সরকারের ধীরে চলো নীতি, আবার শঙ্কাও- দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন এমনিতেই থেমে যাবে মনে করছেন নীতিনির্ধারকেরা by জাকির হোসেন লিটন
চলমান
সঙ্কট নিরসনে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে সরকার। দেশ-বিদেশের নানামুখী
চাপের মুখে কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’ অবস্থানে সরে গেলেও চলমান অস্থিতিশীল
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের পথেই হাঁটছে তারা। এ সময়
বিরোধী ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করা হলেও একঘরে
করে রাখা হবে। সাথে তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
চলবে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের কাজও। লক্ষ্য অর্জনে প্রশাসনের পাশাপাশি
দলীয়ভাবে মাঠে নামানো হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। হরতাল, অবরোধ ও
নাশকতাবিরোধী জনমত গঠনের কাজও অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোটের
কর্মকাণ্ডকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে দেশ-বিদেশে উপস্থাপনের
চেষ্টা হয়েছে। যদিও তা নিয়ে নানা বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারের
নীতিনির্ধারকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও হাল ছাড়তে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুশীলসমাজ, কূটনৈতিকদের দৌড়ঝাপ এবং সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর চাপেরও শেষ দেখতে চায় দলটি। সে জন্য সাময়িক রোডম্যাপ বাদ দিয়ে এখন দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের দিকেই এগোচ্ছেন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তারা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ অবস্থান এবং প্রশাসনের নানামুখী তৎপরতার মুখে বিএনপি জোটের আন্দোলন ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাবে। এত দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে যেতে কান্ত হয়ে পড়বেন সরকারবিরোধী নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া হরতাল, অবরোধ অব্যাহত থাকলেও একপর্যায়ে সাধারণ মানুষ সব আতঙ্ক পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসবে। এতে সরকারবিরোধীদের এ আন্দোলন এমনিতেই থেমে যেতে বাধ্য হবে।
তবে সরকারের এ নীতির সফলতা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা আলাপকালে জানান, ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন দুই মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে। আসলে এত দীর্ঘমেয়াদে টেনে নেয়া খুব সহজ কাজ নয়। সেই হিসেবে চলতে চলতে একপর্যায়ে হয়তো আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়বে। তবে এতে খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ হরতাল-অবরোধে মাঝে মধ্যেই থেমে থেমে বড় ধরনের নাশকতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই আন্দোলন স্থগিত করা না হলে অথবা সঙ্কটের সমাধান না হলে যেকোনো সময় আবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিশেষ করে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা যখন কিছুটা ঢিলেঢালা মনোভাবে থাকবে, ঠিক তখনই হয়তো বড় ধরনের কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। এতে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে, যা মোকাবেলা করা সরকারের জন্য রীতিমতো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এটি কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিরোধী ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একাধিকবার গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ আদালতের একটি পরোয়ানাকে পুঁজি করে তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে চলমান আন্দোলন শেষ করা যাবে বলে মনে করেছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। কিন্তু চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েও নানা প্রতিকূলতার মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। বিশেষ করে চলমান সঙ্কট আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা, জনমনে বিরূপ প্রভাব ও প্রবল কূটনীতিক চাপের মুখে অবস্থান পরিবর্তন করেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। সে জন্য আদালতের নির্দেশের পরও এখনই আর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ঝুঁকি নেয়া হচ্ছে না। সে জন্য এখন ধীরে চলো নীতির পথ ধরেছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
তারা মনে করছেন, ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন প্রথম দিকে সরকারকে বেশ বিপাকে ফেলে দিলেও ক্রমেই তা দুর্বল হয়ে পড়ছে। লাগাতার অবরোধ-হরতালের শুরুতে ব্যাপক জনমসর্থন থাকলেও সরকারের টনক না নড়ায় মানুষ নিজেদের জীবিকার তাগিদেই ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে বিএনপি জোট যত বড় আন্দোলনই করুক না কেন অথবা যত মানুষই হত্যার শিকার হোক না কেন সরকার ক্ষমতা ছাড়বে না। তাই বিএনপি জোটের প্রতি এক রকম হতাশ হয়ে সাধারণ মানুষ যার যার কর্মস্থলে ফিরছে। সে জন্য প্রথম দিকে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি না চললেও আস্তে আস্তে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ নজরদারির পাশাপাশি জনমত গঠন করা হলে বিএনপি জোট দীর্ঘমেয়াদে এ আন্দোলন আর চালিয়ে নিতে পারবে না। সে জন্য প্রথম দিকে দুই-চার দিন, সপ্তাহখানেক ও মাসখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হলেও এখন আর সেই অবস্থানে নেই তারা। সরকার এখন দীর্ঘমেয়াদি নীতিতে হাঁটছে। এ সময় খালেদা জিয়াকে নিজ কার্যালয়ে একঘরে করে রাখার পাশাপাশি কূটনীতিকদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে সরকার। সাথে নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামানো হবে। