বিএনপি সমর্থিত ৪ সিটি মেয়র বরখাস্ত হচ্ছেন
বিপুল
ভোটে বিজয়ী বিএনপি সমর্থিত চার মেয়রকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে
বরখাস্ত করা হচ্ছে। তাদের সবাইকে হরতাল ও অবরোধে গাড়ি পোড়ানো মামলায়
চার্জশিটভুক্ত আসামি দেখিয়ে এসব ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর প্যানেল মেয়রের
তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব
দেয়া হবে। এরই মধ্যে প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। বিভিন্ন মেট্রোপলিটন
সিটির পুলিশ কমিশনার মেয়রদের ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিতে স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, সিলেটের
বিএনপি সমর্থিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত
আসামি হওয়ার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে,
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নানকে গাজীপুর সিটি
করপোরেশনের মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করার অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে করা
মামলাগুলোর অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। বহিষ্কার প্রক্রিয়ার অংশ
হিসেবেই এমনটা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল মেয়র
আসাদুর রহমান কিরণকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে দায়িত্ব দেয়ার জোর সম্ভাবনা
রয়েছে। এতদিন ধরে আসাদুর রহমানের প্যানেল মেয়র পদ স্থগিত ছিল। গত সোমবার
আপিল বিভাগ কিরণকে বৈধ প্যানেল মেয়র ঘোষণা করেন। এর ফলে তার ভারপ্রাপ্ত
মেয়র হওয়ার বাধা দূর হয়েছে। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড (টঙ্গীর পাগাড় এলাকা)
কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ বিলুপ্ত টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং মহানগর
আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের ঘনিষ্ঠ। মেয়র নির্বাচনে
আজমত উল্লাহ মান্নানের কাছে পরাজিত হন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ
জানিয়েছে, প্যানেল অব মেয়র নির্বাচনের বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা ছিল। গত
সোমবার আদালত সেটির রায় দিয়েছেন। মেয়র আবদুল মান্নান জেলে থাকায় প্যানেল
মেয়রের দায়িত্ব দিয়ে থাকে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এক্ষেত্রে তিন প্যানেল
মেয়রের প্রথম জনই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গাজীপুর পুলিশ
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নাশকতার মামলাগুলোর চার্জশিট দ্রুত দাখিলের
জন্য পুলিশের ওপর উচ্চ মহলের চাপ রয়েছে। এ কারণে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। গত ১১ই
ফেব্রুয়ারি মেয়র মান্নানকে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর জেলা
পুলিশ। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের
ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে গাজীপুর সিটি
করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এদিকে ২৭শে ডিসেম্বর গাজীপুরে
বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে সিটি মেয়র
অধ্যাপক এমএ মান্নান, জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলনসহ ৩০
নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়। এর আগেই ৯ই নভেম্বর সরকারি কাজে বাধা দান,
পুলিশ সদস্যদের লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল দিয়ে আহত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মেয়র
মান্নানকে প্রধান আসামি করে জয়দেবপুর থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। মামলায় ৪০
জনের নাম উল্লেখসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩০০-৪০০ অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে
আসামি করা হয়। সর্বশেষ গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে
পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় অধ্যাপক এমএ মান্নানকে প্রধান আসামি করে পুলিশ
আরেকটি মামলা করে। আগের দুটি মামলায় জামিন পেলেও এ মামলায় মেয়র পলাতক
ছিলেন। এরপর ১১ই ফেব্রুয়ারি মেয়র মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন চলছে
তড়িঘড়ি করে মামলার চার্জশিট দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল মেয়রকে দিয়ে
বাকি মেয়াদ পার করে দেয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন
সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের
দ্রুত সাময়িক বরখাস্ত চেয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। গত ২৩শে জানুয়ারি এ
সংক্রান্ত একটি চিঠি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছেন তারা। এরপর পুলিশ সদর
দপ্তর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এতে
মো. মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে পাঁচটি মামলা থাকার কথা বলা হয়েছে। এর
মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা
কয়েকটি মামলার তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র পদে
কর্মরত থাকলে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া
রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে মদদ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন
তিনি। এজন্য তাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত
করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হলো। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে
জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বরখাস্ত
করতে হরতাল ও অবরোধে দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট খুঁজছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এজন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলভুক্ত মেয়ররা আগ বাড়িয়ে চেষ্টা করে
যাচ্ছেন। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ই জুন দেশের চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি সমর্থিত চার প্রার্থী- সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী,
রাজশাহীতে মোহাম্মদ মোছাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনায় মো. মনিরুজ্জামান মনি
এবং বরিশালে মো. আহসান হাবিব কামাল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর গত ৬ই
জুলাই নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে
বিজয়ী হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান।
No comments