যে জাতীয় সনদের জন্য দেশবাসী উন্মুখ by ড. মো. আনোয়ার হোসেন
বিএনপি
নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ৪৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে ১৮
ফেব্রুয়ারি বুধবার। এর মধ্যে লাগাতার হরতাল ছিল কয়েকবার। এ সময়ে পেট্রোল
বোমা ও আগুনে করুণ মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫৩ জনের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ১২৬ জন। যানবাহন
ভাংচুর হয়েছে প্রায় ১২শ'। রেলে নাশকতা হয়েছে ১৩টি। প্রায় ১৫ লাখ মাধ্যমিক
পরীক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। বিশ্ব ইজতেমা, মাধ্যমিক
পরীক্ষা, সরস্বতী পূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী_ কোনো কিছুই হরতাল-অবরোধের
আওতামুক্ত করা হয়নি। মানবতার আবেদনে সাড়া দিতে 'আন্দোলনকারীদের' কোনো আগ্রহ
ছিল না। হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, সে বিষয়ে অনেকে
তথ্য প্রদান করছেন। কেউ কেউ বলছেন, ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা দিয়ে এক
বছরের উন্নয়ন ও রাজস্ব বাজেটের প্রায় অর্ধেক মেটানো সম্ভব। ঢাকা চেম্বার
বলেছে, প্রতিদিন ক্ষতি অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা।
ক্ষতির বাইরে আরেকটি বিষয়ের প্রতিও আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এটা নিশ্চিত করে বলা চলে যে, ২০ দলীয় জোট শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আটঘাট বেঁধে অবরোধ ও হরতাল দিয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং নিকট কিংবা দূর ভবিষ্যতে সাফল্যের সম্ভাবনাও কেউ দেখছে না। তাদের একমাত্র সফলতা_ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে কঠিন সমস্যায় পড়ছে। আমরা দেখছি, সিরাজগঞ্জের দুধ উৎপাদকরা তাদের ভাড়ের দুধ সড়কে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পোশাকশিল্পের মালিকরা রফতানির সময়সূচি রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। খেটে খাওয়া মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
কিন্তু এই কঠিন সময়েও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই। অতীতে তারা প্রকৃতিসৃষ্ট বিপদ মোকাবেলায় নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। যে যেভাবে পারে উদ্যোগী হয়ে কাজে নেমে পড়েছে। এখন মানবসৃষ্ট সন্ত্রাস-নৈরাজ্য মোকাবেলাতেও তারা সফল হবে। টেলিভিশনের খবরে দেখেছি, রেললাইনের ফিশপেল্গট খুলে নেওয়ার মতো বর্বর ও অমানবিক কার্যকলাপ রুখতে চট্টগ্রামের তরুণ রায়হান একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছে, যা ব্যবহার করে রেলচালক ও গার্ডরা আগাম সতর্কবার্তা পেয়ে যাবেন। এ জাতিকে ঠেকাবে কে? এই সচেতন মানুষের কারণেও উপর্যুপরি হরতাল ও অবরোধ এখন অকার্যকর ও ভোঁতা হয়ে পড়েছে। আমি যখন রিকশাচালকদের জিজ্ঞেস করি, হরতাল কোথায়? দোকান খোলা, বাস চলছে। তাদের মুখে দেখি বিষণ্নতা, সঙ্গে তীব্র ক্ষোভ। তারা বলেন, বছরে ৪-৫ দিন হরতাল তবু মানা যায়। কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন হরতাল মানতে গেলে বাঁচা যাবে না। আমরা রাজধানীর বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যখন বাজারে যাই, তখন দেখি দূরের পরিবহন চলায় নানা সমস্যার পরও দোকানে দোকানে উপচানো পণ্যের সমাহার। পণ্যের দাম হয়তো কিছুটা বেশি পড়ছে, কিন্তু তা এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। নৈরাজ্যের হোতাদের কাছে এ অবস্থা কাঙ্ক্ষিত নয়। তারা তো চাইছে সবকিছু অচল করে দিতে। আর জনগণ চাইছে সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে। প্রথম আলোর সমীক্ষায় যখন প্রশ্ন করা হয়, রাষ্ট্রের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও নৈরাজ্য-সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব কি-না, তখন ৭০ শতাংশ উত্তর আসে, হ্যাঁ। বিডিনিউজ অনলাইন তাদের সমীক্ষায় প্রশ্ন রাখছে_ মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংসের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন উচিত কি-না, তখন বেশিরভাগ উত্তর আসে ইতিবাচক। আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন বলেন, রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়ার বিদায় হানাহানিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় সাহায্য করবে, তার সপক্ষেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অবস্থান নেয়। এসব কিছুই বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়া, যিনি অবরোধ ও হরতাল আহ্বান করেছেন, তা প্রত্যাহারে উদ্যোগী হবেন এটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেটা তিনি করছেন না। কোনো ভয়াবহ কিছু এখন বা সামনের দিনগুলোতে ঘটবে, এমন কিছুর জন্যই মনে হয় তার অপেক্ষা। এ ধরনের অপেক্ষা তারা অতীতে করেছেন, যখনই সুযোগ পেয়েছেন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাদের সেসব অপরাধ নিশ্চয়ই দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ইতিমধ্যেই বিএনপি-জামায়াত দর্শনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবী কিছু ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তারা এমনকি দিনক্ষণ বেঁধে দিচ্ছেন সরকার পতনের। সৌভাগ্যের বিষয় তেমন কিছু ঘটছে না। শেখ হাসিনার সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে দেশ। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, যখন থেকে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হলো, সেদিন থেকে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী কিংবা তার গোয়েন্দা সংস্থাকে হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এখন আর প্রতিরক্ষা বাহিনী কিংবা অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে বর্তমান সরকারের যে আস্থার সংকট ছিল, তাও এক বছরে বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। ১৬ কোটি লোকের বাংলাদেশ যে সুনিশ্চিতভাবেই সামনের দিকে দৃঢ়সংকল্পে এগিয়ে চলেছে, এ ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্ব থেকেও নানা সমর্থনসূচক আশাবাদ ব্যক্ত হচ্ছে। দ্রুতই আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার বৈধতা নিতে হবে, তেমন কোনো চাপ এখন আর নেই। সেটা হোক ভারত কিংবা চীন বা জাপান অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং খোদ আমেরিকার তরফে।
আমরা এমন প্রেক্ষাপটেই শুনছি সংলাপের আহ্বান। এ প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা উদ্ধৃত করতে পারি। তিনি লিখেছেন_
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,/ যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;/ যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই/ পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।/ যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি/এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়/মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা/ শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে দাবি করেন কিংবা বুদ্ধিজীবীদের সম্মুখ সারিতে থাকার দাবি করেন এবং এ যোগ্যতায় অবিরাম সংলাপের কথা বলে চলেছেন, তাদের বিনীতভাবে বলব_ একটু মিলিয়ে দেখুন জীবনানন্দ দাশের কবিতার শব্দ ও বাক্যের সঙ্গে আপনাদের অবস্থানের মিল খুঁজে পান কি-না। কিছুদিন আগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা এবং আরও কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তি মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করেছেন সংলাপ শুরুর জন্য। তারা বলেছেন জাতীয় সনদ তৈরির। সব দলের মধ্যে আলোচনা শুরু কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তারা বলেছেন। এদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন এবং মাহমুদুর রহমান মান্না সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যরা 'অরাজনৈতিক'। অবাক করার বিষয় হলো, এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের এই উদ্যোগও এসেছে এমন সময়ে, যখন অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি প্রায় এক মাস চলার পর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সরকার পতনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। আরও লক্ষণীয় যে, তারা কথায় অন্তত বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় দগ্ধ মানুষের অবর্ণনীয় যন্ত্রণা স্বীকার করে নিচ্ছেন; কিন্তু খালেদা জিয়াকে বলতে পারছেন না যে সংলাপ হবে, তবে তার আগে অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করুন এবং মৃত্যু থামান। এর পরিবর্তে তারা শর্তজুড়ে দিচ্ছেন_ সন্ত্রাস বন্ধ এবং সংলাপ একই সঙ্গে শুরু করতে হবে। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে নাগরিক উদ্যোগের নামে কিছু ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ? খুনিদের সঙ্গে? কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন, আমি তো খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুর খবর জেনে তাকে সমবেদনা জানাতে সেখানে ছুটে গিয়েছি। কিন্তু মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে রাখায় দেখা করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেছেন, হরতাল, অবরোধ, মৃত্যু বন্ধ করতে হবে। প্রশ্ন হলো, আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলে যারা দাবি করছেন, তারা কেন সেই প্রশ্ন খালেদা জিয়াকে করতে পারছেন না?
