'সিভিল সমাজ প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে' - সাক্ষাৎকারে : আকবর আলি খান by শানজিদ অর্ণব
ড. আকবর আলি খানের
জন্ম ১৯৪৪ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৬৪ সালে
স্নাতক ও ১৯৬৫ সালে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের
প্রতিরক্ষা বিভাগের উপসচিবের পদে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ ও ১৯৭৯ সালে
কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে যথাক্রমে এমএ ও পিএইচডি
ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের
দায়িত্বসহ বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ থেকে
২০০৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার পক্ষে বিশ্বব্যাংকে
বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিশ্বব্যাংক থেকে অবসর
নেয়ার পর তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজ
প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন
অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে তিনি একজন
উপদেষ্টা হলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পদত্যাগ করেন। 'পরার্থপরতার
অর্থনীতি', 'Discovery of Bangladesh', 'আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি' তার
প্রণীত উল্লেখযোগ্য বই। দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, নাগরিক সমাজ,
প্রশাসনের রাজনীতিকীকরণ, নিজের লেখালেখি প্রভৃতি বিভিন্নমুখী বিষয়ে কথা
বলেছেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শানজিদ অর্ণব
আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট কতটা গভীর বলে মনে করেন? এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন কি?
আকবর আলি খান : সঙ্কট অবশ্যই গভীর। কারণ এ সঙ্কট শুধু আজকের সৃষ্টি নয়, তিন দশক ধরে এ সঙ্কট বিরাজ করছে। বর্তমানে এটা গভীরতর হয়েছে। মনে হয় না অদূর ভবিষ্যতে এ সঙ্কট সমাধানের খুব বেশি সম্ভাবনা আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সবাই শঙ্কিত এবং আমরা চাই যে, বাংলাদেশের স্বার্থে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হতে পারে।
প্রশ্ন : আমরা জানি যে, আপনি 'উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ' নামের একটি ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্য...
আকবর : নাম কী আছে সেটা আমি জানি না। আমি একটা কমিটির সদস্য ছিলাম।
প্রশ্ন : সদস্য ছিলেন মানে, এখন কি আর নেই?
আকবর : মানে এখনও আছি; কিন্তু ওটা তো আর এখন কোনো কাজ করছে না।
প্রশ্ন : কমিটির প্রধান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা মার্চ মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কমিটির পক্ষ থেকে একটি ফর্মুলা প্রকাশ করা হবে। এ ফর্মুলা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
আকবর : আমি কোনো ফর্মুলা সম্পর্কে অবগত নই। আমি এ বিষয়ে যেটা বলতে পারি যে, আমরা চলমান সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা যারা একত্রিত হয়েছিলাম তাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক পদে যাব না। আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। আমরা চাই, এ সমস্যাটা সমাধান হোক। সেটা তুলে ধরার জন্যই আমি তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলাম। আমাদের নিজস্ব কোনো ফর্মুলা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি আমাদের সমর্থন চায় তাহলে হয়তো আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি। তারা যদি নিজেরা সমাধান বের করতে পারে সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
প্রশ্ন : ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন?
আকবর : নির্বাচন তো সবসময়ই ভালো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ৭ বছর দেরি হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির অঙ্গে পরিণত হয় এবং ৭ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই নির্বাচন হোক এবং যথাসময়ে নির্বাচন হোক। যথাসময়ে নির্বাচন হলে জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী সংস্কার চাইলেও নির্বাচনী ব্যবস্থার যে ত্রুটি আছে সেটা তুলে ধরার জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে ত্রুটিগুলো আছে সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, নির্বাচন হলে সব দলেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। কিন্তু নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে সেটাও তুলে ধরা উচিত। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলে ফল মেনে নেয়ার মতো মানসিক শক্তি থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন : সরকারি দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে তাদের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের কথা বলে। একই আহ্বান জানিয়েছে কিছু বিদেশি সংস্থাও। অন্যদিকে দেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও আছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আকবর : জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সরকার যেসব অভিযোগ এনেছে সেগুলো সত্য হলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা উচিত। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বেশ কয়েকটি বক্তব্যে আমি স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করবে না অথচ বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের যে উপদেশ দিচ্ছে তার মধ্যে রাজনীতি ছাড়া আমি আর কোনো উদ্দেশ্য দেখি না। সরকার যদি এর সত্যিকার সমাধান করতে চায় তাহলে সরাসরি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এরপরও যদি বিএনপি তাদের সঙ্গে জোট বাঁধে তাহলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে একটা রাজনৈতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন : স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অরাজনৈতিক নির্বাচন বলা হয়...
