বদলে যাচ্ছে বর্ষবরণ উৎসব? by মাহবুবুল হক ভূঁইয়া
বাবার কোলে বাঁশি নিয়ে নববর্ষের আনন্দে মেতেছে শিশুটি। ছবি: জাহিদুল করিম |
অভিনব এমন সাজ দৃষ্টি কেড়েছে অনেকের |
বাঙালির
বর্ষবরণ উৎসব কি ধরন বদলাচ্ছে? বৈশাখের আচার-অনুষ্ঠান, হালখাতা, বৈশাখী
মেলা, খাবার বাঙালির বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। সময়ের বিবর্তনে এসব
অনুষঙ্গে পরিবর্তন খুব কম নয়। আবার নববর্ষ উদ্যাপনে অনেক ঐতিহ্য যেমন
হারিয়ে যাচ্ছে, যোগও হয়েছে অনেক কিছু।
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আচার-অনুষ্ঠান, খাবার আর পোশাক পরিচ্ছদে। এ পরিবর্তন শুধুমাত্র শহরাঞ্চলেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা সাফিয়া রহমানের শৈশব কেটেছে গ্রামে। ‘৭০ এর দশকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সন্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে এ সময়টাকেও কাছে থেকেই দেখেছেন।
গ্রাম-শহর মিলিয়ে তিন প্রজন্মের বর্ষবরণ দেখে তাঁর উপলব্ধি, বৈশাখ উদ্যাপনে পরিবর্তন এসেছে, অনেক কিছু যোগও হয়েছে, হারিয়েছেও অনেক কিছু। তবে সবচেয়ে বড় কথা, এ উদ্যাপনে কোথায় যেন নাড়ির টানটা নেই।
খাবার আর পোশাকের বৈশাখ
নববর্ষ উদ্যাপনে খাবার ও পোশাক অন্যতম বিষয়। এক-দুই দশক আগে পর্যন্তও সন্দেশ, গুড়, পিঠা-পুলি, খই, দই ইত্যাদি নববর্ষের প্রধান খাবার ছিল। তবে এ প্রজন্মের কাছে পান্তা-ইলিশটাই যেন বৈশাখের প্রধান খাবার হয়ে উঠেছে। তবে পান্তা-ইলিশের জন্য কাড়াকাড়িটা শহরাঞ্চলেই বেশি চোখে পড়ে।
বর্ষবরণের পোশাক হিসেবে ধুতি পাঞ্জাবির কথা বলেন অনেকে। তবে এখন বৈশাখের পোশাক হিসেবে সাদা-লাল রঙের পাঞ্জাবি, শাড়ি এবং সালোয়ার কামিজের ব্যবহারই বেশি। পোশাকের বাণিজ্যিক প্রসারও চোখে পড়ার মতো। বৈশাখের পোশাকের ব্যবসাই এখন শত কোটি টাকার।
কলেবর কমেছে হালখাতা উৎসবের
আগে বছরের প্রথম দিনে হিসেবের নতুন খাতা খোলার প্রথাটা অনেকটা উৎসবের মতোই পালিত হতো। বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বল শহরগুলোতে। হালখাতার আয়োজনে ব্যবসায়ীরা বেশ কিছুদিন আগেই গ্রাহক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের চিঠি দিয়ে দোকানে আমন্ত্রণ জানাতেন। এর পেছনে পুরোনো বছরের বকেয়া আদায়ের ব্যাপারটিও কাজ করত। তবে এর চেয়েও বড় যে বিষয়টি কাজ করে, সেটি হলো সামাজিকতা ও সৌজন্য বিনিময়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হালখাতার আয়োজনের মাত্রা কমেছে। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজার, ইসলামপুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন শুধুমাত্র পুরোনো ঢাকার কিছু প্রতিষ্ঠানেই হালখাতার আয়োজন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস নামে মৌলভীবাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবা-জ্যাঠাদের হালখাতার আয়োজন করতে দেখে এসেছি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো আমাদের অনেকেই হালখাতার আয়োজন করে। গ্রাহকেরা সেভাবে আসেন না, টাকাপয়সাও তেমন একটা আদায় হয় না। কিন্তু এটা করে তাঁর শান্তি লাগে বলে জানান তিনি।
বৈশাখের উৎসব
বৈশাখের খাবার, পোশাক, আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বৈশাখের উৎসবেও। বৈশাখী মেলা, মেলায় কেনাকাটা বৈশাখের অন্যতম উৎসব ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো করে মেলা হয় না।
রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম রমনার বটমূলে ছায়ানটের গান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকলার আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে বর্ষবরণের উৎসব এখন আর এ দুটি জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি স্থানে পয়লা বৈশাখের দিন ঢাউস মঞ্চে কনসার্টের আয়োজন করা হয় এখন। দিনব্যাপী এ আয়োজনে ব্যান্ড সংগীতই বেশি হয়। তবে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ নয়; এমন দাবি করে অনেকেই এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তবে তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই একে সাদরে গ্রহণ করেছে।
বৈশাখ উদ্যাপনের বদলে যাওয়া নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলা মাসের সঙ্গে মিলিয়ে কিংবা কৃষককেন্দ্রিক বৈশাখের যে উদ্যাপন ছিল, সেটি এখন আর নেই। বর্ষবরণের উৎসব স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়েছে, সেখানে বিচ্ছিন্নতা চলে এসেছে। এ ছাড়া বৈশাখী মেলা বর্ষবরণের অন্যতম উৎসব ছিল। কিন্তু সেই মেলা এখন আর হয় না।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখকে ঘিরে কেনাকাটার যে বিষয়টি ছিল, সেটি মানুষ আনন্দের জন্য করত। কিন্তু এখন সেখানে কৃত্রিমতা ঢুকে পড়েছে। পুঁজিবাদ এর জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন।