তবে নাগরিক উদ্যোগের কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে কমিটির বাইরে রাখা হয়েছে, যেহেতু তারা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত। কমিটির যে বিবৃতি সেখানেও পরিবর্তন_ তারা শুরু করেছেন সন্ত্রাস বন্ধের কথা দিয়ে। সংলাপ এসেছে পরে। এটা উন্নতি বটে। তাদের কাছে আহ্বান থাকবে_ মানুষের মনের ভাষা পড়ূন। জনগণের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলুন_ আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যাসহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা বন্ধে যেন রাষ্ট্র সুকঠিন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেমনটা রয়েছে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায়। তারা সংলাপ চাইছেন, কিন্তু যিনি অবরোধ ডেকেছেন সেই খালেদা জিয়া সেটা চাইছেন বলে তো বিশ্বাস করতে পারছি না। কয়েক দিন আগে এক বৃহস্পতিবারে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার হাজিরা দেওয়ার তারিখ ছিল। সেদিন অবরোধ ছিল না। হরতালও নেই। শুধু আদালতে হাজিরা দিতে হবে, সেই ভয়ে মহানগর বিএনপি হরতাল ডেকে দিল। তিনিও আদালতে গেলেন না। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠতম মিত্র জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার চলছে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে। ইতিমধ্যে একজনের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদের রায় কার্যকরের অপেক্ষায়। খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, যেমন আইএস_ তাদের সঙ্গে তারেক রহমানের যোগাযোগের কথা ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। অতীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হাওয়া ভবন এবং তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানের আইএসআইয়ের যোগসাজশের কথা শোনা গেছে। এ বিষয়ে ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অনিসন্ধিৎসু প্রতিবেদন। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে পাকিস্তানি দূতাবাসের সহকারী ভিসা অফিসার, যিনি পদমর্যাদায় একজন মেজর, যার কূটনৈতিক সুরক্ষা নেই_ হাতেনাতে জামায়াত-বিএনপির ধ্বংসাত্মক কাজে অর্থায়নের মতো বেআইনি কাজে ধরা পড়ে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এটা এখন পর্যন্ত বলা যাবে না যে, ধ্বংসাত্মক কাজে অর্থ জোগান বন্ধ হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতের হয়ে সক্রিয় গ্রুপগুলো কীভাবে অস্ত্র ও অর্থ চালান পাঠাচ্ছে, সেসব সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন মহলের প্রশ্ন_ বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংহত করতে হলে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ জামায়াতে ইসলামীকে পরাজিত করার বিকল্প আছে কি? আমরা অবশ্যই সংলাপ প্রয়োজন বলে মনে করি। এ সংলাপ হবে সেসব দল এবং তার বাইরেও সচেতন ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্যে_ বাংলাদেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাসী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনন্যসাধারণ নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ ৩০ লাখ মানুুষের আত্মদানে স্বাধীন হয়েছে তা রক্ষায় যারা আন্তরিক, আমাদের সংবিধানের চারটি স্তম্ভ_ গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রে যাদের অবিচল আস্থা। গত চার দশকে দেশবাসীর যে বিপুল প্রত্যাশা_ ক্ষমতা দখলের জন্য হানাহানি নয়, বরং কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত হতে চাই এবং একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই, সংলাপ চাই সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য। বিএনপি অবশ্যই তার বাইরে থাকবে না। কিন্তু তার আগে এই দলটিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি অবিচল আস্থা আছে এমন ব্যক্তিদের দলে স্থান করে দিতে হবে। আর এই সংলাপের মধ্য দিয়ে আমরা লাভ করব সেই কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদ। দেশের বিপন্ন মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে এমন একটি প্রাপ্তির জন্য।
