দেশ থাকতেও পরিচয়হীন যে শিশুরা
লেবাননের একটি শরণার্থী শিবিরে খেলায় মেতেছে সিরীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি |
দেশ
আছে, তবু তারা দেশে নেই। জন্ম-পরিচয় আছে, কিন্তু পরিচয় দেওয়ার মতো সনদ
নেই। এমন এক পরিস্থিতিতে বিদেশের মাটিতে জন্ম নিচ্ছে সিরিয়ার অনেক শিশু।
প্রতিবেশী কোনো দেশের শরণার্থী শিবিরে পরের দয়ায় বড় হচ্ছে তারা। এমন এক শিশু ইসরা। লেবাননের একটি হাসপাতালে তার জন্ম। কিন্তু শরণার্থী বলে আইনি পরিচয় নেই। এ নিয়ে চিন্তিত তার মা ইয়াসমিন খালাফ। বার্তা
সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, গোলাপি কম্বলে জড়ানো ইসরার মতো প্রায় ১০
হাজার সিরিয়ার শরণার্থী শিশু লেবাননে জন্মগ্রহণ করেছে। জন্মনিবন্ধনের
নানা প্রতিবন্ধকতায় তারা রাষ্ট্রহীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংগঠন ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, সিরিয়ায় ২০১১ সালের মার্চে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪২ হাজার শরণার্থী শিশুর মধ্যে ৭০ শতাংশের জন্ম লেবাননে। তাদের কোনো জন্মসনদ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শরণার্থী কর্মী বলেন, বাস্তবিক অর্থে ওই শিশুদের কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রামাণিক দলিল ছাড়া ওই শিশুরা হাসপাতালে যেতে পারবে না এবং পড়াশোনা করতে পারবে না। তাদের কোনো ধরনের অধিকার থাকবে না।
সিরিয়ার শরণার্থীরা বৈরুতের দূতাবাসে তাঁদের নবজাতকদের নাম নিবন্ধন করতে পারেন। কিন্তু অনেকে সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ তাঁরা বিরোধী এলাকা সামরিক বাহিনী থেকে কিংবা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে এসেছেন। শরণার্থীরা লেবানন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিশুদের নাম নিবন্ধন করতে পারেন। কিন্তু যুদ্ধচলাকালে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের জন্য সে পদ্ধতিটি অনেক জটিল।
শিশুদের রাষ্ট্রহীন হওয়ার ওপর জোর দিয়ে অ্যানা পোলার্ড নামের ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা জানান, সব পদ্ধতিতেই বাধা রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করতে হলে এ ব্যাপারে জন্মসনদ লাগবে। চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেটি সংগ্রহ করতে হবে। তাদের অবশ্যই পরিচয় নিশ্চিতকরণ পরিচয়পত্র, তাঁদের বিবাহের সনদ ও আবাসিক অবস্থার কাগজপত্র থাকতে হবে।
এ কারণে পদ্ধতিটি আরও জটিল হয়েছে। কিন্তু পালিয়ে আসার সময় অনেকেই বিয়ের কাগজপত্র আনতে পারেননি। তাঁদের অনেকে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছেন। অনেকের আবার আবাসনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে চার বছরে গড়িয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধ। অনেক সিরীয় শরণার্থী লেবাননের লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।
পোলার্ড বলেন, ‘লেবাননে একটি বিয়েনিবন্ধন জন্মনিবন্ধনের চেয়েও কঠিন। অনেক শরণার্থী ও সন্তানদের জন্য তাঁরা কোনো নিবন্ধন সংগ্রহ করতে পারেননি।
অন্যদিকে শিশু জন্মের এক বছরের মধ্যে জন্মসনদ সংগ্রহ করতে না পারলে কেবল আদালতই জন্মসনদ দিতে পারবেন। যে পদ্ধতি আরও সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
জামাল হালাবির ছেলে আইহাম গত বছর জন্মগ্রহণ করে। সে-ই জানে জন্মসনদ সংগ্রহ করতে তাঁকে কী ভোগান্তিটাই পোহাতে হয়েছে। হালাবি সিরিয়ার লাটাকিয়া প্রদেশ থেকে ২০১৩ সালে বাধ্যতামূলক সেনাদলে থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও তিন মাসের সন্তান আহমদকে নিয়ে লেবাননে পালিয়ে আসেন।
