরতার বদলে চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানোই ছিল সৃজনশীল পদ্ধতি
চালুর পেছনের কথা। কিন্তু বাজার যেখানে সৃজনশীল গাইড বইয়ের দখলে, সৃজনশীল
পদ্ধতিই হুমকির মুখে পড়াটা স্বাভাবিক! সব শ্রেণির, সব বিষয়ের সৃজনশীল
বিষয়ের গাইড বই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। অভিভাবকেরা বুঝে কিংবা না বুঝেই এসব
বই তুলে দিচ্ছেন ছেলেমেয়েদের হাতে। ছাত্রছাত্রীরাও ভাবনাচিন্তা ধারালো
করার চেয়ে গাইড বইয়েই বেশি মনোযোগী। অথচ সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের
একমাত্র সহায়ক হওয়ার কথা পাঠ্যবই!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ক্লাসে যাঁরা শেখাবেন, সেই শিক্ষকদের বড় একটি অংশ সৃজনশীল পদ্ধতিটা পুরোপুরি বোঝেন না। স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন করতে তাঁরা দ্বারস্থ হন গাইড বইয়ের। প্রশ্ন হুবহু তুলে দেন গাইড বই থেকে। অনেক শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করেন গাইড বইয়ের নমুনা প্রশ্ন সামনে রেখে। ভয়ংকর আরেকটি তথ্য, বাইরে থেকে প্রশ্ন কিনেও পরীক্ষা নেয় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিষয়টি আমাদের আরও বেশি ভাবিয়ে তোলে, যখন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নও করা হয় গাইড থেকে। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে গাইড বই থেকে।
পাবলিক পরীক্ষা তো দূরের কথা, স্কুল-কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন না করার ব্যাপারে দুই দফায় সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে। বাইরে থেকে প্রশ্ন না কেনার ব্যাপারেও নির্দেশনা আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
শিক্ষা বোর্ড বলছে, প্রশ্ন প্রণয়নকারী শিক্ষককে খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেবল দায়ী শিক্ষককে শাস্তির আওতায় এনে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এ কথা অস্বীকার করার কায়দা নেই, সৃজনশীল গাইড বই বাজারে থাকার কারণ হচ্ছে চাহিদা। আর এই চাহিদার পেছনের বড় কারণ, শিক্ষকদের দক্ষতার ঘাটতি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা যে পাঠদান করছেন, তাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আস্থা রাখতে পারছেন না। সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর যে ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, তা নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করাও বৃথা। স্বয়ং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক জরিপে উঠে এসেছে, মোট শিক্ষকের ৩৭ শতাংশই এ পদ্ধতিতে প্রশ্ন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যাটা আরও বেশি।
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, অনেকেই ক্লাসে শিক্ষকেরা যা পড়ান, তা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। নমুনা প্রশ্ন বা মডেল টেস্টের জন্যও অনেকে দ্বারস্থ হয় গাইড বইয়ের। অথচ সৃজনশীল পদ্ধতিতে বইয়ের পাঠসংশ্লিষ্ট উদ্দীপক পড়ে পাঠ্যবই ও বাইরের অর্জিত জ্ঞানের আলোয় তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার কথা। মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে গাইড বই ও কোচিংয়ের সাহায্য ছাড়াই শিক্ষার্থীদের প্রতিভা, মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল মনন গড়ে তোলাই সৃজনশীল পদ্ধতির লক্ষ্য। পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়লে গাইড বইয়ের সাহায্য ছাড়াই সব প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব।
২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা ও ধর্ম শিক্ষা প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আসে। ক্রমান্বয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে
শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রাথমিক স্তরে সৃজনশীলের আদলে চালু করা হয় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন। সৃজনশীল পরীক্ষাপদ্ধতিতে মুখস্থবিদ্যার সুযোগ নেই, কোনো প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিও হয় না। তাই গত বছরের প্রশ্ন কিংবা কোনো শিক্ষক বা কোচিং সেন্টারের সাজেশন থেকে প্রশ্ন কমন পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শিক্ষার্থীকে প্রশ্নের উত্তর করতে হয় পাঠের মূল বিষয়বস্তু ও তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝে।