আকবর : আমি মনে করি বাংলাদেশে এমন কিছু নেই যেটা রাজনীতির বাইরে। সর্বগ্রাসী রাজনীতি বাংলাদেশের সবকিছু গ্রাস করে বসে আছে। আপনি যদিও বলেন যে, স্থানীয় সরকারে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ থাকা উচিত নয়; কিন্তু বাস্তবে এগুলো সবই রাজনৈতিক দলগুলো দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। শুধু এখানে নয়, যখন শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন হয় সেখানেও রাজনীতি, যখন আইনজ্ঞদের সমিতির নির্বাচন হয় সেখানেও রাজনীতি, যখন চিকিৎসকদের প্যানেলের নির্বাচন হয় সেখানেও রাজনীতি। বাংলাদেশের সব জায়গায় রাজনীতি আছে।
প্রশ্ন : আপনি বললেন যে, সর্বগ্রাসী রাজনীতি বাংলাদেশের সবকিছু গ্রাস করে বসে আছে। এ অবস্থা দেশের ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
আকবর : এটা তো ভবিষ্যৎ নয়, এটা আমাদের অতীতকেও কালিমালিপ্ত করেছে। বর্তমানকেও দুঃসহ করে তুলেছে এবং ভবিষ্যতেও এর প্রভাব খারাপ হবে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে যেটা হয়েছে সেটা হলো সিভিল সমাজকে রাজনীতিকরণ করে প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সিভিল সমাজ একটা দেশে কেন থাকে? রাষ্ট্র যখন খুব বেশি ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য সিভিল সমাজগুলো বিভিন্ন পেশা বা অন্যান্য ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে যেটা হয়েছে যে, যত পেশাভিত্তিক সংগঠন আছে সেগুলো সবই রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরা বর্তমানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অথচ পাকিস্তান আমলে এমনকি বাংলাদেশেও আশির দশকে এরা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে, তাই তাদের কোনো শক্তি নেই।
প্রশ্ন : একটি অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকার সময় প্রশাসনকে দলীয়করণ করে। আপনি কি মনে করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে বা চাপে প্রশাসনের দলীয়করণ হয় নাকি প্রশাসনের শীর্ষে যারা থাকেন তারাও রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয়ে থাকতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন?
আকবর : দুইটিই আছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা মুখ্য। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যখন দেখেন যে, রাজনীতিকরণ করলে তাদের লাভ হবে তখন তারাও এর অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে আমরা এমন এক পর্যায়ে এসেছি যে, এখন বাংলাদেশে ভালো লোকদের দুষ্ট লোকরা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসনে রাজনীতিকীকরণ প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। অতীতে যে সরকার ছিল তারাও একই পদ্ধতিতে রাজনীতিকীকরণ করেছে। এর ফলে প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে।
প্রশ্ন : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিজেদের সফল মনে করে। আপনিও কি তাই মনে করেন?
