প্রথম বই প্রকাশের গল্প by হাসান আজিজুল হক
আমার প্রথম গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হয়
সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য। এটি ছিল গল্পগ্রন্থ, তাতে গল্প আছে দশটি-
‘শকুন’, ‘তৃষ্ণা’, ‘একটি চরিত্রহীনের সপক্ষে’, ‘উত্তর বসন্তে’, ‘বিষণ্ন
রাত্রি : প্রথম প্রহর’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘সীমানা’, ‘একটি আত্মরক্ষার
কাহিনী’, ‘আবর্তের সম্মুক্ষে’, ‘গুনীন’। আমার তখনকার ভালোলাগার বিষয়টা তো
ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিলই। খুবই ভালো লাগছিল তখন। কথাক্রমেই বলতে হয়, আমি
যে গল্প লিখেছি, বা এ পথে চলেছি, তাতে আমার কোনো দীক্ষাগুরু নেই। প্রচুর
গল্প পড়েছি আমি, রবীন্দ্রনাথ তো পড়েইছি। কিন্তু আমার কাজটা আমিই করেছি। আমি
প্রথম গল্প লিখি ‘শকুন’। তা এ গ্রন্থেরও একেবারে প্রথম গল্প। এ গল্পে আমার
সরাসরি পার্টিসিপেশনও আছে। এখানে একটা স্কুল বালক আছে, সেই হচ্ছি আমি, আর
আছে কয়েকজন রাখাল। আমার সামনেই ঘটনা ঘটল। এটা শকুন নিয়ে গল্প। সেটা হঠাৎ
তাদের সামনে এসে পড়ল। শকুনটা তো শেষ পর্যন্ত মারাই গেল। এ গল্প নিয়ে তখন
খুব আলোচনা হয়েছিল। আমার তো মনে হয় এ গল্পটিই এ গ্রন্থটিকে টেনে নিয়ে গেছে।
গ্রন্থটির এডিশন নানাভাবে হয়েছে। এ গল্পটি ছাপা হয় আবু জাফর শামসুদ্দীন
সম্পাদিত সমকাল নামের সাহিত্য পত্রিকায়। এটি তখনকার অত্যন্ত নামকরা সাহিত্য
পত্রিকা ছিল। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। এখনকার
মুক্তধারার প্রচ্ছদে একটা মেয়ে যে ঢেউয়ের দিকে যাচ্ছে, একটা পুরুষের অবয়ব
দেখা যায়, তখন তা ছিল না। তাতে ছিল এক নারীর মুখ। একটানে আঁকা, হালকা
বেগুনির ওপর শাদা টান ছিল তাতে। এখনও আমার চোখের সামনে তা একেবারে ভাসছে।
সে কি উত্তেজনা আমার। খুবই ভালো লাগছিল তখন।
আমি তো আর কোনো প্রকাশকের কাছে যাইনি, বা যেতে হয়নি। তখন ছিল পাকিস্তান লেখক সংঘ। পূর্ব পাকিস্তানে এর একটা শাখা ছিল। তাদের একটা সাহিত্য পত্রিকাও ছিল, নাম পরিক্রমা। তাতে আমার তিন-চারটা গল্পও ছাপা হয়, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘উত্তর বসন্তে’, ‘তৃষ্ণা’ নামের গল্পসমূহ সেখানে ছাপা হয়েছিল বলে মনে হয়। এর প্রকাশনার সঙ্গে মুনীর চৌধুরী, রফিকুল ইসলামরা জড়িত ছিল। আমায় একদিন রফিকুল ইসলামই বললেন ছড়ানো-ছিটানো গল্পগুলো দিয়ে একটা গল্পগ্রন্থ করে ফেলতে। তখন আমি পাণ্ডুুলিপি জমা দিলাম। সেটা সিলেক্টও হল। মুনীর চৌধুরী আমার লেখা খুব পছন্দ করতেন। তিনিই টিভিতে আলোচনাও করলেন। তখন এসব প্রচারণার মূল্য ছিল। রেডিওতে কিছুটা প্রচার হতো। তবে তা নিয়ে তখনও কেউ তেমন মাথা ঘামায়নি। টিভিতে প্রচারণা নিয়ে কেউ কেউ কানাঘুষাও করল। তারা বলল যে, লেখক সংঘ এমন একটা বই বের করে একে জাস্টিফাই করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাহিত্যিক দলাদলি, ঝগড়াঝাঁটি, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, সেই ষাট দশকেও ছিল। কিন্তু মুনীর চৌধুরীই যেন আমায় উদ্ধার করলেন। তিনি কথাও বলতেন চমৎকার- তখনকার সেই মধ্যবয়সের মানুষটা কথা বলতেন অনবরত। আবু হেনা মোস্তফা কামালের মতো চৌকস কথাওয়ালাও তার কথা শুনতেন। আবু হেনা মোস্তফা কামালের মতো জানাশোনা নাক-উঁচু লোকের এ ধরনের ব্যবহার তো একটা ঘটনা বটে।
