চাঁদাবাজি ছিনতাই মাদক থেকে মুক্তিই চাওয়া by বকুল আহমেদ
ক্ষমতাসীন
দলের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় রামপুরায় চলছে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। রাস্তা, ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে বাজার। ফলে
রাস্তা সরু হয়ে মহল্লায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। আর সময়ে-অসময়ে
ছিনতাইকারীরা কেড়ে নেয় সর্বস্ব। এসব থেকে মুক্তি চান ঢাকা উত্তর সিটি
কর্পোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের (রামপুরা) বাসিন্দারা। এখানে নেই সরকারি
কাঁচাবাজার, কমিউনিটি সেন্টার ও খেলার মাঠ। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, নতুন
কাউন্সিলর করবেন এসবের সুব্যবস্থাও। রাস্তাঘাটের সংস্কার করে নাগরিক
সমস্যাগুলো দূর করবেন।
বাসিন্দাদের এ চাওয়াকে পুঁজি করেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য ১৩ প্রার্থী। এর মধ্যে আটজনই ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা।
ভোটার এক লাখ : পূর্ব রামপুরার বনশ্রী ফরাজি হাসপাতাল থেকে নিয়ে ই ব্লক, বিটিভি, বিটিভি ভবনের পেছনের সব অংশ-কুঞ্জবন, জাকের রোড, তিতাস রোড, ব্যাংক কলোনি, জামতলা, ভূঁঁইয়ার গলি, পোস্ট অফিস গলি, পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট, উলন, ওয়াপদা, আদিলেন, ওমর আলী লেন, পশ্চিম হাজীপাড়া, বাগিচারটেক, শিমুলবাগ, পলাশবাগ, ঝিলকানন, নাসিরাটেক, হাতিরঝিলের একাংশ নিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ড। লোক সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজারের বেশি। ২২ গার্মেন্ট থাকায় নিু আয়ের মানুষের বসবাস অনেক।
সড়ক ও ফুটপাত দখল : উলন রোডে ঢুকতেই ডান পাশে মাছ ও সবজির দোকান। এ সড়কের ৩ ভাগের একভাগ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা ও মাছের বাজার। সড়কের শুরু থেকে উলন বাজার পর্যন্ত চিত্র প্রায় একই। রাস্তা সরু হয়ে যানজট হচ্ছে প্রতিদিন। এসব দোকানি ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক নেতাকর্মী উলন রোডসহ বিভিন্ন রাস্তা ও অলিগলি দখল করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বসিয়ে চাঁদাবাজি করছে। উলন বাজারের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রতিদিন ৫০ টাকা চাঁদা দেন। রামপুরা বাজারের অর্ধেকটাই রাস্তার ওপরে। অপরদিকে বর্জ্য ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশনের রাখা কনটেইনার ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
রামপুরার কাঁচাবাজার দীর্ঘদিন সিটি কর্পোরেশন চালিয়ে এলেও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাজারটির ৭ কাঠা জায়গা মালিকানায় করে দিয়েছেন। সেখানে ডেভেলপার কোম্পানি বহুতল ভবন তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই ভবনে কয়েকজন নেতা ফ্ল্যাট পাবেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ডিআইটি সড়কের দুই পাশে ফুটপাত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়ে গেছে। একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান তরফদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ কোনো টাকা নেয় না। এলাকার লোকজন চাইলে রাস্তা থেকে দোকান উঠিয়ে দেয়া যাবে।
এলাকাবাসী জানান, চাঁদা না দিয়ে এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন না। আর গার্মেন্ট চাঁদাবাজি তো দীর্ঘদিনের।
ছিনতাই আতংক : শুধু রাত নয়, দিনেও প্রকাশ্যে গুলি করে ছিনতাই হচ্ছে রামপুরায়। বিকাশ এজেন্ট, মোবাইল কোম্পানির প্রতিনিধিসহ নানা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা ওই এলাকায় টাকা নিয়ে চলাচলে আতংকে থাকেন। রাত ১০টার পর অটোরিকশা চালকরা যাত্রী নিয়ে পশ্চিম রামপুরার অনেক গলিতে ঢুকতে চান না ছিনতাই আতংকে।
গত বছরের ১১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১০টায় গার্মেন্ট কারখানার নিরাপত্তা কর্মী বেলায়েত হোসেনকে গুলি করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ১১ জুন বেলা ১১টায় উলন রোডে বিকাশকর্মী ইরান মুন্সীকে গুলি করে ১ লাখ ৮০ হাজার ও ৫ জুন দুপুরে টিভি রোডে কাজী রমজান হোসেন নামে আরেক বিকাশকর্মীকে গুলি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এমন বহু ঘটনা রয়েছে।