আকবর : সরকার যেটা বলে সেটা এক অর্থে ঠিক আবার অন্য অর্থে ঠিক নয়। ঠিক এই অর্থে যে, বাংলাদেশের অথনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। ১৯৭০ সালের তুলনায় যদি আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক উন্নতি শুধু আওয়ামী লীগ সরকার করেনি, বিএনপি সরকারও করেছে। দেখা যাবে, এক সরকারের পরে যারা আসে তারা আরও ভালো করে, এরপর যারা আসে তারা আরও ভালো করে। এটা হলো একটা দিক। আরেকটা দিক হলো যত উন্নতিই আমরা করে থাকি না কেন, বিশ্বের দেশগুলোর অগ্রগতি আরও অনেক বেশি ঈর্ষণীয়। এর ফলে আমাদের অগ্রগতি বিশ্বের অগ্রগতির তুলনায় যথেষ্ট সন্তোষজনক নয়। আমাদের আরও অনেক সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে যদি আমরা দারিদ্র্যসীমা বিচার করি তাহলে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে। কিন্তু জাতীয় যে দারিদ্র্যসীমা সেটার হিসাবে আমাদের এখানে দারিদ্র্যসীমা ২৫ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। কাজেই এ ধরনের সংখ্যায় অনেক হেরফের আছে। সামগ্রিকভাবে আমার বক্তব্য হলো, আন্তর্জাতিক মানে আমাদের আরও অনেক এগোনোর অবকাশ রয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার 'ডিসকভারি অব বাংলাদেশ' বইয়ে বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসারের কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আজকের দিনে এসে দেখা যাচ্ছে, এদেশে ইসলামী চরমপন্থার এক ধরনের বিকাশ হচ্ছে। এ দুই পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
আকবর : অনেক মানুষ প্রশ্ন করে থাকেন যে, এদেশের মানুষ কেন মুসলমান হয়েছে? আমার মনে হয়, ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে সেই প্রশ্নটা সবচেয়ে বড় নয়। প্রথম কথা হলো, তৎকালে ভারতে ধর্ম পরিবর্তন করার স্বাধীনতা ছিল কিনা। আমার কথা হলো, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের গ্রাম প্রশাসনের সঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদের এমন একটা সংমিশ্রণ ছিল যে সেখানে লোকের পক্ষে ধর্মান্তরকরণের কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে খুব বেশি শক্তিশালী গ্রাম প্রশাসন ছিল না। সেজন্য এখানকার লোকের পক্ষে ধর্মান্তরকরণ সম্ভব হয়েছে। শুধু মুসলিম আমলেই নয়, এর আগে হিন্দু আমলেও বিভিন্ন সহজিয়া মতবাদ প্রাধান্য লাভ করেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ এখানে কখনও প্রাধান্য লাভ করেনি। বৌদ্ধরা এখানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে যারা মুসলমান হয়েছে তারা জেনেশুনে মুসলমান হয়েছে। কারণ তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার ছিল এবং তারা সেই অধিকার প্রয়োগ করেছে। যারা এখানে হিন্দু ছিলেন তারাও জেনেশুনে হিন্দু ছিলেন। এখানে কারও ওপর ধর্ম চাপিয়ে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ তাদের হৃদয়ের ডাক অনুসারে ধর্মের চর্চা করেছে। এ কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যা থেকে ধর্মীয় দিক থেকে বিভিন্ন। এর মূল ভিত্তি বাঙালির মানবতাবাদ। 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই' এটা বাঙালি মুসলমান-হিন্দু সবাই বিশ্বাস করে। এই মানবতাবাদ কখনও উগ্রপন্থী মৌলবাদী ছিল না। উগ্রপন্থী মৌলবাদ কিন্তু আজকের সৃষ্টি। মাদরাসা শিক্ষিত ছাত্ররা উগ্রপন্থী মৌলবাদী নয়। উগ্রপন্থী মৌলবাদী হলো পশ্চিমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা। সুতরাং আজকের মৌলবাদের ভিত্তির সঙ্গে আমাদের ইতিহাসের যে ধারা তার কোনো মিল নেই। কিন্তু এর প্রভাব সব দেশেই পড়ছে এবং বাংলাদেশেও পড়বে। কারণ বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সেটাই মূর্ত হচ্ছে উগ্রবাদী ধারায়। এ সমস্যা বাংলাদেশের পক্ষে আলাদা করে সমাধান করা সম্ভব নয়। সামগ্রিক বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
প্রশ্ন : এখন কী নিয়ে লেখালেখি করছেন?
আকবর : বাংলাদেশের গণপ্রশাসনের ওপর আমার একটি বই খুব শিগগির বের হবে। বইটির নাম "গ্রেশামস ল সিনড্রম অ্যান্ড বিয়ন্ড"। বইটির বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশে গ্রেশামস ল'-এর মতো একটি ব্যাধি কাজ করছে। গ্রেশামস ল' অর্থনীতিতে বলে যে, খারাপ টাকা ভালো টাকাকে তাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রশাসনেও বর্তমানে খারাপ লোকরা ভালো লোকদের তাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে আমি বাংলাদেশের প্রশাসনে বিভিন্ন সমস্যা বিশ্লেষণ করেছি এই সাড়ে ৩০০ পাতার বইয়ে। আমার মনে হয়, বইটি এক-দেড় মাসের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
প্রশ্ন : আত্মজীবনী লিখবেন কি?