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় সময় দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনবিরোধী সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে ক্ষমতাসীনেরা। গতকাল থেকে ১৪ দলের তিন দিনব্যাপী সমাবেশ ও পদযাত্রা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষে ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীসহ সুশীলসমাজের একটি অংশ সভা-সেমিনার করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে বিএনপি অন্যান্য বিচ্ছিন্ন সংগঠনের মতো নয়। তাদের সমর্থক ও কর্মী বাহিনী রয়েছে। তাই ছোটখাটো কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো তাদের আলটিমেটাম দিয়ে দমন করা সম্ভব হয়। তারা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে তবে তাদের জন্য সেটি শুভ। আর এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে সরকারও তাদের দমনে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। এতে কত দিন লাগবে তা বলা সম্ভব নয়। এ সময় আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে সক্রিয় থেকে জনমত গঠন করবে। পেট্রলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে সাময়িকভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যেতে পারে। কিন্তু এটা দীর্ঘ সময় ধরে করা সম্ভব নয়। জনগণই এই হরতাল-অবরোধকে প্রত্যাখান করেছে, তাই আমাদের নতুন করে কোনো ভাবনা নেই।
দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, বিএনপি জোট প্রথম দিকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে পারলেও ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তাদের নাশকতামূলক কর্মসূচির মুখে সরকার কোনোভাবেই মাথানত করবে না জেনে সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে যার যার কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও একপর্যায়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও মাঝে মধ্যে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষ সেটি ভুলে আবার নিজ নিজ কাজে মনোযোগী হবে। আর সরকারও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
তবে এ কৌশলের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, প্রতিদিন জ্বালাও, পোড়াও, বোমা, পেট্রলবোমাসহ নানা নৃশংস ঘটনায় দীর্ঘ হয়ে ওঠে মৃত্যুর মিছিল। লাগাতার এ আন্দালনের ফলে ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনীতি গভীর খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন সরকার কোনো সমাধান না করে দীর্ঘমেয়াদের কৌশল নিয়ে বসে থাকলেও জনমনে আতঙ্ক রয়েই যাবে। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবে না। আর বিদেশী বিনিয়োগ ও আমদানিকারকেরাও আন্দোলন চলা অবস্থায় এ দেশে ফিরে তাকাবে না। এতে সুদূরপ্রসারী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও হাল ছাড়তে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুশীলসমাজ, কূটনৈতিকদের দৌড়ঝাপ এবং সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর চাপেরও শেষ দেখতে চায় দলটি। সে জন্য সাময়িক রোডম্যাপ বাদ দিয়ে এখন দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের দিকেই এগোচ্ছেন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তারা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ অবস্থান এবং প্রশাসনের নানামুখী তৎপরতার মুখে বিএনপি জোটের আন্দোলন ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাবে। এত দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে যেতে কান্ত হয়ে পড়বেন সরকারবিরোধী নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া হরতাল, অবরোধ অব্যাহত থাকলেও একপর্যায়ে সাধারণ মানুষ সব আতঙ্ক পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসবে। এতে সরকারবিরোধীদের এ আন্দোলন এমনিতেই থেমে যেতে বাধ্য হবে।
তবে সরকারের এ নীতির সফলতা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা আলাপকালে জানান, ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন দুই মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে। আসলে এত দীর্ঘমেয়াদে টেনে নেয়া খুব সহজ কাজ নয়। সেই হিসেবে চলতে চলতে একপর্যায়ে হয়তো আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়বে। তবে এতে খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ হরতাল-অবরোধে মাঝে মধ্যেই থেমে থেমে বড় ধরনের নাশকতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই আন্দোলন স্থগিত করা না হলে অথবা সঙ্কটের সমাধান না হলে যেকোনো সময় আবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিশেষ করে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা যখন কিছুটা ঢিলেঢালা মনোভাবে থাকবে, ঠিক তখনই হয়তো বড় ধরনের কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। এতে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে, যা মোকাবেলা করা সরকারের জন্য রীতিমতো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এটি কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিরোধী ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একাধিকবার গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ আদালতের একটি পরোয়ানাকে পুঁজি করে তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে চলমান আন্দোলন শেষ করা যাবে বলে মনে করেছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। কিন্তু চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েও নানা প্রতিকূলতার মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। বিশেষ করে চলমান সঙ্কট আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা, জনমনে বিরূপ প্রভাব ও প্রবল কূটনীতিক চাপের মুখে অবস্থান পরিবর্তন করেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। সে জন্য আদালতের নির্দেশের পরও এখনই আর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ঝুঁকি নেয়া হচ্ছে না। সে জন্য এখন ধীরে চলো নীতির পথ ধরেছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
তারা মনে করছেন, ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন প্রথম দিকে সরকারকে বেশ বিপাকে ফেলে দিলেও ক্রমেই তা দুর্বল হয়ে পড়ছে। লাগাতার অবরোধ-হরতালের শুরুতে ব্যাপক জনমসর্থন থাকলেও সরকারের টনক না নড়ায় মানুষ নিজেদের জীবিকার তাগিদেই ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে বিএনপি জোট যত বড় আন্দোলনই করুক না কেন অথবা যত মানুষই হত্যার শিকার হোক না কেন সরকার ক্ষমতা ছাড়বে না। তাই বিএনপি জোটের প্রতি এক রকম হতাশ হয়ে সাধারণ মানুষ যার যার কর্মস্থলে ফিরছে। সে জন্য প্রথম দিকে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি না চললেও আস্তে আস্তে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ নজরদারির পাশাপাশি জনমত গঠন করা হলে বিএনপি জোট দীর্ঘমেয়াদে এ আন্দোলন আর চালিয়ে নিতে পারবে না। সে জন্য প্রথম দিকে দুই-চার দিন, সপ্তাহখানেক ও মাসখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হলেও এখন আর সেই অবস্থানে নেই তারা। সরকার এখন দীর্ঘমেয়াদি নীতিতে হাঁটছে। এ সময় খালেদা জিয়াকে নিজ কার্যালয়ে একঘরে করে রাখার পাশাপাশি কূটনীতিকদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে সরকার। সাথে নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামানো হবে। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় সময় দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনবিরোধী সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে ক্ষমতাসীনেরা। গতকাল থেকে ১৪ দলের তিন দিনব্যাপী সমাবেশ ও পদযাত্রা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষে ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীসহ সুশীলসমাজের একটি অংশ সভা-সেমিনার করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে বিএনপি অন্যান্য বিচ্ছিন্ন সংগঠনের মতো নয়। তাদের সমর্থক ও কর্মী বাহিনী রয়েছে। তাই ছোটখাটো কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো তাদের আলটিমেটাম দিয়ে দমন করা সম্ভব হয়। তারা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে তবে তাদের জন্য সেটি শুভ। আর এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে সরকারও তাদের দমনে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। এতে কত দিন লাগবে তা বলা সম্ভব নয়। এ সময় আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে সক্রিয় থেকে জনমত গঠন করবে। পেট্রলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে সাময়িকভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যেতে পারে। কিন্তু এটা দীর্ঘ সময় ধরে করা সম্ভব নয়। জনগণই এই হরতাল-অবরোধকে প্রত্যাখান করেছে, তাই আমাদের নতুন করে কোনো ভাবনা নেই।
দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, বিএনপি জোট প্রথম দিকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে পারলেও ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তাদের নাশকতামূলক কর্মসূচির মুখে সরকার কোনোভাবেই মাথানত করবে না জেনে সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে যার যার কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও একপর্যায়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও মাঝে মধ্যে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষ সেটি ভুলে আবার নিজ নিজ কাজে মনোযোগী হবে। আর সরকারও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
তবে এ কৌশলের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, প্রতিদিন জ্বালাও, পোড়াও, বোমা, পেট্রলবোমাসহ নানা নৃশংস ঘটনায় দীর্ঘ হয়ে ওঠে মৃত্যুর মিছিল। লাগাতার এ আন্দালনের ফলে ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনীতি গভীর খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন সরকার কোনো সমাধান না করে দীর্ঘমেয়াদের কৌশল নিয়ে বসে থাকলেও জনমনে আতঙ্ক রয়েই যাবে। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবে না। আর বিদেশী বিনিয়োগ ও আমদানিকারকেরাও আন্দোলন চলা অবস্থায় এ দেশে ফিরে তাকাবে না। এতে সুদূরপ্রসারী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দেশ।
No comments