আরও যত সমস্যা : সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সংস্কারবিহীন রাস্তা, ময়লা-আবর্জনা ও পানির সংকট। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অলিগলিতে মাদকের আখড়া। নেশার টাকা জোগাড় করতে উঠতি বয়সের ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে।
২৭ মার্চ সন্ধ্যার পর এ ওয়ার্ডের প্রায় সব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বিদ্যুৎ পোলের বাতি নষ্ট। মহানগর প্রজেক্টের সি ব্লকের ২ নম্বর রোডে ৭ পোলের একটিতেও বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। ২ নম্বর রোডের ৩টি, পলাশবাগে কয়েকটি বাতি নষ্ট। ওয়াপদা রোডে মাঝেমধ্যে দু-একটি বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। মহানগর প্রজেক্টের এ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ২২/২৩ নম্বর বাড়ির সামনে রাস্তয় স্যুয়ারেজের লাইনের স্ল্যাব ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াপদা রোডের কোথাও কোথাও পিচ উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। উলন রোড, স্কুল গলি ও পলাশবাগসহ আশপাশের প্রায় সব রোডের একই অবস্থা। পাওয়ার হাউসের পাশের গলিতে এখনও ইট-পাথর পড়েনি। পূর্ব রামপুরার তিতাস গলিসহ বেশ কয়েকটি গলির অবস্থাও নাজুক।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা : একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার, স্থায়ী কাঁচাবাজার, খেলাধুলার জন্য মাঠ এবং ছিনতাই ও চাঁদাবাজির হাত থেকে মুক্ত হয়ে শংকামুক্ত জীবন চান ওয়ার্ডবাসী। পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল গলির ভাই ভাই স্টোরের মালিক আকাশ বলেন, এলাকার সমস্যা সমাধান করবে এমন প্রার্থী দরকার। মহানগর প্রজেক্টের ডি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও সি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনে সরকার সব দলের অংশগ্রহণ চাচ্ছে আবার মামলায় ব্যবস্থা নেয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। একতরফা নির্বাচন হলে উপযুক্ত কাউন্সিলর মিলবে না।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ৮ : ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আকরাম মুকুল, সাবেক কমিশনার মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য লিয়াকত আলী, ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ কাইয়ুম, আওয়ামী লীগ নেতা লায়ন শামীম আনোয়ার, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লায়ন সাজ্জাদ হোসেন চিশতী, রামপুরা থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান লিটু, মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম আহম্মদ উল্যা পপ্পী এবং মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি মুজিব মহসিন পিয়াস দলীয় সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দল থেকে যেই সমর্থন পাক না কেন, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে এ ওয়ার্ডে।
শামীম আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, তিনি ১৯৯৪ সালে দল থেকে সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রবীণ নেতা র্লিয়াকত আলীকে নির্বাচন করার সুযোগ করে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার তিনি দল থেকে সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করবেন। বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সেবা করে আসছি। নির্বাচিত হলে আরও বেশি সেবা করার সুযোগ পাব।
এবিএম আহম্মদ উল্যা পপ্পী যুগান্তরকে বলেন, এ পর্যন্ত যারা এ ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন তারা কেউ নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেননি। আমি করব। ৬ বছর ধরে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল থেকে সমর্থন না পেলেও আমি নির্বাচন করব। আইয়ুব আকরাম মুকুল যুগান্তরকে বলেন, শতভাগ প্রত্যাশা করি দল থেকে সমর্থন পাব। এলাকায় প্রচুর সমস্যা। আমি এ এলাকায় বড় হয়েছি। মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকেই নির্বাচন করতে যাচ্ছি।
‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, আসুন বদলে দিই রামপুরাকে’- এ স্লোগান নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন চিশতী নির্বাচনে নেমেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আধুনিক ওয়ার্ড গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তরুণরাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে। মাদক নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাস দমনে কঠোর ভূমিকা রাখব। লিয়াকত আলী ১৯৯৪ সালে এ ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সরকার যতটুকু দেবে আমি সবটুকুই উন্নয়নের কাজে লাগাব। এমএ কাইয়ুম যুগান্তরকে বলেন, জনগণের কাজ করার জন্য নির্বাচন করতে চাই।
মুজিব মহসিন পিয়াস বলেন, রাজনীতি মানেই মানুষের সেবা করা। অবহেলিত এলাকাকে উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য। কামরুল হাসান লিটু যুগান্তরকে বলেন, এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচন করতে চাই। এ জন্য দল থেকে সমর্থন চাচ্ছি।
বিএনপির ৩ : ২০০২ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন আক্কেল আলী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এবার নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল না। হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। দল থেকে সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করব। থানা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ আহমেদ ফরু রাজনৈতিক মামলায় বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন।
তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানুষ যাতে নিরাপদে, নির্ভয়ে বসবাস করতে পারে আমি সেই ব্যবস্থাই করব। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করব। এ ছাড়া যুবদলের সোহেল রানা ভূঁইয়া সম্ভাব্য প্রার্থী।
জাপা ১ : রামপুরা থানা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন আহমেদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এ ছাড়া মোহাম্মদ হুমায়ন কবির নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্র্র্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
সাবেক দুই কমিশনার লিয়াকত আলী ও আক্কেল আলী আপন ভাই। একজন আওয়ামী লীগের ও অপরজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৪ সালে লিয়াকত আলীর কাছে পরাজিত হন আক্কেল আলী। তবে ২০০২ সালের এ ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন আক্কেল আলী। এবারও দুই ভাই কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
বাসিন্দাদের এ চাওয়াকে পুঁজি করেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য ১৩ প্রার্থী। এর মধ্যে আটজনই ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা।
ভোটার এক লাখ : পূর্ব রামপুরার বনশ্রী ফরাজি হাসপাতাল থেকে নিয়ে ই ব্লক, বিটিভি, বিটিভি ভবনের পেছনের সব অংশ-কুঞ্জবন, জাকের রোড, তিতাস রোড, ব্যাংক কলোনি, জামতলা, ভূঁঁইয়ার গলি, পোস্ট অফিস গলি, পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট, উলন, ওয়াপদা, আদিলেন, ওমর আলী লেন, পশ্চিম হাজীপাড়া, বাগিচারটেক, শিমুলবাগ, পলাশবাগ, ঝিলকানন, নাসিরাটেক, হাতিরঝিলের একাংশ নিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ড। লোক সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজারের বেশি। ২২ গার্মেন্ট থাকায় নিু আয়ের মানুষের বসবাস অনেক।
সড়ক ও ফুটপাত দখল : উলন রোডে ঢুকতেই ডান পাশে মাছ ও সবজির দোকান। এ সড়কের ৩ ভাগের একভাগ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা ও মাছের বাজার। সড়কের শুরু থেকে উলন বাজার পর্যন্ত চিত্র প্রায় একই। রাস্তা সরু হয়ে যানজট হচ্ছে প্রতিদিন। এসব দোকানি ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক নেতাকর্মী উলন রোডসহ বিভিন্ন রাস্তা ও অলিগলি দখল করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বসিয়ে চাঁদাবাজি করছে। উলন বাজারের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রতিদিন ৫০ টাকা চাঁদা দেন। রামপুরা বাজারের অর্ধেকটাই রাস্তার ওপরে। অপরদিকে বর্জ্য ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশনের রাখা কনটেইনার ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