আকবর : আত্মজীবনী লিখব, তবে সবশেষে লিখতে চাই। যাতে আমি মারা যাওয়ার পর প্রকাশ হয়। জীবদ্দশায় সত্য কথা বলার অনেক কষ্ট আছে।
প্রশ্ন : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আকবর : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট কতটা গভীর বলে মনে করেন? এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন কি?
আকবর আলি খান : সঙ্কট অবশ্যই গভীর। কারণ এ সঙ্কট শুধু আজকের সৃষ্টি নয়, তিন দশক ধরে এ সঙ্কট বিরাজ করছে। বর্তমানে এটা গভীরতর হয়েছে। মনে হয় না অদূর ভবিষ্যতে এ সঙ্কট সমাধানের খুব বেশি সম্ভাবনা আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সবাই শঙ্কিত এবং আমরা চাই যে, বাংলাদেশের স্বার্থে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হতে পারে।
প্রশ্ন : আমরা জানি যে, আপনি 'উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ' নামের একটি ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্য...
আকবর : নাম কী আছে সেটা আমি জানি না। আমি একটা কমিটির সদস্য ছিলাম।
প্রশ্ন : সদস্য ছিলেন মানে, এখন কি আর নেই?
আকবর : মানে এখনও আছি; কিন্তু ওটা তো আর এখন কোনো কাজ করছে না।
প্রশ্ন : কমিটির প্রধান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা মার্চ মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কমিটির পক্ষ থেকে একটি ফর্মুলা প্রকাশ করা হবে। এ ফর্মুলা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
আকবর : আমি কোনো ফর্মুলা সম্পর্কে অবগত নই। আমি এ বিষয়ে যেটা বলতে পারি যে, আমরা চলমান সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা যারা একত্রিত হয়েছিলাম তাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক পদে যাব না। আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। আমরা চাই, এ সমস্যাটা সমাধান হোক। সেটা তুলে ধরার জন্যই আমি তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলাম। আমাদের নিজস্ব কোনো ফর্মুলা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি আমাদের সমর্থন চায় তাহলে হয়তো আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি। তারা যদি নিজেরা সমাধান বের করতে পারে সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
প্রশ্ন : ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন?
আকবর : নির্বাচন তো সবসময়ই ভালো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ৭ বছর দেরি হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির অঙ্গে পরিণত হয় এবং ৭ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই নির্বাচন হোক এবং যথাসময়ে নির্বাচন হোক। যথাসময়ে নির্বাচন হলে জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী সংস্কার চাইলেও নির্বাচনী ব্যবস্থার যে ত্রুটি আছে সেটা তুলে ধরার জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে ত্রুটিগুলো আছে সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, নির্বাচন হলে সব দলেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। কিন্তু নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে সেটাও তুলে ধরা উচিত। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলে ফল মেনে নেয়ার মতো মানসিক শক্তি থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন : সরকারি দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে তাদের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের কথা বলে। একই আহ্বান জানিয়েছে কিছু বিদেশি সংস্থাও। অন্যদিকে দেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও আছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আকবর : জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সরকার যেসব অভিযোগ এনেছে সেগুলো সত্য হলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা উচিত। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বেশ কয়েকটি বক্তব্যে আমি স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করবে না অথচ বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের যে উপদেশ দিচ্ছে তার মধ্যে রাজনীতি ছাড়া আমি আর কোনো উদ্দেশ্য দেখি না। সরকার যদি এর সত্যিকার সমাধান করতে চায় তাহলে সরাসরি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এরপরও যদি বিএনপি তাদের সঙ্গে জোট বাঁধে তাহলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে একটা রাজনৈতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন : স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অরাজনৈতিক নির্বাচন বলা হয়...
