খালেদা ঘরে ফিরেছেন, গণতন্ত্রও ফিরে আসুক by সোহরাব হাসান
বিএনপি জোটের অবরোধে পেট্রলবোমায় দগ্ধ ব্যক্তিদের পাশে স্বজনের আহাজারি। ছবি: প্রথম আলো |
তিন
মাস পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে
ঘরে ফিরেছেন। গত ৩ জানুয়ারি তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে
বেরিয়ে তাঁর কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর খালেদা
জিয়া প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বালুভর্তি ট্রাক দ্বারা অবরুদ্ধ
হন। সেই অবরুদ্ধ অবস্থা না কাটতেই তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী
অবরোধ ঘোষণা করে সেখানেই অবস্থান করেন। এমনকি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো
মারা যাওয়ার পরও তিনি সেখান থেকে নড়েননি। বলেছিলেন, যৌক্তিক পরিণতি না
পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দেশবাসী গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করে যে
এই অবরোধকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একদিকে পেট্রলবোমার মহাতাণ্ডব, অন্যদিকে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমনপীড়ন চলতে থাকে। গ্রেপ্তার ও গুমের কারণে
জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিদগ্ধ মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে
ওঠে। দেশজুড়ে অবরোধের পাশাপাশি দফায় দফায় হরতাল পালিত হতে থাকে। সপ্তাহে
পাঁচ দিন। সর্বত্র শঙ্কা ও ভীতিকর অবস্থা।
এরই মধ্যে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষার হলে বসতে হয়। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এইচএসসি পরীক্ষা। এরই মধ্যে জীবনের ঝুঁকি দিয়ে শ্রমজীবী মানুষকে ঘরের বাইরে বেরোতে হয়। কাজ করতে হয়। কিন্তু তাঁরা সবাই ঘরে ফিরে আসতে পারেননি। অনেকেই পেট্রলবোমার ঘায়ে দগ্ধ হয়ে জীবন দিয়েছেন কিংবা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
কিন্তু পেট্রলবোমায় পুড়িয়ে মারা কিংবা বন্দুকযুদ্ধে নিহত মানুষের সারি আমাদের পাষাণ রাজনীতিকদের চৈতন্যোদয় ঘটাতে পারেনি। সরকার ও বিরোধী পক্ষের অবস্থানটি ছিল এ রকম: মানুষ মরুক, দেশ গোল্লায় যাক, অর্থনীতি ধ্বংস হোক, কিন্তু তাদের আমিত্ব বজায় রাখতেই হবে। এভাবে জানুয়ারি পেরিয়ে ফেব্রুয়ারি। ফ্রেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চ। কিন্তু নিজ নিজ অবস্থান থেকে কারও সরে আসার লক্ষণ নেই। মানুষ যারপরনাই হতাশ, বিচলিত ও বিক্ষুব্ধ। সবার প্রশ্ন: এভাবে কত দিন চলবে?
এরই মধ্যে তিন সিটি করপোরেশনের (ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম) নির্বানের তফসিল ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নড়ে-চড়ে বসে। কোথায় যেন একটি সমঝোতার ক্ষীণ আভাস পাওয়া যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিবেশ পেলে তারা নির্বাচনে যেতে রাজি আছে। সরকারের তরফেও কিছুটা নমনীয়তা লক্ষ করা যায়। মন্ত্রীরা মুখে যতই বলেন খালেদা জিয়াকে জেলখানার ভাত খেতে হবে, বাস্তবে আদালতের পরোয়ানা থানায় পৌঁছায় না। এরপর দ্রুত কতগুলো ঘটনা ঘটতে থাকে। বিএনপি নেতারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করেন।
এরপর গত শুক্রবার বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের সামনে থেকে পুলিশি প্রহরা তুলে নেওয়া হয়। গত শনিবার রাতে বিএনপি নেতারা গিয়ে অফিসের তালা খুলে দেন। খালেদা জিয়া রোববার সকালে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন এবং সরকার নিযুক্ত আইনজীবীও তাঁর জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন না। এরপর খালেদা জিয়া জামিন নিয়ে অফিসে না গিয়ে ফিরোজায় ফিরে যান। ফিরোজা মানে ‘আকাশ-নীল’; সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার প্রতীক।
