স্বল্প জ্ঞান নিয়ে কী করে চলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়! by ইকতেদার আহমেদ
ইংরেজি
আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীর ছোট-বড় অনেক দেশের রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া,
নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি। পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর সর্ববৃহৎ সংস্থা জাতিসঙ্ঘে
সরকারি ভাষা হিসেবে পাঁচটি ভাষা স্বীকৃত হলেও ইংরেজির প্রাধান্যই অধিক
পরিলক্ষিত হয়। ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র
য্ক্তুরাজ্যের রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। ইউরোপের অন্যান্য প্রধান দেশ যেমনÑ
ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে, সুইডেন, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া প্রভৃতির
নাগরিকদের অনেকে ইংরেজি বলতে ও বুঝতে পারলেও বিশেষ কারণ ছাড়া ইংরেজিতে কথা
বলতে অনীহ। এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চীন ও জাপান বেশ উন্নত এবং উভয়
রাষ্ট্রের শতভাগ মানুষ শিক্ষিত। চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি এসব রাষ্ট্র
তাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নিজ নিজ ভাষার
ভিত্তিতেই গড়ে তুলেছে। এসব দেশে কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণার্থে গেলে তাকে
প্রথমে সেখানকার ভাষা শেখার জন্য ছয় মাস থেকে এক বছর অধ্যয়ন করতে হয় অতঃপর
তার উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ ঘটে।
প্রায় সব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা জাতীয়তার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কিন্তু কথনের সময় দেখা যায়, একই রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আঞ্চলিক ভাষা ভিন্ন। এসব আঞ্চলিক ভাষাকে মূল রাষ্ট্রভাষার উপভাষা বলা হয়। এসব উপভাষায় যারা কথা বলেন তাদের ভাষার কথন ও উচ্চারণ রাষ্ট্রভাষা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়Ñ আমাদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এ ভাষাটির সাধু ও চলিত, দু’টি রূপ রয়েছে। ‘সাধু’ বলতে আমরা বুঝি পরিমার্জিত সাহিত্যের ভাষা। অপর দিকে, বাঙালি শিক্ষিত সমাজের লোকেরা সচরাচর যে ভাষায় কথা বলে থাকেন, সেটি চলিত ভাষা। কথন ও লিখনে সাধু ও চলিত সংমিশ্রণ দূষণীয় হিসেবে ধরা হয়। আমাদের দেশে পত্রপত্রিকায় সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রে চলিত ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যদিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহিত্যের অংশ বলা চলে। আমাদের দেশের নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যেসব উপভাষায় কথা বলে, তা সাধু ও চলিত বাংলা ভাষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একজন বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তি যিনি ভাষাটির সাধু ও চলিত উভয় রূপে ব্যবহার বিষয়ে অভিজ্ঞ, তার পক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যে উপভাষা ব্যবহার করে, এ উপভাষাগুলো বোঝা এবং এসব উপভাষায় কথা বলা খুবই দুরূহ।
ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের অভিমত, এ পৃথিবীর যেসব স্থানে মানুষ বাস করে, সেসব স্থানের প্রতি ১২ মাইল অন্তর ভাষার কথন ও উচ্চারণে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। আমাদের বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলের মানুষ উপভাষায় কথা বলে তাদের অনেকের বাংলা ভাষায় কথা বলার সময় উচ্চারণে ভিন্নতার কারণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তারা কোন অঞ্চলের মানুষ।