রামপুরার কাঁচাবাজার দীর্ঘদিন সিটি কর্পোরেশন চালিয়ে এলেও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাজারটির ৭ কাঠা জায়গা মালিকানায় করে দিয়েছেন। সেখানে ডেভেলপার কোম্পানি বহুতল ভবন তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই ভবনে কয়েকজন নেতা ফ্ল্যাট পাবেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ডিআইটি সড়কের দুই পাশে ফুটপাত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়ে গেছে। একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান তরফদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ কোনো টাকা নেয় না। এলাকার লোকজন চাইলে রাস্তা থেকে দোকান উঠিয়ে দেয়া যাবে।
এলাকাবাসী জানান, চাঁদা না দিয়ে এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন না। আর গার্মেন্ট চাঁদাবাজি তো দীর্ঘদিনের।
ছিনতাই আতংক : শুধু রাত নয়, দিনেও প্রকাশ্যে গুলি করে ছিনতাই হচ্ছে রামপুরায়। বিকাশ এজেন্ট, মোবাইল কোম্পানির প্রতিনিধিসহ নানা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা ওই এলাকায় টাকা নিয়ে চলাচলে আতংকে থাকেন। রাত ১০টার পর অটোরিকশা চালকরা যাত্রী নিয়ে পশ্চিম রামপুরার অনেক গলিতে ঢুকতে চান না ছিনতাই আতংকে।
গত বছরের ১১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১০টায় গার্মেন্ট কারখানার নিরাপত্তা কর্মী বেলায়েত হোসেনকে গুলি করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ১১ জুন বেলা ১১টায় উলন রোডে বিকাশকর্মী ইরান মুন্সীকে গুলি করে ১ লাখ ৮০ হাজার ও ৫ জুন দুপুরে টিভি রোডে কাজী রমজান হোসেন নামে আরেক বিকাশকর্মীকে গুলি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এমন বহু ঘটনা রয়েছে।
আরও যত সমস্যা : সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সংস্কারবিহীন রাস্তা, ময়লা-আবর্জনা ও পানির সংকট। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অলিগলিতে মাদকের আখড়া। নেশার টাকা জোগাড় করতে উঠতি বয়সের ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে।
২৭ মার্চ সন্ধ্যার পর এ ওয়ার্ডের প্রায় সব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বিদ্যুৎ পোলের বাতি নষ্ট। মহানগর প্রজেক্টের সি ব্লকের ২ নম্বর রোডে ৭ পোলের একটিতেও বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। ২ নম্বর রোডের ৩টি, পলাশবাগে কয়েকটি বাতি নষ্ট। ওয়াপদা রোডে মাঝেমধ্যে দু-একটি বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। মহানগর প্রজেক্টের এ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ২২/২৩ নম্বর বাড়ির সামনে রাস্তয় স্যুয়ারেজের লাইনের স্ল্যাব ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াপদা রোডের কোথাও কোথাও পিচ উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। উলন রোড, স্কুল গলি ও পলাশবাগসহ আশপাশের প্রায় সব রোডের একই অবস্থা। পাওয়ার হাউসের পাশের গলিতে এখনও ইট-পাথর পড়েনি। পূর্ব রামপুরার তিতাস গলিসহ বেশ কয়েকটি গলির অবস্থাও নাজুক।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা : একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার, স্থায়ী কাঁচাবাজার, খেলাধুলার জন্য মাঠ এবং ছিনতাই ও চাঁদাবাজির হাত থেকে মুক্ত হয়ে শংকামুক্ত জীবন চান ওয়ার্ডবাসী। পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল গলির ভাই ভাই স্টোরের মালিক আকাশ বলেন, এলাকার সমস্যা সমাধান করবে এমন প্রার্থী দরকার। মহানগর প্রজেক্টের ডি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও সি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনে সরকার সব দলের অংশগ্রহণ চাচ্ছে আবার মামলায় ব্যবস্থা নেয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। একতরফা নির্বাচন হলে উপযুক্ত কাউন্সিলর মিলবে না।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ৮ : ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আকরাম মুকুল, সাবেক কমিশনার মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য লিয়াকত আলী, ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ কাইয়ুম, আওয়ামী লীগ নেতা লায়ন শামীম আনোয়ার, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লায়ন সাজ্জাদ হোসেন চিশতী, রামপুরা থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান লিটু, মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম আহম্মদ উল্যা পপ্পী এবং মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি মুজিব মহসিন পিয়াস দলীয় সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দল থেকে যেই সমর্থন পাক না কেন, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে এ ওয়ার্ডে।
