শাকসবজি, চিংড়ি ও শুঁটকিতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক by শেখ সাবিহা আলম
শাকসবজি,
চিংড়ি ও শুঁটকিতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশকের অস্তিত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা
হচ্ছে শুঁটকিতে।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের ১২টি জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত ৪৫৪টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বারি এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এখনই ব্যবস্থা না নিলে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
‘খাদ্যে কীটনাশকের অবশেষ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক বারির এই গবেষণা প্রতিবেদন গতকাল সোমবার অষ্টম ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ছিল আরও তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন। সম্মেলনের আয়োজক সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
সম্মেলনে গবেষকেরা বেলছেন, যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে নিলে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ফল খাওয়ার সময় চামড়া ছিলে নিলে ঝুঁকির হার কমে আসতে পারে বলেও তাঁরা জানান।
২০০৯ সালে ধামরাইয়ে তিনজন এবং ২০১৩ সালে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও রহস্যজনক কারণে ১৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। আইইডিসিআরের তথ্যমতে, এসব মৃত্যুর কারণ ছিল খাদ্যে ব্যবহৃত কীটনাশক।
বারির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি গবেষকদল ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত যশোর, জামালপুর, বগুড়া, নরসিংদী, গাজীপুর, কুমিল্লা অঞ্চল থেকে শাকসবজির ৩৬২টি নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনাগুলোর ২৩ শতাংশে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক পাওয়া যায়।
গবেষণার আওতাভুক্ত শাকসবজিগুলো ছিল শিম, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, পটল, শসা, ঢ্যাঁড়স ও ধনেপাতা।
শুঁটকির ৪৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, জামালপুর, যশোর, ময়মনসিংহ ও লালমনিরহাটের বাজার থেকে। শুঁটকির মধ্যে ছিল কাঁচকি, মলা, ফাইসা ও চ্যাপা। এসব নমুনার ৭৪ শতাংশে ডিডিটি, অ্যালড্রিন ও ডিয়েড্রিনের মতো কীটনাশক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ডিডিটি বিশ্বব্যাপী ব্যবহার নিষিদ্ধ।
গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির শুঁটকিতে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক ছিল। রংপুরের চ্যাপা শুঁটকিও সমান বিপজ্জনক।
খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে ৪৯টি চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সাতটিতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি ছিল।
বারির গবেষকেরা সংগৃহীত নমুনাগুলো কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষণাগারে পরীক্ষা করেন। সবজিতে কীটনাশকের উপাদানগুলো হলো ক্লোরোপাইরিফস, ডাইমেথোয়েট, ফেনিট্রোথিয়ন এবং ম্যালাথিয়ন।
গবেষক মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত কীটনাশক আছে ২ হাজার ৮১১টি ব্র্যান্ডের। অন্যদিকে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর যে উদ্যোগ তা সীমিত। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় আছে মাত্র ২ শতাংশ কৃষিজমি।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মানুষ শাকসবজি খায়। কিন্তু তা যদি ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশকে ভরা থাকে, তাহলে তার যকৃৎ ও কিডনি নষ্ট হতে পারে। কীটনাশক একবার শরীরে ঢুকলে তা আর বেরোতে চায় না। জীবনভর ক্ষতি করে যায়। কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে অস্থিমজ্জা যা কিনা শরীরে রক্ত তৈরি করে তা-ও কার্যকারিতা হারাতে পারে। দেশে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ খাবারে কীটনাশকের উপস্থিতি। এ ছাড়া গর্ভবতী নারী কীটনাশকযুক্ত খাবার খেলে শারীরিক ও মানসিক বিকারগ্রস্ত শিশুর জন্ম দিতে পারেন।’
সম্মেলনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রধান কারিগরী উপদেষ্টা জন রাইডার বলেন, কৃষকেরা ভালো ফলনের আশায় অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছেন। না হলে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েন। কৃষকদের যদি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাঁরা ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসবেন।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আরও তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এর একটি বাংলাদেশে খাবারে সিসার উপস্থিতি বিষয়ে। এতে প্রধান খাদ্য ভাতে সিসার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকেরা। এই দলের প্রধান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন লুবি।
বাংলাদেশে খাদ্যে আর্সেনিকের দূষণ নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর মিসবাহউদ্দিন। এতে বলা হয়, কচুতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক।