ইংরেজি ভাষার জন্ম যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের প্রধান অংশের নাম ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের নাগরিকদের জাতীয়তা যেমন ইংলিশ, তেমনি তাদের ভাষাও ইংলিশ। তাই বলে ইংল্যান্ডের সব অঞ্চলের মানুষ যে একই উচ্চারণে ইংরেজি বলে থাকে, তা নয়। ইংল্যান্ডের অপর নাম ব্রিটেন এবং স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলস সমন্বয়ে গ্রেট ব্রিটেন গঠিত। ওয়েলস বলতে মূল ইংল্যান্ডকে বোঝায়। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড দু’টি ভিন্ন অঞ্চল। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীদের ভাষা ইংরেজি হলেও তাদের উচ্চারণভঙ্গি ভিন্ন। এ ভিন্নতার কারণে ভিনদেশের মানুষ, যারা ওয়েলসের একজন অধিবাসীর ইংরেজি কথন যত সহজে বুঝতে সক্ষম, একজন স্কটিশ বা আইরিশের ইংরেজি কথন তত সহজে বুঝতে সক্ষম নন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। এ দেশটির বেশির ভাগ মানুষ ইংরেজিতে কথা বললেও এবং এটি পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশটির এক-দশমাংশের কাছাকাছি লোক স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে, যাদের বেশির ভাগই ইংরেজি বুঝতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ইংরেজি উচ্চারণ যুক্তরাজ্যের মানুষের ইংরেজি উচ্চারণের চেয়ে ভিন্ন। আর এ ভিন্নতর উচ্চারণের কারণেই দেখা যায় আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত লোক, যারা ভালোভাবে যুক্তরাজ্যের একজন মানুষের ইংরেজি কথন বুঝতে সক্ষম, তারা ততটা ভালোভাবে য্ক্তুরাষ্ট্রের একজন মানুষের ইংরেজি কথন বুঝতে সক্ষম নন।
পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা উচ্চারণে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এ অসুবিধাটি প্রকৃতিগত এবং মুখের জড়তাজনিত। একজন মানুষ সহজে তার নিজের ভাষায় কথা বলতে পারে এবং তার নিজের ভাষাটি সহজে একই ভাষাভাষী অপরের কাছে বোধগম্য, এর পেছনে যে কারণটি রয়েছে তা হলোÑ উভয়ে নিজ ভাষা উচ্চারণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জড়তার সম্মুখীন হন না। এক ভাষাভাষী যখন সব ধরনের জড়তাকে অতিক্রম করে অপর ভাষায় কথা বলতে পারে, সেটি হলো তার ক্ষেত্রে জড়তা পরিহারে সার্থকতা। এ জড়তাকে আমাদের দেশের মাধ্যমিক স্কুলের জনৈক শিক্ষক একজন বাঙালির ইংরেজি উচ্চারণের ক্ষেত্রে মুখের আড়কোড় ভাঙা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ওই শিক্ষক একটি বেসরকারি স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীতে ইংরেজি পড়াতেন। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে নবম ও দশম শ্রেণীর ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে একটি প্রবন্ধ ছিল, যার শিরোনাম ‘ম্যান অন দ্য মুন’। প্রবন্ধটিতে অনেক কঠিন উচ্চারণের ইংরেজি শব্দ ছিল। ওই শিক্ষক ছাত্রদের এ প্রবন্ধটি পড়ানোর সময় বলেন, ‘তোমরা এটি ভালোভাবে পড়ো, তাহলে তোমাদের মুখের যত আড়কোড় আছে সব ভেঙে যাবে।’ আমরা আজো দেখি, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীদের অনেকেই ইংরেজি বুঝতে এবং ইংরেজিতে কথা বলতে অক্ষম।
আমাদের দেশের প্রথম শ্রেণী থেকে ¯œাতক পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণীতে ইংরেজি বাধ্যতামূলক একটি বিষয়। বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করা ছাত্রছাত্রী ১২টি শ্রেণীতে ইংরেজি অধ্যয়নের পর স্নাতক পাস করলেও শুদ্ধভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে অক্ষম। এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা যখন রাশিয়া, কোরিয়া, জাপান, চীন, জার্মানি প্রভৃতি দেশে গিয়ে এক বছর ওই সব দেশের ভাষা অধ্যয়নের পর ওই দেশের ভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ওই দেশের ভাষা বলতে ও লিখতে পারছেন, সে ক্ষেত্রে একই ছাত্রছাত্রীরা একাদিক্রমে ১২টি শ্রেণীতে ইংরেজি অধ্যয়নের পরও ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারবে নাÑ এটি কী করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে!