সৃজনশীল পদ্ধতিকে সবাই স্বাগত জানালেও এ পদ্ধতির জন্য বড় হুমকি বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট বা গাইড বই। বইয়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বইয়ের দোকান বিভিন্ন প্রকাশনীর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের সৃজনশীল গাইড ও নোট বইয়ে ঠাসা। ‘এনসিটিবি প্রণীত সৃজনশীল ও বহু নির্বাচনী প্রশ্নপত্রের আলোকে রচিত’, ‘সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর সম্বলিত’, ‘১০০% কমন পড়ার নিশ্চয়তা’, ‘সৃজনশীল সুপার সাজেশন’—বিভিন্ন গাইড বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখা থাকে এমন সব চটকদার বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় সৃজনশীল পদ্ধতির গাইড বই। নিষিদ্ধ হলেও গাইড বই বন্ধ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের খুব একটা তৎপরতা চোখে পড়ে না।
প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, আমদানি, বিতরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে প্রণীত ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি নোট বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, আমদানি, বিক্রয়, বিতরণ অথবা কোনো প্রকারে উহার প্রচার করিতে বা মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রয়, বিতরণ কিংবা প্রচারের উদ্দেশ্যে রাখিতে পারিবেন না।’ এ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। পরে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের আওতায় নোট বইয়ের সঙ্গে গাইড বইও বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেন হাইকোর্ট।
সৃজনশীল সহায়ক বই প্রকাশে সরকারের কোনো বিধিনিষেধ নেই, এমন ধুয়া তুলে ফায়দা লুটছেন প্রকাশকেরা। রাজধানীর বাংলাবাজারকেন্দ্রিক এসব প্রকাশক সৃজনশীল বই প্রকাশ না করলেও সৃজনশীল গাইড বই প্রকাশে দারুণ মনোযোগী। আগে যেসব প্রকাশনী নোট বই ছাপত, এখনো তারাই সৃজনশীল গাইড বই বাজারে ছাড়ে। আইনে নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত নোট বা গাইড বই নিষিদ্ধের কথা বলা আছে, এর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের গাইড বই। সৃজনশীল পদ্ধতির সব ধরনের গাইড বই নিষিদ্ধ করে নতুন আইন প্রণয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে শুধু আইন করেই গাইড বই বন্ধ করা যাবে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সরকার—সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতির সুফল পেতে এখনই গাইড বই বন্ধ করা দরকার।
মোহসিনা হোসাইন: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsina.hossaindu@gmail.com
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ক্লাসে যাঁরা শেখাবেন, সেই শিক্ষকদের বড় একটি অংশ সৃজনশীল পদ্ধতিটা পুরোপুরি বোঝেন না। স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন করতে তাঁরা দ্বারস্থ হন গাইড বইয়ের। প্রশ্ন হুবহু তুলে দেন গাইড বই থেকে। অনেক শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করেন গাইড বইয়ের নমুনা প্রশ্ন সামনে রেখে। ভয়ংকর আরেকটি তথ্য, বাইরে থেকে প্রশ্ন কিনেও পরীক্ষা নেয় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিষয়টি আমাদের আরও বেশি ভাবিয়ে তোলে, যখন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নও করা হয় গাইড থেকে। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে গাইড বই থেকে।
পাবলিক পরীক্ষা তো দূরের কথা, স্কুল-কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন না করার ব্যাপারে দুই দফায় সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে। বাইরে থেকে প্রশ্ন না কেনার ব্যাপারেও নির্দেশনা আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
শিক্ষা বোর্ড বলছে, প্রশ্ন প্রণয়নকারী শিক্ষককে খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেবল দায়ী শিক্ষককে শাস্তির আওতায় এনে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এ কথা অস্বীকার করার কায়দা নেই, সৃজনশীল গাইড বই বাজারে থাকার কারণ হচ্ছে চাহিদা। আর এই চাহিদার পেছনের বড় কারণ, শিক্ষকদের দক্ষতার ঘাটতি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা যে পাঠদান করছেন, তাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আস্থা রাখতে পারছেন না। সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর যে ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, তা নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করাও বৃথা। স্বয়ং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক জরিপে উঠে এসেছে, মোট শিক্ষকের ৩৭ শতাংশই এ পদ্ধতিতে প্রশ্ন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যাটা আরও বেশি।
