পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ঐতিহাসিক সমঝোতা- ইরান ছাড় দেবে, পশ্চিমারা তুলে নেবে অবরোধ
মতৈক্য হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে যাচ্ছেন ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি (ডান থেকে) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। বাঁয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি l ছবি: রয়টার্স |
অবশেষে
ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তেহরান ও ছয়
বিশ্বশক্তি। সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে আট দিন ধরে আলোচনার পর গতকাল
বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সমঝোতার বার্তা দিলেন। বার্তায়
জানানো হলো, ইরান ছাড় দেবে, পশ্চিমারা তুলে নেবে অবরোধ। খবর এএফপি ও
বিবিসির।
এ সমঝোতার আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশটি সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ১৯ হাজার থেকে কমিয়ে ছয় হাজারে নিয়ে আসবে। নিম্নমাত্রায় সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে আনবে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকেরা ইরানের সেন্ট্রিফিউজ ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অবকাঠামোগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। স্থাপনাগুলো নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করতে পারবে আইএইএ। ইরান মারকাজি প্রদেশের রাজধানী আরাকে ভারী পানির চুল্লির নকশার পরিবর্তন করবে, যাতে দেশটি আর অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে না পারে।
এর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে শিথিল করা হবে। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইরানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেগুলো ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হবে।
যেভাবে ঘোষণা এল: লুজানে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রূপরেখা চুক্তির বিষয়ে মতৈক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ছয় বিশ্বশক্তির পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ উপস্থিত ছিলেন।
জারিফকে পাশে রেখে মগেরিনি ঘোষণা করেন, অবশেষে ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপ’ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূল বিষয়গুলোর সমাধানে যৌথভাবে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আলোচকেরা এখন এই কর্মপরিকল্পনার খসড়া বিষয়বস্তুর জন্য কাজ শুরু করবেন।
এর আগে খুদে বার্তা লেখার ওয়েবসাইট টুইটারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ জানান, ‘সমাধান পাওয়া গেছে। শিগগিরই খসড়া প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে।’
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইটার বার্তায় বলেছে, ‘রূপরেখা চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত মতৈক্যে পৌঁছা গেছে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি টুইটার বার্তায় লিখেছেন, আজ অনেক বড় একটি দিন...চূড়ান্ত চুক্তির জন্য শিগগিরই কাজে ফিরতে হবে।
তবে ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টুইটার বার্তায় ঘোষণা করেছেন, ‘যেকোনো চুক্তিই হোক, সেখানে অবশ্যই ইরানের পারমাণবিক সামর্থ্য কমাতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদ ও সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা এই রূপরেখা চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক সমঝোতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ইরান যদি প্রতারণা করে, বিশ্ববাসী তা জানবে। ওবামা বলেন, চুক্তিতে পৌঁছানোর সমঝোতা শুধু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নয়, ‘নজিরবিহীন সত্যাসত্য নির্ধারণ’ করেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রূপরেখা চুক্তিকে ‘চমৎকার চুক্তি’ বলে অভিহিত করেন। ওবামা এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলি নেতা নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দুই পক্ষের মতৈক্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
ইরানের ঘোর শত্রু ইসরায়েলসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ অভিযোগ করছিল, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করার জন্য ওই কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। তবে এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে তেহরান বলছে, শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারই দেশটির এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। ওই পারমাণবিক কর্মসূচিতে ঘিরে ইরানের ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল পশ্চিমা দেশগুলো।
বরফ গলা শুরু: ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার বার্তা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো টেলিফোনে দুই নেতা কথা বলেন।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ওটাই ছিল প্রথম সরাসরি আলাপের ঘটনা। এর ধারাবাহিকতায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতার বিষয়টি উঠে আসে।
