তিন আঁচড়েই তার ছবি বিক্রি ১০ লাখ রুপিতে, ছবি বিক্রির অঙ্ক নিয়ে বিব্রত মমতা
পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্ব করে বলতে পারেন, তিনটে আঁচড় দেব,
১০ লাখ রুপিতে বিক্রি হবে (ছবি)। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনী প্রচারে তার ছবি
বিক্রি নিয়ে ঘন ঘন বলতে হচ্ছে। কখনও ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে, কখনো আত্মরক্ষার
তাগিদে। তিনি নিজেই বলেছেন, তার বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। প্রায় ৫৪ টি বই
লিখে তিনি বছরে রয়্যালটি পান বেশ কয়েক লক্ষ রুপি। আর ছবি এঁকে তিনি কত পান
তা নিয়েই শুরু হয়েছে যত গোলমাল। অনেকদিন ধরেই তার ছবি বিক্রি নিয়ে নানা
অঙ্ক শোনা গিয়েছে। সারদা কর্তা থেকে শিল্পপতিদের মোটা অঙ্কে মমতার ছবি কেনা
নিয়ে সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে বারে বারে। কিন্তু এতদিন মমতা সে সবে পাত্তা না
দিলেও এবার তিনি মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন তার ছবি বিক্রির নানা অঙ্ক
প্রচারিত হওয়ার ফলে। একসময় শোনা গিয়েছিল দু কোটি রুপিতেও নাকি তার ছবি
বিক্রি হযেছে। তবে এটা যে অপপ্রচার সেটা জানিয়ে কলকাতায় সম্প্রতি এক জনসভায়
মমতা নিজেই বলেন যে, তার ছবি বিক্রি হযেছে ১০ লক্ষ রুপিতে। এই ভাবেই আয়
হয়েছে ২ কোটি রুপি। তবে মমতা নিজেকে কখনোই পেশাদার শিল্পী বলে মনে করেন না।
তিনি শিল্প র্চ্চার কোন পাঠও নেন নি। তবে শিল্প শুভাপ্রসন্ন তাকে ছবি
আঁকার কিছু টিপস দিয়েছেন। আর তিনিই সার্টিফিকেট দিয়েছেন যে মমতা একজন বড়
দরের শিল্পী। তার পর থেকে মমতা কত যে ছবি ্ঁকেছেন তার সঠিক হিসেবে মমতা
নিজেও জানেন না। অনেককেই বিলিয়েও দিয়েছে তার আঁকা ছবি। তবে তার ছবি বিক্রি
থেকে সাড়ে ছয় কোটি রুপি আয়ের কথা দলের আয়ব্যায়ের হিসেবে দেখানোতেই গোল
বেঁধেছে। বিক্রির অঙ্কের ধাঁধায় পড়ে মমতা কখনো বলছেন দু কোটি রুপি আয় হয়েছে
তার ছবি বিক্রি থেকে। আর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মত পাল্টে বলেছেন, তার ৩০০ ছবি
বিক্রি হয়েছে নয় কোটি রুপিতে। ৬০০ ছবি বিলিয়েও দিযেছেন বলে জনসভায়
জানিয়েছেন। তবে ছবি বিক্রির তিন রকম হিসেব নিয়েই রাজণীতি গরম হয়ে উঠেছে।
বিরোধীরা আক্রমন শানাচ্ছেন তার সততা নিয়ে। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গেও সভাপতি তো
বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাবার কথাও সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন। তৃণমূল
নেত্রীর আঁকা ছবির দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলির
নেতারা। পুরভোটের মুখে সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন মমতা বলেছেন, ওরা বাজার
জানে না। এক একটা ছবি ১৫ কোটি রুপিতে বিক্রি হতে পারে! তার পরেই বিরোধী এবং
সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আমার ছবি হাজার, কোটি রুপিতে বিক্রি করব!
তোমার কী? তোমার পিতা, পিতামহ, তোমার বউয়ের কী? তবে বিরোধীদের বক্তব্য,
নিজের আঁকা ছবি বিক্রির টাকা নিয়ে আজ এক রকম, কাল এক রকম কথা বলে
মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে চাপে আছেন। বিশেষ করে
পুরভোটের আগে নাগরিক সমাজের সামনে এই প্রসঙ্গটি দলের সমস্যা বাড়াতে পারে।
সেই বিড়ম্বনা এড়াতেই তৃণমূল নেত্রীকে মুখ খুলতে হচ্ছে। সিপিআইএম নেতা সুজন
চক্রবর্তী অবশ্য এক আঁচড় দিয়ে তোলাবাজি হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর কংগ্রেস
নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রি থেকে আয়ের অঙ্ক
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে! শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে, চিট ফান্ড থেকে তৃণমূল কয়েক
হাজার কোটি টাকা পেয়েছে এবং তার পুরোটাই মুখ্যমন্ত্রী নিজের ছবি বিক্রির আয়
বলে চালাচ্ছেন। বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, তৃণমূল নেত্রীর ছবির
দামের ওঠা-পড়া ভারতীয় শেয়ার বাজারের হর্ষদ মেটার যুগকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে।
No comments