কিন্তু ২০১৪ সালে যখন তাঁর দ্বিতীয় ছেলে আইহাম জন্ম নেয়। আইহামের জন্মসনদ সংগ্রহ করতে গেলে সিরিয়া দূতাবাস সামরিক বাহিনীতে চাকরি করায় কোনো প্রশ্ন করেনি। এরপর আবাসিক বৈধতার কাগজের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি আইহামের জন্মনিবন্ধন করতে পারেননি। আট মাস পরে মেয়াদ বাড়ানোর পরই কেবল তিনি সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনোভাবে এটি করতে চেয়েছি। ওর একটি পরিচয় থাকা দরকার। ও আমার সন্তান। আমি দেখাতে চাই আমার থেকেই ও এসেছে। ওর নার্সারি ও বিদ্যালয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’ শিশুদের জন্মনিবন্ধনের প্রতি উৎসাহিত করতে ইউএনএইচসিআর ও তাদের মিত্ররা অভিভাবকদের উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে আশ্রয় দেওয়া দেশকে এ পদ্ধতিটি সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে প্রায় ১১ লাখ সিরীয় নাগরিক লেবাননে আশ্রয় নিয়েছেন। ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে তাঁরা বসবাস করছেন। শিশুদের জন্মনিবন্ধন তাঁদের কাছে গুরুত্ব পাওয়ার মতো ব্যাপার নয়।
এক শরণার্থী কর্মী জানান, কেউ কেউ আবার সিরিয়ায় শিশুদের জন্মনিবন্ধন করতে সীমান্তে দালাল ধরে টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু এটি একটি বড় সমস্যা। কারণ শিশুরা সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেনি।
যখন তাঁরা সীমান্তে আসেন, সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া নিবন্ধিত একটি শিশু কীভাবে লেবাননে পৌঁছতে পারে, তা লেবাননের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে জানতে চান। এসব কারণে সঠিক কাগজ সংগ্রহ কষ্টসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
হাসাকেহ প্রদেশের ইউসেফ সালাহের মেয়ে মিলার জন্মের পর থেকেই তার জন্মনিবন্ধনের পদ্ধতি শুরু করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা যখন সিরিয়ার বাড়িতে ফিরব, তখন কাগজপত্র ছাড়া সে সীমান্ত পার হতে পারবে না। জন্ম-সংক্রান্ত কাগজে স্বাক্ষর করতে চিকিৎসক ১০ হাজার লেবানিজ পাউন্ড দাবি করেছেন বলে জানান ইউসেফ। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে টাকা ছিল না। বাসে যাওয়ার মতো টাকা না থাকায় সমস্ত পথ হেঁটেই আমি হাসপাতালে গেছি।’
অবশেষে চিকিৎসক নমনীয় হতে পারেন। মিলার কাগজপত্রের কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু এত কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ জন্মনিবন্ধন অনুমোদন করবে কি না, এর নিশ্চয়তা নেই।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংগঠন ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, সিরিয়ায় ২০১১ সালের মার্চে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪২ হাজার শরণার্থী শিশুর মধ্যে ৭০ শতাংশের জন্ম লেবাননে। তাদের কোনো জন্মসনদ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শরণার্থী কর্মী বলেন, বাস্তবিক অর্থে ওই শিশুদের কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রামাণিক দলিল ছাড়া ওই শিশুরা হাসপাতালে যেতে পারবে না এবং পড়াশোনা করতে পারবে না। তাদের কোনো ধরনের অধিকার থাকবে না।
সিরিয়ার শরণার্থীরা বৈরুতের দূতাবাসে তাঁদের নবজাতকদের নাম নিবন্ধন করতে পারেন। কিন্তু অনেকে সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ তাঁরা বিরোধী এলাকা সামরিক বাহিনী থেকে কিংবা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে এসেছেন। শরণার্থীরা লেবানন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিশুদের নাম নিবন্ধন করতে পারেন। কিন্তু যুদ্ধচলাকালে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের জন্য সে পদ্ধতিটি অনেক জটিল।
শিশুদের রাষ্ট্রহীন হওয়ার ওপর জোর দিয়ে অ্যানা পোলার্ড নামের ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা জানান, সব পদ্ধতিতেই বাধা রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করতে হলে এ ব্যাপারে জন্মসনদ লাগবে। চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেটি সংগ্রহ করতে হবে। তাদের অবশ্যই পরিচয় নিশ্চিতকরণ পরিচয়পত্র, তাঁদের বিবাহের সনদ ও আবাসিক অবস্থার কাগজপত্র থাকতে হবে।