আকবর : আমি মনে করি বাংলাদেশে এমন কিছু নেই যেটা রাজনীতির বাইরে। সর্বগ্রাসী রাজনীতি বাংলাদেশের সবকিছু গ্রাস করে বসে আছে। আপনি যদিও বলেন যে, স্থানীয় সরকারে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ থাকা উচিত নয়; কিন্তু বাস্তবে এগুলো সবই রাজনৈতিক দলগুলো দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। শুধু এখানে নয়, যখন শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন হয় সেখানেও রাজনীতি, যখন আইনজ্ঞদের সমিতির নির্বাচন হয় সেখানেও রাজনীতি, যখন চিকিৎসকদের প্যানেলের নির্বাচন হয় সেখানেও রাজনীতি। বাংলাদেশের সব জায়গায় রাজনীতি আছে।
প্রশ্ন : আপনি বললেন যে, সর্বগ্রাসী রাজনীতি বাংলাদেশের সবকিছু গ্রাস করে বসে আছে। এ অবস্থা দেশের ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
আকবর : এটা তো ভবিষ্যৎ নয়, এটা আমাদের অতীতকেও কালিমালিপ্ত করেছে। বর্তমানকেও দুঃসহ করে তুলেছে এবং ভবিষ্যতেও এর প্রভাব খারাপ হবে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে যেটা হয়েছে সেটা হলো সিভিল সমাজকে রাজনীতিকরণ করে প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সিভিল সমাজ একটা দেশে কেন থাকে? রাষ্ট্র যখন খুব বেশি ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য সিভিল সমাজগুলো বিভিন্ন পেশা বা অন্যান্য ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে যেটা হয়েছে যে, যত পেশাভিত্তিক সংগঠন আছে সেগুলো সবই রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরা বর্তমানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অথচ পাকিস্তান আমলে এমনকি বাংলাদেশেও আশির দশকে এরা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে, তাই তাদের কোনো শক্তি নেই।
প্রশ্ন : একটি অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকার সময় প্রশাসনকে দলীয়করণ করে। আপনি কি মনে করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে বা চাপে প্রশাসনের দলীয়করণ হয় নাকি প্রশাসনের শীর্ষে যারা থাকেন তারাও রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয়ে থাকতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন?
আকবর : দুইটিই আছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা মুখ্য। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যখন দেখেন যে, রাজনীতিকরণ করলে তাদের লাভ হবে তখন তারাও এর অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে আমরা এমন এক পর্যায়ে এসেছি যে, এখন বাংলাদেশে ভালো লোকদের দুষ্ট লোকরা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসনে রাজনীতিকীকরণ প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। অতীতে যে সরকার ছিল তারাও একই পদ্ধতিতে রাজনীতিকীকরণ করেছে। এর ফলে প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে।
প্রশ্ন : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিজেদের সফল মনে করে। আপনিও কি তাই মনে করেন?
আকবর : সরকার যেটা বলে সেটা এক অর্থে ঠিক আবার অন্য অর্থে ঠিক নয়। ঠিক এই অর্থে যে, বাংলাদেশের অথনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। ১৯৭০ সালের তুলনায় যদি আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক উন্নতি শুধু আওয়ামী লীগ সরকার করেনি, বিএনপি সরকারও করেছে। দেখা যাবে, এক সরকারের পরে যারা আসে তারা আরও ভালো করে, এরপর যারা আসে তারা আরও ভালো করে। এটা হলো একটা দিক। আরেকটা দিক হলো যত উন্নতিই আমরা করে থাকি না কেন, বিশ্বের দেশগুলোর অগ্রগতি আরও অনেক বেশি ঈর্ষণীয়। এর ফলে আমাদের অগ্রগতি বিশ্বের অগ্রগতির তুলনায় যথেষ্ট সন্তোষজনক নয়। আমাদের আরও অনেক সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে যদি আমরা দারিদ্র্যসীমা বিচার করি তাহলে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে। কিন্তু জাতীয় যে দারিদ্র্যসীমা সেটার হিসাবে আমাদের এখানে দারিদ্র্যসীমা ২৫ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। কাজেই এ ধরনের সংখ্যায় অনেক হেরফের আছে। সামগ্রিকভাবে আমার বক্তব্য হলো, আন্তর্জাতিক মানে আমাদের আরও অনেক এগোনোর অবকাশ রয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার 'ডিসকভারি অব বাংলাদেশ' বইয়ে বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসারের কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আজকের দিনে এসে দেখা যাচ্ছে, এদেশে ইসলামী চরমপন্থার এক ধরনের বিকাশ হচ্ছে। এ দুই পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