এর আগেরবার খালেদা জিয়া যখন আদালতে গিয়েছিলেন, তখন ঢাকা শহরে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিছিল। সেই কাণ্ডে সরকারদলীয় সাংসদ জখম হয়েছিলেন। ছাত্রদলের কর্মীদের বেধড়ক পিটিয়েছিলেন সরকারদলীয় কর্মীরা। আদালত প্রাঙ্গণে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।
কিন্তু এবারে কোনো অঘটন ঘটেনি। আইন নিজস্ব গতিতে চলেছে। সবাই আদালতের আদেশ মেনে চলবেন, এটাই স্বাভাবিক। মত ও পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। যাঁর যাঁর সীমা মেনে চলবেন। যে জনগণের জন্য তাঁরা রাজনীতি করেন, সেই জনগণকে জিম্মি করবেন না। আগুনে পুড়িয়ে মারবেন না। রাজনৈতিক বিরোধীকে গুম করবেন না। এটাই রাজনীতি। এটাই গণতন্ত্র।
খালেদা জিয়া ঘরে ফিরে গেছেন। এবার গণতন্ত্রও ‘ঘরে’ ফিরে আসুক।
এরই মধ্যে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষার হলে বসতে হয়। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এইচএসসি পরীক্ষা। এরই মধ্যে জীবনের ঝুঁকি দিয়ে শ্রমজীবী মানুষকে ঘরের বাইরে বেরোতে হয়। কাজ করতে হয়। কিন্তু তাঁরা সবাই ঘরে ফিরে আসতে পারেননি। অনেকেই পেট্রলবোমার ঘায়ে দগ্ধ হয়ে জীবন দিয়েছেন কিংবা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
কিন্তু পেট্রলবোমায় পুড়িয়ে মারা কিংবা বন্দুকযুদ্ধে নিহত মানুষের সারি আমাদের পাষাণ রাজনীতিকদের চৈতন্যোদয় ঘটাতে পারেনি। সরকার ও বিরোধী পক্ষের অবস্থানটি ছিল এ রকম: মানুষ মরুক, দেশ গোল্লায় যাক, অর্থনীতি ধ্বংস হোক, কিন্তু তাদের আমিত্ব বজায় রাখতেই হবে। এভাবে জানুয়ারি পেরিয়ে ফেব্রুয়ারি। ফ্রেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চ। কিন্তু নিজ নিজ অবস্থান থেকে কারও সরে আসার লক্ষণ নেই। মানুষ যারপরনাই হতাশ, বিচলিত ও বিক্ষুব্ধ। সবার প্রশ্ন: এভাবে কত দিন চলবে?
এরই মধ্যে তিন সিটি করপোরেশনের (ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম) নির্বানের তফসিল ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নড়ে-চড়ে বসে। কোথায় যেন একটি সমঝোতার ক্ষীণ আভাস পাওয়া যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিবেশ পেলে তারা নির্বাচনে যেতে রাজি আছে। সরকারের তরফেও কিছুটা নমনীয়তা লক্ষ করা যায়। মন্ত্রীরা মুখে যতই বলেন খালেদা জিয়াকে জেলখানার ভাত খেতে হবে, বাস্তবে আদালতের পরোয়ানা থানায় পৌঁছায় না। এরপর দ্রুত কতগুলো ঘটনা ঘটতে থাকে। বিএনপি নেতারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করেন।
এরপর গত শুক্রবার বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের সামনে থেকে পুলিশি প্রহরা তুলে নেওয়া হয়। গত শনিবার রাতে বিএনপি নেতারা গিয়ে অফিসের তালা খুলে দেন। খালেদা জিয়া রোববার সকালে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন এবং সরকার নিযুক্ত আইনজীবীও তাঁর জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন না। এরপর খালেদা জিয়া জামিন নিয়ে অফিসে না গিয়ে ফিরোজায় ফিরে যান। ফিরোজা মানে ‘আকাশ-নীল’; সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার প্রতীক।
এর আগেরবার খালেদা জিয়া যখন আদালতে গিয়েছিলেন, তখন ঢাকা শহরে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিছিল। সেই কাণ্ডে সরকারদলীয় সাংসদ জখম হয়েছিলেন। ছাত্রদলের কর্মীদের বেধড়ক পিটিয়েছিলেন সরকারদলীয় কর্মীরা। আদালত প্রাঙ্গণে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।
কিন্তু এবারে কোনো অঘটন ঘটেনি। আইন নিজস্ব গতিতে চলেছে। সবাই আদালতের আদেশ মেনে চলবেন, এটাই স্বাভাবিক। মত ও পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। যাঁর যাঁর সীমা মেনে চলবেন। যে জনগণের জন্য তাঁরা রাজনীতি করেন, সেই জনগণকে জিম্মি করবেন না। আগুনে পুড়িয়ে মারবেন না। রাজনৈতিক বিরোধীকে গুম করবেন না। এটাই রাজনীতি। এটাই গণতন্ত্র।
খালেদা জিয়া ঘরে ফিরে গেছেন। এবার গণতন্ত্রও ‘ঘরে’ ফিরে আসুক।
No comments