হোটেলে নববধূকে রেখে পালালো বর by ওয়েছ খছরু
‘আমাকে
নিয়ে রাতের পর রাত হোটেলে কাটিয়েছে। স্ত্রীর মতো আমার সঙ্গে বসবাস করেছে।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর পুলিশি ঝামেলা এড়াতে বিয়েও করেছে। কিন্তু বিয়ের পর
আলমগীর আমার সঙ্গে টালবাহানা শুরু করেছে। গর্ভের বাচ্চা নষ্ট, বিয়ের কাবিন
তামাদি করাসহ নানা ফন্দি করে এখন গ্রাম্য মোড়লদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে
কাবিননামা নিয়ে নিতে চাইছে। সিলেটের কানাইঘাটের সাকি আক্তার সুমি গতকাল
মানবজমিন-এর কাছে এসব কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই।
নতুবা যে কোনো ঘটনার জন্য দায়ী থাকবে আলমগীর। জানা গেছে, সাকি আক্তার সুমি
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ভাল্লুকমারা গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের মেয়ে। তার বর
আলমগীর একই এলাকার সাউদগ্রামের মোহিন মিয়ার ছেলে। কাছাকাছি গ্রাম হওয়ায়
প্রায় এক বছর ধরে সুমির সঙ্গে আলমগীরের প্রেম চলছিল। তিন মাস আগের ঘটনা।
সুমিকে নিয়ে আলমগীর বেড়াতে আসে সিলেটে। এরপর নগরীর মেডিক্যাল রোডের একটি
হোটেলে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তিন রাত বসবাস করে আলমগীর। এরপর তারা চলে যায়
কানাইঘাটে। দেড় মাস আগেও সুমিকে নিয়ে মেডিক্যাল রোডের ওই হোটেলে রাত কাটায়
আলমগীর। এরপর সুমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সুমি প্রেমিক আলমগীরকে
বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। কিন্তু আলমগীর তাতে রাজি হচ্ছিল না। শেষে
১৯শে মার্চ আলমগীর কৌশলে সুমিকে গর্ভপাত করাতে সিলেটে ডাক্তারের কাছে নিয়ে
আসেন। ডাক্তারের কাছে আসা মাত্র সুমি গর্ভপাত করাতে রাজি হননি। পরে ওইদিন
আলমগীর সুমিকে নিয়ে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় আসেন। সেখানে সুমির সঙ্গে
বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। এ সময় আলমগীর পালাতে
চাইলে লোকজন তাকে আটক করে পুলিশের সোপর্দের প্রস্তুতি নেয়। এই ফাঁকে
আলমগীরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন এলাকার ইউপি সদস্য ও লক্ষ্মী প্রসাদ
গ্রামের মোস্তাক আহমদ। তিনি জিম্মাদার হয়ে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে দুইজনকে তার
জিম্মায় নেন এবং বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সিদ্ধান্তমতো ওইদিনই
এফিডেভিটের পর কাজীর মাধ্যমে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মোহরানা দিয়ে সুমিকে বিয়ে
করে আলমগীর। বিয়ের উকিল হন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ। কাবিনে
সাক্ষী হন কানাইঘাটের আটগ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে সাকিব ও বড়লেখার
সুজানগর গ্রামের আলমাছ আহমদ। বিয়ের পর নগরীর বন্দরবাজার এলাকার হোটেল
তায়েফে তারা রাতযাপন করে। বিয়ের পরদিন সকালে আলমগীর স্ত্রী সুমিকে হোটেল
কক্ষে রেখেই কানাইঘাট চলে যায়। ওদিকে, সুমি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে
থাকেন। কোনো খোঁজ না পেয়ে তার মা রিনা বেগমকে ফোন দেন। পরে রিনা বেগম এসে
মেয়েকে নিয়ে যান। এদিকে, বিয়ের খবর কানাইঘাটে পৌঁছামাত্র তোলপাড় শুরু হয়।
আর ঝামেলা এড়াতে আলমগীর পালিয়ে যান বিয়ানীবাজারের আত্মীয়ের বাড়িতে। ওদিকে,
স্বামীকে খুঁজ বেড়াচ্ছিলেন সুমি। এই ফাঁকে কাবিননামা তামাদি করার চেষ্টা
চালান আলমগীর। সুমির মা রিনা বেগম জানিয়েছেন, ‘আলমগীর ও পক্ষের লোকজন বার
বার কাবিন গায়েব করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তারা কাবিন তুলে নিতে কাজী অফিসে
দৌড়ঝাঁপ করেন। আর এলাকায় গিয়ে আলমগীর বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে। এতে
অন্তঃসত্ত্বা সুমিকে নিয়ে আমরা বেকায়দায় পড়ি।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বার
মোস্তাক আহমদও শেষ মুহূর্তে কাবিননামা তামাদি করার চেষ্টা চালান। তিনি
আমাকে নিয়ে কাজি অফিসে আসেন। কিন্তু কাজি তার হাতে কাবিন তুলে দেননি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকালে আমার হাতেই কাজী কাবিননামা তুলে দেন। আর কাবিন
পাওয়ার পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের হাতে তার ফটোকপি তুলে দেয়া
হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন সে স্বামীর ঘরে যাবে। মেয়ে
তার সন্তানের অধিকার পাবে- এটাই আমি চাই।’ এদিকে, গতকাল সাকি আক্তার সুমি
জানিয়েছে, ‘বিয়ের দিন রাতে আলমগীর আমার সঙ্গে হোটেলে রাত কাটিয়েছে। এরপর
সকালে উঠে সে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে সে এলাকায় আমার বিরুদ্ধে কুৎসা
রটাচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীর ঘরে যেতে চাই। আর কিছুই চাই না।’
সুমির মা রিনা বেগম অভিযোগ করেছেন, এখন আলমগীর ও তার লোকজন গ্রাম্য মোড়লদের
দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা টাকা দিয়ে গর্ভের সন্তান
নষ্ট করে কাবিন নিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। তারা জানান, সুমি এখন আলমগীরের
বৈধ স্ত্রী। আর সুমির গর্ভে আলমগীরের সন্তান রয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য
মোস্তাকের মোবাইল ফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। ১নং লক্ষ্মী প্রসাদ
পূর্ব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমি বিয়েতে
উপস্থিত ছিলাম। স্থানীয় মেম্বার মোস্তাক আহমদ আমাকে নিয়ে বিয়েতে যান। তিনি
বলেন, বিয়ের পর মেয়েটিকে ঘরে তুলছে না ছেলেটি। আর এ নিয়ে এলাকায় বৈঠকের
প্রস্তুতি চলছে।
No comments