আমার এ বইটা পরবর্তী সময়ে মুক্তধারাও বের করেছে, সাহিত্য প্রকাশও বের করেছে। মুক্তধারা তখন তাদের পুঁথিঘরের পাঠ্যপুস্তকের ব্যবসার সঙ্গে সৃজনশীল আর মননশীল গ্রন্থও বের করত। এটা আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে মুক্তধারার মালিক চিত্তরঞ্জন বাবু আমার লেখা বেশ পছন্দ করতেন। তিনি লেখাপড়া তেমন জানতেন না, কিন্তু চমৎকার কাজ করতে চাইতেন- তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তার ভাগ্নে সব করত। তিনি কিন্তু অনেক টাকা-পয়সার মালিক ছিলেন। প্রকাশনার অনেক কাজই হতো, লেখকদের টাকা-পয়সাও দিতেন তিনি। প্রকাশনা জগতে তিনি তো একটা দৃষ্টান্ত। এখনকার গ্রন্থমেলায় তার বিরাট অবদান। তিনিই প্রথম বাংলা একাডেমিতে যাওয়ার পথে বই বিছিয়ে ফেব্র“য়ারিতে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন। তার আগ্রহ-উৎসাহ আমাদের প্রকাশনা শিল্পের এক অন্যতম ঘটনা। তখন নওরোজ কিতাবিস্তানও পাঠবইয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৃজনশীল গ্রন্থও করতে থাকলেন। তখন প্রকাশনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কে কার বই বের করবে? প্রকাশনা শিল্প তো তখনও আধুনিকতার স্পর্শ পায়নি।
তখনকার দিনে গল্পের চর্চা কিন্তু ভালোই হতো। আলাউদ্দীন আল আজাদ ছিলেন আমাদের প্রধান গল্পকার। গাফফ্ার চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত আলীরা লিখতেন। সর্দার জয়েন উদ্দীন, আবু ইসহাকরা গল্প লিখেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তখন অনেক গল্প লিখেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এরপর, মান্নান সৈয়দ আর কায়েস আহমেদ তো তারও পর গল্প লেখা শুরু করল। প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুবোধ ষোষ, মানিক তারও আগে গল্প লিখেছেন। তবে তখনকার সময়টা গল্পের জন্যই ভালোই ছিল। আমার কথাসাহিত্যের কথকতার প্রথম দিকে তা নিয়ে লিখেছি।
আমি তো ৫০-এর শেষ দিক থেকেই পলিটিক্স করি। আমার দুলাভাই-আপার দৌলতপুরের বাসাটা তো ছাত্র ইউনিয়নের অফিসই বানিয়ে ফেললাম। তখন রাজনীতি করতে গিয়ে মারও খেয়েছি। একসময় ভাসানীর দল করতাম। লেখক শিবির করেছি। আমার আর বদরুদ্দীন উমরের প্রভাবেই বলা যায় ইলিয়াস একসময় রাজনীতি করা শুরু করল। তার প্রথম দিকের লেখায় রাজনীতির কমিটমেন্ট বিষয়টা তেমন ছিল না। তবে সেই সময় সাহিত্য মুভমেন্ট হয়েছে। স্যুররিয়েলিজমরে নামে কী যে লিখত তারা- সামাজিক দায়বোধ, কমিটমেন্ট ইত্যাদি কিছুই ছিল না। বাস্তবকে তারা কেয়ার করত না, তারা সমানে কাফকা, কামু, ব্যোদলেয়ার নিয়ে মেতে থাকত। তাদের পত্রিকার নামও ছিল না। তাদের ভেতর অন্যতম বলা যেতে পারে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আসদা চৌধুরীকে। আমার তো ঢাকায় তেমন কেউ ছিল না, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গেই থাকতাম। সেই এক সময় গেছে তখন।
