গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পুলিশের ফাইলবন্দি
একটি
মামলায় ২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মনির হোসেন। আইন,
বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার একটি উপজেলার নেতা তিনি। ঐ
মামলায় যুবলীগ নেতা ছাড়াও সাজা হয়েছে তার পরিবারের আরো ৪ সদস্যসহ মোট ৯
জনের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে বিদেশে অবস্থানকারী ২ জন ছাড়া বাকি ৭ আসামিই এলাকায়
রয়েছে। গত সপ্তাহে আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায়
পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না। এনিয়ে মামলার বাদীসহ
এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৮ই জুন
উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদে এক সালিশ সভায় হামলা চালান ঐ ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগ নেতা মনির হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন। সালিশে
কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা চেয়ারম্যান কার্যালয়ে হামলা চালায় ও লোকজনকে
মারধর করে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নান্নু মিয়া বাদী হয়ে
আখাউড়া থানায় দ্রুত বিচার আইনে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের
আহ্বায়ক মো. মনির হোসেনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের
১লা নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দ্রুত বিচার আদালত যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মনির
হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন মনির হোসেনের পিতা মো. আব্দুস ছামাদ, চাচা
আব্দুল ওহাব, ছোট ভাই বিপ্লব ও সোহেল এবং উপজেলার গঙ্গাসাগরের সুমন মিয়া,
ছোটন মিয়া, আলমগীর, শাহ আলম ছগির। মামলার বিচারকাজ চলতে থাকা অবস্থায় মনির
হোসেনের এক ভাই রাসেল মৃত্যুবরণ করায় আদালত তাকে দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান
করেন। বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি সুমন মিয়া ও শাহআলম ছগির প্রবাসে
আছেন। দ্রুত বিচার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আসামিপক্ষ আদালতে আপিল
করেন। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৯শে জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ
দ্বিতীয় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আদালতের দেয়া সাজা বহাল
রাখেন। এ বছরের ২৪শে মার্চ আদালত সাজাপ্রাপ্ত ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি
পরোয়ানা জারি করে। গত সপ্তাহে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আখাউড়া থানায়
পৌঁছে। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না। এব্যাপারে
মামলার বাদী ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নান্নু মিয়া বলেন,
আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। তিনি জানান, গত ২৪শে
মার্চ আদালত ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু
তারপরও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার কথা স্বীকার
করে বলেন, তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলাফেরা করে। তবে তাদেরকে
গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এব্যাপারে যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মনির হোসেন বলেন,
আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলাই আছে। এগুলো রাজনৈতিক মামলা বিবেচনায় আমার
আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি পেয়েছি। তবে
২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি
প্রত্যাহারের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছি।
No comments