‘সর্বাত্মক’ হরতাল বা হরতাল থাকা না-থাকা by এ কে এম জাকারিয়া
সপ্তাহের
শুরুর দিন, মানে রোববার থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা আসবে আর
মঙ্গলবার জানব যে তা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, এতে আমরা
অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মানে ছুটির দুই দিন ছাড়া বাকি পাঁচ দিন দেশে টানা হরতাল
চলবে। আর দেশজুড়ে অবরোধ তো আছেই, এর কোনো শুক্র-শনি নেই।
জনগণের কথা শোনে বা বিবেচনায় নেয়, এমন দল তো এখন আর দেশে নেই। এই যে চারদিকে এত মৃত্যু, এত বর্বরতা—এসব নিয়ে এত হাহাকার, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন, অনুনয়-বিনয়—সবই তো অরণ্যে রোদন। তার পরও বলি, দুই দফায় হরতাল ডেকে পুরো সপ্তাহ কাভার করার দরকার কী! একবারে ঘোষণা দিয়ে দিলেই তো হয় যে দুই দিন বিরতি দিয়ে টানা পাঁচ দিন হরতাল চলবে। এতে অন্তত কেউ কোনোভাবেই এই আশা করবেন না যে বুধ বা বৃহস্পতিবার হরতাল থেকে মুক্তি পেলেও পেতে পারেন! আশা ভঙ্গের তো কিছু কষ্ট আছে, তা থেকে কি অন্তত জনগণকে মুক্তি দেওয়া যায় না? সপ্তাহে দুই দিন হরতাল নেই, এটা ধরে নিয়েই নাহয় আমরা চলব! কিন্তু এই শান্তিটুকুও যেন আমাদের পাওনা নয়! ৭২ ঘণ্টা করে দুই দফায় হরতাল ডেকে সপ্তাহ পার করা হবে।
আমাদের মতো জনগণের কথা থাক, কিন্তু বিএনপি তো অন্তত তাদের কাজ ও কষ্ট কিছু কমাতে পারে! দলের বড় নেতাদের সবাই প্রায় জেলে। যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরাও আত্মগোপনে বা পালিয়ে। সরকার যে অবস্থা করে রেখেছে, তাতে বৈঠক করে হরতাল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সুযোগটিও দলটির নেই। যাঁর নির্দেশেই হোক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে হরতাল বাড়াতে হয়। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ড্রাফট করা, বানান, ভাষা—এসব দিকে নজর দেওয়া, তারপর পত্রপত্রিকায় মেইল করা কম ঝক্কির কাজ নয়। আর সরকার কত দিন তাঁকে এই কাজটি করে যেতে দেবে, সেটাই বা কে জানে! ফলে অবরোধ যেমন চলছে, তেমনি ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত’ সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন, মানে রোববার থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত হরতাল চলতেই থাকবে, এমন একটি ঘোষণা দিলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়।
অথবা অবরোধের পাশাপাশি সপ্তাহে সাত দিনের হরতাল ডেকে দিলেই বা সমস্যা কী! এ সপ্তাহের শুরুতে যখন হরতালের ডাক দেওয়া হয়, তখন বিএনপির প্রেস রিলিজে বলা হয়েছিল, ২০ দলের শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা দিলে ‘সর্বাত্মক’ হরতাল। সরকারের পক্ষে পুলিশ অনেকটা আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল যে এই জোটকে কোনো বিক্ষোভ মিছিল করতে দেবে না তারা। পুলিশকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। দেশের দু-এক জায়গায় ঝটিকা মিছিল ছাড়া ‘বিক্ষোভ’ মিছিলের কোনো চেষ্টাও হয়নি। তবে রোববার থেকে যথারীতি ‘সর্বাত্মক’ হরতালের ঘোষণা এল ঠিকই। কিন্তু এই সপ্তাহে বুধবার পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে ‘সর্বাত্মক’ হরতাল বিষয়টি আসলে কী, তা নিয়ে সত্যিই বড় ধন্দে পড়ে যাওয়ার দশা হয়েছে। ‘সর্বাত্মক’ হরতালে এভাবে গাড়িঘোড়া চললে বা দোকানপাট খোলা থাকলে সপ্তাহে পাঁচ দিন আর সাত দিন হরতালের মধ্যে কীই–বা ফারাক হবে!
