উন্নয়ন আর গণতান্ত্রিক অধিকার by বাছির জামাল
নো
বেল বিজয়ী প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন তার (উন্নয়ন ও
স্ব-ক্ষমতা) গ্রন্থে বলেছেন, অনেক সময়েই গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার
অভাবেই অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা তথা উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার একটি বক্তৃতা পড়তে গিয়ে সেনের উপর্যুক্ত কথাটি মনে পড়লো। শেখ
হাসিনা গত রোববার আগারগাঁওয়ে আইসিটি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে
বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করার অধিকার কারও নেই। দেশ যখন সব খাতে
বিপুলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেসময় জ্বালাও-পোড়াও, বর্বরতা ও
মানুষ হত্যার কারণে আমরা কিছু সমস্যার মোকাবিলা করছি। আশা করি এসব সমস্যা
থাকবে না।
শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, বর্তমান শাসক দলের অন্য নেতারাও বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের আন্দোলন-সংগ্রামকে উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই, একটি দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা-স্থিতিশীলতা না থাকলে উন্নয়ন অধরাই থেকে যায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ডামাঢোলে উন্নয়ন-অগ্রগতি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর বিরোধী জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে যে জ্বালাও-পোড়াও চলে এবং পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়, তাকে আর যাই হোক আন্দোলন বলা যায় না। এ ব্যাপারে অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে উল্টো সরকারকেই দোষারোপ করে বলেছেন, বর্তমান আন্দোলনে জনগণ বিএনপি জোটের সঙ্গে আছে। সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে ও পুড়িয়ে হত্যা করলে ক্ষমাতাসীনরা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রচারণার সুবিধা পাবে। কাজেই ক্ষমতাসীনেরা সুবিধা পায় এমন কোনো অপকর্মে আমাদের কেউ জড়িত থাকার প্রশ্ন ওঠে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উন্নয়নের অজুহাতে মানুষকে যে অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা করে চেনা যায়, তার সেসব চিরায়ত বৈশিষ্ট্য যেমন: সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা, ভোট প্রদান করা তথা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে কি বঞ্চিত করা যাবে? কেননা, ড. শ্রী সেন যেমন বলেছেন, এসব গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার অভাবেই উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটে।
এক সময় কেউ কেউ মনে করতেন, মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুততর হয়। এ ধারণার প্রবক্তা হলেন সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লী কুয়ান ইউ (১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯২৩)। উন্নয়ন অর্থনীতিতে এটি ‘লী তত্ত্ব’ হিসেবে পরিচিত। এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয় এমন কোনো কর্মসূচি দেয়া যাবে না। এজন্য নাগরিকের বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা হরণ করা জায়েজ। এ কারণে এক সময় বিশ্বের কঠোর রাজনৈতিক ব্যবস্থাধীন রাষ্ট্রসমূহে এই তত্ত্বটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে ৫ই জানুয়ারি থেকে বিরোধী জোটের চলছে লাগাতার হরতাল-অবরোধ। এসব কিছু্ই তখনই দানা বেঁধে ওঠে, যখন অমর্ত্য সেনের ভাষায়, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার অভাব’ হয়। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা উন্নয়ন, আমরা যাই বলি না কেন- তা কঠোর রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে সহানুভূতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করে। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর শেষে এক বিবৃতিতে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাও স্মর্তব্য। এতে তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে হওয়া উচিত নয়।’
প্রতিনিধি দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে। আবার ২০শে ফেব্রুয়ারি চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে উপর্যুক্ত বক্তব্য সম্বলিত একটি বিবৃতি দিয়ে যায়। তাহলে এটা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট যে, উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, বর্তমান শাসক দলের অন্য নেতারাও বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের আন্দোলন-সংগ্রামকে উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই, একটি দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা-স্থিতিশীলতা না থাকলে উন্নয়ন অধরাই থেকে যায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ডামাঢোলে উন্নয়ন-অগ্রগতি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর বিরোধী জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে যে জ্বালাও-পোড়াও চলে এবং পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়, তাকে আর যাই হোক আন্দোলন বলা যায় না। এ ব্যাপারে অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে উল্টো সরকারকেই দোষারোপ করে বলেছেন, বর্তমান আন্দোলনে জনগণ বিএনপি জোটের সঙ্গে আছে। সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে ও পুড়িয়ে হত্যা করলে ক্ষমাতাসীনরা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রচারণার সুবিধা পাবে। কাজেই ক্ষমতাসীনেরা সুবিধা পায় এমন কোনো অপকর্মে আমাদের কেউ জড়িত থাকার প্রশ্ন ওঠে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উন্নয়নের অজুহাতে মানুষকে যে অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা করে চেনা যায়, তার সেসব চিরায়ত বৈশিষ্ট্য যেমন: সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা, ভোট প্রদান করা তথা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে কি বঞ্চিত করা যাবে? কেননা, ড. শ্রী সেন যেমন বলেছেন, এসব গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার অভাবেই উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটে।
এক সময় কেউ কেউ মনে করতেন, মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুততর হয়। এ ধারণার প্রবক্তা হলেন সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লী কুয়ান ইউ (১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯২৩)। উন্নয়ন অর্থনীতিতে এটি ‘লী তত্ত্ব’ হিসেবে পরিচিত। এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয় এমন কোনো কর্মসূচি দেয়া যাবে না। এজন্য নাগরিকের বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা হরণ করা জায়েজ। এ কারণে এক সময় বিশ্বের কঠোর রাজনৈতিক ব্যবস্থাধীন রাষ্ট্রসমূহে এই তত্ত্বটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে ৫ই জানুয়ারি থেকে বিরোধী জোটের চলছে লাগাতার হরতাল-অবরোধ। এসব কিছু্ই তখনই দানা বেঁধে ওঠে, যখন অমর্ত্য সেনের ভাষায়, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার অভাব’ হয়। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা উন্নয়ন, আমরা যাই বলি না কেন- তা কঠোর রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে সহানুভূতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করে। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর শেষে এক বিবৃতিতে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাও স্মর্তব্য। এতে তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে হওয়া উচিত নয়।’
প্রতিনিধি দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে। আবার ২০শে ফেব্রুয়ারি চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে উপর্যুক্ত বক্তব্য সম্বলিত একটি বিবৃতি দিয়ে যায়। তাহলে এটা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট যে, উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
No comments