পোশাক ব্রান্ডগুলোর স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা উচিত
শ্রমিক
অধিকার রক্ষার্থে পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর তালিকা প্রকাশ করে জার্মান
তৈরী পোশাক এবং ফুটওয়্যার ব্রান্ডগুলোর স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল এ আহ্বান
জানিয়েছে। সংগঠনটির জার্মান পরিচালক ওয়েনজেল মিখালস্কি বলেছেন, শীর্ষ
জার্মান ব্রান্ড এডিডাস ২০০৭ সাল থেকে তাদের পণ্য সরবরাহকারীদের তালিকা
প্রকাশের মাধ্যমে এটা দেখিয়েছে যে, এ ধরনের স্বচ্ছতা সম্ভব এবং কাম্য। এমন
পদক্ষেপে শ্রমিকদের ভালো কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্রান্ডগুলোর অঙ্গীকার
প্রতিফলিত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে প্রসঙ্গত উঠে
এসেছে বাংলাদেশের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এবং তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের
কথা। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ভবন ধসে স্বচ্ছতার
অভাব স্পষ্ট ছিল। এতে ১১ শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়। আহত হয় হাজারো। ভবনটিতে
বেশ কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা ছিল। ইউনিয়ন ও শ্রমিক অধিকার গ্রুপগুলো ভবনের
ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে পোশাকের ব্রান্ড লেবেল সংগ্রহ করে। দুর্ঘটনায়
হতাহত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ তহবিলে ওইসব ব্রান্ডগুলোর অনুদান
দেয়ার দাবি জানায়। তবে, রানা প্লাজার সমস্যাগুলো ওই বিপর্যয়ের আগে
মোকাবিলা করা হয়নি তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্রান্ডগুলোর সাপ্লাই
চেইন স্বচ্ছতার অভাব। শ্রমিক অধিকার কর্মীরা অভিযোগ করে, জার্মানির বড় একটি
তৈরী পোশাক ব্রান্ড কেআইকে’র উৎপাদন ছিল রানা প্লাজা ভবনে। প্রতিষ্ঠানটি
২০১৪ সালের ২রা এপ্রিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুর্ঘটনার সময় তাদের
কোন সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল না। আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে লেখা এক
চিঠিতে জানায়, তারা ক্ষতিপূরণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে। এদিকে, তাজরীন
ফ্যাশনসেও কেআইকের উৎপাদন ছিল বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করে। ২০১২ সালের
নভেম্বরে কারখানাটিতে আগুন লাগে। এতে ১১৭ শ্রমিক নিহত হন। ক্লিন ক্লোদস
ক্যাম্পেইন জানায়, কেআইকে তাজরীন ফ্যাশনসে উৎপাদনের বিষয়টি স্বীকার করে এবং
২০১৩ সালের এপ্রিলে তাজরীন অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিপূরণ তহবিলে অন্যান্য
ব্রান্ডের সঙ্গে যোগ দেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কম্বোডিয়ার
তৈরী পোশাক শিল্পে শ্রমিক অধিকার ইস্যুগুলো। দেশটিতে অবৈধভাবে স্বল্প
মেয়াদি কন্ট্রাক্ট দেয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করার
চর্চা রয়েছে। এ চর্চা বন্ধে অনেক পোশাক ব্রান্ড এখনও কোন পদক্ষেপ নেয় নি।
সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতার মাধ্যমে এসব সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব বলে
প্রতিবেদনে জোর দেয়া হয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলোর তালিকা
প্রকাশের মাধ্যমে তৈরী পোশাক ব্রান্ডগুলো জনগণের সামনে তা স্পষ্ট করে
উপস্থাপন করতে পারবে। এর ফলশ্রুতিকে নিম্নমানের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং
কারখানার অন্যান্য মানবাধিকার সমস্যা সমাধানে ব্রান্ডগুলোকেই সহায়তা করবে।
এমন স্বচ্ছতা থাকলে কোন নির্দিষ্ট ব্রান্ডের জন্য অনুমোদিত আর অননুমোদিত
কারখানাগুলোর তথ্য স্পষ্ট হবে। অনেক সময় সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো কোন অনুমোদন
ছাড়াই নিম্নমানের ও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোতে সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়ে থাকে।
সাপ্লাই চেইন স্বচ্ছতা এ ইস্যুগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হবে। ওয়েনজেল মিখালস্কি
বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং
কারখানার কর্মপরিবেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত হওয়ার দাবি জানানোর মাধ্যমে
জার্মানির তৈরী পোশাক ব্রান্ডগুলোর বৈশ্বিকভাবে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন
করা উচিত। আর জার্মান ক্রেতাদের দাবি জানানো উচিত ব্রান্ডগুলো যেন পণ্য
তৈরির স্থান ও পরিবেশের তথ্যগুলো স্পষ্ট করে যেন ভোক্তা হিসেবে তারা
সম্পূর্ণ অবগত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
No comments