অধ্যাপক, প্রাণরসায়ন অনুপ্রাণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্ষতির বাইরে আরেকটি বিষয়ের প্রতিও আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এটা নিশ্চিত করে বলা চলে যে, ২০ দলীয় জোট শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আটঘাট বেঁধে অবরোধ ও হরতাল দিয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং নিকট কিংবা দূর ভবিষ্যতে সাফল্যের সম্ভাবনাও কেউ দেখছে না। তাদের একমাত্র সফলতা_ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে কঠিন সমস্যায় পড়ছে। আমরা দেখছি, সিরাজগঞ্জের দুধ উৎপাদকরা তাদের ভাড়ের দুধ সড়কে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পোশাকশিল্পের মালিকরা রফতানির সময়সূচি রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। খেটে খাওয়া মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
কিন্তু এই কঠিন সময়েও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই। অতীতে তারা প্রকৃতিসৃষ্ট বিপদ মোকাবেলায় নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। যে যেভাবে পারে উদ্যোগী হয়ে কাজে নেমে পড়েছে। এখন মানবসৃষ্ট সন্ত্রাস-নৈরাজ্য মোকাবেলাতেও তারা সফল হবে। টেলিভিশনের খবরে দেখেছি, রেললাইনের ফিশপেল্গট খুলে নেওয়ার মতো বর্বর ও অমানবিক কার্যকলাপ রুখতে চট্টগ্রামের তরুণ রায়হান একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছে, যা ব্যবহার করে রেলচালক ও গার্ডরা আগাম সতর্কবার্তা পেয়ে যাবেন। এ জাতিকে ঠেকাবে কে? এই সচেতন মানুষের কারণেও উপর্যুপরি হরতাল ও অবরোধ এখন অকার্যকর ও ভোঁতা হয়ে পড়েছে। আমি যখন রিকশাচালকদের জিজ্ঞেস করি, হরতাল কোথায়? দোকান খোলা, বাস চলছে। তাদের মুখে দেখি বিষণ্নতা, সঙ্গে তীব্র ক্ষোভ। তারা বলেন, বছরে ৪-৫ দিন হরতাল তবু মানা যায়। কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন হরতাল মানতে গেলে বাঁচা যাবে না। আমরা রাজধানীর বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যখন বাজারে যাই, তখন দেখি দূরের পরিবহন চলায় নানা সমস্যার পরও দোকানে দোকানে উপচানো পণ্যের সমাহার। পণ্যের দাম হয়তো কিছুটা বেশি পড়ছে, কিন্তু তা এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। নৈরাজ্যের হোতাদের কাছে এ অবস্থা কাঙ্ক্ষিত নয়। তারা তো চাইছে সবকিছু অচল করে দিতে। আর জনগণ চাইছে সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে। প্রথম আলোর সমীক্ষায় যখন প্রশ্ন করা হয়, রাষ্ট্রের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও নৈরাজ্য-সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব কি-না, তখন ৭০ শতাংশ উত্তর আসে, হ্যাঁ। বিডিনিউজ অনলাইন তাদের সমীক্ষায় প্রশ্ন রাখছে_ মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংসের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন উচিত কি-না, তখন বেশিরভাগ উত্তর আসে ইতিবাচক। আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন বলেন, রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়ার বিদায় হানাহানিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় সাহায্য করবে, তার সপক্ষেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অবস্থান নেয়। এসব কিছুই বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়া, যিনি অবরোধ ও হরতাল আহ্বান করেছেন, তা প্রত্যাহারে উদ্যোগী হবেন এটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেটা তিনি করছেন না। কোনো ভয়াবহ কিছু এখন বা সামনের দিনগুলোতে ঘটবে, এমন কিছুর জন্যই মনে হয় তার অপেক্ষা। এ ধরনের অপেক্ষা তারা অতীতে করেছেন, যখনই সুযোগ পেয়েছেন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাদের সেসব অপরাধ নিশ্চয়ই দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ইতিমধ্যেই বিএনপি-জামায়াত দর্শনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবী কিছু ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তারা এমনকি দিনক্ষণ বেঁধে দিচ্ছেন সরকার পতনের। সৌভাগ্যের বিষয় তেমন কিছু ঘটছে না। শেখ হাসিনার সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে দেশ। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, যখন থেকে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হলো, সেদিন থেকে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী কিংবা তার গোয়েন্দা সংস্থাকে হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এখন আর প্রতিরক্ষা বাহিনী কিংবা অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে বর্তমান সরকারের যে আস্থার সংকট ছিল, তাও এক বছরে বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। ১৬ কোটি লোকের বাংলাদেশ যে সুনিশ্চিতভাবেই সামনের দিকে দৃঢ়সংকল্পে এগিয়ে চলেছে, এ ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্ব থেকেও নানা সমর্থনসূচক আশাবাদ ব্যক্ত হচ্ছে। দ্রুতই আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার বৈধতা নিতে হবে, তেমন কোনো চাপ এখন আর নেই। সেটা হোক ভারত কিংবা চীন বা জাপান অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং খোদ আমেরিকার তরফে।
আমরা এমন প্রেক্ষাপটেই শুনছি সংলাপের আহ্বান। এ প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা উদ্ধৃত করতে পারি। তিনি লিখেছেন_
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,/ যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;/ যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই/ পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।/ যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি/এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়/মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা/ শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে দাবি করেন কিংবা বুদ্ধিজীবীদের সম্মুখ সারিতে থাকার দাবি করেন এবং এ যোগ্যতায় অবিরাম সংলাপের কথা বলে চলেছেন, তাদের বিনীতভাবে বলব_ একটু মিলিয়ে দেখুন জীবনানন্দ দাশের কবিতার শব্দ ও বাক্যের সঙ্গে আপনাদের অবস্থানের মিল খুঁজে পান কি-না। কিছুদিন আগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা এবং আরও কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তি মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করেছেন সংলাপ শুরুর জন্য। তারা বলেছেন জাতীয় সনদ তৈরির। সব দলের মধ্যে আলোচনা শুরু কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তারা বলেছেন। এদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন এবং মাহমুদুর রহমান মান্না সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যরা 'অরাজনৈতিক'। অবাক করার বিষয় হলো, এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের এই উদ্যোগও এসেছে এমন সময়ে, যখন অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি প্রায় এক মাস চলার পর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সরকার পতনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। আরও লক্ষণীয় যে, তারা কথায় অন্তত বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় দগ্ধ মানুষের অবর্ণনীয় যন্ত্রণা স্বীকার করে নিচ্ছেন; কিন্তু খালেদা জিয়াকে বলতে পারছেন না যে সংলাপ হবে, তবে তার আগে অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করুন এবং মৃত্যু থামান। এর পরিবর্তে তারা শর্তজুড়ে দিচ্ছেন_ সন্ত্রাস বন্ধ এবং সংলাপ একই সঙ্গে শুরু করতে হবে। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে নাগরিক উদ্যোগের নামে কিছু ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ? খুনিদের সঙ্গে? কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন, আমি তো খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুর খবর জেনে তাকে সমবেদনা জানাতে সেখানে ছুটে গিয়েছি। কিন্তু মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে রাখায় দেখা করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেছেন, হরতাল, অবরোধ, মৃত্যু বন্ধ করতে হবে। প্রশ্ন হলো, আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলে যারা দাবি করছেন, তারা কেন সেই প্রশ্ন খালেদা জিয়াকে করতে পারছেন না?
