একাই সব করছেন সিইসি by হারুন আল রশীদ
প্রধান
নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ একাই চালাচ্ছেন নির্বাচন
কমিশন। অন্য চার নির্বাচন কমিশনার কমিশনে থেকেও নেই। তাঁদের না জানিয়েই
কমিশনের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সিইসি একাই নিচ্ছেন এবং তা
কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
সিইসির একক কর্মকাণ্ডে তাঁকে দাপ্তরিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম। হাতে গোনা দু-চারটি নথি ছাড়া বাকি সব নথিই নিচ থেকে সচিবের দপ্তর হয়ে সিইসির দপ্তরে যায়। সেখান থেকে একই পথে নিচের দপ্তরে নেমে যায়। এসব নথি কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয় না। কমিশনার এবং কমিশন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, এসব নিয়ে কয়েক মাস থেকে সিইসির সঙ্গে অন্য চার কমিশনারের মনোমালিন্য চলছে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ না ডাকলেও চার কমিশনার নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিনই সিইসির দপ্তরে চা খেতে যান। সেখানে খোশগল্প হয়। কিন্তু কমিশনের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয় না। মাঝেমধ্যে কমিশনারদের কেউ কেউ একক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেন না সিইসি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিইসি একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নিবন্ধন বিভাগে হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। এসব কাজ কে করছে, কীভাবে করছে তার কিছুই আমরা জানি না। এ-সংক্রান্ত কোনো নথি আজ পর্যন্ত কমিশনারদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়নি।’
কমিশন সচিবালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিয়া) প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সিইসির সঙ্গে অন্য চার কমিশনারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সিইসি আইডিয়া প্রকল্পটি আঁকড়ে ধরে আছেন। অন্য কমিশনারদের ভাষ্য, এই প্রকল্প কী হচ্ছে, না হচ্ছে, ভালো হচ্ছে কি মন্দ হচ্ছে, তার কিছুই তাঁরা জানেন না। এর জের ধরে অন্যান্য অনেক বিষয়েও এখন আর কমিশনারদের মতামত নেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে সিইসির বক্তব্য জানার জন্য এ প্রতিবেদক কয়েক দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করলেও সশরীরে গিয়ে সাক্ষাৎ মেলেনি, ফোনেও পাওয়া যায়নি। এমনকি লিখিতভাবেও সিইসির বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সিইসির একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি সংবিধান ও নিবন্ধন আইনের পরিপন্থী। কারণ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনের ২ ধারায় ‘কমিশন’ বলতে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের অধীন প্রতিষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনকে বোঝানো হয়েছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সর্বোচ্চ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন।
নিবন্ধন আইনের ৬ ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন করবে।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ১২ মার্চ তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু চার কমিশনারকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়নি। কমিশনাররা নিজেদের তাগিদে বৈঠকে যোগ দেন। এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠক শেষে দুই কমিশনার নিজেদের কক্ষে গিয়ে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
২৫ মার্চ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী শত নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধিদল কমিশনে গেলে সিইসি একাই তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কমিশনারদের তিনি ডাকেননি, শুধু সচিব উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় দু-এক দিন বাড়ানোর দাবি জানায়। বৈঠক শেষে কাজী রকিবউদ্দীন অন্য কমিশনারদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই জানিয়ে দেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হবে না।
১ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহর নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচনে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ তৈরির দাবি নিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে। এ দিনও অন্য চার কমিশনারকে ডাকা হয়নি।
কমিশন সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের জুলাই থেকে আইডিয়া প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। তবে কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগ কেনাকাটার জন্য যথাসময়ে দরপত্র আহ্বান না করা এবং যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দেওয়ায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে পড়েছে। বর্তমানে যে অগ্রগতি, তাতে ২০১৮ সালের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। সে জন্য কমিশন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি লিখবে।
আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় গত বছরের নভেম্বরে উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) ছাপা-সম্পর্কিত প্রস্তাব সরকারের কেনাকাটা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। নথিতে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রতিষ্ঠান ওবারথুর টেকনোলজিস ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড ছাপিয়ে দেবে। সারসংক্ষেপটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করেছেন।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, নথিতে প্রথমে লেখা হয়েছিল, ‘সারসংক্ষেপটি নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করেছে’। এ বাক্যটির বিষয়ে অন্য কমিশনাররা আপত্তি জানান। তাঁরা বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ‘কমিশন’ না লিখে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ লিখতে হবে। পরে কমিশন সচিবালয় সেভাবেই তা সংশোধন করে।
এরও আগে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টাইগার আইটিকে এএফআইএস (অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম) সফটওয়্যার কেনার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১০ সালে একই সফটওয়্যার টাইগার আইটির কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছিল।
নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনেকের অভিযোগ, বিদ্যমান এএফআইএস সফটওয়্যারটি অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। ভোটার তথ্যভান্ডারের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য (ডিজাস্টার রিকভারি সাইট—ডিআরএস) একই সফটওয়্যার কেনা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আগের কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ভিন্ন কোনো কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হলে সেটি অনেক বেশি কার্যকর হতো।
টাইগার আইটি ও ওবারথুরকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে সিইসি একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁকে সাচিবিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছেন সচিব সিরাজুল ইসলাম ও নিবন্ধন বিভাগের মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন।