রাশিয়া, জার্মানি, কোরিয়া, চীন, জাপান প্রভৃতি উন্নত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। এসব রাষ্ট্রের প্রায় শতভাগ মানুষ নিজ দেশের ভাষায় শিক্ষালাভ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে থাকে। এসব দেশে একমাত্র যারা বিদেশ বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করে অথবা দোভাষী হিসেবে কাজ করে বা ইংরেজি শিক্ষাদানের সাথে সম্পৃক্ত, তারাই ইংরেজি অধ্যয়ন করে। এসব রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়Ñ বিদেশীদের ইংরেজি উচ্চারণভঙ্গি যাই হোক না কেন, তারা তা বুঝতে সক্ষম এবং শুদ্ধভাবে লিখতেও সক্ষম। এসব রাষ্ট্রের দুয়েকটি, বিশেষত চীন ও জাপানের ক্ষেত্রে দেখা যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ইংরেজি বলতে ও বুঝতে সক্ষম হলেও নিজ দেশ ও ভাষার মর্যাদার প্রশ্নে বিদেশীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় ইংরেজি বলা পরিহার করে দোভাষীর সাহায্য গ্রহণ করেন।
আমরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের শাসনাধীন থাকাবস্থায় অফিস আদালতের ভাষা ছিল ইংরেজি। সে সময় অফিস আদালতে কর্মকর্তা ও করণিক পদে যারা চাকরি করতেন তারা সবাই ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারতেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর রাষ্ট্রভাষা বাংলা করা হলে অফিস আদালতের ভাষাও বাংলা হয়ে যায়। ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশের যারা কর্মকর্তা ও করণিক পদে চাকরি করতেন, তাদের সাথে বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যালয়ে যারা কর্মকর্তা ও করণিক পদে চাকরি করছেন এদের তুলনা করলে দেখা যায়, এদের ইংরেজি বলা ও লেখার সক্ষমতা নি¤œস্তরের। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়ার কারণে এবং অফিস আদালতের কাজকর্ম বাংলায় সমাধা হয় বিধায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া অপরাপর মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের ইংরেজির ওপর পরিপূর্ণ জ্ঞান অত্যাবশ্যক নয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের জন্য এটি যে অত্যাবশ্যক, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকসহ কোনো শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে দ্বিমত নেই। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে যখন যারা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা সব সময় সচেষ্ট ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব এমন ধরনের ব্যক্তির ওপর অর্পণ করবেন যিনি ভালোভাবে ইংরেজি বলতে, বুঝতে ও লিখতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে তা যে রাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তা সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত একটি ঘটনাকে উপলক্ষ করে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান প্রেদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসে। তাদের সফরের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব বিষয়ে কথা বলা এবং এর পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতা, শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ, বাল্যবিয়ে এবং রোহিঙ্গা প্রশ্নে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তা দূরীকরণের উপায় উদ্ভাবন। প্রতিনিধিদলটি সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটির পর প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বহুল প্রচারিত ইংরেজি ডেইলি স্টার এবং দেশের অন্যান্য বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন নয়। ওই সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিনিধিদলের প্রধান বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং ডেইলি স্টার পত্রিকাটি হাতে নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বিগ্নÑ এ বিশেষ কারণেই আমাদের বাংলাদেশে এ সফর। প্রতিনিধিদলের প্রধানের বক্তব্য প্রদানের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত বিবৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা কোনোভাবেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি খণ্ডন করে না। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির মূল কাজ হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, সে বিষয়ে পার্লামেন্টে প্রতিবেদন দাখিল। তাই সামান্যতম জ্ঞান আছেÑ এমন কারো পক্ষে না বোঝার কথা নয়, কেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিশেষায়িত মন্ত্রণালয়। এর মূল কাজ, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্্েরর সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ। যেকোনো মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকেন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের কাজের বিশেষ প্রকৃতির কারণে ইংরেজির ওপর ভালো দখল থাকা আবশ্যক। এ দখল বলা, বোঝা ও লেখাÑ এ তিনটির ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দেশবাসীর সামনে যা ব্যক্ত করেছেন তা প্রতিনিধিদলের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি সচেতনভাবে বক্তব্যটি দিয়ে থাকেন সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন সচেতনভাবে এ ধরনের ভিন্নধর্মী বক্তব্য দেয়ার অবকাশ কোথায়? আর যদি অবকাশ না থেকেই থাকে তাহলে কি আমরা বলব, ইংরেজিতে স্বল্প জ্ঞান নিয়ে প্রতিমন্ত্রী তার দায়িত্বে আসীন হয়েছেন!