সব রাজনৈতিক কর্মসূচির একটি সৌন্দর্য থাকে। সংঘাত-সহিংসতার মধ্যেও নানা সময়ে আমরা হরতালের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। হরতাল মানে দোকানপাট বন্ধ বা ঝাঁপ অর্ধেক নামানো থাকবে, ব্যাংকে গ্রাহকেরা ঢুকবেন পেছনের দরজা দিয়ে, রাস্তা থাকবে ফাঁকা, অল্প গাড়িঘোড়া, কিছু অ্যাম্বুলেন্স আর পত্রপত্রিকার স্কুটার চলবে, ভিআইপি রাস্তাগুলোতে চলবে রিকশা। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ—এসব হরতালে কম থাকে। বড় দলগুলোর যারাই হরতাল ডাকত, সেই হরতালের প্রতি জনগণ কিছুটা হলেও ‘সম্মান’ দেখাত। এবার দেখা যাচ্ছে হরতাল তার ‘সৌন্দর্য’ ও ‘সম্মান’ দুটিই হারিয়েছে।
দুর্যোগসহ জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম আছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় এ দেশের জনগণ সব সময়ই ভালো করেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। রাজনৈতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও যে তারা সাফল্য দেখাবে, সেটাই স্বাভাবিক। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা সিডর-আইলার সঙ্গে বসবাস করতে অভ্যস্ত জনগণ এখন হরতাল-অবরোধের সঙ্গে বসবাসেও সম্ভবত অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সপ্তাহে পাঁচ দিন হরতাল হলে মানুষের সামনে আর উপায় কী!
হরতালে এখন ঢাকা শহরে যানজট হয়, ভিআইপি রোডে রিকশা চলাচলের সুযোগ পায় না। দোকানপাটগুলো বন্ধ বা ঝাঁপ অর্ধেক টানা থাকে না, ব্যাংকে সামনের দরজা দিয়েই ঢোকা যায়, মার্কেটগুলো খোলাই থাকে। আগে হরতাল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ‘অনিবার্য কারণে’ নানা কিছু স্থগিতের ঘোষণা আসত, এখন তেমন কিছু চোখে পড়ে না। একমাত্র শিক্ষার্থীরাই, সম্ভবত এখনো হরতালের প্রতি ‘সম্মান’ দেখিয়ে যাচ্ছে বা দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক ক্লাস হচ্ছে না। এখন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলছে। ৭২ ঘণ্টা হরতাল বাড়ার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসামাত্র সেই দিনগুলোর পরীক্ষা শুক্র বা শনিবারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে এভাবেই যেহেতু চলছে বা চলবে বলেই মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও নিশ্চয়ই হরতালের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল বা পথ বের করে নেবে। এখন স্কুলগুলোতে শুক্র ও শনিবার ক্লাস হচ্ছে। হরতালের দিন স্কুলড্রেস ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বলা যায় কি না এমন ভাবনাও ভাবতে শুরু করেছে কিছু স্কুল। সপ্তাহে পাঁচ দিন যেহেতু হরতাল, তাই এ সময়ের ক্লাসনোটগুলো মা-বাবাদের কাছে পাঠাতে শুরু করেছে অনেক স্কুল। উদ্দেশ্য, বাসায় বসে যাতে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া যায়। সামনে হয়তো স্কাইপে শিক্ষক ক্লাস নেবেন আর শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ক্লাস করবে—এ ধরনের কোনো পথ ধরতে হবে।
আমরা জেনে গেছি যে সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না বা সমঝোতার চেষ্টা করবে না। আর বিএনপিও পরিষ্কার করেছে যে আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত’ বিজয় ছাড়া অবরোধ-হরতাল তুলবে না। ফলে ৭২ ঘণ্টা পর পর হরতাল বাড়বে কি বাড়বে না, হরতালের চরিত্র ‘সর্বাত্মক’ হবে কি না—এসব দুশ্চিন্তায় না থেকে এই দুর্যোগকে স্থায়ী ধরে নিয়ে এর সঙ্গেই বসবাস ও ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার’ পরিকল্পনা করে নেওয়াই তো ভালো! সরকার বা বিরোধী পক্ষ যা-ই ভাবুক না কেন, জনগণ কিন্তু সেভাবেই এগোচ্ছে।
আগামীকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা হরতাল বাড়ানোর যে ঘোষণা মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তাতে আর হরতালের আগে ‘সর্বাত্মক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। আসলে হরতাল, সর্বাত্মক হরতাল বা হরতাল থাকা না-থাকা—এসব নিয়ে ভাবার সময় সম্ভবত এখন জনগণের আর নেই। জনগণের জীবন আছে, তাদের জীবিকা আছে—এসব এত মানতে গেলে তাঁদের চলবে কীভাবে!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
জনগণের কথা শোনে বা বিবেচনায় নেয়, এমন দল তো এখন আর দেশে নেই। এই যে চারদিকে এত মৃত্যু, এত বর্বরতা—এসব নিয়ে এত হাহাকার, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন, অনুনয়-বিনয়—সবই তো অরণ্যে রোদন। তার পরও বলি, দুই দফায় হরতাল ডেকে পুরো সপ্তাহ কাভার করার দরকার কী! একবারে ঘোষণা দিয়ে দিলেই তো হয় যে দুই দিন বিরতি দিয়ে টানা পাঁচ দিন হরতাল চলবে। এতে অন্তত কেউ কোনোভাবেই এই আশা করবেন না যে বুধ বা বৃহস্পতিবার হরতাল থেকে মুক্তি পেলেও পেতে পারেন! আশা ভঙ্গের তো কিছু কষ্ট আছে, তা থেকে কি অন্তত জনগণকে মুক্তি দেওয়া যায় না? সপ্তাহে দুই দিন হরতাল নেই, এটা ধরে নিয়েই নাহয় আমরা চলব! কিন্তু এই শান্তিটুকুও যেন আমাদের পাওনা নয়! ৭২ ঘণ্টা করে দুই দফায় হরতাল ডেকে সপ্তাহ পার করা হবে।
আমাদের মতো জনগণের কথা থাক, কিন্তু বিএনপি তো অন্তত তাদের কাজ ও কষ্ট কিছু কমাতে পারে! দলের বড় নেতাদের সবাই প্রায় জেলে। যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরাও আত্মগোপনে বা পালিয়ে। সরকার যে অবস্থা করে রেখেছে, তাতে বৈঠক করে হরতাল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সুযোগটিও দলটির নেই। যাঁর নির্দেশেই হোক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে হরতাল বাড়াতে হয়। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ড্রাফট করা, বানান, ভাষা—এসব দিকে নজর দেওয়া, তারপর পত্রপত্রিকায় মেইল করা কম ঝক্কির কাজ নয়। আর সরকার কত দিন তাঁকে এই কাজটি করে যেতে দেবে, সেটাই বা কে জানে! ফলে অবরোধ যেমন চলছে, তেমনি ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত’ সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন, মানে রোববার থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত হরতাল চলতেই থাকবে, এমন একটি ঘোষণা দিলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়।
অথবা অবরোধের পাশাপাশি সপ্তাহে সাত দিনের হরতাল ডেকে দিলেই বা সমস্যা কী! এ সপ্তাহের শুরুতে যখন হরতালের ডাক দেওয়া হয়, তখন বিএনপির প্রেস রিলিজে বলা হয়েছিল, ২০ দলের শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা দিলে ‘সর্বাত্মক’ হরতাল। সরকারের পক্ষে পুলিশ অনেকটা আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল যে এই জোটকে কোনো বিক্ষোভ মিছিল করতে দেবে না তারা। পুলিশকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। দেশের দু-এক জায়গায় ঝটিকা মিছিল ছাড়া ‘বিক্ষোভ’ মিছিলের কোনো চেষ্টাও হয়নি। তবে রোববার থেকে যথারীতি ‘সর্বাত্মক’ হরতালের ঘোষণা এল ঠিকই। কিন্তু এই সপ্তাহে বুধবার পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে ‘সর্বাত্মক’ হরতাল বিষয়টি আসলে কী, তা নিয়ে সত্যিই বড় ধন্দে পড়ে যাওয়ার দশা হয়েছে। ‘সর্বাত্মক’ হরতালে এভাবে গাড়িঘোড়া চললে বা দোকানপাট খোলা থাকলে সপ্তাহে পাঁচ দিন আর সাত দিন হরতালের মধ্যে কীই–বা ফারাক হবে!