তবে নাগরিক উদ্যোগের কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে কমিটির বাইরে রাখা হয়েছে, যেহেতু তারা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত। কমিটির যে বিবৃতি সেখানেও পরিবর্তন_ তারা শুরু করেছেন সন্ত্রাস বন্ধের কথা দিয়ে। সংলাপ এসেছে পরে। এটা উন্নতি বটে। তাদের কাছে আহ্বান থাকবে_ মানুষের মনের ভাষা পড়ূন। জনগণের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলুন_ আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যাসহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা বন্ধে যেন রাষ্ট্র সুকঠিন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেমনটা রয়েছে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায়। তারা সংলাপ চাইছেন, কিন্তু যিনি অবরোধ ডেকেছেন সেই খালেদা জিয়া সেটা চাইছেন বলে তো বিশ্বাস করতে পারছি না। কয়েক দিন আগে এক বৃহস্পতিবারে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার হাজিরা দেওয়ার তারিখ ছিল। সেদিন অবরোধ ছিল না। হরতালও নেই। শুধু আদালতে হাজিরা দিতে হবে, সেই ভয়ে মহানগর বিএনপি হরতাল ডেকে দিল। তিনিও আদালতে গেলেন না। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠতম মিত্র জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার চলছে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে। ইতিমধ্যে একজনের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদের রায় কার্যকরের অপেক্ষায়। খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, যেমন আইএস_ তাদের সঙ্গে তারেক রহমানের যোগাযোগের কথা ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। অতীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হাওয়া ভবন এবং তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানের আইএসআইয়ের যোগসাজশের কথা শোনা গেছে। এ বিষয়ে ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অনিসন্ধিৎসু প্রতিবেদন। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে পাকিস্তানি দূতাবাসের সহকারী ভিসা অফিসার, যিনি পদমর্যাদায় একজন মেজর, যার কূটনৈতিক সুরক্ষা নেই_ হাতেনাতে জামায়াত-বিএনপির ধ্বংসাত্মক কাজে অর্থায়নের মতো বেআইনি কাজে ধরা পড়ে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এটা এখন পর্যন্ত বলা যাবে না যে, ধ্বংসাত্মক কাজে অর্থ জোগান বন্ধ হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতের হয়ে সক্রিয় গ্রুপগুলো কীভাবে অস্ত্র ও অর্থ চালান পাঠাচ্ছে, সেসব সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন মহলের প্রশ্ন_ বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংহত করতে হলে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ জামায়াতে ইসলামীকে পরাজিত করার বিকল্প আছে কি? আমরা অবশ্যই সংলাপ প্রয়োজন বলে মনে করি। এ সংলাপ হবে সেসব দল এবং তার বাইরেও সচেতন ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্যে_ বাংলাদেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাসী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনন্যসাধারণ নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ ৩০ লাখ মানুুষের আত্মদানে স্বাধীন হয়েছে তা রক্ষায় যারা আন্তরিক, আমাদের সংবিধানের চারটি স্তম্ভ_ গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রে যাদের অবিচল আস্থা। গত চার দশকে দেশবাসীর যে বিপুল প্রত্যাশা_ ক্ষমতা দখলের জন্য হানাহানি নয়, বরং কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত হতে চাই এবং একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই, সংলাপ চাই সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য। বিএনপি অবশ্যই তার বাইরে থাকবে না। কিন্তু তার আগে এই দলটিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি অবিচল আস্থা আছে এমন ব্যক্তিদের দলে স্থান করে দিতে হবে। আর এই সংলাপের মধ্য দিয়ে আমরা লাভ করব সেই কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদ। দেশের বিপন্ন মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে এমন একটি প্রাপ্তির জন্য।
অধ্যাপক, প্রাণরসায়ন অনুপ্রাণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments