পুলিশের অবহেলা খুঁজে পায়নি কমিটি! by নুরুজ্জামান লাবু
অমর একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাতে খুন হন অভিজিৎ রায়। আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তোলা ছবি। |
ব্লগার
ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সময় তিন দিকের সড়কেই পুলিশের উপস্থিতি
ছিল। যে স্থানে অভিজিতের ওপর হামলা হয়েছে তার দক্ষিণ দিকে টিএসসিসংলগ্ন
একুশে বইমেলার গেটে ছিল পুলিশি নিরাপত্তা। পাশের মিলন চত্বরেও ছিল পুলিশের
অপর একটি টিম। উত্তরে শাহবাগ থানার দিকেও ছিল আরেকটি চেকপোস্ট। এর মাঝখানেই
অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়
দুর্বৃত্তরা। চারপাশে পুলিশ থাকার পরও খুনিরা পালিয়ে যাওয়ায় সমালোচনা শুরু
হয় পুলিশের বিরুদ্ধে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবেহলা খতিয়ে দেখতে তিন
সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। তিন দিন আগে
সেই কমিটি ডিএমপি কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে
পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে
দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের তদারকি ও সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে প্রতিবেদনে
উল্লেখ করা হয়। এদিকে এই প্রতিবেদনের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন
অভিজিতের পিতা ড. অজয় রায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে সরাসরি কোনও পুলিশ সদস্যের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সুপারভিশন ও কো-অর্ডিনেশনের অভাব ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেই জায়গায় অভিজিতের ওপর হামলা হয়েছিল, সেই স্থানটি কিছুটা অন্ধকার ছিল। আর পুলিশ যেখানে অবস্থান করছিল সেখান থেকে ঘটনাস্থল কিছুটা বাঁকা পথ। এছাড়া রাস্তায় গাড়ি ও প্রচুর লোকজনেরও উপস্থিতি ছিল। এ কারণে পুলিশ সদস্যদের ঘটনাটি সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ছিল না।’
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে মিলন চত্বরের বিপরীতে নির্মম হামলার শিকার হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যান অভিজিৎ। গুরুতর আহত রাফিদাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যালে ও পরে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিন দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয় তাকে। ঘটনার পরপরই চারপাশে পুলিশি বেষ্টনী থাকা সত্ত্বেও অভিজিৎ ও বন্যাকে কুপিয়ে দুর্বৃত্তদের নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিছুটা সুস্থ হয়ে রাফিদা আহমেদ বন্যাও অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি আর অভিজিৎ যখন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, স্থানীয় পুলিশ খুব কাছেই নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়েছিল।’ গত ১৪ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। পুলিশের ‘নাকের ডগায়’ এ হত্যাকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে ‘দায়িত্বে গাফিলতির’ জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
এর ঠিক দুদিন পর রাজধানীর ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে পুলিশের আরও কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের সেদিনই পদত্যাগ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে এফবিআইকে ডেকে আনার সমালোচনা করে খায়রুল হক বলেন, ‘১৫ গজ দূরে বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কি উচিত ছিল না, ঘটনাস্থলে দ্রুত যাওয়া। তাদের কি উচিত ছিল না, পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। তাদের কি উচিত ছিল না, বন্যা আহমেদকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।’ তিনি বলেন, তাহলে দেখেন, কতগুলো ব্যর্থতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বিকারভাবে মীর মদনের মতো, মীর জাফরের মতো দাঁড়িয়ে (পুলিশ) আছে। একজন সাংবাদিক জীবন তাড়াতাড়ি একটি স্কুটারে নিয়ে গেছেন। পুলিশের গাড়িগুলো কি করছিল? এর জন্য কোন আইনের প্রয়োজন নেই। এটা একটা নর্ম, সংস্কৃতি। মানুষের প্রতি মানুষের ব্যবহার। তিনি বলেন, মানুষ মারা যায়, মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করে তারপরও আমাদের আইন চুপ করে দাঁড়িয়ে, নিঃস্তব্ধ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মীর রেজাউল করিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যেও একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ডিএমপি হেডকোয়ার্টারের উপকমিশনার (প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) আক্তারুজ্জামান