সমঝোতার প্রক্রিয়া: ২০১৩ সালেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য ও জার্মানি) আলোচনা শুরু হয়। ইরানের কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অবরোধ শিথিল করার প্রস্তাব ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে আগে কয়েক দফা সময়সীমা ঘোষণা করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চের মধ্যে একটি রূপরেখা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে দুই দফায় এক দিন করে সময় বাড়ানো হয়। শেষ দিনে দুই পক্ষ রূপরেখা চুক্তিতে পৌঁছার কথা জানাল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩০ জুনের মধ্যে একটি চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা। যেখানে কোন পক্ষ কী করবে, তার বিশদ বর্ণনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ সমঝোতার আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশটি সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ১৯ হাজার থেকে কমিয়ে ছয় হাজারে নিয়ে আসবে। নিম্নমাত্রায় সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে আনবে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকেরা ইরানের সেন্ট্রিফিউজ ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অবকাঠামোগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। স্থাপনাগুলো নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করতে পারবে আইএইএ। ইরান মারকাজি প্রদেশের রাজধানী আরাকে ভারী পানির চুল্লির নকশার পরিবর্তন করবে, যাতে দেশটি আর অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে না পারে।
এর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে শিথিল করা হবে। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইরানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেগুলো ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হবে।
যেভাবে ঘোষণা এল: লুজানে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রূপরেখা চুক্তির বিষয়ে মতৈক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ছয় বিশ্বশক্তির পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ উপস্থিত ছিলেন।
জারিফকে পাশে রেখে মগেরিনি ঘোষণা করেন, অবশেষে ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপ’ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূল বিষয়গুলোর সমাধানে যৌথভাবে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আলোচকেরা এখন এই কর্মপরিকল্পনার খসড়া বিষয়বস্তুর জন্য কাজ শুরু করবেন।
এর আগে খুদে বার্তা লেখার ওয়েবসাইট টুইটারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ জানান, ‘সমাধান পাওয়া গেছে। শিগগিরই খসড়া প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে।’
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইটার বার্তায় বলেছে, ‘রূপরেখা চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত মতৈক্যে পৌঁছা গেছে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি টুইটার বার্তায় লিখেছেন, আজ অনেক বড় একটি দিন...চূড়ান্ত চুক্তির জন্য শিগগিরই কাজে ফিরতে হবে।
তবে ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টুইটার বার্তায় ঘোষণা করেছেন, ‘যেকোনো চুক্তিই হোক, সেখানে অবশ্যই ইরানের পারমাণবিক সামর্থ্য কমাতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদ ও সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা এই রূপরেখা চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক সমঝোতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ইরান যদি প্রতারণা করে, বিশ্ববাসী তা জানবে। ওবামা বলেন, চুক্তিতে পৌঁছানোর সমঝোতা শুধু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নয়, ‘নজিরবিহীন সত্যাসত্য নির্ধারণ’ করেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রূপরেখা চুক্তিকে ‘চমৎকার চুক্তি’ বলে অভিহিত করেন। ওবামা এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলি নেতা নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দুই পক্ষের মতৈক্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
ইরানের ঘোর শত্রু ইসরায়েলসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ অভিযোগ করছিল, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করার জন্য ওই কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। তবে এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে তেহরান বলছে, শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারই দেশটির এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। ওই পারমাণবিক কর্মসূচিতে ঘিরে ইরানের ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল পশ্চিমা দেশগুলো।
বরফ গলা শুরু: ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার বার্তা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো টেলিফোনে দুই নেতা কথা বলেন।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ওটাই ছিল প্রথম সরাসরি আলাপের ঘটনা। এর ধারাবাহিকতায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতার বিষয়টি উঠে আসে।
সমঝোতার প্রক্রিয়া: ২০১৩ সালেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য ও জার্মানি) আলোচনা শুরু হয়। ইরানের কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অবরোধ শিথিল করার প্রস্তাব ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে আগে কয়েক দফা সময়সীমা ঘোষণা করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চের মধ্যে একটি রূপরেখা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে দুই দফায় এক দিন করে সময় বাড়ানো হয়। শেষ দিনে দুই পক্ষ রূপরেখা চুক্তিতে পৌঁছার কথা জানাল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩০ জুনের মধ্যে একটি চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা। যেখানে কোন পক্ষ কী করবে, তার বিশদ বর্ণনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
No comments