কমিশনের কাজে সিইসির একক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সিইসির এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে উচ্চতর আদালতের একাধিক রায় আছে।
সিইসির একক কর্মকাণ্ডে তাঁকে দাপ্তরিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম। হাতে গোনা দু-চারটি নথি ছাড়া বাকি সব নথিই নিচ থেকে সচিবের দপ্তর হয়ে সিইসির দপ্তরে যায়। সেখান থেকে একই পথে নিচের দপ্তরে নেমে যায়। এসব নথি কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয় না। কমিশনার এবং কমিশন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, এসব নিয়ে কয়েক মাস থেকে সিইসির সঙ্গে অন্য চার কমিশনারের মনোমালিন্য চলছে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ না ডাকলেও চার কমিশনার নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিনই সিইসির দপ্তরে চা খেতে যান। সেখানে খোশগল্প হয়। কিন্তু কমিশনের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয় না। মাঝেমধ্যে কমিশনারদের কেউ কেউ একক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেন না সিইসি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিইসি একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নিবন্ধন বিভাগে হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। এসব কাজ কে করছে, কীভাবে করছে তার কিছুই আমরা জানি না। এ-সংক্রান্ত কোনো নথি আজ পর্যন্ত কমিশনারদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়নি।’
কমিশন সচিবালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিয়া) প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সিইসির সঙ্গে অন্য চার কমিশনারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সিইসি আইডিয়া প্রকল্পটি আঁকড়ে ধরে আছেন। অন্য কমিশনারদের ভাষ্য, এই প্রকল্প কী হচ্ছে, না হচ্ছে, ভালো হচ্ছে কি মন্দ হচ্ছে, তার কিছুই তাঁরা জানেন না। এর জের ধরে অন্যান্য অনেক বিষয়েও এখন আর কমিশনারদের মতামত নেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে সিইসির বক্তব্য জানার জন্য এ প্রতিবেদক কয়েক দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করলেও সশরীরে গিয়ে সাক্ষাৎ মেলেনি, ফোনেও পাওয়া যায়নি। এমনকি লিখিতভাবেও সিইসির বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সিইসির একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি সংবিধান ও নিবন্ধন আইনের পরিপন্থী। কারণ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনের ২ ধারায় ‘কমিশন’ বলতে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের অধীন প্রতিষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনকে বোঝানো হয়েছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সর্বোচ্চ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন।
নিবন্ধন আইনের ৬ ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন করবে।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ১২ মার্চ তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু চার কমিশনারকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়নি। কমিশনাররা নিজেদের তাগিদে বৈঠকে যোগ দেন। এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠক শেষে দুই কমিশনার নিজেদের কক্ষে গিয়ে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
২৫ মার্চ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী শত নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধিদল কমিশনে গেলে সিইসি একাই তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কমিশনারদের তিনি ডাকেননি, শুধু সচিব উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় দু-এক দিন বাড়ানোর দাবি জানায়। বৈঠক শেষে কাজী রকিবউদ্দীন অন্য কমিশনারদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই জানিয়ে দেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হবে না।
১ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহর নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচনে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ তৈরির দাবি নিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে। এ দিনও অন্য চার কমিশনারকে ডাকা হয়নি।
কমিশন সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের জুলাই থেকে আইডিয়া প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। তবে কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগ কেনাকাটার জন্য যথাসময়ে দরপত্র আহ্বান না করা এবং যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দেওয়ায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে পড়েছে। বর্তমানে যে অগ্রগতি, তাতে ২০১৮ সালের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। সে জন্য কমিশন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি লিখবে।
আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় গত বছরের নভেম্বরে উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) ছাপা-সম্পর্কিত প্রস্তাব সরকারের কেনাকাটা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। নথিতে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রতিষ্ঠান ওবারথুর টেকনোলজিস ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড ছাপিয়ে দেবে। সারসংক্ষেপটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করেছেন।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, নথিতে প্রথমে লেখা হয়েছিল, ‘সারসংক্ষেপটি নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করেছে’। এ বাক্যটির বিষয়ে অন্য কমিশনাররা আপত্তি জানান। তাঁরা বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ‘কমিশন’ না লিখে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ লিখতে হবে। পরে কমিশন সচিবালয় সেভাবেই তা সংশোধন করে।
এরও আগে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টাইগার আইটিকে এএফআইএস (অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম) সফটওয়্যার কেনার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১০ সালে একই সফটওয়্যার টাইগার আইটির কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছিল।
নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনেকের অভিযোগ, বিদ্যমান এএফআইএস সফটওয়্যারটি অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। ভোটার তথ্যভান্ডারের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য (ডিজাস্টার রিকভারি সাইট—ডিআরএস) একই সফটওয়্যার কেনা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আগের কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ভিন্ন কোনো কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হলে সেটি অনেক বেশি কার্যকর হতো।
টাইগার আইটি ও ওবারথুরকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে সিইসি একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁকে সাচিবিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছেন সচিব সিরাজুল ইসলাম ও নিবন্ধন বিভাগের মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন।
কমিশনের কাজে সিইসির একক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সিইসির এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে উচ্চতর আদালতের একাধিক রায় আছে।
No comments