ও উপকমিশনার (অর্থ) মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া। গত দীর্ঘ প্রায় এক মাস তদন্ত শেষে গত সপ্তাহের শেষ দিনে কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। কমিটির প্রধান মীর রেজাউল করিম বলেন, আমরা তদন্তের পর প্রতিবেদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনে কি রয়েছে তা কর্তৃপক্ষ বলার অধিকার রাখে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে কমিটিসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটির সদস্যরা ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানা পুলিশ, নীলক্ষেত ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য ও রমনা থানার একটি টহল টিমসহ অন্তত ৩০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্যদের ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া কয়েক দফা তারা ঘটনাস্থল ও পুলিশ সদস্যদের অবস্থানের জায়গাগুলো সরজমিন গিয়ে প্রত্যক্ষ করেন। ওই সূত্র জানায়, তারা তদন্ত করে দেখেছেন অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যরা যেখানে ছিল তার দূরুত্ব ২২০ ফুট। অভিজিৎ খুন হওয়ার স্থানটি টিএসসির পুলিশের দায়িত্ব পালনের জায়গা থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে বাঁকা হওয়ায় সরাসরি দেখার কোনও সুযোগ নেই। পুলিশ সদস্যরা সবাই ঘটনার পর বিষয়টি জানতে পারেন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ঘটনার সময় মিলন চত্বরে ছিলেন নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ওয়াহিদুজ্জামান, ঘটনাস্থল থেকে শাহবাগের দিকে যেতে এসআই হাফিজুল ও সোহরাওয়ার্দীর গেটে রমনা থানার এসআই মজিবুর রহমান ফোর্স নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে গতকাল রাতে ড. অজয় রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে তো দায়িত্বে অবহেলা খুঁজে পাবে। পুলিশ তো তখন দায়িত্বই পালন করেনি। তারা মনে করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। এদিকে অভিজিৎকে কচুকাটা করছে। আরে বাবা, কারা মারামারি করছে তা তো কাছে গিয়ে দেখতে হবে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে তো হবে না।’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর মাটিতে উপুড় হয়ে পড়েছিল, তার স্ত্রী বন্যাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিৎকার করেছে। পুলিশ তখন কি করেছে? কেন তারা এগিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। একজন ফটো সাংবাদিকের (জীবন) বিবেকে বাঁধলো, আর পুলিশের বিবেকে বাঁধলো না?’ তিনি বলেন, ‘ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা সেখানে শাড়িওয়ালার দোকানে দাঁড়িয়ে শাড়ি দেখছিল।’ অজয় রায় বলেন, ‘আমি আজ (রোববার) আইজিপির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কমিটি পুলিশের অবহেলা খতিয়ে দেখছে। আমি তাকে সরাসরি বলেছি, কমিটি কারও অবহেলা খুঁজে পাবে না। ঠিকই তারা কোনও অবহেলা খুঁজে পেলো না। এটা কি করে সম্ভব?’
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে সরাসরি কোনও পুলিশ সদস্যের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সুপারভিশন ও কো-অর্ডিনেশনের অভাব ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেই জায়গায় অভিজিতের ওপর হামলা হয়েছিল, সেই স্থানটি কিছুটা অন্ধকার ছিল। আর পুলিশ যেখানে অবস্থান করছিল সেখান থেকে ঘটনাস্থল কিছুটা বাঁকা পথ। এছাড়া রাস্তায় গাড়ি ও প্রচুর লোকজনেরও উপস্থিতি ছিল। এ কারণে পুলিশ সদস্যদের ঘটনাটি সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ছিল না।’
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে মিলন চত্বরের বিপরীতে নির্মম হামলার শিকার হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যান অভিজিৎ। গুরুতর আহত রাফিদাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যালে ও পরে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিন দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয় তাকে। ঘটনার পরপরই চারপাশে পুলিশি বেষ্টনী থাকা সত্ত্বেও অভিজিৎ ও বন্যাকে কুপিয়ে দুর্বৃত্তদের নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিছুটা সুস্থ হয়ে রাফিদা আহমেদ বন্যাও অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি আর অভিজিৎ যখন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, স্থানীয় পুলিশ খুব কাছেই নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়েছিল।’ গত ১৪ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। পুলিশের ‘নাকের ডগায়’ এ হত্যাকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে ‘দায়িত্বে গাফিলতির’ জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