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com
প্রায় সব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা জাতীয়তার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কিন্তু কথনের সময় দেখা যায়, একই রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আঞ্চলিক ভাষা ভিন্ন। এসব আঞ্চলিক ভাষাকে মূল রাষ্ট্রভাষার উপভাষা বলা হয়। এসব উপভাষায় যারা কথা বলেন তাদের ভাষার কথন ও উচ্চারণ রাষ্ট্রভাষা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়Ñ আমাদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এ ভাষাটির সাধু ও চলিত, দু’টি রূপ রয়েছে। ‘সাধু’ বলতে আমরা বুঝি পরিমার্জিত সাহিত্যের ভাষা। অপর দিকে, বাঙালি শিক্ষিত সমাজের লোকেরা সচরাচর যে ভাষায় কথা বলে থাকেন, সেটি চলিত ভাষা। কথন ও লিখনে সাধু ও চলিত সংমিশ্রণ দূষণীয় হিসেবে ধরা হয়। আমাদের দেশে পত্রপত্রিকায় সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রে চলিত ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যদিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহিত্যের অংশ বলা চলে। আমাদের দেশের নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যেসব উপভাষায় কথা বলে, তা সাধু ও চলিত বাংলা ভাষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একজন বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তি যিনি ভাষাটির সাধু ও চলিত উভয় রূপে ব্যবহার বিষয়ে অভিজ্ঞ, তার পক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যে উপভাষা ব্যবহার করে, এ উপভাষাগুলো বোঝা এবং এসব উপভাষায় কথা বলা খুবই দুরূহ।
ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের অভিমত, এ পৃথিবীর যেসব স্থানে মানুষ বাস করে, সেসব স্থানের প্রতি ১২ মাইল অন্তর ভাষার কথন ও উচ্চারণে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। আমাদের বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলের মানুষ উপভাষায় কথা বলে তাদের অনেকের বাংলা ভাষায় কথা বলার সময় উচ্চারণে ভিন্নতার কারণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তারা কোন অঞ্চলের মানুষ।
ইংরেজি ভাষার জন্ম যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের প্রধান অংশের নাম ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের নাগরিকদের জাতীয়তা যেমন ইংলিশ, তেমনি তাদের ভাষাও ইংলিশ। তাই বলে ইংল্যান্ডের সব অঞ্চলের মানুষ যে একই উচ্চারণে ইংরেজি বলে থাকে, তা নয়। ইংল্যান্ডের অপর নাম ব্রিটেন এবং স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলস সমন্বয়ে গ্রেট ব্রিটেন গঠিত। ওয়েলস বলতে মূল ইংল্যান্ডকে বোঝায়। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড দু’টি ভিন্ন অঞ্চল। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীদের ভাষা ইংরেজি হলেও তাদের উচ্চারণভঙ্গি ভিন্ন। এ ভিন্নতার কারণে ভিনদেশের মানুষ, যারা ওয়েলসের একজন অধিবাসীর ইংরেজি কথন যত সহজে বুঝতে সক্ষম, একজন স্কটিশ বা আইরিশের ইংরেজি কথন তত সহজে বুঝতে সক্ষম নন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। এ দেশটির বেশির ভাগ মানুষ ইংরেজিতে কথা বললেও এবং এটি পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশটির এক-দশমাংশের কাছাকাছি লোক স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে, যাদের বেশির ভাগই ইংরেজি বুঝতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ইংরেজি উচ্চারণ যুক্তরাজ্যের মানুষের ইংরেজি উচ্চারণের চেয়ে ভিন্ন। আর এ ভিন্নতর উচ্চারণের কারণেই দেখা যায় আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত লোক, যারা ভালোভাবে যুক্তরাজ্যের একজন মানুষের ইংরেজি কথন বুঝতে সক্ষম, তারা ততটা ভালোভাবে য্ক্তুরাষ্ট্রের একজন মানুষের ইংরেজি কথন বুঝতে সক্ষম নন।
পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা উচ্চারণে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এ অসুবিধাটি প্রকৃতিগত এবং মুখের জড়তাজনিত। একজন মানুষ সহজে তার নিজের ভাষায় কথা বলতে পারে এবং তার নিজের ভাষাটি সহজে একই ভাষাভাষী অপরের কাছে বোধগম্য, এর পেছনে যে কারণটি রয়েছে তা হলোÑ উভয়ে নিজ ভাষা উচ্চারণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জড়তার সম্মুখীন হন না। এক ভাষাভাষী যখন সব ধরনের জড়তাকে অতিক্রম করে অপর ভাষায় কথা বলতে পারে, সেটি হলো তার ক্ষেত্রে জড়তা পরিহারে সার্থকতা। এ জড়তাকে আমাদের দেশের মাধ্যমিক স্কুলের জনৈক শিক্ষক একজন বাঙালির ইংরেজি উচ্চারণের ক্ষেত্রে মুখের আড়কোড় ভাঙা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ওই শিক্ষক একটি বেসরকারি স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীতে ইংরেজি পড়াতেন। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে নবম ও দশম শ্রেণীর ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে একটি প্রবন্ধ ছিল, যার শিরোনাম ‘ম্যান অন দ্য মুন’। প্রবন্ধটিতে অনেক কঠিন উচ্চারণের ইংরেজি শব্দ ছিল। ওই শিক্ষক ছাত্রদের এ প্রবন্ধটি পড়ানোর সময় বলেন, ‘তোমরা এটি ভালোভাবে পড়ো, তাহলে তোমাদের মুখের যত আড়কোড় আছে সব ভেঙে যাবে।’ আমরা আজো দেখি, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীদের অনেকেই ইংরেজি বুঝতে এবং ইংরেজিতে কথা বলতে অক্ষম।
আমাদের দেশের প্রথম শ্রেণী থেকে ¯œাতক পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণীতে ইংরেজি বাধ্যতামূলক একটি বিষয়। বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করা ছাত্রছাত্রী ১২টি শ্রেণীতে ইংরেজি অধ্যয়নের পর স্নাতক পাস করলেও শুদ্ধভাবে ইংরেজি বলতে ও লিখতে অক্ষম। এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা যখন রাশিয়া, কোরিয়া, জাপান, চীন, জার্মানি প্রভৃতি দেশে গিয়ে এক বছর ওই সব দেশের ভাষা অধ্যয়নের পর ওই দেশের ভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ওই দেশের ভাষা বলতে ও লিখতে পারছেন, সে ক্ষেত্রে একই ছাত্রছাত্রীরা একাদিক্রমে ১২টি শ্রেণীতে ইংরেজি অধ্যয়নের পরও ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারবে নাÑ এটি কী করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে!