এফএওর আন্তর্জাতিক খাদ্য বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ শ্রীধর ধার্মাপুরি উপস্থান করেন খাবারে ঝুঁকির ধারণাবিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, খাবারে বিশেষ করে ফলমূলে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগ চলে আসছে বহুদিন ধরে। সব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের ১২টি জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত ৪৫৪টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বারি এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এখনই ব্যবস্থা না নিলে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
‘খাদ্যে কীটনাশকের অবশেষ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক বারির এই গবেষণা প্রতিবেদন গতকাল সোমবার অষ্টম ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ছিল আরও তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন। সম্মেলনের আয়োজক সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
সম্মেলনে গবেষকেরা বেলছেন, যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে নিলে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ফল খাওয়ার সময় চামড়া ছিলে নিলে ঝুঁকির হার কমে আসতে পারে বলেও তাঁরা জানান।
২০০৯ সালে ধামরাইয়ে তিনজন এবং ২০১৩ সালে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও রহস্যজনক কারণে ১৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। আইইডিসিআরের তথ্যমতে, এসব মৃত্যুর কারণ ছিল খাদ্যে ব্যবহৃত কীটনাশক।
বারির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি গবেষকদল ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত যশোর, জামালপুর, বগুড়া, নরসিংদী, গাজীপুর, কুমিল্লা অঞ্চল থেকে শাকসবজির ৩৬২টি নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনাগুলোর ২৩ শতাংশে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক পাওয়া যায়।
গবেষণার আওতাভুক্ত শাকসবজিগুলো ছিল শিম, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, পটল, শসা, ঢ্যাঁড়স ও ধনেপাতা।
শুঁটকির ৪৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, জামালপুর, যশোর, ময়মনসিংহ ও লালমনিরহাটের বাজার থেকে। শুঁটকির মধ্যে ছিল কাঁচকি, মলা, ফাইসা ও চ্যাপা। এসব নমুনার ৭৪ শতাংশে ডিডিটি, অ্যালড্রিন ও ডিয়েড্রিনের মতো কীটনাশক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ডিডিটি বিশ্বব্যাপী ব্যবহার নিষিদ্ধ।
গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির শুঁটকিতে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক ছিল। রংপুরের চ্যাপা শুঁটকিও সমান বিপজ্জনক।
খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে ৪৯টি চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সাতটিতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি ছিল।
বারির গবেষকেরা সংগৃহীত নমুনাগুলো কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষণাগারে পরীক্ষা করেন। সবজিতে কীটনাশকের উপাদানগুলো হলো ক্লোরোপাইরিফস, ডাইমেথোয়েট, ফেনিট্রোথিয়ন এবং ম্যালাথিয়ন।
গবেষক মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত কীটনাশক আছে ২ হাজার ৮১১টি ব্র্যান্ডের। অন্যদিকে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর যে উদ্যোগ তা সীমিত। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় আছে মাত্র ২ শতাংশ কৃষিজমি।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মানুষ শাকসবজি খায়। কিন্তু তা যদি ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশকে ভরা থাকে, তাহলে তার যকৃৎ ও কিডনি নষ্ট হতে পারে। কীটনাশক একবার শরীরে ঢুকলে তা আর বেরোতে চায় না। জীবনভর ক্ষতি করে যায়। কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে অস্থিমজ্জা যা কিনা শরীরে রক্ত তৈরি করে তা-ও কার্যকারিতা হারাতে পারে। দেশে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ খাবারে কীটনাশকের উপস্থিতি। এ ছাড়া গর্ভবতী নারী কীটনাশকযুক্ত খাবার খেলে শারীরিক ও মানসিক বিকারগ্রস্ত শিশুর জন্ম দিতে পারেন।’
সম্মেলনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রধান কারিগরী উপদেষ্টা জন রাইডার বলেন, কৃষকেরা ভালো ফলনের আশায় অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছেন। না হলে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েন। কৃষকদের যদি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাঁরা ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসবেন।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আরও তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এর একটি বাংলাদেশে খাবারে সিসার উপস্থিতি বিষয়ে। এতে প্রধান খাদ্য ভাতে সিসার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকেরা। এই দলের প্রধান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন লুবি।
বাংলাদেশে খাদ্যে আর্সেনিকের দূষণ নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর মিসবাহউদ্দিন। এতে বলা হয়, কচুতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক।
এফএওর আন্তর্জাতিক খাদ্য বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ শ্রীধর ধার্মাপুরি উপস্থান করেন খাবারে ঝুঁকির ধারণাবিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, খাবারে বিশেষ করে ফলমূলে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগ চলে আসছে বহুদিন ধরে। সব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
No comments