এর ঠিক দুদিন পর রাজধানীর ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে পুলিশের আরও কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের সেদিনই পদত্যাগ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে এফবিআইকে ডেকে আনার সমালোচনা করে খায়রুল হক বলেন, ‘১৫ গজ দূরে বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কি উচিত ছিল না, ঘটনাস্থলে দ্রুত যাওয়া। তাদের কি উচিত ছিল না, পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। তাদের কি উচিত ছিল না, বন্যা আহমেদকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।’ তিনি বলেন, তাহলে দেখেন, কতগুলো ব্যর্থতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বিকারভাবে মীর মদনের মতো, মীর জাফরের মতো দাঁড়িয়ে (পুলিশ) আছে। একজন সাংবাদিক জীবন তাড়াতাড়ি একটি স্কুটারে নিয়ে গেছেন। পুলিশের গাড়িগুলো কি করছিল? এর জন্য কোন আইনের প্রয়োজন নেই। এটা একটা নর্ম, সংস্কৃতি। মানুষের প্রতি মানুষের ব্যবহার। তিনি বলেন, মানুষ মারা যায়, মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করে তারপরও আমাদের আইন চুপ করে দাঁড়িয়ে, নিঃস্তব্ধ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মীর রেজাউল করিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যেও একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ডিএমপি হেডকোয়ার্টারের উপকমিশনার (প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) আক্তারুজ্জামান ও উপকমিশনার (অর্থ) মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া। গত দীর্ঘ প্রায় এক মাস তদন্ত শেষে গত সপ্তাহের শেষ দিনে কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। কমিটির প্রধান মীর রেজাউল করিম বলেন, আমরা তদন্তের পর প্রতিবেদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনে কি রয়েছে তা কর্তৃপক্ষ বলার অধিকার রাখে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে কমিটিসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটির সদস্যরা ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানা পুলিশ, নীলক্ষেত ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য ও রমনা থানার একটি টহল টিমসহ অন্তত ৩০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্যদের ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া কয়েক দফা তারা ঘটনাস্থল ও পুলিশ সদস্যদের অবস্থানের জায়গাগুলো সরজমিন গিয়ে প্রত্যক্ষ করেন। ওই সূত্র জানায়, তারা তদন্ত করে দেখেছেন অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যরা যেখানে ছিল তার দূরুত্ব ২২০ ফুট। অভিজিৎ খুন হওয়ার স্থানটি টিএসসির পুলিশের দায়িত্ব পালনের জায়গা থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে বাঁকা হওয়ায় সরাসরি দেখার কোনও সুযোগ নেই। পুলিশ সদস্যরা সবাই ঘটনার পর বিষয়টি জানতে পারেন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ঘটনার সময় মিলন চত্বরে ছিলেন নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ওয়াহিদুজ্জামান, ঘটনাস্থল থেকে শাহবাগের দিকে যেতে এসআই হাফিজুল ও সোহরাওয়ার্দীর গেটে রমনা থানার এসআই মজিবুর রহমান ফোর্স নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে গতকাল রাতে ড. অজয় রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে তো দায়িত্বে অবহেলা খুঁজে পাবে। পুলিশ তো তখন দায়িত্বই পালন করেনি। তারা মনে করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। এদিকে অভিজিৎকে কচুকাটা করছে। আরে বাবা, কারা মারামারি করছে তা তো কাছে গিয়ে দেখতে হবে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে তো হবে না।’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর মাটিতে উপুড় হয়ে পড়েছিল, তার স্ত্রী বন্যাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিৎকার করেছে। পুলিশ তখন কি করেছে? কেন তারা এগিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। একজন ফটো সাংবাদিকের (জীবন) বিবেকে বাঁধলো, আর পুলিশের বিবেকে বাঁধলো না?’ তিনি বলেন, ‘ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা সেখানে শাড়িওয়ালার দোকানে দাঁড়িয়ে শাড়ি দেখছিল।’ অজয় রায় বলেন, ‘আমি আজ (রোববার) আইজিপির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কমিটি পুলিশের অবহেলা খতিয়ে দেখছে। আমি তাকে সরাসরি বলেছি, কমিটি কারও অবহেলা খুঁজে পাবে না। ঠিকই তারা কোনও অবহেলা খুঁজে পেলো না। এটা কি করে সম্ভব?’
No comments