আয়কর না ব্যয়কর by এম ফাওজুল কবির খান
সম্প্রতি
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের হলফনামায় বর্ণিত আয় ও
সম্পদের দৈন্যের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে (প্রথম আলো, ১ এপ্রিল)।
প্রার্থীদের দৃশ্যমান বিলাসী জীবন এবং তাঁদের আয় ও সম্পদের অসংগতি আমাদের
ভাবিয়ে তুলেছে। এসব ‘দরিদ্র’ প্রার্থীই আবার আসন্ন নির্বাচনে অজ্ঞাত উৎস
থেকে প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকা খরচ করবেন এবং নির্বাচনের পর তাঁদের বিনিয়োগ
মুনাফাসহ উঠিয়ে আনতে তৎপর হবেন। এসব বিষয় আমাদের প্রত্যক্ষ কর-ব্যবস্থা
সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।
আয়কর সম্পর্কে নাগরিকমাত্রই জানেন। কিন্তু ব্যয়কর (expenditure tax) কী? এটা আয়করের অনুরূপ, কেবল করের ভিত্তি হচ্ছে ব্যয়, আয় নয়। আয়করব্যবস্থার ন্যায় এতে অব্যাহতি ও বিয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে। ব্যয়ের ভিত্তিতে করের হার নির্ধারিত হবে। যাঁরা বেশি ব্যয় করবেন, তাঁরা বেশি হারে কর প্রদান করবেন। উৎসে ব্যয়কর আদায়েরও ব্যবস্থা থাকবে। মূল পার্থক্যটা হচ্ছে, কর নির্ধারণের ভিত্তি হবে আয়ের পরিবর্তে ব্যয়।
অনেকে ভেবে থাকেন যে ব্যয়করের ক্ষেত্রে যাবতীয় খরচের তালিকা রাখতে হবে। ফলে আয়করব্যবস্থা থেকে এটা আরও জটিল হবে। এটা ঠিক নয়। ব্যয়করের হিসাবের ক্ষেত্রে কর বৎসরে ব্যয়ের জন্য প্রাপ্ত তাবৎ অর্থ (নিয়মিত এবং অনিয়মিত আয় ও সম্পদ ইত্যাদি) থেকে সঞ্চয় বাদ দিয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বা ব্যয়করের ভিত্তি নির্ধারণ করা হবে।
প্রত্যক্ষ করের ভিত্তি আয় নাকি ব্যয় হবে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক শতাব্দীর বেশি পুরোনো। জন স্টুয়ার্ট মিল করের ভিত্তি থেকে সঞ্চয়কে বাদ দিতে বলেছেন। যেহেতু আয় ও সঞ্চয়ের পার্থক্যই ব্যয়, প্রকারান্তরে তিনি ব্যয়করের কথা বলেছেন। তিনি একে আদর্শ করব্যবস্থা বলেছেন। কেননা, এ ধরনের ব্যয়করব্যবস্থায় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।
বিগত চল্লিশের দশকে, আরভিং ফিশার প্রচলিত আয়করব্যবস্থার বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন যে এটা সঞ্চয়ের ওপর দুবার কর আরোপ করে—একবার আয়ের অংশ হিসেবে, আরেকবার সঞ্চয় থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর আরোপ করে। ফলে তাঁর মতে, আয়কর কেবল অন্যায্যই নয়, এটা সঞ্চয় ও উদ্যোগের বিপরীতে ভোগ ও অবসর উৎসাহিত করে থাকে।
নিকোলাস কেল্ডর ১৯৫৫ সালে যুক্তি দেখান যে ব্যয়কর প্রদান ক্ষমতার উন্নততর নির্দেশক। কেননা, ‘ব্যয়ক্ষমতা’ সম্পদ, নিয়মিত ও অনিয়মিত আয়সহ সার্বিক আর্থিক সংগতির ওপর নির্ভরশীল। যেমন কেউ নিজ বাড়িতে থাকলে তিনি ভাড়ার সমপরিমাণ ব্যয় করেছেন বলে ধরা হবে। এ ছাড়া, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের প্রয়োজনের বিভিন্নতার কারণেও ‘ব্যয়ক্ষমতা’ ভিন্ন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কেল্ডর আয়করকে ‘কর প্রদান ক্ষমতার’ ত্রুটিপূর্ণ নির্দেশক বলে বর্ণনা করেছেন।