তবে আমার এ গল্পগ্রন্থেরও আগে শামুক নামের একটা উপন্যাস লিখে ফেলি, আমার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর, তা ছাপা হয় পূর্বমেঘ-এ। এটা দিয়ে তো আমি কমপিটিশনেও অংশ নিই। কলকাতায় তখন ‘মানিক স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হতো। প্রেমেন্দ্র মিত্ররা এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। আমি তাতে অংশ নিই, ২৮ থেকে ৫টার একটা লিস্টও করা হয়। ২৮টার লিস্টে এর নাম ছিল। এটি এবার গ্রন্থাকারে আসবে ইত্যাদি থেকে। ভূমিকাতে এসব কথা আছে।
তবে লেখা সম্পর্কীয় অনুভূতিটা আমি আমার এ গ্রন্থ থেকেই খানিকটা স্মরণও করানো যেতে পারে- ‘লেখা হয়ে গেলেই তা আর পড়তে ভালো লাগে না। নিজের পুরনো লেখার ব্যাপারে তো কথাই নেই। কাগজে-কলমে লেখাটা যা দাঁড়ায়, তা রচনার মানস পরিকল্পনার একটা কংকাল ছাড়া আর কি।’
আবারও গ্রন্থকথায় ফেরা যাক,- ‘শকুন’ তো আলোচনার ভিতর ছিলই, তা ছাড়া অন্য গল্পগুলো নিয়েও নানা মহলে কথাবার্তা হয়। ‘মন তার শঙ্খিনী’ নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। ‘গুনীন’ নামের যে গল্পটি আছে তা আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বা দেখা কোনো গল্প নয়। তবে এতে অনেক বৃদ্ধ অনেক ভাবে এতে যুক্ত আছেন। বরং বলা যায়, অনেক বৃদ্ধই তাতে নানা ভাবে আছেন। ‘উত্তর বসন্তে’ নামের গল্পে গৃহাহারার যন্ত্রণা, মানুষের অন্তর্গত আকুতি আছে। ‘তৃষ্ণা’ নামের গল্পে যে ছেলেটির নাম বাসেত, এমনটা একটা চরিত্র আমি পেয়েছি। সেই হঠাৎ লম্বা হয়ে যাওয়া ছেলের একটা অবয়ব এখানে আছে। এভাবে অনেক চরিত্র অনেক ভাবে আমার প্রথম গ্রন্থে এসেছে। সবই আমার দেখা জীবন, দেখা ছাড়া তো আমি লিখতে পারি না। তবে অনেক গ্রন্থ তো বের হল, এর পরের গ্রন্থ আত্মজা এ একটি করবী গাছ লিখে বাংলা একাডেমি পুরস্কারও পেলাম, তবে প্রথম বইয়ের প্রকাশের আনন্দ বা অনুভূতি তো অন্য কোথাও নেই।
গ্রন্থনা : কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
আমি তো আর কোনো প্রকাশকের কাছে যাইনি, বা যেতে হয়নি। তখন ছিল পাকিস্তান লেখক সংঘ। পূর্ব পাকিস্তানে এর একটা শাখা ছিল। তাদের একটা সাহিত্য পত্রিকাও ছিল, নাম পরিক্রমা। তাতে আমার তিন-চারটা গল্পও ছাপা হয়, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘উত্তর বসন্তে’, ‘তৃষ্ণা’ নামের গল্পসমূহ সেখানে ছাপা হয়েছিল বলে মনে হয়। এর প্রকাশনার সঙ্গে মুনীর চৌধুরী, রফিকুল ইসলামরা জড়িত ছিল। আমায় একদিন রফিকুল ইসলামই বললেন ছড়ানো-ছিটানো গল্পগুলো দিয়ে