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আচার-অনুষ্ঠান, খাবার আর পোশাক পরিচ্ছদে। এ পরিবর্তন শুধুমাত্র শহরাঞ্চলেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা সাফিয়া রহমানের শৈশব কেটেছে গ্রামে। ‘৭০ এর দশকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সন্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে এ সময়টাকেও কাছে থেকেই দেখেছেন।
গ্রাম-শহর মিলিয়ে তিন প্রজন্মের বর্ষবরণ দেখে তাঁর উপলব্ধি, বৈশাখ উদ্যাপনে পরিবর্তন এসেছে, অনেক কিছু যোগও হয়েছে, হারিয়েছেও অনেক কিছু। তবে সবচেয়ে বড় কথা, এ উদ্যাপনে কোথায় যেন নাড়ির টানটা নেই।
খাবার আর পোশাকের বৈশাখ
নববর্ষ উদ্যাপনে খাবার ও পোশাক অন্যতম বিষয়। এক-দুই দশক আগে পর্যন্তও সন্দেশ, গুড়, পিঠা-পুলি, খই, দই ইত্যাদি নববর্ষের প্রধান খাবার ছিল। তবে এ প্রজন্মের কাছে পান্তা-ইলিশটাই যেন বৈশাখের প্রধান খাবার হয়ে উঠেছে। তবে পান্তা-ইলিশের জন্য কাড়াকাড়িটা শহরাঞ্চলেই বেশি চোখে পড়ে।
বর্ষবরণের পোশাক হিসেবে ধুতি পাঞ্জাবির কথা বলেন অনেকে। তবে এখন বৈশাখের পোশাক হিসেবে সাদা-লাল রঙের পাঞ্জাবি, শাড়ি এবং সালোয়ার কামিজের ব্যবহারই বেশি। পোশাকের বাণিজ্যিক প্রসারও চোখে পড়ার মতো। বৈশাখের পোশাকের ব্যবসাই এখন শত কোটি টাকার।
কলেবর কমেছে হালখাতা উৎসবের
আগে বছরের প্রথম দিনে হিসেবের নতুন খাতা খোলার প্রথাটা অনেকটা উৎসবের মতোই পালিত হতো। বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বল শহরগুলোতে। হালখাতার আয়োজনে ব্যবসায়ীরা বেশ কিছুদিন আগেই গ্রাহক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের চিঠি দিয়ে দোকানে আমন্ত্রণ জানাতেন। এর পেছনে পুরোনো বছরের বকেয়া আদায়ের ব্যাপারটিও কাজ করত। তবে এর চেয়েও বড় যে বিষয়টি কাজ করে, সেটি হলো সামাজিকতা ও সৌজন্য বিনিময়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হালখাতার আয়োজনের মাত্রা কমেছে। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজার, ইসলামপুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন শুধুমাত্র পুরোনো ঢাকার কিছু প্রতিষ্ঠানেই হালখাতার আয়োজন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস নামে মৌলভীবাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবা-জ্যাঠাদের হালখাতার আয়োজন করতে দেখে এসেছি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো আমাদের অনেকেই হালখাতার আয়োজন করে। গ্রাহকেরা সেভাবে আসেন না, টাকাপয়সাও তেমন একটা আদায় হয় না। কিন্তু এটা করে তাঁর শান্তি লাগে বলে জানান তিনি।
বৈশাখের উৎসব
বৈশাখের খাবার, পোশাক, আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বৈশাখের উৎসবেও। বৈশাখী মেলা, মেলায় কেনাকাটা বৈশাখের অন্যতম উৎসব ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো করে মেলা হয় না।
রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম রমনার বটমূলে ছায়ানটের গান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকলার আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে বর্ষবরণের উৎসব এখন আর এ দুটি জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি স্থানে পয়লা বৈশাখের দিন ঢাউস মঞ্চে কনসার্টের আয়োজন করা হয় এখন। দিনব্যাপী এ আয়োজনে ব্যান্ড সংগীতই বেশি হয়। তবে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ নয়; এমন দাবি করে অনেকেই এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তবে তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই একে সাদরে গ্রহণ করেছে।
বৈশাখ উদ্যাপনের বদলে যাওয়া নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলা মাসের সঙ্গে মিলিয়ে কিংবা কৃষককেন্দ্রিক বৈশাখের যে উদ্যাপন ছিল, সেটি এখন আর নেই। বর্ষবরণের উৎসব স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়েছে, সেখানে বিচ্ছিন্নতা চলে এসেছে। এ ছাড়া বৈশাখী মেলা বর্ষবরণের অন্যতম উৎসব ছিল। কিন্তু সেই মেলা এখন আর হয় না।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখকে ঘিরে কেনাকাটার যে বিষয়টি ছিল, সেটি মানুষ আনন্দের জন্য করত। কিন্তু এখন সেখানে কৃত্রিমতা ঢুকে পড়েছে। পুঁজিবাদ এর জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন।
No comments