আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও মানুষ হত্যা বিবেকহীন রাজনীতি by কাজী শওকত হোসেন
বিএনপি-জামায়াতসহ
২০ দল আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা করে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশে
এক নারকীয় অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে
খালেদা জিয়া ও তার জোট, সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে
নতুন নির্বাচন করতে হবে- এ দাবি করে আসছে, যা সংবিধানসম্মত নয়। এ দাবির
স্বপক্ষে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দল
ধারাবাহিকভাবে বড় বড় সভা করে। সরকারের সমালোচনা করে বক্তৃতা-বিবৃতি,
বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি করে তাদের মত প্রকাশ করে। খালেদা জিয়া সংবাদ
সম্মেলন করে সাত দফা কর্মসূচি পেশ করেন জাতির সামনে। ওই পর্যন্তই। সেই
দাবির সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জনমত গঠন করার কোনো দায়িত্ব পালন করলেন
না। যেটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে জরুরি ছিল। তা না করে তারা ৫
জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে সংঘাতের পথে চলে গেল।
৫ জানুয়ারি সভা করতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ-হরতাল, ককটেল-পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে। এ নৃশংসতায় এ পর্যন্ত ৮০ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও শতাধিক। মৃত্যুর মিছিল আরও বাড়তে পারে। আহতরা অনেকেই শংকামুক্ত নয়। দেশের কিছু রাজনীতিক, সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পত্রপত্রিকায় লিখে, টেলিভিশনের টকশোয় অংশ নিয়ে কিংবা গোলটেবিল বৈঠকে মত প্রকাশ করছেন। তারা খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়েছিলেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু পেট্রলবোমায় যারা আহত ও নিহত হচ্ছেন প্রতিদিন, তাদের দেখতে আজ পর্যন্ত হাসপাতালে গেলেন না। কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা, সান্ত্বনা দেখানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন না। তাদের বিবেকের প্রশংসা না করে পারা যায় না। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর লাশের সঙ্গে দেশে এসেছিলেন তার স্ত্রী ও দুই কন্যা। তারা আবার যথারীতি পরীক্ষা দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় ফিরে গেছেন। কিন্তু দেশের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জীবন ও ভবিষ্যৎ কী হবে- সেসব বিষয়ে ২০ দলের নেতারা কোনো দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না আগামী প্রজন্মের সঙ্গে। ছোট-বড় ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ- তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, দেশের ভাবমূর্তি কোথায় যাচ্ছে- এসব বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। চুপ করে থাকার অর্থ- এসব নৈরাজ্য মেনে নেয়া। ৫ জানুয়ারি ভালো নির্বাচন হয়নি- কিছু লোক বলছেন। একতরফা নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ সরকারে নাও আসতে পারত। ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তো তারা জয়ী হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত খুব ভালো ফলাফল করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করা অথবা নিশ্চিত বিরোধী দল হিসেবে তারা পার্লামেন্টে থাকত। এর ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে আরও বেশি মর্যাদার আসন লাভ করত। এতে গণতন্ত্রের বিজয় হতো। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সঠিক দায়িত্ব পালনে ভুল করলে দেশ ও জাতিকে তার খেসারত দিতে হয়। দলকানা রাজনীতিকরা ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। কিন্তু নির্মোহ কিছু মানুষ থাকেন সমাজে। জাতির ক্রান্তিকালে তারা পথ দেখান। তারা কোনো পক্ষের লোক নন। তারা বাস্তব সত্যের দিকনির্দেশনা দেন। তারা সত্য, সুন্দর ও শান্তির পক্ষে অবস্থান নেন। সেই বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এ মুহূর্তে আমাদের খুব প্রয়োজন। জাতি তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। দেশ পুড়ছে, মানুষ মরছে, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এ হিংস্রতাকে মেনে নেয়া যায় না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে। দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে হবে। তবেই স্বাধীন দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে আমাদের বেঁচে থাকা সার্থক হবে।
কাজী শওকত হোসেন
রাজনীতিক, ঢাকা
৫ জানুয়ারি সভা করতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ-হরতাল, ককটেল-পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে। এ নৃশংসতায় এ পর্যন্ত ৮০ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও শতাধিক। মৃত্যুর মিছিল আরও বাড়তে পারে। আহতরা অনেকেই শংকামুক্ত নয়। দেশের কিছু রাজনীতিক, সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পত্রপত্রিকায় লিখে, টেলিভিশনের টকশোয় অংশ নিয়ে কিংবা গোলটেবিল বৈঠকে মত প্রকাশ করছেন। তারা খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়েছিলেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু পেট্রলবোমায় যারা আহত ও নিহত হচ্ছেন প্রতিদিন, তাদের দেখতে আজ পর্যন্ত হাসপাতালে গেলেন না। কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা, সান্ত্বনা দেখানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন না। তাদের বিবেকের প্রশংসা না করে পারা যায় না। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর লাশের সঙ্গে দেশে এসেছিলেন তার স্ত্রী ও দুই কন্যা। তারা আবার যথারীতি পরীক্ষা দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় ফিরে গেছেন। কিন্তু দেশের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জীবন ও ভবিষ্যৎ কী হবে- সেসব বিষয়ে ২০ দলের নেতারা কোনো দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না আগামী প্রজন্মের সঙ্গে। ছোট-বড় ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ- তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, দেশের ভাবমূর্তি কোথায় যাচ্ছে- এসব বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। চুপ করে থাকার অর্থ- এসব নৈরাজ্য মেনে নেয়া। ৫ জানুয়ারি ভালো নির্বাচন হয়নি- কিছু লোক বলছেন। একতরফা নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ সরকারে নাও আসতে পারত। ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তো তারা জয়ী হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত খুব ভালো ফলাফল করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করা অথবা নিশ্চিত বিরোধী দল হিসেবে তারা পার্লামেন্টে থাকত। এর ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে আরও বেশি মর্যাদার আসন লাভ করত। এতে গণতন্ত্রের বিজয় হতো। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সঠিক দায়িত্ব পালনে ভুল করলে দেশ ও জাতিকে তার খেসারত দিতে হয়। দলকানা রাজনীতিকরা ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। কিন্তু নির্মোহ কিছু মানুষ থাকেন সমাজে। জাতির ক্রান্তিকালে তারা পথ দেখান। তারা কোনো পক্ষের লোক নন। তারা বাস্তব সত্যের দিকনির্দেশনা দেন। তারা সত্য, সুন্দর ও শান্তির পক্ষে অবস্থান নেন। সেই বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এ মুহূর্তে আমাদের খুব প্রয়োজন। জাতি তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। দেশ পুড়ছে, মানুষ মরছে, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এ হিংস্রতাকে মেনে নেয়া যায় না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে। দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে হবে। তবেই স্বাধীন দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে আমাদের বেঁচে থাকা সার্থক হবে।
কাজী শওকত হোসেন
রাজনীতিক, ঢাকা
No comments