রাশিয়া, জার্মানি, কোরিয়া, চীন, জাপান প্রভৃতি উন্নত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। এসব রাষ্ট্রের প্রায় শতভাগ মানুষ নিজ দেশের ভাষায় শিক্ষালাভ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে থাকে। এসব দেশে একমাত্র যারা বিদেশ বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করে অথবা দোভাষী হিসেবে কাজ করে বা ইংরেজি শিক্ষাদানের সাথে সম্পৃক্ত, তারাই ইংরেজি অধ্যয়ন করে। এসব রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়Ñ বিদেশীদের ইংরেজি উচ্চারণভঙ্গি যাই হোক না কেন, তারা তা বুঝতে সক্ষম এবং শুদ্ধভাবে লিখতেও সক্ষম। এসব রাষ্ট্রের দুয়েকটি, বিশেষত চীন ও জাপানের ক্ষেত্রে দেখা যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ইংরেজি বলতে ও বুঝতে সক্ষম হলেও নিজ দেশ ও ভাষার মর্যাদার প্রশ্নে বিদেশীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় ইংরেজি বলা পরিহার করে দোভাষীর সাহায্য গ্রহণ করেন।
আমরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের শাসনাধীন থাকাবস্থায় অফিস আদালতের ভাষা ছিল ইংরেজি। সে সময় অফিস আদালতে কর্মকর্তা ও করণিক পদে যারা চাকরি করতেন তারা সবাই ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারতেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর রাষ্ট্রভাষা বাংলা করা হলে অফিস আদালতের ভাষাও বাংলা হয়ে যায়। ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশের যারা কর্মকর্তা ও করণিক পদে চাকরি করতেন, তাদের সাথে বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যালয়ে যারা কর্মকর্তা ও করণিক পদে চাকরি করছেন এদের তুলনা করলে দেখা যায়, এদের ইংরেজি বলা ও লেখার সক্ষমতা নি¤œস্তরের। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়ার কারণে এবং অফিস আদালতের কাজকর্ম বাংলায় সমাধা হয় বিধায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া অপরাপর মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের ইংরেজির ওপর পরিপূর্ণ জ্ঞান অত্যাবশ্যক নয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের জন্য এটি যে অত্যাবশ্যক, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকসহ কোনো শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে দ্বিমত নেই। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে যখন যারা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা সব সময় সচেষ্ট ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব এমন ধরনের ব্যক্তির ওপর অর্পণ করবেন যিনি ভালোভাবে ইংরেজি বলতে, বুঝতে ও লিখতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে তা যে রাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তা সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত একটি ঘটনাকে উপলক্ষ করে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান প্রেদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসে। তাদের সফরের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব বিষয়ে কথা বলা এবং এর পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতা, শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ, বাল্যবিয়ে এবং রোহিঙ্গা প্রশ্নে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তা দূরীকরণের উপায় উদ্ভাবন। প্রতিনিধিদলটি সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটির পর প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বহুল প্রচারিত ইংরেজি ডেইলি স্টার এবং দেশের অন্যান্য বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন নয়। ওই সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিনিধিদলের প্রধান বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং ডেইলি স্টার পত্রিকাটি হাতে নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বিগ্নÑ এ বিশেষ কারণেই আমাদের বাংলাদেশে এ সফর। প্রতিনিধিদলের প্রধানের বক্তব্য প্রদানের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত বিবৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা কোনোভাবেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি খণ্ডন করে না। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির মূল কাজ হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, সে বিষয়ে পার্লামেন্টে প্রতিবেদন দাখিল। তাই সামান্যতম জ্ঞান আছেÑ এমন কারো পক্ষে না বোঝার কথা নয়, কেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিশেষায়িত মন্ত্রণালয়। এর মূল কাজ, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্্েরর সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ। যেকোনো মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকেন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের কাজের বিশেষ প্রকৃতির কারণে ইংরেজির ওপর ভালো দখল থাকা আবশ্যক। এ দখল বলা, বোঝা ও লেখাÑ এ তিনটির ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দেশবাসীর সামনে যা ব্যক্ত করেছেন তা প্রতিনিধিদলের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি সচেতনভাবে বক্তব্যটি দিয়ে থাকেন সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন সচেতনভাবে এ ধরনের ভিন্নধর্মী বক্তব্য দেয়ার অবকাশ কোথায়? আর যদি অবকাশ না থেকেই থাকে তাহলে কি আমরা বলব, ইংরেজিতে স্বল্প জ্ঞান নিয়ে প্রতিমন্ত্রী তার দায়িত্বে আসীন হয়েছেন!
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com
No comments