ব্যয়করের বিপক্ষেও যুক্তি আছে। যেমন, সঞ্চয়কে করের আওতামুক্ত রাখলে ধনীরাই লাভবান হবেন। কেননা, তাঁদের সঞ্চয় তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে ধনবৈষম্য আরও বাড়বে। ব্যয়করের বিষয়ে আরেকটি আপত্তি হলো, এটা কৃপণকে উৎসাহিত এবং ব্যয়কে নিরুৎসাহিত করবে। পাল্টা যুক্তি হলো, ব্যয়করের ক্ষেত্রেও আয়করের ন্যায় প্রয়োজন অনুযায়ী আনুক্রমিক করারোপের (progressive taxation) ব্যবস্থা করা যায়, যাতে করে ধনীরা অধিকতর কর প্রদান করবেন। ব্যয়করের পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো, সমাজ থেকে ব্যক্তি যা গ্রহণ করে, তা-ই হবে করের ভিত্তি, অর্থাৎ ব্যয়। যা সমাজের জন্য রেখে দেয়, অর্থাৎ আয় বা সঞ্চয় নয়। কেননা, যা ব্যয় করা হয়, তা সমাজের অন্য কারও ব্যবহারের জন্য আর অবশিষ্ট থাকে না।
প্রত্যক্ষ করব্যবস্থা হিসেবে কোন ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ন্যায়সংগত, এ ধরনের নৈতিক বিষয় ছাড়াও ব্যয়করের সপক্ষে ও বিপক্ষে বিবিধ অর্থনৈতিক বিবেচনা রয়েছে। ব্যয়কর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক—এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদেরা যেমন একমত, তেমনি ব্যয়কর যে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আয়করের তুলনায় কম কার্যকর, এটাও তাঁরা স্বীকার করেন। কর্মস্পৃহা, বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি গ্রহণের ন্যায় অর্থনৈতিক বিষয়ে আয়কর না ব্যয়কর কোনটি বেশি কার্যকর, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রশ্ন থেকে যায় যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর আদায়ের জন্য অথবা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক ভারসাম্য অর্জনের জন্য আয়কর ও ব্যয়কর কোনটির হার বেশি হবে।
যদিও অর্থনীতিবিদেরা ব্যয়করের বিবিধ সুবিধা এবং আয়করের বিকল্প হিসেবে এর তাত্ত্বিক মর্যাদা স্বীকার করেন, তাঁরা এর প্রশাসনিক বাস্তবায়ন এবং এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে সন্দিহান। ভারত ও বর্তমান শ্রীলঙ্কায় ব্যয়কর প্রবর্তন করা হয়েছিল। এবং এটা কেবল স্বল্পসংখ্যক ধনী ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। ১৯৯৬ সালে দুই দেশেই এটা তুলে নেওয়া হয়। আমাদের আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৯(৩) ধারায় অব্যাখ্যাত খরচকে আয় হিসেবে গ্রহণ করে এর ওপর কর ধার্যের বিধান আছে, যা ব্যয়করের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
সার্বিকভাবে, ব্যয়করের উপকারিতা কিংবা এর সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলেও অদূর ভবিষ্যতে আয়করব্যবস্থা বাতিল করে এর পরিবর্তে ব্যয়করব্যবস্থা প্রবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে বিদ্যমান আয়করব্যবস্থায় ব্যয়কর উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে পারে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যায় ব্যক্তিবর্গ, যাঁদের ব্যয় তাঁদের প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আমাদের করব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রত্যক্ষ করব্যবস্থার অন্যায্যতা নির্বাচনী হলফনামায় প্রদত্ত আয় ও সম্পদের বিবরণ থেকেই স্পষ্ট। যাঁরা করব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন বা এর অপব্যবহার করবেন, তাঁরাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতি সুবিচার করবেন—এটা আশা করা যায় না। আমাদের প্রত্যক্ষ করব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মার্কিন উপনিবেশগুলোর একটি স্লোগান ছিল, ‘প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কোনো করারোপ নয়’। কথাটাকে খানিকটা ঘুরিয়ে বলা যায়, ‘যথাযথ কর প্রদান ব্যতীত কোনো প্রতিনিধিত্ব নয়’। যাঁরা জনপ্রতিনিধি হবেন, তাঁদের যথাযথ কর প্রদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