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, অনেকেই ক্লাসে শিক্ষকেরা যা পড়ান, তা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। নমুনা প্রশ্ন বা মডেল টেস্টের জন্যও অনেকে দ্বারস্থ হয় গাইড বইয়ের। অথচ সৃজনশীল পদ্ধতিতে বইয়ের পাঠসংশ্লিষ্ট উদ্দীপক পড়ে পাঠ্যবই ও বাইরের অর্জিত জ্ঞানের আলোয় তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার কথা। মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে গাইড বই ও কোচিংয়ের সাহায্য ছাড়াই শিক্ষার্থীদের প্রতিভা, মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল মনন গড়ে তোলাই সৃজনশীল পদ্ধতির লক্ষ্য। পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়লে গাইড বইয়ের সাহায্য ছাড়াই সব প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব।
২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা ও ধর্ম শিক্ষা প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আসে। ক্রমান্বয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে
শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রাথমিক স্তরে সৃজনশীলের আদলে চালু করা হয় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন। সৃজনশীল পরীক্ষাপদ্ধতিতে মুখস্থবিদ্যার সুযোগ নেই, কোনো প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিও হয় না। তাই গত বছরের প্রশ্ন কিংবা কোনো শিক্ষক বা কোচিং সেন্টারের সাজেশন থেকে প্রশ্ন কমন পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শিক্ষার্থীকে প্রশ্নের উত্তর করতে হয় পাঠের মূল বিষয়বস্তু ও তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝে।
সৃজনশীল পদ্ধতিকে সবাই স্বাগত জানালেও এ পদ্ধতির জন্য বড় হুমকি বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট বা গাইড বই। বইয়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বইয়ের দোকান বিভিন্ন প্রকাশনীর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের সৃজনশীল গাইড ও নোট বইয়ে ঠাসা। ‘এনসিটিবি প্রণীত সৃজনশীল ও বহু নির্বাচনী প্রশ্নপত্রের আলোকে রচিত’, ‘সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর সম্বলিত’, ‘১০০% কমন পড়ার নিশ্চয়তা’, ‘সৃজনশীল সুপার সাজেশন’—বিভিন্ন গাইড বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখা থাকে এমন সব চটকদার বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় সৃজনশীল পদ্ধতির গাইড বই। নিষিদ্ধ হলেও গাইড বই বন্ধ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের খুব একটা তৎপরতা চোখে পড়ে না।
প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, আমদানি, বিতরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে প্রণীত ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি নোট বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, আমদানি, বিক্রয়, বিতরণ অথবা কোনো প্রকারে উহার প্রচার করিতে বা মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রয়, বিতরণ কিংবা প্রচারের উদ্দেশ্যে রাখিতে পারিবেন না।’ এ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। পরে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের আওতায় নোট বইয়ের সঙ্গে গাইড বইও বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেন হাইকোর্ট।
সৃজনশীল সহায়ক বই প্রকাশে সরকারের কোনো বিধিনিষেধ নেই, এমন ধুয়া তুলে ফায়দা লুটছেন প্রকাশকেরা। রাজধানীর বাংলাবাজারকেন্দ্রিক এসব প্রকাশক সৃজনশীল বই প্রকাশ না করলেও সৃজনশীল গাইড বই প্রকাশে দারুণ মনোযোগী। আগে যেসব প্রকাশনী নোট বই ছাপত, এখনো তারাই সৃজনশীল গাইড বই বাজারে ছাড়ে। আইনে নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত নোট বা গাইড বই নিষিদ্ধের কথা বলা আছে, এর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের গাইড বই। সৃজনশীল পদ্ধতির সব ধরনের গাইড বই নিষিদ্ধ করে নতুন আইন প্রণয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে শুধু আইন করেই গাইড বই বন্ধ করা যাবে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সরকার—সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতির সুফল পেতে এখনই গাইড বই বন্ধ করা দরকার।
মোহসিনা হোসাইন: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsina.hossaindu@gmail.com
No comments