আকবর : অনেক মানুষ প্রশ্ন করে থাকেন যে, এদেশের মানুষ কেন মুসলমান হয়েছে? আমার মনে হয়, ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে সেই প্রশ্নটা সবচেয়ে বড় নয়। প্রথম কথা হলো, তৎকালে ভারতে ধর্ম পরিবর্তন করার স্বাধীনতা ছিল কিনা। আমার কথা হলো, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের গ্রাম প্রশাসনের সঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদের এমন একটা সংমিশ্রণ ছিল যে সেখানে লোকের পক্ষে ধর্মান্তরকরণের কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে খুব বেশি শক্তিশালী গ্রাম প্রশাসন ছিল না। সেজন্য এখানকার লোকের পক্ষে ধর্মান্তরকরণ সম্ভব হয়েছে। শুধু মুসলিম আমলেই নয়, এর আগে হিন্দু আমলেও বিভিন্ন সহজিয়া মতবাদ প্রাধান্য লাভ করেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ এখানে কখনও প্রাধান্য লাভ করেনি। বৌদ্ধরা এখানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে যারা মুসলমান হয়েছে তারা জেনেশুনে মুসলমান হয়েছে। কারণ তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার ছিল এবং তারা সেই অধিকার প্রয়োগ করেছে। যারা এখানে হিন্দু ছিলেন তারাও জেনেশুনে হিন্দু ছিলেন। এখানে কারও ওপর ধর্ম চাপিয়ে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ তাদের হৃদয়ের ডাক অনুসারে ধর্মের চর্চা করেছে। এ কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যা থেকে ধর্মীয় দিক থেকে বিভিন্ন। এর মূল ভিত্তি বাঙালির মানবতাবাদ। 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই' এটা বাঙালি মুসলমান-হিন্দু সবাই বিশ্বাস করে। এই মানবতাবাদ কখনও উগ্রপন্থী মৌলবাদী ছিল না। উগ্রপন্থী মৌলবাদ কিন্তু আজকের সৃষ্টি। মাদরাসা শিক্ষিত ছাত্ররা উগ্রপন্থী মৌলবাদী নয়। উগ্রপন্থী মৌলবাদী হলো পশ্চিমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা। সুতরাং আজকের মৌলবাদের ভিত্তির সঙ্গে আমাদের ইতিহাসের যে ধারা তার কোনো মিল নেই। কিন্তু এর প্রভাব সব দেশেই পড়ছে এবং বাংলাদেশেও পড়বে। কারণ বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সেটাই মূর্ত হচ্ছে উগ্রবাদী ধারায়। এ সমস্যা বাংলাদেশের পক্ষে আলাদা করে সমাধান করা সম্ভব নয়। সামগ্রিক বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
প্রশ্ন : এখন কী নিয়ে লেখালেখি করছেন?
আকবর : বাংলাদেশের গণপ্রশাসনের ওপর আমার একটি বই খুব শিগগির বের হবে। বইটির নাম "গ্রেশামস ল সিনড্রম অ্যান্ড বিয়ন্ড"। বইটির বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশে গ্রেশামস ল'-এর মতো একটি ব্যাধি কাজ করছে। গ্রেশামস ল' অর্থনীতিতে বলে যে, খারাপ টাকা ভালো টাকাকে তাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রশাসনেও বর্তমানে খারাপ লোকরা ভালো লোকদের তাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে আমি বাংলাদেশের প্রশাসনে বিভিন্ন সমস্যা বিশ্লেষণ করেছি এই সাড়ে ৩০০ পাতার বইয়ে। আমার মনে হয়, বইটি এক-দেড় মাসের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
প্রশ্ন : আত্মজীবনী লিখবেন কি?
আকবর : আত্মজীবনী লিখব, তবে সবশেষে লিখতে চাই। যাতে আমি মারা যাওয়ার পর প্রকাশ হয়। জীবদ্দশায় সত্য কথা বলার অনেক কষ্ট আছে।
প্রশ্ন : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আকবর : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
No comments