এম ফাওজুল কবির খান: সাবেক সচিব ও অর্থনীতির অধ্যাপক
আয়কর সম্পর্কে নাগরিকমাত্রই জানেন। কিন্তু ব্যয়কর (expenditure tax) কী? এটা আয়করের অনুরূপ, কেবল করের ভিত্তি হচ্ছে ব্যয়, আয় নয়। আয়করব্যবস্থার ন্যায় এতে অব্যাহতি ও বিয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে। ব্যয়ের ভিত্তিতে করের হার নির্ধারিত হবে। যাঁরা বেশি ব্যয় করবেন, তাঁরা বেশি হারে কর প্রদান করবেন। উৎসে ব্যয়কর আদায়েরও ব্যবস্থা থাকবে। মূল পার্থক্যটা হচ্ছে, কর নির্ধারণের ভিত্তি হবে আয়ের পরিবর্তে ব্যয়।
অনেকে ভেবে থাকেন যে ব্যয়করের ক্ষেত্রে যাবতীয় খরচের তালিকা রাখতে হবে। ফলে আয়করব্যবস্থা থেকে এটা আরও জটিল হবে। এটা ঠিক নয়। ব্যয়করের হিসাবের ক্ষেত্রে কর বৎসরে ব্যয়ের জন্য প্রাপ্ত তাবৎ অর্থ (নিয়মিত এবং অনিয়মিত আয় ও সম্পদ ইত্যাদি) থেকে সঞ্চয় বাদ দিয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বা ব্যয়করের ভিত্তি নির্ধারণ করা হবে।
প্রত্যক্ষ করের ভিত্তি আয় নাকি ব্যয় হবে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক শতাব্দীর বেশি পুরোনো। জন স্টুয়ার্ট মিল করের ভিত্তি থেকে সঞ্চয়কে বাদ দিতে বলেছেন। যেহেতু আয় ও সঞ্চয়ের পার্থক্যই ব্যয়, প্রকারান্তরে তিনি ব্যয়করের কথা বলেছেন। তিনি একে আদর্শ করব্যবস্থা বলেছেন। কেননা, এ ধরনের ব্যয়করব্যবস্থায় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।
বিগত চল্লিশের দশকে, আরভিং ফিশার প্রচলিত আয়করব্যবস্থার বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন যে এটা সঞ্চয়ের ওপর দুবার কর আরোপ করে—একবার আয়ের অংশ হিসেবে, আরেকবার সঞ্চয় থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর আরোপ করে। ফলে তাঁর মতে, আয়কর কেবল অন্যায্যই নয়, এটা সঞ্চয় ও উদ্যোগের বিপরীতে ভোগ ও অবসর উৎসাহিত করে থাকে।
নিকোলাস কেল্ডর ১৯৫৫ সালে যুক্তি দেখান যে ব্যয়কর প্রদান ক্ষমতার উন্নততর নির্দেশক। কেননা, ‘ব্যয়ক্ষমতা’ সম্পদ, নিয়মিত ও অনিয়মিত আয়সহ সার্বিক আর্থিক সংগতির ওপর নির্ভরশীল। যেমন কেউ নিজ বাড়িতে থাকলে তিনি ভাড়ার সমপরিমাণ ব্যয় করেছেন বলে ধরা হবে। এ ছাড়া, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের প্রয়োজনের বিভিন্নতার কারণেও ‘ব্যয়ক্ষমতা’ ভিন্ন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কেল্ডর আয়করকে ‘কর প্রদান ক্ষমতার’ ত্রুটিপূর্ণ নির্দেশক বলে বর্ণনা করেছেন।
ব্যয়করের বিপক্ষেও যুক্তি আছে। যেমন, সঞ্চয়কে করের আওতামুক্ত রাখলে ধনীরাই লাভবান হবেন। কেননা, তাঁদের সঞ্চয় তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে ধনবৈষম্য আরও বাড়বে। ব্যয়করের বিষয়ে আরেকটি আপত্তি হলো, এটা কৃপণকে উৎসাহিত এবং ব্যয়কে নিরুৎসাহিত করবে। পাল্টা যুক্তি হলো, ব্যয়করের ক্ষেত্রেও আয়করের ন্যায় প্রয়োজন অনুযায়ী আনুক্রমিক করারোপের (progressive taxation) ব্যবস্থা করা যায়, যাতে করে ধনীরা অধিকতর কর প্রদান করবেন। ব্যয়করের পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো, সমাজ থেকে ব্যক্তি যা গ্রহণ করে, তা-ই হবে করের ভিত্তি, অর্থাৎ ব্যয়। যা সমাজের জন্য রেখে দেয়, অর্থাৎ আয় বা সঞ্চয় নয়। কেননা, যা ব্যয় করা হয়, তা সমাজের অন্য কারও ব্যবহারের জন্য আর অবশিষ্ট থাকে না।
