আর্সেনিকমুক্তি- ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই
সরকারি-বেসরকারি
নানা উদ্যোগে গত দুই দশকে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের আওতায় থাকা মানুষের
সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ ভাগে উন্নীত হলেও এখনও যে বিপুল মানুষ এই তরল বিষের
কাছে জিম্মি, বুধবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তার একটি
উদাহরণ। জানা যাচ্ছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের কেবল
দুধপাতিলা গ্রামেই গত ১০ বছরে আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে ৪৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
চরমভাবে আর্সেনিক আক্রান্ত ওই গ্রামে ১৯৯৫ সালে দেড় শতাধিক আর্সেনিক রোগী
শনাক্ত এবং চিকিৎসা, প্রতিকার ও সচেতনতামূলক নানা উদ্যোগ সূচিত হয়েছিল।
কিন্তু পরিস্থিতির যে খুব একটা উন্নতি হয়নি, প্রায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যু
তার প্রমাণ। বস্তুত গোটা দেশকেই এই তরল বিষ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করার পথ
এখনও অনেকটা বাকি। আমরা মনে করি, দীর্ঘমেয়াদি এই লড়াইয়ে ধারাবাহিকতা সবচেয়ে
জরুরি। কারণ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে যে, নব্বই দশকে এই ইস্যু যে
মাত্রায় গুরুত্ব পেয়েছিল, সময়ের ব্যবধানে তা কমে এসেছে। এমনকি আর্সেনিকের
কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কত মানুষ মারা গেছে, সে হিসাবও সরকারের কাছে
নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। সরাসরি আর্সেনিক মোকাবেলার বদলে নিরাপদ পানি
সরবরাহের নামে কিছু প্রকল্প দিয়েই দায় সারছে সরকার। আমাদের মনে আছে,
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও বলা হয়েছিল যে, ২০১১ সালের
মধ্যে দেশের সব মানুষকে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ করা হবে। ২০১০ সালের
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত প্রথম পয়ঃব্যবস্থা ও পানিবিষয়ক
উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল আর্সেনিক-সমস্যা মোকাবেলায় ২০
কোটি মার্কিন ডলারের বিশেষ তহবিল গঠনের কথা বলেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর
কোনোটিই সাফল্যের মুখ দেখেনি। বিপুল জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ পানি সরবরাহের
ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের সামর্থ্যগত সীমাবদ্ধতা অস্বীকার করা
যাবে না। কিন্তু আর্সেনিকের মতো জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি বিষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে
ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই। দুধপাতিলা গ্রামে তার অভাব লক্ষ্য করা গেছে।
সেখানকার আর্সেনিকমুক্ত পানির প্লান্টটি অব্যবস্থাপনায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
খতিয়ে দেখলে এমন আরও নেতিবাচক নজির পাওয়া যাবে। আমরা এ ব্যাপারে
কর্তৃপক্ষের নজরদারি কামনা করছি। আর্সেনিকবিরোধী লড়াইয়ে আমরা যে
ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা করি, তা দুধপাতিলার প্লান্টটি সংস্কারের মধ্য দিয়েই
তা সূচিত হোক।
No comments