এ কারণে পদ্ধতিটি আরও জটিল হয়েছে। কিন্তু পালিয়ে আসার সময় অনেকেই বিয়ের কাগজপত্র আনতে পারেননি। তাঁদের অনেকে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছেন। অনেকের আবার আবাসনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে চার বছরে গড়িয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধ। অনেক সিরীয় শরণার্থী লেবাননের লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।
পোলার্ড বলেন, ‘লেবাননে একটি বিয়েনিবন্ধন জন্মনিবন্ধনের চেয়েও কঠিন। অনেক শরণার্থী ও সন্তানদের জন্য তাঁরা কোনো নিবন্ধন সংগ্রহ করতে পারেননি।
অন্যদিকে শিশু জন্মের এক বছরের মধ্যে জন্মসনদ সংগ্রহ করতে না পারলে কেবল আদালতই জন্মসনদ দিতে পারবেন। যে পদ্ধতি আরও সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
জামাল হালাবির ছেলে আইহাম গত বছর জন্মগ্রহণ করে। সে-ই জানে জন্মসনদ সংগ্রহ করতে তাঁকে কী ভোগান্তিটাই পোহাতে হয়েছে। হালাবি সিরিয়ার লাটাকিয়া প্রদেশ থেকে ২০১৩ সালে বাধ্যতামূলক সেনাদলে থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও তিন মাসের সন্তান আহমদকে নিয়ে লেবাননে পালিয়ে আসেন।
কিন্তু ২০১৪ সালে যখন তাঁর দ্বিতীয় ছেলে আইহাম জন্ম নেয়। আইহামের জন্মসনদ সংগ্রহ করতে গেলে সিরিয়া দূতাবাস সামরিক বাহিনীতে চাকরি করায় কোনো প্রশ্ন করেনি। এরপর আবাসিক বৈধতার কাগজের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি আইহামের জন্মনিবন্ধন করতে পারেননি। আট মাস পরে মেয়াদ বাড়ানোর পরই কেবল তিনি সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনোভাবে এটি করতে চেয়েছি। ওর একটি পরিচয় থাকা দরকার। ও আমার সন্তান। আমি দেখাতে চাই আমার থেকেই ও এসেছে। ওর নার্সারি ও বিদ্যালয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’ শিশুদের জন্মনিবন্ধনের প্রতি উৎসাহিত করতে ইউএনএইচসিআর ও তাদের মিত্ররা অভিভাবকদের উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে আশ্রয় দেওয়া দেশকে এ পদ্ধতিটি সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে প্রায় ১১ লাখ সিরীয় নাগরিক লেবাননে আশ্রয় নিয়েছেন। ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে তাঁরা বসবাস করছেন। শিশুদের জন্মনিবন্ধন তাঁদের কাছে গুরুত্ব পাওয়ার মতো ব্যাপার নয়।
এক শরণার্থী কর্মী জানান, কেউ কেউ আবার সিরিয়ায় শিশুদের জন্মনিবন্ধন করতে সীমান্তে দালাল ধরে টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু এটি একটি বড় সমস্যা। কারণ শিশুরা সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেনি।
যখন তাঁরা সীমান্তে আসেন, সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া নিবন্ধিত একটি শিশু কীভাবে লেবাননে পৌঁছতে পারে, তা লেবাননের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে জানতে চান। এসব কারণে সঠিক কাগজ সংগ্রহ কষ্টসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
হাসাকেহ প্রদেশের ইউসেফ সালাহের মেয়ে মিলার জন্মের পর থেকেই তার জন্মনিবন্ধনের পদ্ধতি শুরু করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা যখন সিরিয়ার বাড়িতে ফিরব, তখন কাগজপত্র ছাড়া সে সীমান্ত পার হতে পারবে না। জন্ম-সংক্রান্ত কাগজে স্বাক্ষর করতে চিকিৎসক ১০ হাজার লেবানিজ পাউন্ড দাবি করেছেন বলে জানান ইউসেফ। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে টাকা ছিল না। বাসে যাওয়ার মতো টাকা না থাকায় সমস্ত পথ হেঁটেই আমি হাসপাতালে গেছি।’
অবশেষে চিকিৎসক নমনীয় হতে পারেন। মিলার কাগজপত্রের কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু এত কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ জন্মনিবন্ধন অনুমোদন করবে কি না, এর নিশ্চয়তা নেই।
No comments