একটা গল্পগ্রন্থ করে ফেলতে। তখন আমি পাণ্ডুুলিপি জমা দিলাম। সেটা সিলেক্টও হল। মুনীর চৌধুরী আমার লেখা খুব পছন্দ করতেন। তিনিই টিভিতে আলোচনাও করলেন। তখন এসব প্রচারণার মূল্য ছিল। রেডিওতে কিছুটা প্রচার হতো। তবে তা নিয়ে তখনও কেউ তেমন মাথা ঘামায়নি। টিভিতে প্রচারণা নিয়ে কেউ কেউ কানাঘুষাও করল। তারা বলল যে, লেখক সংঘ এমন একটা বই বের করে একে জাস্টিফাই করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাহিত্যিক দলাদলি, ঝগড়াঝাঁটি, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, সেই ষাট দশকেও ছিল। কিন্তু মুনীর চৌধুরীই যেন আমায় উদ্ধার করলেন। তিনি কথাও বলতেন চমৎকার- তখনকার সেই মধ্যবয়সের মানুষটা কথা বলতেন অনবরত। আবু হেনা মোস্তফা কামালের মতো চৌকস কথাওয়ালাও তার কথা শুনতেন। আবু হেনা মোস্তফা কামালের মতো জানাশোনা নাক-উঁচু লোকের এ ধরনের ব্যবহার তো একটা ঘটনা বটে।
আমার এ বইটা পরবর্তী সময়ে মুক্তধারাও বের করেছে, সাহিত্য প্রকাশও বের করেছে। মুক্তধারা তখন তাদের পুঁথিঘরের পাঠ্যপুস্তকের ব্যবসার সঙ্গে সৃজনশীল আর মননশীল গ্রন্থও বের করত। এটা আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে মুক্তধারার মালিক চিত্তরঞ্জন বাবু আমার লেখা বেশ পছন্দ করতেন। তিনি লেখাপড়া তেমন জানতেন না, কিন্তু চমৎকার কাজ করতে চাইতেন- তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তার ভাগ্নে সব করত। তিনি কিন্তু অনেক টাকা-পয়সার মালিক ছিলেন। প্রকাশনার অনেক কাজই হতো, লেখকদের টাকা-পয়সাও দিতেন তিনি। প্রকাশনা জগতে তিনি তো একটা দৃষ্টান্ত। এখনকার গ্রন্থমেলায় তার বিরাট অবদান। তিনিই প্রথম বাংলা একাডেমিতে যাওয়ার পথে বই বিছিয়ে ফেব্র“য়ারিতে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন। তার আগ্রহ-উৎসাহ আমাদের প্রকাশনা শিল্পের এক অন্যতম ঘটনা। তখন নওরোজ কিতাবিস্তানও পাঠবইয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৃজনশীল গ্রন্থও করতে থাকলেন। তখন প্রকাশনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কে কার বই বের করবে? প্রকাশনা শিল্প তো তখনও আধুনিকতার স্পর্শ পায়নি।
তখনকার দিনে গল্পের চর্চা কিন্তু ভালোই হতো। আলাউদ্দীন আল আজাদ ছিলেন আমাদের প্রধান গল্পকার। গাফফ্ার চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত আলীরা লিখতেন। সর্দার জয়েন উদ্দীন, আবু ইসহাকরা গল্প লিখেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তখন অনেক গল্প লিখেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এরপর, মান্নান সৈয়দ আর কায়েস আহমেদ তো তারও পর গল্প লেখা শুরু করল। প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুবোধ ষোষ, মানিক তারও আগে গল্প লিখেছেন। তবে তখনকার সময়টা গল্পের জন্যই ভালোই ছিল। আমার কথাসাহিত্যের কথকতার প্রথম দিকে তা নিয়ে লিখেছি।