শামীম আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, তিনি ১৯৯৪ সালে দল থেকে সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রবীণ নেতা র্লিয়াকত আলীকে নির্বাচন করার সুযোগ করে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার তিনি দল থেকে সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করবেন। বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সেবা করে আসছি। নির্বাচিত হলে আরও বেশি সেবা করার সুযোগ পাব।
এবিএম আহম্মদ উল্যা পপ্পী যুগান্তরকে বলেন, এ পর্যন্ত যারা এ ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন তারা কেউ নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেননি। আমি করব। ৬ বছর ধরে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল থেকে সমর্থন না পেলেও আমি নির্বাচন করব। আইয়ুব আকরাম মুকুল যুগান্তরকে বলেন, শতভাগ প্রত্যাশা করি দল থেকে সমর্থন পাব। এলাকায় প্রচুর সমস্যা। আমি এ এলাকায় বড় হয়েছি। মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকেই নির্বাচন করতে যাচ্ছি।
‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, আসুন বদলে দিই রামপুরাকে’- এ স্লোগান নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন চিশতী নির্বাচনে নেমেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আধুনিক ওয়ার্ড গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তরুণরাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে। মাদক নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাস দমনে কঠোর ভূমিকা রাখব। লিয়াকত আলী ১৯৯৪ সালে এ ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সরকার যতটুকু দেবে আমি সবটুকুই উন্নয়নের কাজে লাগাব। এমএ কাইয়ুম যুগান্তরকে বলেন, জনগণের কাজ করার জন্য নির্বাচন করতে চাই।
মুজিব মহসিন পিয়াস বলেন, রাজনীতি মানেই মানুষের সেবা করা। অবহেলিত এলাকাকে উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য। কামরুল হাসান লিটু যুগান্তরকে বলেন, এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচন করতে চাই। এ জন্য দল থেকে সমর্থন চাচ্ছি।
বিএনপির ৩ : ২০০২ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন আক্কেল আলী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এবার নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল না। হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। দল থেকে সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করব। থানা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ আহমেদ ফরু রাজনৈতিক মামলায় বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন।
তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানুষ যাতে নিরাপদে, নির্ভয়ে বসবাস করতে পারে আমি সেই ব্যবস্থাই করব। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করব। এ ছাড়া যুবদলের সোহেল রানা ভূঁইয়া সম্ভাব্য প্রার্থী।
জাপা ১ : রামপুরা থানা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন আহমেদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এ ছাড়া মোহাম্মদ হুমায়ন কবির নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্র্র্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
সাবেক দুই কমিশনার লিয়াকত আলী ও আক্কেল আলী আপন ভাই। একজন আওয়ামী লীগের ও অপরজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৪ সালে লিয়াকত আলীর কাছে পরাজিত হন আক্কেল আলী। তবে ২০০২ সালের এ ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন আক্কেল আলী। এবারও দুই ভাই কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
No comments