প্রত্যক্ষ করব্যবস্থা হিসেবে কোন ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ন্যায়সংগত, এ ধরনের নৈতিক বিষয় ছাড়াও ব্যয়করের সপক্ষে ও বিপক্ষে বিবিধ অর্থনৈতিক বিবেচনা রয়েছে। ব্যয়কর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক—এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদেরা যেমন একমত, তেমনি ব্যয়কর যে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আয়করের তুলনায় কম কার্যকর, এটাও তাঁরা স্বীকার করেন। কর্মস্পৃহা, বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি গ্রহণের ন্যায় অর্থনৈতিক বিষয়ে আয়কর না ব্যয়কর কোনটি বেশি কার্যকর, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রশ্ন থেকে যায় যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর আদায়ের জন্য অথবা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক ভারসাম্য অর্জনের জন্য আয়কর ও ব্যয়কর কোনটির হার বেশি হবে।
যদিও অর্থনীতিবিদেরা ব্যয়করের বিবিধ সুবিধা এবং আয়করের বিকল্প হিসেবে এর তাত্ত্বিক মর্যাদা স্বীকার করেন, তাঁরা এর প্রশাসনিক বাস্তবায়ন এবং এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে সন্দিহান। ভারত ও বর্তমান শ্রীলঙ্কায় ব্যয়কর প্রবর্তন করা হয়েছিল। এবং এটা কেবল স্বল্পসংখ্যক ধনী ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। ১৯৯৬ সালে দুই দেশেই এটা তুলে নেওয়া হয়। আমাদের আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৯(৩) ধারায় অব্যাখ্যাত খরচকে আয় হিসেবে গ্রহণ করে এর ওপর কর ধার্যের বিধান আছে, যা ব্যয়করের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
সার্বিকভাবে, ব্যয়করের উপকারিতা কিংবা এর সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলেও অদূর ভবিষ্যতে আয়করব্যবস্থা বাতিল করে এর পরিবর্তে ব্যয়করব্যবস্থা প্রবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে বিদ্যমান আয়করব্যবস্থায় ব্যয়কর উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে পারে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যায় ব্যক্তিবর্গ, যাঁদের ব্যয় তাঁদের প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আমাদের করব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রত্যক্ষ করব্যবস্থার অন্যায্যতা নির্বাচনী হলফনামায় প্রদত্ত আয় ও সম্পদের বিবরণ থেকেই স্পষ্ট। যাঁরা করব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন বা এর অপব্যবহার করবেন, তাঁরাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতি সুবিচার করবেন—এটা আশা করা যায় না। আমাদের প্রত্যক্ষ করব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মার্কিন উপনিবেশগুলোর একটি স্লোগান ছিল, ‘প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কোনো করারোপ নয়’। কথাটাকে খানিকটা ঘুরিয়ে বলা যায়, ‘যথাযথ কর প্রদান ব্যতীত কোনো প্রতিনিধিত্ব নয়’। যাঁরা জনপ্রতিনিধি হবেন, তাঁদের যথাযথ কর প্রদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
এম ফাওজুল কবির খান: সাবেক সচিব ও অর্থনীতির অধ্যাপক
No comments