আমি তো ৫০-এর শেষ দিক থেকেই পলিটিক্স করি। আমার দুলাভাই-আপার দৌলতপুরের বাসাটা তো ছাত্র ইউনিয়নের অফিসই বানিয়ে ফেললাম। তখন রাজনীতি করতে গিয়ে মারও খেয়েছি। একসময় ভাসানীর দল করতাম। লেখক শিবির করেছি। আমার আর বদরুদ্দীন উমরের প্রভাবেই বলা যায় ইলিয়াস একসময় রাজনীতি করা শুরু করল। তার প্রথম দিকের লেখায় রাজনীতির কমিটমেন্ট বিষয়টা তেমন ছিল না। তবে সেই সময় সাহিত্য মুভমেন্ট হয়েছে। স্যুররিয়েলিজমরে নামে কী যে লিখত তারা- সামাজিক দায়বোধ, কমিটমেন্ট ইত্যাদি কিছুই ছিল না। বাস্তবকে তারা কেয়ার করত না, তারা সমানে কাফকা, কামু, ব্যোদলেয়ার নিয়ে মেতে থাকত। তাদের পত্রিকার নামও ছিল না। তাদের ভেতর অন্যতম বলা যেতে পারে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আসদা চৌধুরীকে। আমার তো ঢাকায় তেমন কেউ ছিল না, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গেই থাকতাম। সেই এক সময় গেছে তখন।
তবে আমার এ গল্পগ্রন্থেরও আগে শামুক নামের একটা উপন্যাস লিখে ফেলি, আমার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর, তা ছাপা হয় পূর্বমেঘ-এ। এটা দিয়ে তো আমি কমপিটিশনেও অংশ নিই। কলকাতায় তখন ‘মানিক স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হতো। প্রেমেন্দ্র মিত্ররা এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। আমি তাতে অংশ নিই, ২৮ থেকে ৫টার একটা লিস্টও করা হয়। ২৮টার লিস্টে এর নাম ছিল। এটি এবার গ্রন্থাকারে আসবে ইত্যাদি থেকে। ভূমিকাতে এসব কথা আছে।
তবে লেখা সম্পর্কীয় অনুভূতিটা আমি আমার এ গ্রন্থ থেকেই খানিকটা স্মরণও করানো যেতে পারে- ‘লেখা হয়ে গেলেই তা আর পড়তে ভালো লাগে না। নিজের পুরনো লেখার ব্যাপারে তো কথাই নেই। কাগজে-কলমে লেখাটা যা দাঁড়ায়, তা রচনার মানস পরিকল্পনার একটা কংকাল ছাড়া আর কি।’
আবারও গ্রন্থকথায় ফেরা যাক,- ‘শকুন’ তো আলোচনার ভিতর ছিলই, তা ছাড়া অন্য গল্পগুলো নিয়েও নানা মহলে কথাবার্তা হয়। ‘মন তার শঙ্খিনী’ নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। ‘গুনীন’ নামের যে গল্পটি আছে তা আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বা দেখা কোনো গল্প নয়। তবে এতে অনেক বৃদ্ধ অনেক ভাবে এতে যুক্ত আছেন। বরং বলা যায়, অনেক বৃদ্ধই তাতে নানা ভাবে আছেন। ‘উত্তর বসন্তে’ নামের গল্পে গৃহাহারার যন্ত্রণা, মানুষের অন্তর্গত আকুতি আছে। ‘তৃষ্ণা’ নামের গল্পে যে ছেলেটির নাম বাসেত, এমনটা একটা চরিত্র আমি পেয়েছি। সেই হঠাৎ লম্বা হয়ে যাওয়া ছেলের একটা অবয়ব এখানে আছে। এভাবে অনেক চরিত্র অনেক ভাবে আমার প্রথম গ্রন্থে এসেছে। সবই আমার দেখা জীবন, দেখা ছাড়া তো আমি লিখতে পারি না। তবে অনেক গ্রন্থ তো বের হল, এর পরের গ্রন্থ আত্মজা এ একটি করবী গাছ লিখে বাংলা একাডেমি পুরস্কারও পেলাম, তবে প্রথম বইয়ের প্রকাশের আনন্দ বা অনুভূতি তো অন্য কোথাও নেই।
গ্রন্থনা : কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
No comments