সব রাজনৈতিক কর্মসূচির একটি সৌন্দর্য থাকে। সংঘাত-সহিংসতার মধ্যেও নানা সময়ে আমরা হরতালের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। হরতাল মানে দোকানপাট বন্ধ বা ঝাঁপ অর্ধেক নামানো থাকবে, ব্যাংকে গ্রাহকেরা ঢুকবেন পেছনের দরজা দিয়ে, রাস্তা থাকবে ফাঁকা, অল্প গাড়িঘোড়া, কিছু অ্যাম্বুলেন্স আর পত্রপত্রিকার স্কুটার চলবে, ভিআইপি রাস্তাগুলোতে চলবে রিকশা। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ—এসব হরতালে কম থাকে। বড় দলগুলোর যারাই হরতাল ডাকত, সেই হরতালের প্রতি জনগণ কিছুটা হলেও ‘সম্মান’ দেখাত। এবার দেখা যাচ্ছে হরতাল তার ‘সৌন্দর্য’ ও ‘সম্মান’ দুটিই হারিয়েছে।
দুর্যোগসহ জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম আছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় এ দেশের জনগণ সব সময়ই ভালো করেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। রাজনৈতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও যে তারা সাফল্য দেখাবে, সেটাই স্বাভাবিক। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা সিডর-আইলার সঙ্গে বসবাস করতে অভ্যস্ত জনগণ এখন হরতাল-অবরোধের সঙ্গে বসবাসেও সম্ভবত অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সপ্তাহে পাঁচ দিন হরতাল হলে মানুষের সামনে আর উপায় কী!
হরতালে এখন ঢাকা শহরে যানজট হয়, ভিআইপি রোডে রিকশা চলাচলের সুযোগ পায় না। দোকানপাটগুলো বন্ধ বা ঝাঁপ অর্ধেক টানা থাকে না, ব্যাংকে সামনের দরজা দিয়েই ঢোকা যায়, মার্কেটগুলো খোলাই থাকে। আগে হরতাল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ‘অনিবার্য কারণে’ নানা কিছু স্থগিতের ঘোষণা আসত, এখন তেমন কিছু চোখে পড়ে না। একমাত্র শিক্ষার্থীরাই, সম্ভবত এখনো হরতালের প্রতি ‘সম্মান’ দেখিয়ে যাচ্ছে বা দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক ক্লাস হচ্ছে না। এখন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলছে। ৭২ ঘণ্টা হরতাল বাড়ার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসামাত্র সেই দিনগুলোর পরীক্ষা শুক্র বা শনিবারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে এভাবেই যেহেতু চলছে বা চলবে বলেই মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও নিশ্চয়ই হরতালের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল বা পথ বের করে নেবে। এখন স্কুলগুলোতে শুক্র ও শনিবার ক্লাস হচ্ছে। হরতালের দিন স্কুলড্রেস ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বলা যায় কি না এমন ভাবনাও ভাবতে শুরু করেছে কিছু স্কুল। সপ্তাহে পাঁচ দিন যেহেতু হরতাল, তাই এ সময়ের ক্লাসনোটগুলো মা-বাবাদের কাছে পাঠাতে শুরু করেছে অনেক স্কুল। উদ্দেশ্য, বাসায় বসে যাতে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া যায়। সামনে হয়তো স্কাইপে শিক্ষক ক্লাস নেবেন আর শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ক্লাস করবে—এ ধরনের কোনো পথ ধরতে হবে।
আমরা জেনে গেছি যে সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না বা সমঝোতার চেষ্টা করবে না। আর বিএনপিও পরিষ্কার করেছে যে আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত’ বিজয় ছাড়া অবরোধ-হরতাল তুলবে না। ফলে ৭২ ঘণ্টা পর পর হরতাল বাড়বে কি বাড়বে না, হরতালের চরিত্র ‘সর্বাত্মক’ হবে কি না—এসব দুশ্চিন্তায় না থেকে এই দুর্যোগকে স্থায়ী ধরে নিয়ে এর সঙ্গেই বসবাস ও ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার’ পরিকল্পনা করে নেওয়াই তো ভালো! সরকার বা বিরোধী পক্ষ যা-ই ভাবুক না কেন, জনগণ কিন্তু সেভাবেই এগোচ্ছে।
আগামীকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা হরতাল বাড়ানোর যে ঘোষণা মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তাতে আর হরতালের আগে ‘সর্বাত্মক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। আসলে হরতাল, সর্বাত্মক হরতাল বা হরতাল থাকা না-থাকা—এসব নিয়ে ভাবার সময় সম্ভবত এখন জনগণের আর নেই। জনগণের জীবন আছে, তাদের জীবিকা আছে—এসব এত মানতে গেলে তাঁদের চলবে কীভাবে!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
No comments